আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাবধান! মোবাইলে পর্নোগ্রাফি

বেঁচে থেকেও আমি মৃত; কিছু না লিখতে জেনেও কবি............

স্কুল-কলেজের এমন কোনো শিক্ষার্থী নেই। যার কাছে মোবাইল ফোন নেই। তবে সেই ফোনটি কতটুকু তার প্রয়োজনীয় সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে ক্ষতিকারক দিকটি বেছে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মা-বাবা ছেলেমেয়েদের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য না রাখায়, প্রিয় সন্তান ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, কি বলছে আর ফোনের মধ্যেই বা কি আছে এসব কোনো কিছুই জানছেন না অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে ঢাকার যে সব মার্কেটগুলোতে মোবাইল ফোনে পর্নো ছবি ঢোকানো হয় তার অধিকাংশ ক্রেতাই স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী। অপ্রাপ্ত বয়স্ক এসব ছেলেমেয়ে তাদের মোবাইল ফোন পূর্ণ করছে পর্নো ছবি দিয়ে। অনেক সময় নিজেরাও হয়ে যাচ্ছে পর্নো ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী। এক গবেষণায় দেখা গেছে রাজধানী ঢাকা শহরে পর্নো ছবির ক্রেতাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক, এমনকি তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরের পর্নো ছবির দর্শকের মধ্যে ৭৭ শতাংশই শিশু।

স্কুল শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে, সাইবার সেন্টারে, বাসার ইন্টারনেটে এবং কম্পিউটারে পর্নো ছবি দেখে থাকে। কম টাকায় চাইনিজ মাল্টিমিডিয়া সেট পাওয়া যাওয়ায় সমাজের নিচুতলার ছেলেমেয়েরাও মোবাইল পর্নোতে ঝুঁকে পড়ছে। একটি চাইনিজ মাল্টিমিডিয়া সেট কম-বেশি ৪ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। গরিব নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে পর্নো ছবি দেখার হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য মোবাইল ফোন একটি নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় এর ব্যবহারের নানা দিকগুলো সম্পর্কে এখনো সচেতন হয়ে ওঠেনি এদেশের গ্রাহকরা।

তাই এখনই সচেতন হোন, কোথায় গল্প করছেন, কার সঙ্গে গল্প করছেন, কি অবস্থায় আছেন। আপনার ছেলে বন্ধুটি কি আপনার প্রতি বিশ্বস্ত? এসব জেনে বুঝে তারপর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তবে অপরিচিত কারোর সঙ্গে ফোনে গল্প করার আগে মোবাইল ফোনের কলাকৌশল সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ওপাশ থেকে কেউ আবার রেকর্ড করছে কিনা বুঝে নিন। আপনার ছেলে বন্ধুটি যদি আপনাদের সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবান না হয় তবে স্বল্প পরিচিত বা বিশ্বাস করা যায় না এমন বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকুন।

তা না হলে কে বলতে পারে আপনাদের ফোনালাপ চলে যেতে পারে অন্যের মোবাইল ফোনে যেমন করে অন্যের ফোনালাপ অথবা পর্নো ছবি যেভাবে হাতে হাতে চলে গেছে। ধর্ষণের পরে পর্নো ছবি বাজারজাত হচ্ছে ধর্ষণের পরে বাজারে চলে যাচ্ছে ধর্ষণের সময় রেকর্ডকৃত ভিডিও। সমাজে ধর্ষক এতই শক্তিশালী সে পরোয়া করছে না প্রচলিত আইনের ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডকেও। সম্প্রতি এ রকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। ঘঠনা-১ স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে ভিডিও ফুটেজ বাজারে ছেড়েছে পিরোজপুরের এক ছাত্রলীগ নেতা।

পিরোজপুর জেলার শীর্ষ স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়–য়া এক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের সেই ভিডিও চিত্র ধারণ করে মুঠোফোন থেকে শুরু করে সিডির মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়েছে জেলা শহরের যুবকদের কাছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আহসান কবির মামুন ওরফে টাইগার মামুন । ফোনে সাপ্তাহিককে মামুন বলেছেন, প্রতিপক্ষ একটি গ্র“প তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজটি বাজারে ছেড়েছে। আত্মগোপনে থেকে শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষৎকারে মামুন জানিয়েছেন, জেলা শহরে অবস্থিত করিমুনন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছাত্রীর সঙ্গে প্রায় বছরখানেক ধরে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় রমজান শুরুর আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে পিরোজপুর জেলা শহরের দামোদর ব্রিজ এলাকা ধরে সকালের দিকে তার প্রেমিকা স্কুলে যাচ্ছিলেন। তখন জরুরি কথা বলার জন্য ওই ছাত্রীকে ব্রিজ সংলগ্ন শিকারপুর রোডের মামুনের পরিচিত এক আইনজীবীর বাসায় তাকে নিয়ে যায়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মেয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। কিন্তু ধর্ষণের চেষ্টার সেই দুর্লভ চিত্র পিরোজপুর বাজারের তালাচাবির মেরামতকারী আলতাফ শেখের ছেলে বিএনপি কর্মী মনির হোসেন ওরফে গাজা মনির ধারণ করে। এ ঘটনার পর মামুন মোবাইল ফোনে ধারণকৃত সেই চিত্র মুছে ফেলেন বলে দাবি করেন।

বাজারে সেই ভিডিও ফুটেজ ছাড়ার কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে মামুন বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মনির পৌরসভা রোডের মোবাইল মেরামতকারী খোকন কর্মকারের মাধ্যমে অপরাপর মোবাইলের মাধ্যমে তা ঈদের পর বাজারে ছাড়া হয়। মামুন আরও বলেন, জেলা শহরের আলামকাঠী ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ঠিকাদার রমিজ সরদার, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদ্বয় সজিব খান রানা এবং বাদশার যোগসাজশে ভিডিও ফুটেজটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হয় শুধু ঠিকাদারির কাজ নিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার জন্য। ওই স্কুলছাত্রী তার নিকট আত্মীয় দাবি করে মামুন আরও বলেন, পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ের ব্যাপারে আমার মা দুই-একদিনের মধ্যে মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা পাকাপোক্ত করবেন। এ ব্যাপারে গাজা মামুন ফোনে বলেন, অনৈতিকভাবে আমাদের দুজনের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও মামুন আমার ছোট সময়ের বন্ধু। ওর অনুরোধেই ওর মোবাইল দিয়ে আমি ভিডিও করি।

তখন ভাবতে পারেনি এটি বাজারে ছাড়া হবে। শনিবার সকালে এ প্রতিবেদক পিরোজপুর জেলা শহরের একটি ভিডিওর দোকান থেকে ক্রেতা সেজে একটি সিডি ক্রয় করেন। বিক্রেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, ঈদের পর এটি বাজারে এসেছে। তবে কীভাবে এসেছে তারা সে ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বিকেলের দিকে এ প্রতিবেদক ধর্ষিত সেই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।

তারা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আইনগত পদক্ষেপের কথাও তারা জানিয়ে বলেন, মাদকসেবী মামুন তাদের নিকট আত্মীয়। স্কুলে যাতায়াতের সময় মেয়েটিকে মামুন বিরক্ত করতেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছিল। পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর ফসিয়ার রহমান ফোনে বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না।

তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্যাহ চৌধুরী বলেন, ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে টাইগার মামুনের তিন সহযোগীসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার অধিকার নামে এনজিওর পক্ষ থেকে একটি টিম পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-৮ এর কাছে অভিযুক্ত মামুনের বিচার চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারা ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে।

এ সময় তারা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে পিরোজপুর জেলা শহরে টাইগার মামুনের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করা হয়। ঘঠনা-২ কয়েক দিন ধরে কেশবপুরের বিভিন্ন সিডির দোকানে বিক্রি হচ্ছে একটি পর্নো ছবি। ক্রেতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কি আছে পর্নো ছবিতে ? এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে দুই যুবক।

তারা আবার ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা সিডি আকারে বাজারে ছেড়েছে। প্রথমে ছাত্রীটি লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে গেলেও পরে তার অভিভাবকদের জানান। পুলিশ সিডি উদ্ধার এবং থানায় মামলা নিয়েছে। তবে কেউ আটক হয়নি। পলাতক রয়েছে আসামি দুই জন।

গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ষষ্ঠ শ্রেণীর মাদ্রাসার ছাত্রী প্রতিবেশীর বাড়ি যাচ্ছিল। বাড়ি থেকে বের হবার পর একটি বাগান পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। ওই বাগানের কাছে পৌঁছলে আগে থেকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বায়সা গ্রামের আতিয়ার রহমানের পুত্র মাহফুজুর রহমান ও নূর মোহাদের পুত্র ইউনুস আলি তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার দৃশ্য তারা আবার মোবাইল ফোনে ধারণ করে।

লজ্জায় এই ধর্ষণের কথা চেপে যায় মেয়েটি। কয়েক দিন পর দেখা যায়, কেশবপুর বাজারের বিভিন্ন সিডির দোকানে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে কেশবপুরের এক স্কুল ছাত্রীর ধর্ষণের দৃশ্য। মেয়েটি বার বার বাধা দিচ্ছে। আর যুবক দুই জন তাকে বিবস্ত্র করছে। এক সময় মেয়েটি নতি শিকার করে তাদের কাছে।

মোট ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের এই সিডিতে দুই যুবককে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পুলিশ কয়েকটি দোকান থেকে এই সিডি উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশ তাদের নামে কোন মামলা করেনি। তবে বায়সা গ্রামের শামসুর রহমান বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় মামলা করেছেন। মাহফুজুর রহমান ও ইউনুস আলির নাম রয়েছে।

এদিকে কেশবপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় উঠতি বয়সী যুবকদের মোবাইলে বাড়তি টাকা নিয়ে ঘৃণিত এই পর্নো ছবিটি বিক্রি করা হয়েছে। মামলার পর কেউ কেউ মোবাইল থেকে ছবিটি মুছে ফেলেছে, আবার কেউ কেউ সিডি আকারে তা বাড়িতে রেখেছে। জানা গেছে, ধর্ষক নূর মোহাম্মদ বিএনপি কেশবপুর শাখা অফিসের কেয়ারটেকার। বিএনপির একটি প্রভাবশালী অংশ এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে পুলিশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। আর সে কারণে পুলিশ তাদের আটক করছে না।

কোটি টাকার ব্যবসা ইস্টার্ন প্লাজা সর্ববৃহৎ মোবাইল পর্নো ছবির মার্কেট। এই মার্কেটে প্রায় ৯৫টি মোবাইলের দোকান রয়েছে, যেখানে পর্নো ছবি আপলোড করা হয়। এই দোকানগুলোতে মোবাইল সেট বিক্রির পাশাপাশি পর্নো ছবি আপলোডের ব্যবসাও করে থাকে। দুই ধরনের পর্নো ছবি এখানে আপলোড করা হয়। বাংলা ও বিদেশি পর্নো।

বিদেশি পর্নো ছবি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নামানো হয়। আর দেশি পর্নো বাইরে থেকে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করে দোকানদাররা। এখানে ১ জিবি থেকে ২ জিবি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। ১ জিবি মেমরি কার্ড পূর্ণ করতে নেয়া হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দুই গিগাবাইট হলে ৪০০ টাকা।

তবে বাংলা পর্নো হলে দামাদামি করে ঠিক করতে হয় পর্নো ছবির মূল্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইস্টার্ন প্লাজার প্রতিটি দোকানে গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয় এসব পর্নো ছবি। সে হিসেবে শুধু এই মার্কেটেই প্রতিদিন বিক্রি হয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ গড়ে ৩ লাখ টাকা করে বিক্রি হলে শুধু ইস্টার্ন প্লাজায় মাসে বিক্রি হয় ৯০ লাখ টাকা। ইস্টার্ন প্লাজার পরেই শীর্ষ পর্নো মোবাইল মার্কেট হিসেবে বসুন্ধরা শপিং মলের নাম রয়েছে।

এখানে অবশ্য আরও বেশি অর্থ দিয়ে নিতে হয় পর্নো ছবি। এছাড়া মোতালেব প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ইস্টার্ন মল্লিকা, নাহার প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাস টু, গুলশান, উত্তরাসহ রাজধানী ঢাকায় ১০০ ওপরের মার্কেটে প্রতিদিন ১ কোটি টাকার পর্নো ছবি মোবাইলে আপলোড করা হয়। সারাদেশে এর পরিমাণ ২০ কোটি টাকার ওপরে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক ব্যাধি আমেরিকা থেকে ২০০১ সালে বাংলাদেশে আসে এক যুবক। যুবকের নাম সুমন।

ভালো চেহারা আর অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য মেয়েটির অজান্তে ভিডিও ধারণ করে ওই প্রতারক। ধারণকৃত ভিডিওটি বাজারে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় সুমন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ঐসব নারী সমাজে হেয় হয়। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

আর সুমন দেশ ছেড়ে আবার আমেরিকায় পাড়ি জমায়। পুলিশ কিছুদিন লম্ফজম্ফ করলেও আবার থেমে যায়। তবে অপরাধীরা থেমে থাকেনি। অপরাধীরা নতুনভাবে নতুন পদ্ধতিতে মাঠে নেমেছে অপরাধ সংঘটন করার জন্য। আর এক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছে ইন্টারনেটকে।

তথ্যপ্রযুক্তির আমলে ঢাকা শহরসহ বড় শহরগুলোতে ইন্টারনেট এখন সহজলভ্য। আর ইন্টারনেটভিত্তিক প্রচারকে বেছে নিয়েছে অপরাধীরা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পর্নো ওয়েবসাইট। এ সাইটের পরিচালক ও মালিক হাফিজ। সাইটটি পরিচালনা করা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে।

হাফিজ পর্নো ভিডিওর সেই পুরনো নির্মাতা সুমনের বন্ধু বলে জানা যায়। ২০০৫ সালের শেষ দিকে সাইটটি তৈরি করা হয়। সাইটটিতে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত ভিডিও ক্লিপ দেয়া হয়। সাপ্তাহিকের বর্ষ-১ সংখ্যা-১৪ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর যৌবনজ্বালা কর্তৃপক্ষ তাদের ডোমেইন নেম পরিবর্তন করে আবার মাঠে নামে পুরনো পদ্ধতিতে। জার্মানর একটি মোবাইল ওয়েবসাইট প্রত্যেক ইউজারকে পার্সোনাল ব্লগ ওয়েবসাইট করার সুযোগ দেয়।

এসব ব্যক্তিগত সাইটে পর্নো ভিডিও, অশ্লীল ছবি এবং বাংলাদেশের নামকরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া থাকে। এ রকম একটি ব্লগ ওয়েবসাইটের নির্মাতা এসএম নিজামউদ্দিন চৌধুরী। নিজাম চট্টগ্রামের একটি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সাপ্তাহিকের বর্ষ-১ সংখ্যা সংখ্যা-১৪ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর গোয়েন্দা সংস্থা সাপ্তাহিকের অফিসে এসে উক্ত প্রতিবেদকদ্বয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ করে নানা বিষয় নিয়ে। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি।

সাইটগুলো এখনো আছে। আরও দ্বিগুণ পর্নো ছবি দিয়ে ঠাসা হয়েছে। প্রকাশ্যে চলছে ডিজিটাল অবৈধ ব্যবসা ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে এখন আর এনালগ পদ্ধতিতে পতিতা ব্যবসা নয় এমন একটা সেøাগান নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে চলছে পতিতা ব্যবসা বা দেহ ব্যবসা। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠানের নাম স্কট। ঢাকা স্কট নামের এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট রয়েছে যেখানে সুন্দরী নারীদের ছবি দেয়া থাকে এবং তাদের ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিকের রেট দেয়া থাকে।

এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মডেলদের ছবি থাকে। ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত এ মডেলদের সঙ্গ পেতে হলে স্কটকে দিতে হয়। ঢাকার বাইরেও এসব মডেলরা ক্লায়েন্টদের মনোরঞ্জনের জন্য সঙ্গ দিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের হারও অনেক বেশি দিতে হয়। স্কট ঢাকায় নিজেদের শেল্টারে অথবা ক্লায়েন্টদের শেল্টারে পতিতাদের পৌঁছে দিয়ে থাকে। আর যেসব ক্লায়েন্ট নিজরাই স্থান দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে তাদের ক্ষেত্রে স্কট নিজেরাই জায়গা দিয়ে থাকে।

তবে তার জন্য আরও ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত প্রদান করতে হয়। আর অনুসন্ধানে মিলেছে আরও গভীর সত্য। উক্ত সাইটে দেয়া ফোন নম্বর ০১৯৩৭০৩২০১৩ কথা হয় স্কটের ক্লায়েন্ট সাপোর্ট ম্যানেজার মাহবুবের সঙ্গে গত ৮ অক্টোবর রাত ৮.৩০ মিনিটে। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, এলিট বি গ্রুপের নির্দিষ্ট মডেলের জন্য স্কটকে দিতে হবে ঘণ্টা প্রতি ৫ হাজার টাকা। নির্দিষ্ট দিনে কাওরানবাজারের নির্দিষ্ট স্থানে থাকার পর মাহবুব একটি গ্রামীণফোন যার নম্বর ০১৭১১৮৩৩০০৬ দিয়ে প্রতিবেদককে জানান যে, বিটিভির সামনে আসতে হবে।

বিটিভির সামনে গিয়ে দেখা গেল নির্দিষ্ট মডেল হাজির। তবে বাংলাদেশের আইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে পতিতা ব্যবসা করা যায় না বলেই জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য রয়েছে কঠিন আইনি বিধান আর শাস্তি। তবে পুলিশের সহায়তায় এরকম অনেক বেআইনি পতিতা ব্যবসা চলছে ঢাকা শহরজুড়ে। এর মধ্যে অন্যতম একটি স্পট হলো বারিধারার কূটনৈতিক পাড়ায়।

এখানে একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া কমপক্ষে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখেরও উপরে হয়ে থাকে। নিরাপদ বিধায় এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে পতিতা ব্যবসায়ীরা। তবে পুলিশের অজ্ঞাতে কিছুই ঘটে না। আমেরিকান দূতাবাসের বিপরীত যে গলিটা চলে গেছে, উক্ত গলির শেষ মাথায় একাধিক ফ্ল্যাট বাড়িতে দেহ ব্যবসা চলছে। পুলিশ মাঝে মাঝে ওই সব ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়, খদ্দেরসহ পতিতাদের হাতে নাতে ধরলেও স্পটেই মোটা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিজাত পাড়ায় এই ব্যবসার সঙ্গে অভিজাতদের অনেকে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি খোদ সাংসদ পুত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা এই চরম বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তবে পুলিশকে বখরা না দিয়ে পতিতা ব্যবসা করা যায় না বলে রিপন নামের বারিধারার এক দালাল এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। আর এ কারণে সমাজ বিশ্লেষকরা দুষলেন প্রচলিত আইনকে। ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এ অনেক কিছু নেই যা সাইবার ক্রাইম বা ইন্টারনেট অপরাধকে দমাতে পারে।

আইনটি যদিও ২০০৬ সালে করা, তথাপি আজকের বাস্তবতায় আইনটিকে পরিবর্ধন করা জরুরি বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার পৃথিবীর কোনো দেশই পুরোপুরি রোধ করতে পারেনি। আমরাও পারব না। তবে পারব না বলে কী পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেব? আমরা কী জানব না, আমার সন্তান কী করে, কোথায় যায়? কার সঙ্গে মেশে? পরিবারের এখানে বড় একটি দায়িত্ব রয়েছে। সম্ভবত পারিবারিকভাবে আমরা সেই দায়িত্ব পালন করছি না।

ধমক বা বকাঝকা দিয়ে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের আটকানো যাবে না। তাদের বোঝাতে হবে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। কী করা উচিত, কী করা উচিত না, কেন উচিত নয়। এটা আমাদের করতেই হবে, কারণ আমার আপনার কারও সন্তানই নিরাপদ নয়। ধরুন আপনার মেয়ে বা ছেলে অথবা বোন বা ভাই...।

কোনো দুর্বল মুহূর্তে সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা করে ফেলল। পরে হয়ত সে বুঝতে পারল কাজটি ঠিক হয়নি। আর কখনোই হয়ত সে এমন কিছু করত না। কিন্তু যদি সঙ্গীটি বিশ্বাসঘাতকতা করে মোবাইল ক্যামেরা বা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে রাখে সেই দৃশ্য? তবে কী পরিণতি হবে সেই মেয়েটির? পরিবারের? তাই সাবধান হবার সময় এসেছে। সচেতন হতে হবে পরিবারকে।

এর ফলে হয়ত পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া না গেলেও কিছু কমতে পারে বিড়ম্বনা। আর রাষ্ট্রের কথা বলে খুব বেশি লাভ নেই। রাষ্ট্রের পুলিশের সামনেই চলছে এমন বাণিজ্য। পুলিশও সেই বাণিজ্যের অংশ। ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা মানিককে রক্ষা করেছিল ক্ষমতা, রাষ্ট্র, পুলিশ।

অপমানিত নির্যাতিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দাবি, চিৎকার, কান্না এতটুকু টলাতে পারেনি প্রশাসনকে। হয়ত বরিশালের মামুনদের পাশেও দাঁড়াবে প্রশাসন। নির্যাতিত মেয়েটির হাহাকার প্রশাসনের চোখে পড়বে না, কানেও পৌঁছেবে না। আমরা শুধু প্রত্যাশা করতে পারি তৎপর হবে রাষ্ট্র, তৎপর হবে পুলিশ। এও জানি, এ প্রত্যাশার কোনো মূল্য নেই রাষ্ট্র বা পুলিশের কাছে।

তাই সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে আপনাকেই। আপনার সন্তানের স্বার্থে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.