নিজের জাতি আর মানুষের কল্যাণেই শান্তি পাই।
আমাদের দেশে জনপ্রশাসনের মান ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে- বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞজনরা প্রায়ই এমন কথা বলে থাকেন। আর এর জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় প্রশাসনের দলীয়করণকে। অভিযোগ রয়েছে, এখানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই মূলত নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা হয়। তাই প্রশাসনে মেধাচর্চার বদলে আজকাল রাজনীতির চর্চাটাই মুখ্য হয়ে উঠছে।
আর সে কারণেই প্রশাসনে মেধার ঘাটতি ক্রমান্বয়ে তীব্র হচ্ছে। অভিযোগটি নতুনও নয়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি বহুল আলোচিত একটি বিষয়। কিন্তু এসব আলোচনার ফল কি হয়েছে? দলীয়করণ কি কমেছে? না। উল্টো দলীয়করণ আরো বেড়েছে এবং তা নতুন নতুন ডালপালা বিস্তার করেছে।
বর্তমান সরকার তার শেষ সময়ে যেন শেষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর তা করা হচ্ছে শুধু ব্যক্তির পদোন্নতি দিয়ে নয়, পদেরও পদোন্নতি দিয়ে। তা ছাড়া পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি তো থাকছেই। ফলে এর পরিণতি নিয়ে প্রশাসনেও রীতিমতো শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে দলীয় আনুগত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য থেকেই এসব পদোন্নতি প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হচ্ছে।
আর তা এমনভাবে করা হচ্ছে যেন এক দফা বদলির পরও মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ স্থানগুলোতে দলীয় আনুগত্যের লোকজনই থেকে যায়। এর পাশাপাশি প্রশাসনকে সন্তুষ্ট রাখতেও নেওয়া হচ্ছে অনেক পদক্ষেপ। গ্রেড-২ থেকে অর্ধশতাধিক পদের মানোন্নয়ন করে গ্রেড-১-এ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ পদে একজনের স্থলে এখন তিনজনকে 'এ' গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশের পরিদর্শক, উপপরিদর্শক পদেরও মানোন্নয়ন করা হয়েছে।
এর আগে পদোন্নতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন, এমন অনেক কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গত জুলাই থেকে কার্যকর করে কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা মহার্ঘ ভাতা প্রদানের বিরোধী নই। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকেই যায়।
জনপ্রশাসনের দক্ষতা রাষ্ট্রের স্থিতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ জন্য জনপ্রশাসনে প্রকৃত মেধাসম্পন্ন ও যোগ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতি একান্ত জরুরি। কিন্তু দেশের বিদ্যমান ধারা সেই মেধা ও যোগ্যতাকে অস্বীকার করে দলীয় আনুগত্যের যে প্রথার প্রচলন করেছে, তা জনপ্রশাসনের কর্মক্ষমতাকেই খর্ব করছে। দেশ পরিচালনায় অদক্ষতারই প্রকাশ ঘটাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ছিল।
কিন্তু আমরা বাস্তবে তার উল্টোটাই দেখতে পাচ্ছি। আমরা আশা করি, শেষ সময়ে হলেও সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে উদ্যোগী হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।