Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience অ্যামনেস্টির বিতর্কিত ভূমিকা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষার এক ওয়াচডগ। তার পাহারাদারি দুনিয়া জুড়ে। কিন্তু কার মানবাধিকার রক্ষার পাহারাদারি করে এ সংগঠন? একাত্তরের ভয়ংকর পৈশাচিক ঘাতকদের যখন বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখন তাদের পক্ষে মানবাধিকারের সাফাই গেয়েছে সংগঠনটি।
অথচ একাত্তরে পাকিস্তানিবাহিনী ও সহযোগী রাজাকার-আলবদররা বাংলাদেশের মানুষের ওপর অমানবিক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালালেও তখন টু শব্দটি করেনি এই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এ কারণেই বিশ্বখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি এ সংগঠনের সমালোচনা করে বলেছেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটা বিশেষ ধাঁচের মানবাধিকারের পাহারাদারি করে যেখানে আর্থসামাজিক সাম্য পুরোপুরি উপেক্ষিত।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যে গঠিত হয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির সদর দপ্তর লন্ডনে। এই বেসরকারি সংস্থাটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করছে মানবাধিকারের উত্তরণ ও মর্যাদা রক্ষায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছে এই সংস্থা।
‘জননিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ক্যাম্পেইন’ করার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বসেরা পুরস্কারও জুটেছে সংগঠনটির। ১৯৭৭ সালে পেয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। পরের বছর জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কারও।
অ্যামনেস্টির মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— নারী, শিশু, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা, নারীনির্যাতন ও যুদ্ধের আশঙ্কাবন্ধে সহায়তা করা। ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে এ কাজ করার অঙ্গীকার থাকলেও তা কি করছে অ্যামনেস্টি? যাদের অধিকার বিষয়ে গঠিত হয়েছে সংগঠনটি, প্রশ্ন এসেছে তাদের কাছ থেকেই।
কঠোর সমালোচনাও রয়েছে অ্যামনেস্টির ভূমিকা নিয়ে। নোয়াম চমস্কির মতে, নিছক পশ্চিমা বোধ থেকে উদ্ভূত বিশেষ ধাঁচের মানবাধিকারেরই শুধু প্রতিনিধিত্ব করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্যের দিকটি পুরোপুরি উপেক্ষিত।
বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকা তর্কাতীত নয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদারকবলিত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় কোনও ভূমিকা নেয়নি অ্যামনেস্টি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আল বদর, রাজাকারদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়েও এটি ছিল নিশ্চুপ।
এমনকী বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের বর্বর হামলা নিয়ে কোনও বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি।
অথচ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর যখন মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই মানবাধিকারের দোহাই দিতে শুরু করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে না।
অ্যামনেস্টির আহ্বান, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হলে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি যাদের বিচার চলছে তাদের মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। পরোক্ষভাবে অ্যামনেস্টির চাপ, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া যাবে না।
একাত্তরে নিপীড়িতদের মানবাধিকার রক্ষা করতে যাদের প্রবৃত্তি হয়নি, আজ তাদের মানবাধিকারের ধুয়ো তোলা বিবৃতি আসলে কাদের মানবাধিকার রক্ষা করে— নিপীড়িতের না নিপীড়কের? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।