ছবিতে নেই কোনো নাচ-গান, নেই অবান্তর যৌনতা। ছিল না একটিও আইটেম গান। এমনকি নায়িকার দেহসৌষ্ঠব দেখানোর আদেখলাপনাও নেই। বলিউডি মসলাহীন ছবি যে মুম্বাই ছবির দুনিয়ায় তৈরি করা সম্ভব, সেটা এক দশক আগেও কার্যত ভাবা যেত না। গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়ামাদ্রাজ ক্যাফে ছবিটি একেবারে তাই।
ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বন্দ্ব নিয়ে যে কাহিনি বাঙালি পরিচালক সুজিত সেলুলয়েডের পর্দায় নিয়ে এসেছেন, তাতে বেরিয়ে এসেছে সত্য ইতিহাস বলার ‘ধৃষ্টতা’। কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে তিনি যেভাবে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ব্যবচ্ছেদ করেছেন, তাতে বলতেই হয়, গত এক দশকে ভারতের সবচেয়ে বড় বিপ্লবটা হয়েছে বলিউডেই! নব্বইয়ের দশকে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ, সেখান থেকে ভারতীয় শান্তিরক্ষা বাহিনীর ফেরত আসা এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর গুপ্তহত্যার পেছনের কাহিনি নিয়েই তৈরি মাদ্রাজ ক্যাফে। ছবিটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন জন এব্রাহাম।
ছবির প্রযোজকও জন নিজেই। ছবিতে জন ভারতের সামরিক গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর একজন এজেন্ট।
তাঁর গোপন অপারেশনগুলো নিয়েই এগিয়ে যায় ছবির গল্প। ছবিতে নতুন একজনকে দেখতে পাবে দর্শক। ছবির জন্য নিজের ওজনও কমিয়েছেন জন এব্রাহাম। তাই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যতিক্রমীভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে এই অভিনেতাকে। নতুন এই লুক নিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে ভাবনাচিন্তা করেছেন পরিচালক সুজিত সরকার ও জন এব্রাহাম।
পরিচালক সুজিত বলেন, ‘ছবিটির জন্য আমি জনকে ওজন কমাতে বলেছিলাম এবং সে এটা করেছে। জনতার মধ্যে দাঁড়ালে তাকে যাতে আলাদা করা না যায়, এ জন্যই আমি এমন পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ছবিটির বিষয়টাই হিরো, জন এব্রাহাম নয়। ’ সুজিতের সঙ্গে জনের এটাই প্রথম কাজ নয়। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিকি ডোনার ছবিটিও পরিচালনা করেছিলেন সুজিত।
সেটি ছিল জন এব্রাহাম প্রযোজিত প্রথম ছবি। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা জনপ্রিয় ছবির অ্যাওয়ার্ডসহ তিনটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছিল ছবিটি। ছবিতে জনের বিপরীতে দেখা যাবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন মডেল ও বলিউড অভিনেত্রী নার্গিস ফাখরিকে। জনের পাশে নার্গিস ফাখরির কম্বিনেশন নিয়ে নানা মুনির ছিল নানা মত। কিন্তু এ ছবি দেখলে সে ভুলই ভেঙে যাবে।
ছবিতে তিনি এক ইউরোপিয়ান সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন, প্রতিবেদন তৈরির জন্য যাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় যুদ্ধের ময়দানে। বিদেশি ওয়ার জার্নালিস্ট চরিত্রে নার্গিস ছিলেন একেবারে স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক। নিখুঁত অ্যাকসেন্টে বলেছেন ইংরেজিও। পোশাক-আশাকেও ছিলেন সাবলীল। নতুন এই অভিজ্ঞতার কথা বললেন নার্গিস, ‘তীব্র এবং বেশ অন্য রকমের অভিজ্ঞতা।
যুদ্ধের ময়দানে একজন নারী সাংবাদিক কী করেন, তার পেছনের গল্পটা জেনেছি, উপলব্ধি করেছি। খুব ভালো লাগছে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে অভিনয় করতে। নিজের ক্যারেকটারটা বোঝার জন্য আমি প্রচুর ফুটেজ ও ডকু ফিল্ম দেখেছি। যেভাবে সাংবাদিকেরা অন দ্য স্পট স্টোরি করেন, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। ’ ২০১১ সালে রকস্টার ছবিতে রণবীর কাপুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল নার্গিসের।
রকস্টার-এর পর আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি নার্গিস ফাখরিকে। জন এব্রাহামের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন তা জানতে চাইলে নার্গিস বলেন, ‘জনের যতটা স্ট্রং বডি, মনের দিক থেকে তিনি ততটাই নরম-সরম। তাঁর ব্যবহার অত্যন্ত কোমল। মাদ্রাজ ক্যাফেতে কাজ করার আগে জনকে আমি এত ভালো করে জানতাম না। তাঁর বিপরীতে কত ভালো অভিনয় করতে পারব, সেটা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
কিন্তু পরে দেখলাম, তিনি কাজের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।