http://shorob.com/author/bohemian/
থ্রি ইডিয়টস যেই বইটি অবলম্বনে তার নাম হচ্ছে ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান । বইটি পড়েছিলাম প্রায় এক বছর আগে। আমাদের টার্ম ফাইনাল চলাকালীন সময়ে! আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমাদের বুয়েটের সাথে ভারতের আইআইটি গুলার দূরত্ব কেমন ।
সে যাই হোক । থ্রি ইডিয়টস দেখার মূল কারণ শুধু বইটা ছিল না , দেখেছি মূলত আমির খান আর এর পরিচালক রাজকুমার হিরানি এর কারণে।
আমির এর সব চেয়ে বাজে মুভি গুলোর মধ্যে গাজিনি একটা (যারা মেমেণ্টো দেখেছেন তাদের এই মুভি পছন্দ করার কথা না )। মুভিটা আমার ভাল লাগে নি ।
গাজিনি দেখার পর আমির এর উপর ভক্তি অনেক খানি ই কমে গেছে। আমির ব্যবসায়িক সাফল্য কে ভালই গুরুত্ব দেয় বোঝা গেছে !
থ্রি ইডিয়টস এর কাহিনী/মেকিং এর সাথে মুন্না ভাই সিরিজের অস্বাভাবিক মিল । একজন সফল পরিচালক/লেখক এর একটা ফ্রেমওয়ার্ক থাকতেই পারে যা তিনি সবর্ত্র ব্যবহার করবেন।
যেমন ধরুন ড্যান ব্রাউন এর একটা প্যাটার্ন আছে
(২৪ ঘণ্টা/ শক্তিশালী/(উচ্চ শিক্ষিত/ক্ষমতাবান) নারী চরিত্র/...) ।
তাই ড্যান ব্রাউন এর বই পর পর যদি পড়েন আপনার বেশ খারাপ লাগবে ।
আমার যেমনটি লাগল থ্রি ইডিয়টস এর ক্ষেত্রে ।
মুন্না ভাই ১,২ আর থ্রি ইডিয়টস এর মিল গুলো কি ধরতে পারছেন?
১। নায়ক(কেন্দ্রীয় চরিত্র বুঝাচ্ছি/protagonist ) এর একটা জাদুর কথা(All iz well) /আচরণ (Hug) থাকবে ।
নায়ক খুব আশা বাদী কথা বলবে । (টেনশান নেহি লেনেকা!) নায়ক ফার্স্ট হবে ! ইত্যাদি ইত্যাদি । ২০১০ সালে এসে আমরা নায়ক কে জয়ীর ভূমিকায় সব সময় দেখতে চাই না । আণ্ডার ডগ কেও নায়ুক হিসেবে বানানো যেতে পারে (হিন্দি মুভির উদাহরণ ই দেই রাব নে বানা দে জোড়ি)
২। নায়িকার চরিত্র মাত্র ১৫ মিনিট এর মত! খুব বেশি কাজ নেই।
একবার জল কেলি করা, নায়ক এর দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা...শেষে নায়ক এর কাছে চলে আসা (এবং hug/কিস করা! )।
৩। নায়ক এর কিছু সাইড কিক থাকবে যাদের কাজ হবে নায়ক কে খুব ভালবাসা, "নায়ক তুমি বস হো" টাইপ কথা বলা । (এই মুভিতে দৃশ্যটা বেশ বাজে লেগেছে
প্যাণ্ট খুলে শ্রদ্ধা/ভালোবাসা প্রকাশ করার বিষয় । )
৪।
নায়ক নিঃশব্দে প্রায় ই কাঁদবে!(কান্না সমস্যা না, তবে একজন পরিলাচকের সব মুভিতে যদি নায়ক কাঁদে একটু কেমন
যেন লাগে! )
৫। একজন মাত্র ভিলেন (এক ই লোক 3 টা মুভিতে!), যিনি কিনা শেষে নায়ক এর কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ভালো হয়ে যাবেন!
মুন্না ভাই অনেক আগে দেখা তাই আর মিল গুলা বলতে পারছি না ।
এবার আসি, মিল থাকতেই পারে তাই বলে কেন বলব অত ভাল লাগে নি?
প্রত্যাশা ছিল অনেক । কারণ আমির খান নাকি স্ক্রিপ্ট পড়ে মুভি করেন
দিল চাহতা হ্যায়/ রাঙ দে বাসন্তি দেখে তাই মনে হয়েছে । রাঙ দে বাসন্তি দেখে আমি রীতিমত অবাক হয়েছিলাম ।
সেকি স্ক্রিপ্ট ! সেকি মেকিং!
"রাঙ দে বাসন্তি" মুভিতে আমির এর সাথে সাথে অন্য চরিত্র গুলোর গুরুত্ব ছিল । কিন্তু এই মুভিটা পুরোটাই আমির কেন্দ্রিক । দৃশ্যগুলো সঞ্চালনে অন্য দুই ইডিয়টের ভূমিকা
থাকতে পারে ,কিন্তু মূল কাহিনীতে তাদের চরিত্রের গুরুত্ব এবং
গভীরতা খুব কম ছিল ।
থ্রি ইডিয়টস মুভিটার কিছু মেসেজ ছিল ।
*যার যা করতে মঞ্চায় তাই করা উচিত ।
ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার ইচ্ছে গুলো আমাদের মাথায় ঢোকানো হয়,আমাদের মনের ইচ্ছে তে না।
*পড়া শোনা করে যেন আমরা বুকিশ (অথবা গাধা!) না হই ,চিন্তা করে যেন পড়ি ।
ইত্যাদি । এই সব আমরা জানি ।
মুভিটায় শিক্ষা প্রতিশষ্ঠানের অহেতুক চাপ সৃষ্টির যেই মেসেজটা দিতে চেয়েছিল তা তুলে ধরতে পারে নি বলেই মনে হয়েছে ।
বইটা পড়া আছে বলেই জানি চাপ
আসলেই ভয়াবহ ছিল ,কিন্তু মুভিটা তা ফুটিয়ে তুলতে পারে নি ।
বোমান ইরানির ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টাও যথেষ্ট পরিষ্কার করা হয় নি বলেই মনে হয়েছে (নাকি আমার ডাউনলোডেড কপিতে কিছু দৃশ্য কাটা ছিল?)। বইয়ে ব্যাপারটি হঠাৎ করে আসে নি । কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবেই এসেছে ।
বইটা আইআইটি ছিল কেন্দ্রিক ছিল, আর মুভিটা পুরো ভারত কেন্দ্রিক তাই হয়ত এত পরিবর্তন এসেছে ।
এবার আসি নায়িকার চরিত্রের কথায় । হিন্দি মুভিতে ( বেশির ভাগ হলিউডি মুভিতেও ) নায়িকাদের চরিত্রে গভীরতা দেবার ইচ্ছে (এবং সুযোগ ) পরিচালকদের থাকে না । এই মুভিতে নায়িকা কে কিভাবে বিভিন্ন দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিভাবে দেখানো হয়েছে , কি কি বলানো হয়েছে একটু ভেবে দেখতে পারেন । নারী চরিত্রের প্রতি অবহেলার জন্য তীব্র নিন্দা! (মূল বইতেও অবশ্য নারী চরিত্রের গুরুত্ব কম ছিল )
এবার আসি, মুভিটা "খুব মজার হয়েছে" অনেকেই বলেছেন ।
মুভিটায় অনেক পুরোনো জোক্সকে ব্যবহার করা হয়েছে দেখে আরো খারাপ লেগেছে ।
যেমন ধরুন
পরীক্ষার খাতা দেরিতে জমা দেবার ব্যাপারে যখন আমির খান জিজ্ঞেস করে "আপনি কি আমাদের রোল জানেন?"... তারপরের ফানি দৃশ্যগুলো । এই লিঙ্কে গিয়ে সেই অংশ টুকু দেখতে পারেন । ( এটি ২০০৭ বা তার ও আগের ক্লিপ । )
আমির খান এর ডিগ্রি আরেকজনকে দিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি ছিল আরো হাস্যকর! কিন্তু ২০০৯/১০ সালে এসে সার্টিফিকেট বদল বিষয়ক ব্যাপার দেখে বাঁকা হাসি আটকাতে পারি নি ।
(তবে এই বিষয়টি ছিল বাবা মার কাছে সন্তানের শিক্ষার চেয়ে সার্টিফিকেট কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ
তা বোঝানোর জন্য ছিল।
)
মুভির সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে আশাবাদিতার গল্প। হিরানির অন্য মুভিগুলোর মত এই মুভিতেও আমাদের আশাবাদী হবার কথা বলা হয়েছে । যেহেতু মুভিটি বহুল প্রদর্শিত আশা করা যায় অভিভাবকদের মধ্যে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখতে পারব!
এই মুভিতে আমির একজন বহুমাত্রিক অভিনেতা সেটা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে । ৪৪ এ এসেও ২৪ এর অভিনয়! মারহাবা মারহাবা!
ডুবি ডুবি গানটার মেকিং গত ক বছরের হিন্দি মুভির সেরা চিত্রায়ন বলেই মনে হয়ছে ।
বই পড়লে একটা অন্য রকম প্রত্যাশার তৈরি হয় ।
বই পড়ার পর মুভি দেখলে তাই প্রায় সময় ই আশাহত হতে হয়!
মুন্নাভাই কে ধরা হয় কাল্ট ক্ল্যাসিক , তাই এর পরিচালক এর কাছ থেকে একটু বেশি আশা করাটা কি অন্যায়?
বই এর ডাউন লোড লিঙ্ক
আমার রিভিউ পড়ে কেউ মাইণ্ড খাইয়েন না । খাইলে কই "টেনশান নেহি লেনেকা "। টেনশান নিলে কই অল ইজ ওয়েল! সো নো চিন্তা ডু ফূর্তি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।