আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোয়াখালীর দক্ষিণে খাদ্য ভাণ্ডার : মাছ চাষেও বিপ্লব : গণদাবি খাল খনন, সিটি কর্পোরেশন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়



মেঘনাবিধৌত নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চল এখন এক বিশাল খাদ্যভাণ্ডার। এখানে লাখ লাখ হেক্টর জমিতে প্রধান ফসল ধান ছাড়াও বছরজুড়ে উত্পাদিত হচ্ছে সয়াবিন, বাদাম, ডাল, তরমুজসহ নানা ফসল। এ অঞ্চলে মত্স্য চাষেও বিপ্লব ঘটেছে। সরকারের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর মত্স্য খামারগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র মাছ সরবরাহ করছে। তবে নোয়াখালীর দক্ষিণের এ উত্পাদন এবং জেলার উত্তরাংশের উন্নয়ন ও উত্পাদন কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভরাট এবং দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো।

দক্ষিণের খালে পানিপ্রবাহ না থাকায় চাষাবাদ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। খননের অভাবে ও দখলে দখলে খাল সংকীর্ণ এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় জেলা শহরসহ উত্তরাংশের সবখানে প্রতিবছর দেখা দেয় বন্যা ও জলাবদ্ধতা। এতে রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি মত্স্য খামার ভেসে যাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হয় অসংখ্য খামারিকে। পশু এবং হাঁসমুরগি খামারিরাও বর্ষকালে থাকেন চরম দুশ্চিন্তায়। তাই নেয়াখালীবাসীর প্রধান দাবি খাল খনন।

এদিকে নোয়াখালী পৌরসভা এবং চৌমুহনী পৌরসভা—দুটিই দেশের প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত এ দুটি পৌরসভার ব্যবধান মাত্র দু’কিলোমিটার। দু’দিক থেকে পৌরসভা সম্প্রসারিত হওয়ায় মধ্যবর্তী একলাসপুর ইউনিয়ন ধীরে ধীরে আরও ছোট হয়ে আসছে। তাই দুই পৌরসভা ও একলাসপুর ইউনিয়ন নিয়ে সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার দাবি দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে। আর কৃষিপ্রধান নোয়াখালীতে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের।

চৌরাস্তায় অবস্থিত কৃষি ইনস্টিটিউটকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবিতেও আন্দোলন চলছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার দক্ষিণাংশ সুবর্ণচর এবং হাতিয়া উপজেলায় লাখ লাখ হেক্টর জমি এখন ফসলের মাঠ। আমন কাটা চলছে। জানা যায়, এ অঞ্চলে এবার আমন উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা দু’লাখ মেট্রিক টন। অথচ স্থানীয় চাহিদা মাত্র ৯০ হাজার মেট্রিক টন।

এ ধান সংগ্রহের পর এলাকার কৃষক বুনবে ডাল (মুগ, হেলন, খেসারি ও মাষকলাই), সয়াবিন, বাদাম, তরমুজ ইত্যাদি ফসল। সে প্রস্তুতি এখন কৃষকের ঘরে। আর দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে মত্স্য চাষ জেলায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হয়েছে অনেক। জানা যায়, শুধু সুবর্ণচর উপজেলায় এখন বছরে মাছ উত্পাদন হচ্ছে দশ হাজার মেট্রিক টন।

এখানে ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে ৯৫টি বড় প্রজেক্ট। ছোট পুকুরের এক হাজার প্রজেক্টে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ। ৯২টি ছোট প্রজেক্টে গলদা চিংড়ি চাষ চলছে। এখানে ধানের সঙ্গে মাছের চাষ এবং ধানের পরও মাছের চাষ হয়। বেসরকারি মত্স্য নার্সারি রয়েছে ২৪টি।

এখানে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে মত্স্য খামার করেছে পারটেক্স গ্রুপ, আল আমিন গ্রুপ, গ্লোব (ইউরোকোল) গ্রুপ এবং আল বারাকা। এ চার কোম্পানির বিনিয়োগ আছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় দু’হাজার লোকের। এসব খামার ঘুরে জানা যায় নোয়াখালীর মত্স্য উত্পাদন কার্যক্রম। জানা যায়, এসব কোম্পানির খামারের মাছ বাজারে থাকলে নোয়াখালীর বাজারে মাছের দাম থাকে সহনীয়।

আর এদের মাছ না গেলে বাজারে দাম হয়ে যায় চড়া। জানা যায় নোয়াখালীর দক্ষিণের এ সম্ভাবনাময় স্থানে বৃহত্ মত্স্য প্রজেক্ট করতে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড অ্যাসোসিয়েশন অনেক আবেদন-নিবেদন করলেও কোনো সরকারের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। বিভিন্ন কোম্পানি জমি কিনেই প্রজেক্ট করছে। আর অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে চরের জমি। কোম্পানিগুলোর মত্স্য খামার বিষয়ে কথা বললে পারটেক্স খামারের পরিচালক শামীম উদ্দিন বাবু আমার দেশকে বলেন, অনেক অর্থ বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে খামার গড়তে হয়েছে।

সরকার সহায়তা করলে দক্ষিণাঞ্চল মাছের রাজ্যে পরিণত হতে পারে। এদিকে নোয়াখালীজুড়ে খালগুলো ভরাট হওয়ায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চৌরাস্তা থেকে মাইজদী হয়ে সোনাপুর পর্যন্ত প্রধান সড়কের পাশে প্রধান খাল ও দু’দিকে প্রবাহিত পুরনো খালগুলো এবং নোয়াখালী খাল, বামনী খাল ও চরের প্রধান তিনটি খাল খননের ব্যবস্থা হলেই ফসল উত্পাদন, জলাবদ্ধতা ও বন্যা সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। ছোট ছোট অনেক খাল ভরাট করে চাষাবাদ করার দৃশ্য এখন চোখে পড়ে নোয়াখালীর সবখানে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান আমার দেশকে জানান, খালগুলো খননের অনেকগুলো প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে বিএডিসির উদ্যোগে কিছু ছোট খাল খননের কাজ এখন চলছে বলে তিনি জানান। নোয়াখালী পৌরসভা, চৌমুহনী পৌরসভা ও একলাসপুর ইউনিয়ন সমন্বয়ে নোয়াখালী সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দানা বাঁধছে। সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক জামশেদুর রহমান কিসলু ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন আমার দেশকে বলেন, নোয়াখালীর প্রশাসনিক কেন্দ্র নোয়াখালী পৌরসভা আর বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী পৌরসভা। মধ্যবর্তী একলাসপুর ইউনিয়ন হচ্ছে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার জায়গা।

তাই প্রথম শ্রেণীর দুটি পৌরসভাকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশন করা হলে তা দেশের অন্যতম বৃহত্ এবং গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা পাবে। এদিকে নোয়াখালী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রশিদ আহমেদ স্বপন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কিন্তু কৃষিপ্রধান নোয়াখালী আজও উপেক্ষিত। তিনি কৃষি ইনস্টিটিউটের স্থলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশে কৃষিক্ষেত্রের যে গুরুত্ব, সে হিসেবে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই এ দাবির বাস্তবায়ন নোয়াখালীবাসী কামনা করেন। Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.