বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্বজনদের আক্ষেপ, সব সরকারই তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু কোনো সরকারই কথা রাখে না। বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যদের জন্য সরকার যে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে, কালক্রমে তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে নানা পেশার মানুষ প্লট বরাদ্দ পেলেও দীর্ঘ চেষ্টা সত্ত্বেও প্লট পায়নি শুধু বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যরা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়নি সরকার।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের পরিবার : বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা, মেয়ে হাসিনা হক এবং ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল বেঁচে আছেন। পরিবারটি বর্তমানে মাসিক প্রায় ১৫ হাজার টাকা পারিতোষিক পায়। বীরশ্রেষ্ঠের নড়াইলের গ্রামের বাড়িতে সম্প্রতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করেছে সরকার। এলাকাবাসীর উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়েছে। যশোরের শার্শায় কলেজ ও একটি কওমী মাদ্রাসা এবং রাজধানীতে বিডিআর পরিচালিত রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে।
যশোর শহরের নীলগঞ্জ এলাকায় ছেলে মোস্তফা কামাল বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি কিন্ডারগার্টেন। বীরশ্রেষ্ঠের নামে এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকলেও এদিকে দৃষ্টি নেই সরকারের। মোস্তফা কামাল আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, গ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি দীর্ঘ ১১ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। কলেজটির অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিও মেলেনি।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের পোষ্যরা হতাশার সঙ্গে বললেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।
রাষ্ট্র এটি স্বীকার করে। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যদের দাবি-দাওয়া কোনো সরকারই মানে না। যদিও প্রতি সরকারই দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল জানান, তারা বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যদের বসবাসের জন্য রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে প্লট চেয়ে আসছেন সরকারের কাছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ দাবিকে ন্যায্য হিসেবে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন সময়।
কিন্তু আজ পর্যন্ত প্লট মেলেনি কোনো পরিবারের ভাগ্যে। বাধ্য হয়ে তারা রাজধানীর পল্টনে পরিত্যক্ত একটি বাড়ির একাংশ দখল করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের গ্রামের বাড়িতে তার পরিবার-সদস্যদের বসবাসের জন্য ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ বছরেও এই বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান বীরশ্রেষ্ঠের পোষ্যরা।
তারা বলেন, ২০০৩ সালের ২৩ মার্চ তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পল্টনের জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, বীরশ্রেষ্ঠদের পোষ্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সরকারের। সেই ঘোষণার পর ছয় বছরে দেশে কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সন্তান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার বলে শুধু মুখে দাবি করলেই হয় না, বাস্তবে তা প্রমাণ করতে হয়। এই সরকারও যদি বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের দিকে না তাকায়, তাহলে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সঙ্গে এদের পার্থক্য থাকবে না।
’
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবার : বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মা কায়দাছুন্নেসা মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। এখন বেঁচে আছেন তার তিন ভাই ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা। এই তিনটি পরিবারের সম্বল মাত্র পাঁচ বিঘা চাষযোগ্য জমি আর নিম্ন পদের একটি সরকারি চাকরি। বড় ভাই হামজুর রহমান সরকারের দেয়া মত্স্য বিভাগের গার্ডের চাকরি করেন। অন্য দু’ভাই শুকুর আলী ও ফজলুর রহমানের আয়ের সুনির্দিষ্ট উত্স নেই।
পারিতোষিক হিসেবে প্রাপ্য সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ভাগাভাগি করে নেন তিন ভাই। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের ভাই ফজলুর রহমান দুঃখের সঙ্গে বললেন, এত কম টাকায় কীভাবে জীবন-যাপন করতে পারে তিনটি পরিবার?
ফজলুর রহমান জানান, ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার তাদের বসতবাড়ি তৈরি করে দেয়। ঠিকাদার বাড়িটির নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে। ফলে অল্পদিনেই বাড়িটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নির্মাণের পর গত ২৮ বছরে সরকারিভাবে একবার এবং তারা নিজেরা দু’বার বাড়িটি সংস্কার করেছেন।
তবু বাড়িটি বসবাসের উপযোগী হচ্ছে না। তিনি জানান, রাজধানীতে প্লট দিল না কোনো সরকার। বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামটি নামেই হামিদনগর, খাতাকলমে এখনও খোর্দখালিশপুর। গ্রামটির রাস্তাঘাটের জীর্ণ দশা। বহু তদবির সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দেয়নি।
অথচ বীরশ্রেষ্ঠের গ্রাম হওয়ায় বহু ভিআইপির আগমন ঘটে গ্রামটিতে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের নামে ঝিনাইদহে একটি স্টেডিয়াম রয়েছে। গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খালিশপুর বাজারের কাছেই গ্রামবাসী একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন বীরশ্রেষ্ঠের নামে। এই কলেজটিকে টিকিয়ে রাখতে বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে।
কিন্তু এখনও কলেজটির সব শিক্ষকের বেতন হয়নি। এই কলেজেই সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের পোষ্যদের দাবি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের শাহাদতবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হোক। বীরশ্রেষ্ঠদের জন্মস্থানে ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা রাস্তা নির্মাণ ও বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়া হোক।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।