আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসঃ আর দুই দিন পরেই ১৪ই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় যখন সমাসন্ন, তখন পরাজয় নিশ্চিত জেনে দখলদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা দেশের আলোকিত কৃতী সন্তানদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। বাংলাদেশের বরেণ্য সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, দার্শনিক ও চিকিৎসকদের বেছে বেছে হত্যা করে। সেই যুগসন্ধিক্ষণে দেশের যে মহান সন্তানদের নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়, তাঁদের নাম কালের পলেস্তারা পরে কখনই ধূসর- মলিন হবার নয়।

নিঃশেষে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা রচনা করে গিয়েছেন বেদনা-জর্জরিত এক গৌরবের ইতিহাস। বছর ঘুরে আসে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের দুদিন আগে আমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয় শোক-গভীর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, মুক্তিযুদ্ধের শেষপ্রান্তে এসে ঘাতকবাহিনী তাহাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার উন্মত্ত প্রয়াসে হিংস্র হায়েনার মত রাতের অন্ধকারে মেতে উঠে বুদ্ধিজীবী হত্যার নেশায়। অবশ্য ২৫শে মার্চের কালরাত্রি হতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের মধ্যে আরও অনেক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীই নিহত হন হানাদার বাহিনীর হাতে।

মুক্তিযুদ্ধকালে সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মরণে প্রতি বৎসর পালন করা হয়ে থাকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়ে হানাদার বাহিনী এবং তাহাদের এ দেশীয় দোসররা তাহাদের দুষ্কৃতির ইতিহাসে সংযোজন করে চরম বর্বরতার দৃষ্টান্ত। মানবতার ইতিহাসে সে এক কলংকিত অধ্যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার সেই নারকীয় উৎসবের কথা মনে পড়লে আজও মানুষের বিবেক কেঁদে উঠে, শিহরিত হয় আতংকে। সেই হত্যা, সেই জিঘাংসা, সেই কাপুরুষতার কোন জবাব নেই।

ক্ষমাহীন সেই অপরাধ। সেদিন যে অশুভ ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে এবং যে হীন উদ্দেশ্যে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তারা ভেবেছিল যে, এ দেশের মানুষের দেশপ্রেম, সাহস ও প্রেরণার উৎস মেধাবী সন্তানদের হত্যা করা হলে জাতির আত্মশক্তির বিলোপ ঘটবে। তারা হবে মেধার ক্ষেত্রে নেতৃত্বহীন এবং দিকভ্রান্ত। শুভ-সুন্দরের এবং স্বকীয়তার শক্তি হারিয়ে তারা নিঃস্ব-রিক্ত হবে, ভুলে যাবে মুক্ত চিন্তার পথ।

পা বাড়াবে সংকীর্ণতার পথে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ আত্মবিস্মৃত হয় নাই। ভয়ের দুঃস্বপ্ন এবং হায়েনার ছোবল এদেশবাসীর জয়যাত্রা রুখে দিতে পারে নাই। অমানুষিকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয়ও ঠেকাতে পারেনি।

বরঞ্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের অগণিত বীর শহীদানের শোণিত ধারার সহিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তধারা মিলে জনচিত্তে সঞ্চারিত করেছিল দেশাত্মবোধের ফল্গুধারা। আত্মত্যাগের যে অনন্য দৃষ্টান্ত ও মহৎ ইতিহাস শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ রচনা করে গিয়েছেন তা কখনও বিস্মৃত হবার নয়। কোন মহৎ আদর্শ ও মহৎ আত্মদান ব্যর্থ হয় না কখনও কোথাও। আমাদের মহান শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ আজ স্বশরীরে উপস্থিত নেই সত্য, কিন্তু কর্ম ও জীবন সাধনার মধ্য দিয়ে তারা যে শিক্ষা রেখে গিয়াছেন, তা কোনদিন ম্লান হবে না। "উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

" সত্যি উদয়ের পথে আমাদের মহান সন্তানেরা জীবন দিয়ে নির্মাণ করে গিয়েছেন জাতীয় জীবনে ক্রমাগত অগ্রসরতার সোপান। এ কথা সত্যি যে, স্বাধীনতা অর্জনের পর ৩৮টি বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও জাতি হিসেবে আমাদের অনার্জিত রয়েছে বহু কিছু। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা এখনও প্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করতে পারিনি। আবার এও সত্যি যে, নানা সমস্যা-সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন উৎসাহব্যঞ্জক। তবে একটি সত্যিকারের সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াতে হলে আমাদের যেতে হবে আরও বহু দূরে।

আর এ চলার পথে মুক্তিযুদ্ধের জানা-অজানা শহীদান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস আমাদের প্রেরণা যোগাবে নিরন্তর। বাংলাদেশের মহান বিজয়ের ৩৯তম বার্ষিকীতে এবং ৩৮তম শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা কায়মনোবাক্যে শহীদানের আত্মার শান্তি কামনা করি। আর আজকের এ দিনে এই-ই হোক আমাদের মিলিত উচ্চারণ, "মরণ সাগর পারে তাহারা অমর, তাহাদের স্মরণ করি পরম ও গভীর শ্রদ্ধায়"।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.