পরে বলবো
সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অধিকারী সোনার দ্বীপ সন্দ্বীপ, বাংলাদেশর মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কুলে উর্মি বিধৌত ছোট্ট একটি জনপদ, প্রশাসনিক তালিকায় চট্টগ্রাম জেলাধীন একটি থানা। সংগ্রাম কাহিনী, বীরত্ব,গাঁথা, শৌর্যবীর্য, সাহিত্য,সংস্কৃতি, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনীতিসহ বহু ক্ষেত্রে এ উপমাহদেশের ইতিহাসে সন্দ্বীপবাসীর রয়েছে স্বর্ণালী অবদান। সন্দ্বীপে কৃতী সন্তানদের অনন্য ভুমিকায় সমৃদ্ধ হয়েছে এ উপমহাদেশের বহু গৌরবময় অধ্যায়। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও দ্বীপবাসীর রয়েছে বিপুল সাহিত্য ঐতিহ্য। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদিকবি মীননাথ রায় সন্দ্বীপের সন্তান ।
বিশিষ্ট গবেষক, জ্ঞাতনতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়, ”পুর্ববঙ্গের শ্রেষ্ঠ গৌরব এই যে, এদেশ থেকেই বাংলা সাহিত্য এবং নাথ পন্থের উৎপত্তি হইয়াছে। মীননাথ রায় যেমন বাংলার আদিম লেখক, তেমনি তিনি নাথপন্থর প্রবর্তক । তার নিবাস ছিল ক্ষীরোদ- সাগরের তীরে চরদ্বীপে, বর্তমানে সম্ভবতঃ যাকে সন্দ্বীপ বলে। প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে ও চন্দ্রদ্বীপকে সন্দ্বীপভূক্ত দেখানো হয়েছে।
১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের ও বহু আগে সপ্তদশ শতাব্দীতে আরবী ফার্সি বনাম বাংলা এ নিয়ে ব্যাপক মতভেদ ও আন্দোলন চলছিল।
বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো ভাষায় লেখনী ধরে জনমত গঠনে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন যে মহাকবি, সে কবি আবদুল হাকিমও ছিলেন সন্দ্বীপের সন্তান । ১৬৯০ সালে তাঁর জন্ম । আবদুল হাকিম সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, সন্দ্বীপের ব্যক্তি আবদুল হাকিমের কন্ঠেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি অকৃত্রিম দরদ ও প্রীতির কথা ধ্বনিত হয়েছিল। আবুদল হাকিমের আগে এমন বলিষ্ঠভাবে বাংলা ভাষার প্রতি অন্তরের আকর্ষণ প্রকাশ করতে কেউ সাহসী হয়েছিলেন বলে মনে হয়না। সে সপ্তদশ শতকে বাংলা ভাষা বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্যে আবদুল হাকিমের ক্রোধ ঝরে পড়েছিল ।
আবদুল হাকিমের কামনা আজ সার্থক হতে চলেছে। রাষ্ট্রভাষা রূপে বাংলা প্রতিষ্ঠার বিচিত্র সাহিত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা মাধ্যমে । এই আবদুল হাকিমকে বক্ষে ধারণ করে সন্দ্বীপ ধন্য । তাঁর সাহিত্য কর্মগুলো ঃ নুরনামা ইউসুফ জোলেখা , লালমতি, সয়ফুল মূলক, শিহাবুদ্দীন নামা নসিহত নামা কারবালা , শহরনামা, চারি মোকামভেদ ইত্যাদি । উল্লেখিত গ্রন্থগুলো রচনা করে আবদুল হাকিম বাংলা সাহিত্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
অনাদিকাল বাংলা ভাষাভাষীদের অন্তরে তাঁর আসন থাকবে অতি উঁচুতে। বর্ষ পরিক্রমায় তাঁর অমর পংক্তিমালা একুশের ক্রোড়পত্র , সাময়িকী বক্তৃতা বিবৃতি ও আলোচনা উদ্ধৃতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সন্দ্বীপবাসীর সাহিত্য ঐতিহ্য ও মননশীলতার ইতিহাস রূপকথার মত মনে হতে পারে। বাংলাভাষার রাজনৈতিক প্রবন্ধ সাহিত্যের বিশিষ্ট দিকপাল কমরেড মুজফ্ফর আহমদ সন্দ্বীপেরই কৃতী সন্তান। বিশিষ্ট বেতার ব্যক্তিত্ব সুসাহিত্যিক বেলাল মোহাম্মদের ভাষায়, তিনি যদি রাজনীতি বা সাংগঠনিক কোনো কাজে আদৌ জড়িত না হতেন, স্রেফ প্রবন্ধ রচনার জন্যও চিরজীবি হতেন।
বিশিষ্ট গবেষক, লেখক, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমরের ভাষায়, তিনি এক বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক প্রবন্ধ সাহিত্য বাংলাভাষায় প্রচলিত ও জনপ্রিয় করেছিলেন। বিশেষ করে শ্রমিক কৃষক ও নিপীড়িত মধ্যবিত্তের স্বার্থ সংশিষ্ট সমস্যা এবং তাদের শোষণ মুক্তির আন্দোলন নিয়ে এত পরিচ্ছন্ন ,দৃঢ়তাব্যঞ্জক এবং দিক নির্দেশক প্রবন্ধ তার পূর্বে আর কেউ রচনা করতে সক্ষম হননি। এ ব্যাপারে বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি নিঃসন্দেহে এ সমস্ত পথিকৃত। ১৮৮৫ সালে সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামে তাঁর জন্ম । আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কমরেড মুজফ্ফর আহমদ দীর্ঘদিন পরস্পরে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন যা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত।
নজরুল ছায়ানট গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন শ্রেষ্ঠতম বন্ধু কমরেড মুজফ্ফর আহমদকে । এছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, সর্বহারা মানুষকে নিয়ে লেখা বহু সৃষ্টিকর্মের পশ্চাতে কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ এর অপরিসীম অবদানের কথা বিভিন্ন নজরুল গবেষকের লেখায় পাওয়া গেছে। এখানে উলেখ্য যে, ১৯২৮ খ্রীস্টাব্দে নজরুল তার শ্রেষ্ঠতম বন্ধু মুজাফ্ফর আহমদের সন্দ্বীপস্থ বাড়ীতে বেড়াতে গিযেছিলেন। কার্গিল হাইস্কুল মাঠে (১৬ মাঘ,১৩৫৫) সন্দ্বীপ বাসী পক্ষ থেকে তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা প্রদান করা হয। সন্দ্বীপের চারদিকে শীতের শান্ত নদী-সমুদ্র, সন্দ্বীপবাসীদের আচার-আচরণ, আতিথেয়তা কবিকে মুগ্ধ করেছেল বলে জানা যায় ।
কবির সিন্ধু হিন্দোল ও চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের বেশ কিছু কবিতা সন্দ্বীপ সফরের ফসল বলে অনেক গবেষক মত প্রকাশ করেছেন। সারা ভারতবর্ষে কমরেড মুজফ্ফর আহমদ (কাকাবাবু) এর পরিচিতি ছিল ব্যাপক। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থের প্রণেতা: আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি , কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা , কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে স্মৃতিকথা, সমকালের কথা ইত্যাদি তার উলেখযোগ্য কীর্তি । সাহিত্য সেবায় তাঁর আরো উল্লেখযোগ্য কীতি তিনি বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের নবাজগরণের যুগে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সহকারী সম্পাদনা করেন।
তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সহকারী সম্পাদক ও একমাত্র সার্বক্ষণিক কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া ও নবযুগ ও গণবাণী পত্রিকা মাধ্যমে তিনি লেখক সৃষ্টিতে অসমান্য অবদান রাখেন। সমাজ মনস্ক পাঠকের কাছে তাঁর অমর সৃষ্টি এক দুর্লভ সম্পদ।
মোহাম্মদ ওয়ালীউলাহ জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত, পুরস্কৃত এক খ্যাতনামা সাহিত্যিক । তিনি সাহিত্যিক,সাংবাদিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসাবে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট দিকপাল ছিলেন।
লালকোর্তা এ ছদ্মনামে তিনি লিখতেন। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থের প্রণেতা । যেমন, সংবাদ ও সাংবাদিক, সেকালের কথা, সেকালের কাহিনী, ফাঁসির মঞ্চে, বিচিত্র জীবন, সেকাল ও একাল, আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, যুগবিচিত্রা, যুগবিবর্তন, জীবন জাগার কাহিনী, সাংবাদিকের সঞ্চয়, যুগযুগান্তর বাংলাদেশের অভ্যূদয়। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ (যুগ বিচিত্রা গ্রন্থের জন্য) ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মাসিক সাহিত্যিক ভাতা এবং ১৯৭৭ সালে শিল্পকলাও সাহিত্য পরিষদ, চট্টগ্রাম হতে সংবর্ধনা প্রাপ্ত হন। স্বদেশী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত জাতীয় পত্র পত্রিকায় অসংখ্য তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ লিখে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন।
তিনি অনেকগুলো পত্রিকা সম্পদনা ও সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। পত্রিকাগুলো হচ্ছে স্টার অব ইণ্ডিয়া, দৈনিক মিলাত, দৈনিক পয়গাম, দৈনিক সংবাদ , সাপ্তাহিক পাক জমহুরিয়াত ইত্যাদি । ১৯০৭ সালে সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে খ্যাতনামা এ মনীষী জন্মগ্রহণ করেন।
সমকালীন ইতিহাসে বেশ কিছু গর্বিত সন্দ্বীপবাসী জাতীয়ভাবে সুপরিচিত হবার গৌরব অর্জন করেন। এদের মধ্যে নুর- উল আলম , আফলাতুন, বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ , শামসুল হুদা চৌধুরীর নাম সবিশেষ উলেখযোগ্য।
নুর-উল আলমকে মুহাম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান রচিত বাংলা সাহিত্যর ইতিবৃত্ত গ্রন্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার আখ্যায়িত করা হয়েছে। নুর-উল আলম ১৯৩২ সালে সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। পুতুলের কান্না তাঁর বিখ্যাত গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত উপন্যাস ”প্রসাধন” ”উঁচুতলার নায়ক” ”এক বৃন্তে দুটি ফুল” তাঁর লেখা উৎকৃষ্ট নাটক। তাঁর “আধাঁরে আলো” ”চলো ঘর বাঁধি” ও স্বামী ” ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে । সরকারী কলেজে অধ্যাপনার চাকুরি ছেড়ে চলচ্চিত্র পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেছেন।
আফলাতুন একই সময়ের আরেক শ্রেষ্ঠ গল্পকার । অত্যন্ত উঁচুমানের গল্প লিখে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । তাঁর লেখা গল্প বেশ ক’বছর নিচের দিকের শ্রেণীতে পাঠ্যসুচীভূক্ত ছিল। সুদীর্ঘদিন তিনি (সদ্য-বিলুপ্ত) দৈনিক বাংলার শিশু সাহিত্যের পাতা, সাত ভাই চম্পার পরিচালক ছিলেন। তাঁর জন্ম সন্দ্বীপের রহমতপুর গ্রামে।
বেলাল মোহাম্মদ বিশিষ্ট বেতার ব্যক্তিত্ব হিসাবে জাতীয়ভাবে সুপরিচিত। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তা সংগঠক হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদান রাখেন। এ বীরোচিত ভুমিকার জন্য ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক স্বর্ণপদক ও সম্মাননার জন্য মনোনীত হন যা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে পরবর্তীতে দেয়া হয়নি। বেলাল মোহাম্মদ একজন সুসাহিত্যিক, কবি, কলাম লেখক, পুঁথিপাঠক ও বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার । ১৯৩৬ সালে সন্দ্বীপের মুছাপুরে তাঁর জন্ম ।
তিনি দ্বিসহস্রাধিক কবিতা ও গান রচনা করেন। স্বাধীন বাংলা বেতারে তাঁর রচিত বহু গান,কবিতা, কথিকা ইত্যাদি প্রচারিত হতো। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ: উৎস, কবিতা নয় কবিতা নয়, কবিতা ও দুটি গান, গল্পের মতো, শয়তানের মজলিশ, বাষট্টি কবিতা নয়, কবিতা ও দুটি গান, গল্পের মতো ,শয়তানের মজলিশ বাষট্টির কবিতা, পাক ভারতের যুদ্ধকাহিনী, লালবাবা, পযায়ক্রম নেই, আমানটোলার পযগাম, সামনে আছে মুক্তিযুদ্ধ, শুধু মিত্রাক্ষর, পযায়ক্রমিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র (যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অমূল্য দলিল) জয় বাংলা রেড়িও সাকিন সন্দ্বীপ,রবারের খেলা, রবি করে অবিরল। সম্পাদিত গ্রন্থ সন্দ্বীপ সন্দর্শন, কমরেড মুজফ্ফর আহমদ।
আবুল কাসেম সন্দ্বীপ বহু সাহিত্যকর্ম সৃজনে আত্মনিয়োগকরী মহান ব্যক্তি ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম উদ্যোক্তা, সংগঠক এবং এ কেন্দ্রের শেষদিন পর্যন্ত বার্তা বিভাগ, কথিকা বিভাগ,গান রচনা, নিবন্ধ,সংবাদ সাময়িকী ইত্যাদি লেখার দায়িত্ব পালন করেন। বেলাল মোহাম্মদের সাথেই ১০ জন স্বর্ণপদক প্রাপ্তির জন্য নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। ১৯৪০ সালে সন্দ্বীপের সারিকাইত গ্রামে তার জন্ম। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত সন্দ্বীপ সন্দর্শনের অন্যতম সম্পাদক। ফটিকছড়ি কলেজের সহ-অধ্যক্ষের চাকরি ছেড়ে ৭১ সালে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারে ।
দীর্ঘদিন দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর পরিচালনা করেন। এ সময় তার বহু ছড়া, কবিতা, ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। অনেকগুলো সাহিত্য ও গবেষণামূলক গ্রন্থ্য প্রণেতা । শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ গণশিক্ষা সমিতি কর্তৃক আজিজুর রহমান পাটোয়ারী স্বাক্ষরতা পুরস্কার বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে তিন দশকের অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার ভুষিত হন । সম্পাদিত সাময়িকী এবং অন্বেষা।
১৯৯৮ সালে জাতীয় পুরষ্কারে ভুষিত হন।
একাত্তরের আরেক মহান শব্দসৈনিক শামসুল হুদা চৌধুরী । জীবন ও জীবিকার মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের সয়য় রাজশাহী বেতার থেকে পালিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারে যোগদান করেন এবং বেতার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন সুসাহিত্যিক, ১৯৩৩ সালে সন্দ্বীপের মাইটভাংগা গ্রামে তাঁর জন্ম । তার রচিত গ্রন্থগুলো ঐতিহাসিক এবং সচেতন বাঙালির কাছে পরম আদৃত।
একাত্তরের রণাঙ্গন, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর, অরুণোদয়ের নেপথ্য কাহিনী ,” একাত্তরের বিজয় ” রণাঙ্গনে মেজর শফিউলাহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ । তিনি কয়েক বছর বাংলাদেশের বেতারের মুখপত্র বেতার বাংলা সম্পাদনা করেছেন।
মোঃ শাহ বাঙালি (মোঃ শফিউলাহ ) বাংলার সর্বত্র গণসঙ্গীত শিল্পী, পুথিও কবি গানের শিল্পী হিসাবে সুখ্যাত। সাহিত্য সাধনায় সন্দ্বীপবাসীর বর্তমান যে প্রবাহমানতা এবং দীপ্ত পদচারনা এটা পূর্বসুরীদের ঐতিহ্যের ধারায় লালিত বলাই সঙ্গত। কৃতী পূর্বসূরীদের মধ্যে আবদুল আউয়াল (১২৮৩-১৩৩৮হিঃ) “আল মোজালাতুল আদিবে লে আজালাতিল সন্দ্বীপ ” গ্রন্থের প্রণেতা।
মৌলভী বশির উলাহ চৌধুরী সাব রেজিষ্ট্রার ইংরেজীতে একটি অতি উচ্চমানের আরবী ব্যাকরণ প্রণেতা । শক্তিচরণ চৌধুরী কবিভূষণ রচিত “সুনীতিমালা” একটি উৎকৃষ্ট কাব্যগ্রন্থ । এ কাব্য তৎকালে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের পাঠশালাগুলোতে পঠিত হতো । শক্তিচরণ চৌধুরী কবিভূষণ সন্দ্বীপের মাইটভাংগা গ্রামে ১৮৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মুজিবুল হক ও মৌলভী আবদুল ফাত্তাহ অনেকগুলো পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা ।
মাওলানা মুসা (১৮৮১) বেশ কয়েকখানি পুস্তকের রচয়িতা। মৌলবী হাবিবুলাহ রচিত মোহাম্মদী দর্পণ, মৌলানা হাবিব উলাহ অনুবাদকৃত ”ফতোয়াযে আলমগীর” শামসুল হুদা সন্দ্বীপি অনুদিত ”শান্তিপথ” উলেখযোগ্য ধর্মীয় পুস্তিকা । মাওলানা আবদুল মালেক খাঁ সুলেখক ছিলেন। আরবী পদ্যে A Manual of Arabick Grammar in English আল-কাসিদাতুল ওয়াহি দিছা , তাগরিদুল বুলবুল, ছাওয়া লোহ শাহ সুফী আবদুল লতিফ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। দ্বিতীয় গ্রন্থটি জামাতে পানজমের পাঠ্য ছিল ।
তিনি বুলবুল ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন বলে তাঁকে “বুলবুলে বাংলা” বলা হতো। ১৯২৭ সালে তিনি সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানা ওয়াজিলাহ কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। তাজবিজুল হাছানাৎ, ফিজাওয়া ঝিল খায়রাত, মোনাজারায়ে ফেনী তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক হিদায়েতুন নুহ Rhetorical Prosody গ্রন্থের লেখক ।
শেষোক্ত বইটি ঢাকা ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য ছিল। শিক্ষাবিদ মাওলানা সৈয়দ আহমদও (১৯৮৯) একজন কৃতী লেখক ছিলেন। তাঁর “ভারতের স্বাধীনতা বিশ্ব মুসলিমের শান্তি” গ্রন্থটি বৃটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। “কোরান ও হাদিসের দৃষ্টিতে নারী” গ্রন্থটিও সৃধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় । মাওলানা হাফেজ আবদুল মালেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম, তিনিও সাহিত্য চর্চা করেছেন।
পাঁচতরিকায় অজিফা, গফুরী মারেফতি ভাণ্ডার, খ্রীষ্টান ও কাদিয়ানির বিরুদ্ধে কলমের তলোয়ার, মানবধর্ম ইসলাম ইত্যাদি তাঁর রচিত উলেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯২৫ সালে সন্দ্বীপের চরবদূতে তাঁর জন্ম । তিনি মাদ্রাসার বহু পাঠ্য পুস্তকেরও রচয়িতা । ১৯৫৬-১৯৭০ পর্যন্ত মাদ্রাসা বোর্ডের ৭ম শ্রেণীর উর্দু রিডারের লেখকও ছিলেন তিনি। মাওলানা মোহাম্মদ আলী, কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর প্রেরণায় বলকান যুদ্ধ শিরোনামে মুসলিম পূনর্জাগরণমূলক একটি গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেছিলেন।
তাঁর অন্য গ্রন্থটির নাম “শরীয়তের ফতাওয়া”। মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি গ্রামে তাঁর জন্ম । মাওলানা আফলাতুন কায়সার একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও গ্রন্থ লেখক । হাদীস শাস্ত্র ও অন্যান্য বিষয়ে তার বেশ ক’টি গ্রন্থ বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।
মাওলানা আমিন খান রিজভী, মাওলানা কামাল উদ্দীন খান ও অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম বেশ ক’টি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। মাওলানা খালেদ সাইফুলাহ সিদ্দিকী একজন বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, অরবী পসবান, পয়াগামসহ অকেনগুলো পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। মুসলিম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস রচনায় তিনি মাওলানা আকরাম খা সাহেবকে যথেষ্ট সাহায্য করেন। ইসলাম বিষয়ক বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ তৎকালীন পাকিস্তানের বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ একজন উঁচুমানের কবি ও সুলেখক।
সন্দ্বীপ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দ্বীপবার্তা প্রকাশনা ও সমপাদনার সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর অনেক লেখা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি গ্রামে তাঁর জন্ম।
১৯২৩/২৪ সালে অধ্যক্ষ রাজকুমার চক্রবর্তী ও অনঙ্গ মোহন দাশ মোক্তার রচনা করেছিলেন সন্দ্বীপের ইতিহাসে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে হিসাবে এ গ্রন্থে সমজদার মহলে আদৃত হয়েছে ।
পরবতীকালের ইতিহাস লেখকগণ ঐ গ্রন্থটিকে মূল অবলম্বন ধরে অগ্রসর হয়েছেন। অনঙ্গ মোহন দাস মোক্তার ’ প্রাণহরি বাবুর সংক্ষিপ্ত জীবনী ” সন্দ্বীপের গুহ বংশ” শতবর্ষে সন্দ্বীপ গ্রন্থগুলোর লেখক। ১৮৬৫ সালে সন্দ্বীপের মাইটভাংগা গ্রামে তাঁর জন্ম। এস,এম, আবদুল আহাদ কমরেড মুজাফ্ফর আহদের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সমসাময়িক ছিলেন। তিনি নবনুর, কোহিনুর, সুলতান, সুধাকর ইত্যাদি পত্রিকায় লিখতেন।
১৮৮১/৮২ সালে সন্দ্বীপের দুবলাপাড়ে তার জন্ম। কবি ফজলুর রহমান নিয়মিত কবিতা লিখতেন। ১৮৯৯ সালে তাঁর জন্ম। চানমিয়া বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করে সন্দ্বীপের প্রজাদের পক্ষে বলিষ্ট নেতৃত্ব দেন। প্রজাদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নিজে লোকগাঁথা রচনা ও প্রচার করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
সাহিত্য সাধনায় এবং সাহিত্যেসেবী দৃষ্টিতে ডাঃ নিত্য লালদাসের ভুমিকা অসামান্য । মুল ভূখন্ড হতে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ থেকে একটি পত্রিকা ”সাপ্তাহিক দ্বীপের কথা” নিয়মিত বের করে এর মাধ্যমের বহু লেখক সৃষ্টি করে গেছেন। ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ পত্রিকা বহু সাহিত্যসেবী তৈরী করে।
মাওলা চৌধুরী একজন যশস্বী লেখক, সাংবাদিক। তাঁর লেখা “বিশ্বযুদ্ধের চমকপ্রদ কাহিনী ” সাড়া জাগানো উৎকৃষ্ট অনুবাদ গ্রন্থ।
পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ঢাকার দৈনিক জিন্দেগীর সহ-সম্পাদক ছিলেন। অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতু, নাজাত সাপ্তাহিক পূর্বদেশেও তিনি সাংবাদিকতা করেন। ১৯১৬ সালে সন্দ্বীপে তাঁর জন্ম।
সুলতান মাহমুদ মূলতঃ জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। পেশায় তিনি হোমিওপ্যাথ ডাক্তার ছিলেন।
তার সাহিত্যকর্ম: মনিরা মেঘযৌবনা,সাইক্লোনে প্রেম, রিক্তার দাবী, বঞ্চিতা, রক্তিম আয়না, আজাদ না কয়েদ, নিশীথের সূর্য, বিদ্রোহী পাগলা, বিশ্বজননী আয়েশা সিদ্দিকা, নারীরত্ন হযরত রহিমা । ১৯৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
সফিনাজ নুরুন্নাহার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ রাজধানী ঢাকায় অতিবাহিত করেন, সেখানেই সাহিত্যচর্চা করেন। তাঁর সবগুলো সাহিত্যকর্ম ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। গল্প ও কবিতা লিখে তিনি ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন।
তাঁর প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম সোনালী দিগন্তের ইশারা. আমার ভালবাসার ফুল, এলেম আপন দেশে ও প্রবাস জীবনে। এছাড়াও তাঁর লেখা অনেক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সফিনাজ নুরুন্ন্াহারের জন্ম ১৯৩১ সালে সন্তোষপুর গ্রামে।
এম. আনসারুল হক রচিত “জীবনের দু’টি কথা” নামে একটি উপন্যাস ১৯৬১/৬২ তে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪০ সালে তাঁর জন্ম ।
এছাড়াও সাগর কন্যা সম্পদনায়ও সংশিষ্ট ছিলেন। সুধাংশুলাল দাস একজন ইতিহাস মনষ্ক লেখক । তিনি বহু বছর যাবৎ নোযাখালীর দেশের বাণী, চট্টগ্রামের পাঞ্চজন্য , কোলকাতার আনন্দবাজার, যুগান্তর,সত্যযুগ, লোকসেবক প্রভৃতি পত্রিকার এবং ইউনাইটেড প্রেস এর সন্দ্বীপ সংবাদদাতা ছিলেন।
এ.বি.এম. সিদ্দিক চৌধুরী আঞ্চলিকতার উর্ধে অঞ্চলকে তুলে ধরে পঞ্চাশের দশক থেকে সন্দ্বীপের ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি নিয়ে অনেক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। যেসব পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে তন্মধ্যে আলহেরা, সওগাত, মাসিক মোহাম্মদী,পুর্বদেশ,অন্যতম।
তার প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ শাশ্বত-সন্দ্বীপ, সন্দ্বীপে মুক্তিযুদ্ধে, সন্দ্বীপের লোক সাহিত্য (প্রকাশের পথে) সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম।
খালেদ বেলাল একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক। বেশকটি উপন্যাস রিখে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থসমুহঃ নৈঃশব্দে পদধ্বনি, স্মৃতির লাশ মর্গে,ক্ষমা চাই” শরিফার মা, আমৃত্য পুর্ণিমা জামান,অন্য এক বিশাখা চৌধুরী ও মরা গাঙে যুব সাতার সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি অনেকগুলো দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকায় গুরত্বপূর্ন পদে অধিষ্টিত ছিলেন। তন্মধ্যে সাপ্তাহিক চিত্রালী, দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক মিলাত,দৈনিক পয়গাম, সান্ধ্য দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক স্বাধীনতা,ˆদৈনিক ঈশান অন্যতম।
বিভিন্ন বিষয়ে কলাম লিখেছেন-দৈনিক স্বাধীনতা, দৈনিক জামান, দৈনিক সেবক, দৈনিক ঈশান পত্রিকা । সম্পাদনা করেছেন : হেরার দ্যুতি, বসন্তে বৈশাখীঝড়. অন্ধকারে সূর্যোদয়, ফ্যালকনরি ইন দ্যা হলস ও মানবপ্রমিক জোসেফ রেসিন্সকি । সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম।
ড. রাজীব হুমায়ূন রাজধানী ঢাকায় লেখালেখির সুবাদে ইতোমধ্যে পরিচিতি অর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশিাপাশি বেতার ও টিভির সাথে সংশিষ্ট।
বেতার ও টিভির তালিকাভূক্ত গীতিকার। প্রাকাশিত গ্রন্থ Socio-Linguistics and descriptive study of Swandip a Bangla dialect. আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গ রচনা বেতার টিভিতে প্রচারিত নাটক, নীলপানিয়া, মহাপ্রস্থান উলেখযোগ্য। সম্পাদিত গ্রন্থ : সন্দ্বীপের ইতিহাস সমাজও সংস্কৃতি। ১৯৫১ সালে সন্দ্বীপের মাইটভাংগা গ্রামে তাঁর জন্ম।
ড. হাসান মোহাম্মদ গবেষণামূলক গ্রন্থ ও প্রবন্ধাদি লিখে ইতোমধ্যে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি চট্টগ্রামে বেতারের সফল উপস্থাপক, কথক। ছাত্রাবস্থা হতেই লেখালেখিতে জড়িত । অনেকগুলো লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন। সম্পাদিত সাময়িকী : সন্দ্বীপ, সৈকত, কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি পত্রিকা উলেখযোগা্য। প্রকাশিত গ্রন্থ কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ও বাংলার কমিউনিষ্ট আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ: নেতৃত্ব সংগঠনও আদর্শ।
যন্ত্রস্থগ্রন্থ: তাবলীগ ও আন্দোলন ও তাবলীগ জামায়াত, বাংলায় সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন। সম্পাদিত সংকলনগ্রন্থ: সন্দ্বীপ সমীক্ষা। সন্দ্বীপের সাতঘড়িয়া গ্রামে তাঁর জন্ম।
আসাদ মান্নান গণসংযোগ বিভাগের বাংলাদেশ পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সবুজ রমনী এক দুঃখিনী” বাংলা কবিতার জন্য প্রথম পুরস্কা র প্রাপ্ত হন। তিনি এ কজন শক্তিমান আধুনিক কবি ।
জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন রাইটারস ক্লাব এর নির্বাহী সদস্য। দেশের প্রাক্সব প্রথম শ্রেণীর পত্র পত্রিকায় তার কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে: সৈয়দ বংশের ফুল, সূর্যাস্তের উল্টো দিকে, কোথায় পালাবে তুমি, সোনার হরিণ, দ্বিতীয় জন্মের দিকে, ভালবাসা আগুনের নদী। সন্দ্বীপের সাতঘরিয়া গ্রামে ১৯৫৭ সালে তাঁর জন্ম ।
সম্পতি সন্দ্বীপের প্রাক্তন এম.পি.এ্যাডভোকেট এ.কে.এম.শামসুল হুদার বাংলাদেশের সংবিধানের ভাষ্য বিষয়ক একটি উন্নতমানের গ্রন্থ (দুই ভল্যুম)প্রকাশিত হয়েছে।
এ্যডভোকেট রিদওয়ানুল বারীর প্রকাশিত হয়েছে একাধিক আইন বিষয়ক গ্রন্থ। প্রতিশ্রুতি লেখক মনওয়ার সাগরের ইতোমধ্যেই ”চন্দ্রা” ”মোহিনী” ও সৈকতে বিরহী মন” নামে তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। মোহিত কামালের গল্প সংকলন কাছের তুমি দুরে তুমি। একটি ভালো প্রকাশনা। গ্রন্থভুক্ত না হলেও এ.এল.বি, দুজা এ.কে.এম. আনসার-উল-হক , মঞ্জুরুল হক হেলাল, প্রকৌশলী এম.এ. কালাম,অধ্যক্ষ মনির আহমদ, গিয়াস উদ্দিন আহমদ,মাওলানা বেলায়েত হোসেন, আমিনুল হক,হাসানুর রহমান, সালাউদ্দিন, মোস্তাফা কামাল, কাজী মোশারফ হোসেন, মৌলভী এ.বি, সুলতান আহমেদ মোলা, ফজিলাতুন্নেসা, হাসিনা বেগম, হান্নানা বেগম, মাওলানা বেগম নুরজাহান আকবর, কাজী অলমগীর, মোঃ নুরুল আনোয়ার,এনায়েত উলাহ,আ.ফ.ম. হাসান দাস্তগীর, তানভীর আহমেদ, এম.্্এ.বাতেন. আবু জাফর মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম বুলবুল, ফুয়াদ হাসান প্রমুখের লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা গেছে।
মুস্তাফিজুর রহমান দৈনিক রুপালী সাপ্তহিক সন্দ্বীপ সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সম্পাদক ও প্রকাশক ।
্এ.এইচ,এম. শফিকুল মাওলা মানিক লেখালেখিতে জড়িত। ইংরেজী মাসিক The Commitment এর প্রধান সম্পাদক। ইকবাল সাইলো একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। তরুণ এ সাহিত্যসেবী ADAB এর মুখপাত্র The Grassroot এর সম্পাদক।
সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামে তার জন্ম।
শামসুল কবীর স্কুল পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনায় নিয়োজিত। রেখালেখিতে জড়িত আছেন। তার সুলিখিত গল্প/প্রবন্ধ স্কুল বইতে পাঠ্য আছে। সন্দ্বীপের হারামিয়াতে তাঁর জন্ম।
ডাঃ মোঃ ইসমাইল খানের লেখা হোমিও চিকিৎসায় পঞ্চাশ বছর একটি অত্যন্ত উচ্চমানের বই । সন্দ্বীপের ইজ্জতপুরে তাঁর জন্ম। ই.ম. বেলাল বেগ একজন সুসাহিত্যিক ও জাতীয় টিভি ব্যক্তিত্ব । বেশ ক’টি দৈনিকে নিয়মিত লিখেছেন। সার্থক টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজনার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত হন।
সন্দ্বীপের সন্তোষপুর গ্রামে তাঁর জন্ম।
প্রফেসর নুরুল আকতার হোসেন অনেকগুলো গ্রন্থের প্রণেতা । ১৯৪৭ সালে হারামিয়াতে তার জন্ম। মাহবুব উলাহ একাধিক পুস্তক রচয়িতা । আবুল কাসেম হায়দারের বেশ কিছু নিবন্ধ জাতয়ি পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিতহয়েছে।
টেলিভিশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায। তিনিও একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। বাংলাদেশের লিল্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা বাংলাদেশের শিল্প বিকাশের অন্তরায় ও সম্ভাবনা ” রপ্তানীমুখী শিল্প উন্নয়ন (অর্থায়ন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনা)মাসিক প্যানোমার সম্পাদক । সন্দ্বীপের মগধরা গ্রামে তার জন্ম। এ.কে.এম. রফিকুলাহ চৌধুরী একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ্।
সমাজ উন্নয়নমূলক তার অনেক লেখা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনিও একটি গ্রন্থের প্রণেতা। ভারত বিভক্তি ও বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা।
দিদারুল আলম রফিক একজন গীতকবি, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী । পেশায় তিনি শিক্ষক।
তার একাধিক সাহিত্য কর্ম রয়েছে। অঞ্জলী, কাননিকা , গানের ঝর্ণাধারা, পুষ্পকলি , সন্দ্বীপ রত্ন, কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ইত্যাদি। মোজাম্মেল হোসেন শামীম রাজনীতি বিষযে প্রবন্ধ লিখে থাকেন । তিনি মাসিক’ পেশাজীবীর অন্যতম সম্পাদক। স্বরূপ হাসান শাহীনের রবীন্দ্র ছোট গল্প: সমকালীন সমাজ দ্বন্দ্ব সহ আরও কয়েকটি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।
কাজী শামসুল আহসান খোকন বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার । কানাই চক্রবর্তী কানুসহ যৌথভাবে ”দুঃসময়ে দু’সুহৃদয়” শিরোনামে একটি কাব্যগ্রন্থ বের করেন। উভয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। কাজী শামসুল আহসান খোকন সন্দ্বীপ থেকে এ যাবত ঊনিশটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে সন্দ্বীপের এক ঝাঁক সাহিত্য সেবীকে সাহিত্য চর্চায় সচল রেখেছেন। সন্দ্বীপ থেকে প্রকাশিত এসব সাহিত্য সংকলনে সন্দ্বীপের মানস সম্পদের পরিচয় মেলে।
অনেকগুলো নাটকের রচায়িতা, নির্দেশক । সন্দ্বীপের আরো দুজন বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার আবদুল মঈন দিদার এবং মারজান আহসান মুক্তা উভয়েই লেখালেখিতে নিয়োজিত।
সৌরভ সাখাওয়াত, মাসুদ আনোয়ার, আকবর মাহমুদ বাবর, মহীউদ্দিন, শাহজাহান, মাহবুবুল মওলা রিপন, মুজীব মাসুদ, ইকবাল করীম ভুঞা নির্মান নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ ও সাখাওয়াত টিপু,মোজাম্মেল আনোয়ার-প্রমুখের-লেখা চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। মোজাম্মেল এর একটি কাব্যগ্রন্থ বাজারে বেরিয়াছে। এম.ছানাউলাহ রান (রানা সন্দ্বীপ) আর দেখা হলো না।
রক্তাক্ত ক্যাম্পাস একেই বলে প্রেম” উপন্যাসের লেখক। আলমগীর সরোয়ার অমিতপ্রেম” অপর প্রেম” অপর পৃষ্টা হৃদয়ে বসন্ত গোলাপের সাধ জাগে’ উপন্যাসের লেখক । মনিরুল আজম খান, এই শতাব্দীর প্রেমের উপাখ্যান উপন্যাসের লেখক। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সন্দ্বীপের বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত সাহিত্য সংকলন-সাগর কন্যা,দ্বীপালো, রুপসী সন্দ্বীপ, সবুজ সন্দ্বীপ, বিধ্বস্ত সৈকত, সন্দ্বীপের চিঠি, মশাল দ্বীপশিখা, সন্দ্বীপ সৈকত’ সন্দ্বীপ প্রবাল,পারিজাত,মৌননয়,সন্দ্বীপন লালসূর্য, শ্রমজীবী, একাত্তরের লোক, দ্বিপচিত্র, বুলেটিন, মহাকাল, আমরা,জনকের জমক, মুক্ত কন্ঠ, তবু বলতে হবে, চিরঞ্জীব রক্তের ঋন, স্মৃতি নয় ইতিহাস, উর্মি আমরা মুজিব,কে রোধে তাহার.......মৃত্যঞ্জয়, দ্বীপি, দ্বীপদর্পন,দ্বীপজাগরণ, রক্ত পলাশ, উপকূল, সিন্ধুর টিপ সন্দ্বীপের সাহিত্য কর্মীদের তারুণ্যমণ্ডিত উলেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। আসলে সাহিত্য সাধনা তথা মননশীলতার চর্চা সন্দ্বীপবাসীদের অস্থিতে মজ্জায়, শিরায়-শিরায।
দ্বীপের মানুষগুলোর সৃজনশীলতার প্রবাহ নদী আর সাগরের জলধারার মতই সতত প্রবাহমান। সাগরের ভাসমান এক টুকুরো মাটির দ্বীপ সন্দ্বীপের অধিবাসীদের সাহিত্য-অতীত ও সাহিত্য সাধনা রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য । এটাই তাদের চিত্তের বৈভব, সজীব আত্মার বহিঃপ্রকাশ্ সন্দ্বীপের সাহিত্য সেবীরা আমাদের জাতীয় সাহিত্যের ইতিহাসকে করেছে ঐশ্বর্যময়ও গৌরব দীপ্ত-একথা নির্দ্বিধায়, নিঃসন্দেহে বলা যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।