তবে একলা চলরে.......
‘টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের মরণ ফাঁদ। এই বাঁধ বাংলাদেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব সরকারের। ’ টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে এসে দৈনিক আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের সদস্য ও রেসপেক্ট পার্টির চেয়ারম্যান জর্জ গ্যালওয়ে।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলই সরব। সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। এটা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থে সরকার-বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লন্ডনের বাংলাদেশী, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের অধিবাসী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট এলাকার নির্বাচিত এমপি গ্যালওয়ে আরও বলেন, আমি বৃহত্তর সিলেটে গিয়ে সুরমা নদী দেখেছি।
নদীটির ভারতীয় অংশে টিপাইমুখে বাঁধ দিলে তা হবে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়। এটা বড় ধরনের অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ না করার জন্য ভারতের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গ্যালওয়ে বলেন, ধ্বংসাত্মক অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চুপ থাকব না।
গ্যালওয়ে গত মাসে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল সফর করেন। এ সময় তিনি সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়েও টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করেন।
১২ দিনের সফর শেষে গত সপ্তাহে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে যান এবং গাজা সফর করেন। ৮ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের এই বর্ষীয়ান নেতা বক্তৃতা করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর বিকালে তিনি দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। এখানেই তিনি আমার দেশ পাঠকদের জন্য দীর্ঘ সাক্ষাত্কার দেন।
সাক্ষাত্কারে তিনি বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি, ইরাক-আফগানিস্তানে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্ব, ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার রেসপেক্ট পার্টির অবস্থান, বাংলাদেশের সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
প্রথমেই প্রশ্ন করা হয় টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে। ‘আমরা জানতে পেরেছি গত মাসের শেষদিকে আপনি টিপাইমুখের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সিলেট সফর করেছেন। সেখানে আপনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আপনি কতটুকু জানতে পেরেছেন?’ এই প্রশ্নের জবাবে গ্যালওয়ে বলেন, সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে আমার মনে হচ্ছে, টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ।
এই বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী মেঘনা মৃত্যুর মুখে পড়বে। মেঘনার পরিণতি হবে ফারাক্কা বাঁধের ফলে প্রমত্তা পদ্মার শীর্ণ স্রোতস্বিনীর আকার ধারণ করার মতো। মেঘনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত সুরমা-কুশিয়ারার পানিও শুষ্ক মৌসুমে শতকরা ৬০ ভাগ এবং ভরা মৌসুমে ১২ ভাগ হ্রাস পাবে। এর ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার বিশাল এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ এ অঞ্চলের মানুষের জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি, প্রাণিবৈচিত্র্য—সব কিছুর ওপর তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি কুফল দেখা দেবে।
টিপাইমুখ ড্যাম চালুর আগে যখন রিজার্ভারটি পূর্ণ করা হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে এর ভাটিতে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে, যা ওই অঞ্চলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং মত্স্য প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
গ্যালওয়ে এই বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি পুরোপুরি অবহিত। বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরোক্ষ প্রাণশক্তি মূলত এদেশের নদীগুলোই। আর শুধু টিপাইমুখ বাঁধ নয়, উজান দেশের যে কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি নদীগুলো নাব্য সঙ্কটে পড়ে তাহলে তা নদী অববাহিকার মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রতিই শুধু হুমকি নয় বরং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলবে। গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা ব্যারেজ এর মধ্যেই বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের অপরিসীম ক্ষতিসাধন করে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে শ্লথ করে দিচ্ছে, তা এখন মোটা দাগে টের পাওয়া যাচ্ছে।
আন্ত্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনো দেশ অভিন্ন নদীর উজানে কোনো কাঠামো নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এর ভাটিতে বসবাসকারী জনপদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবতে বাধ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার চিত্রটি কোথাও স্পষ্টরূপে উঠে আসেনি। টিপাইমুখ ড্যাম চালুর আগে যখন রিজার্ভারটি পূর্ণ করা হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে এর ভাটিতে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে, যা ওই অঞ্চলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং মত্স্য প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে ভূমিকম্পপ্রবণ এই এলাকায় মারাত্মক ভূমিকম্প হতে পারে।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় কী? জানতে চাইলে ব্রিটিশ এমপি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি।
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব সরকারের। তিনি দুঃখ করে বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সরকারের কোনো তত্পরতা চোখে পড়ছে না। বিরোধী দলকে কিছুটা সরব দেখছি। এটা ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গ্যালওয়ে আরও বলেন, আমি বৃহত্তর সিলেটে গিয়ে সুরমা নদী দেখেছি। নদীটির ভারতীয় অংশে টিপাইমুখে বাঁধ দিলে তা হবে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়। এটা বড় ধরনের অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ না করার জন্য ভারতের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গ্যালওয়ে বলেন, ধ্বংসাত্মক অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চুপ থাকব না। আমি এবং আমার দল বিষয়টি নিয়ে এর মধ্যেই কাজ শুরু করেছি।
নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি বলেছি, ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অধিকাংশের আদিবাস এই সিলেট অঞ্চলে। তাদের সম্পদ, ব্যবসা, বাড়িঘর—সবকিছুই এই টিপাইমুখ ইস্যুর সঙ্গে জড়িত। তাই এটাকে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বিষয় হিসেবে দেখলে চলবে না। ব্রিটিশ সরকারেরও অবশ্যই এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উচিত এবং বিষয়টি ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা চাইতে হবে। না চাইলে কেউ আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে আসবে না।
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপক আলোচিত বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে গিয়ে নানা দুর্ভোগের শিকার হওয়া। এ বিষয়ে গ্যালওয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমি জেনেছি এবং এই সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, শিক্ষার নামে যারা ব্যবসা করছে, তাদের কারণেই শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ব্রিটেনে আমি দেখেছি, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করা হয়। যেমন বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে বা কাছাকাছি নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। লন্ডনের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স বা এলএসই। এই নামটির মতোই একটু পরিবর্তন করে নাম দেয়া হয় এলএসসি অর্থাত্ লন্ডন স্কুল অব কমার্স। এমনকি অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজের নামেও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে। আর এসেই বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকার এসব ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ছে। আগামীদিনগুলোতে তাদের কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আমি আশাবাদী।
বাংলাদেশী-ব্রিটিশ অধ্যুষিত এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে এদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবেন কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে গ্যালওয়ে বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশী ব্রিটিশরা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেমন ধরুন, ২০১২ সালে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের মূল ভেন্যু গড়ে উঠছে পূর্ব লন্ডনে। এখানে প্রচুর কাজ রয়েছে। কিন্তু এই কাজের সুযোগ খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশী পাচ্ছেন। পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীরাই বেশির ভাগ পাচ্ছেন।
কারণ তাদের চামড়া সাদা। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্য চলছে। এটা তো হতে পারে না। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশী অভিবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে।
আমি মনে করি, বাংলাদেশী ব্রিটিশদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে আলোচনা করছি। আমি মনে করি, দ্রুত এই বৈষম্যের অবসান ঘটা উচিত।
এই পর্যায়ে গ্যালওয়ের সঙ্গে আলোচনা হয় ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে। ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? গ্যালওয়ে বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে ফিলিস্তিন নিয়ে কাজ করছি।
এই দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পুরো জাতি এখন নানা ভাগে বিভক্ত। পশ্চিম তীরে ইসরাইল বসতি গড়ে তুলছে। গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। মাঝে মাঝে এখানে বিমান থেকে খাদ্য ও চিকিত্সা সামগ্রী ফেলা হয়।
কিন্তু এর পরিমাণ সমুদ্রে এক ফোঁটা পানি ফেলার মতো। গত বছর গাজায় ২২ দিনব্যাপী ইসরাইলি হামলায় এক হাজার ৬০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ৬১ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ইসরাইলিরা পাগল হয়ে গেছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞ ‘ওয়ান কাইন্ড অব ম্যাডনেস’।
জানতে চাই ইয়াসির আরাফাতকে তিনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? গ্যালওয়ে বলেন, ইয়াসির আরাফাত ছিলেন পুরো ফিলিস্তিনি জাতির নেতা। তার কথা সবাই শুনত। আমি ইসরাইলি ও পশ্চিমাদের বহুবার বলেছি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধান করতে হলে ইয়াসির আরাফাতের মাধ্যমেই করতে হবে। কারণ আমি জানতাম, ইয়াসির আরাফাত কেমন মানুষ।
তার সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে। আমি তার মানসিক গড়ন বুঝেছি। তিনি ছিলেন শান্তির পক্ষে। ইসরাইলের আসলে শত্রুর প্রয়োজন। আর এই শত্রু হিসেবে বেছে নিয়েছিল আরাফাতকে।
এখন এই শত্রু হামাস। হামাস নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ইসরাইল এবং তার দোসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি এটা মেনে নেয়নি। তারা ফিলিস্তিনে বশংবদ সরকার চায়। স্বাধীনচেতা হামাস এটা মেনে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। গণতন্ত্র মানি, কিন্তু নিজেদের প্রেসক্রিপশন মতো, এটা হতে পারে না। হামাসকে আল কায়দার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। হামাস শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন করছে। হামাস জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল।
কিন্তু আল কায়দা তো অন্য জিনিস। তারা ইরাক, আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের নিয়ে চিন্তা করে। আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি, ইসরাইলের শত্রুর প্রয়োজন। এই শত্রু এখন হামাস। দমন-পীড়ন চালিয়ে শান্তি স্থাপন করা যায় না।
ইসরাইল যত দ্রুত এটা উপলব্ধি করবে, তাদের জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে।
সম্প্রতি গ্যালওয়ে গাজা সফর করেছেন। এই সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, গাজা এখনও একটি ধ্বংসস্তূপ। আমি সহসাই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মোটর র্যালি বের করব। এতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক যোগ দেবেন।
আগামী জুন মাসে যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে গ্যালওয়ের রেসপেক্ট পার্টিও অংশগ্রহণ করছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আমার দল থেকে আমিসহ তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। দু’জন লন্ডন থেকে। অন্যজন করবেন বার্মিংহাম থেকে।
বার্মিংহামে আমাদের প্রার্থী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সালমা ইয়াকুব। তিনি একজন সমাজসেবী। আমরা দৃঢ় আশাবাদী, তিনি বিজয়ী হবেন।
তিনি বলেন, আমার দল আসন্ন নির্বাচনে মূলত তিনটি প্রুতিশ্রুতি দিচ্ছে। এগুলো হলো যুদ্ধ বন্ধ, ইসলামী ফোবিয়া বন্ধ করা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে যুক্তরাজ্য যে যুদ্ধে জড়িয়েছে—এগুলো অন্যায় যুদ্ধ। ব্রিটিশ জনগণ এই যুদ্ধ চায় না। আমরা পার্লামেন্টে এর বিরোধিতা করব। ইসলাম সম্পর্কে নানা অপপ্রচার রয়েছে ব্রিটেনে। এই অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
এই অপপ্রচারের কারণে ব্রিটেনে মুসলমানরা চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা হতে দেয়া যায় না। ব্রিটেনে সবচেয়ে দরিদ্র হচ্ছে মুসলমানরা। অথচ তাদের যোগ্যতা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের চেয়ে কম নয়। মুসলমানরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এটা দূর করতে অবশ্যই আমরা কাজ করব।
তিনি বলেন, পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমি আমার বর্তমান আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। একজন বাংলাদেশী এখান থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যাতে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশী ব্রিটেনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন। যদিও ৩০ বছর আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ভূমিকার সমালোচনা করেন ব্রিটিশ এমপি জর্জ গ্যালওয়ে।
সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকে হাস্যকর মন্তব্য করে গ্যালওয়ে বলেন, সুদানের তুলনায় ইরাকে বহুগুণ বড় অপরাধ করেছেন বুশ ও ব্লেয়ার। ইরাকে অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে দশ লাখ লোক মারা গেছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। যুদ্ধেও মারা গেছে একই সংখ্যক। অথচ এই যুদ্ধের জন্য দায়ী বুশ-ব্লেয়ারের ব্যাপারে একেবারেই নীরব আইসিসি। আসলে মুসলমানদের ব্যাপারে তারা দ্বৈতনীতি অনুসরণ করছে।
বাস্তবে তারা যা করছে তা হচ্ছে, ‘হিপোক্রেসি’।
বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছিলাম। এরপরও বহুবার এসেছি। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে বাংলাদেশে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলতে পারি, ব্যাপক হারে বেড়েছে জনসংখ্যা।
আমি এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখতে রাজি নই। কারণ এই বিপুল জনসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে জনশক্তি। তৈরি পোশাক শিল্পে বিপুল সংখ্যক মেয়ে কাজ করছে। তারা সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে। আবার অনেক সময় শুনতে পাই, এই কারখানার ভেতরেই তাদের মৃত্যু হয়।
এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বাইরে অনেক অপপ্রচার আছে। আমি বলব, বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসী বা আল কায়দার দেশ নয়। এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।