আমি কাক নই, আমি মানুষ...
দীর্ঘ সাত বছর পর জেল থেকে আজ ছাড়া পেয়েছে ইমরান। জেল থেকে সে ছুটে এসেছে সুখনগরী গ্রামে। যে গ্রামে সে বড় হয়েছে। এই গ্রামের সাথে তার আত্মার টান। কত মধুর সময়ই না কেটেছে তার।
প্রতিটি পথ ঘাট, মাঠে প্রান্তর ছুয়ে আছে তাকে। অথচ হঠাৎ গ্রামটাকে অচেনা মনে হচ্ছে। যেন এই গ্রামের সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই। কত বদলে গেছে সবকিছু। সময়ের স্রোতে থেমে থাকেনি কিছুই।
কিন্তু শুধু বদলায়নি সে। সেই আগের মতোই যেন থেমে আছে সব।
এখান থেকেই ‘মোঠো পথের ধুলো’ টেলিফিল্মের শুরু। তারই স্যুটিং চলছে। অদ্ভূত ব্যাপার হলো সুখনগরী গ্রামের মেঠো পথ ধরেই হেঁটে আসতে হলো।
পৌছালাম বেশ দেরি করে। তখন রাতের একটা সট চলছে। পৌছানোর পরই দেখলাম পরিচালক গম্ভীর মুখে বলছে, এটা আমাদের রুজি রুটির ব্যাপার। তোমার যদি শ্রদ্ধা থাকত তাহলে এ কাজ করতে পারতে না। পরিচালকের এ কথায় প্রযোজক শামীম খন্দকার কি বুঝলেন জানি না।
তবে যতটা সম্ভব মুখ গম্ভীর করে ফেললেন।
খোঁজ নিয়ে জানলাম ফারহানা মিলি রান্না করবে মাটির চুলায়। তার বাবা সাকা এসে তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু কিছুতেই চুলা ধরানো যাচ্ছিল না। তাই এক সময় এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর সাহেব স্ক্রিপ্ট ছিড়ে চুলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
সটও ঠিক মতো ওকে হয়। কিন্তু সট ওকের পর দেখা গেল মূল স্ক্রিপ্টের অংশ বিশেষও নেই।
সারাদিন স্যুটিং বেশ ভালোই চলছিল। তবে অঘটন যা ঘটার তা ঘটল দুই সিকুয়েন্স বাকী থাকতে। রাইসুল ইসলাম আসাদকে এলাকাবাসী পিটিয়েছে।
তার ছেলে লিটু আনাম তাকে গঞ্জে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তিনি মারা যান। ঠিক এ সময়ই পুলিশ এসে লিটুকে গ্রেফতার করবে। এই সটে পুলিশ তার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগাবে। সট প্রায় শেষ এই সময় লিটু চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
সবাই ছুটে গেল। কি হয়েছে? তিনি বেশ ব্যথা পেয়েছেন। কারণ হ্যান্ডকাফটা ছিল নষ্ট। তারচেয়েও বড় সমস্যা প্রোডাকশন বয় স্বপন এফডিসি থেকে হ্যান্ডকাফ ভাড়া আনার সময় তার চাবি আনেনি। এখন উপায়? হ্যান্ডকাফ খোলা না গেলে পরবর্তী সিকুয়েন্স কি করে করবে?
পরিচালক কি করবে খুঁজে পাচ্ছে না।
অনেক টানাটানি করা হলো। লিটুর হাত লাল হয়ে গেল। প্রোডিউসার তো মাথায় হাত দিযে বসে পড়লেন। টেলিফিল্মের শেষ পরিনতি এত ভয়াবহ হবে ভাবতে পারেননি। এমন সময় কে একজন থানায় ফোন দিল।
ওপাশ থেকে নানান প্রশ্ন, হ্যান্ডকাফ পেলেন কোথায়? কোথাকার চোর? কি চুরি করতে এসেছিল? চোরের হাতে হ্যান্ডকাফ কে পরিয়েছে? কেন পরিয়েছে? এত প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব না। এলাকার এক পুলিশ এসে কিছুণ ট্রাই করল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। ঘন্টা দুই অপোর পর পরিচালক প্যাকআপ করা ছাড়া যখন আর কোন উপায় খুঁজে পেল না। তখন সাহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল গ্রামের এক ছেলে।
লেদ মেশিনে সে কাজ করে। সে বলল, সে কেটে দিতে পারবে। লিটুকে নিয়ে যাওয়া হলো লেদ মেশিনের ওয়ার্কসপে। সমস্যা হলো একটু এদিক ওদিক হলে হাতের কব্জি কেটে যেতে পারে। তারপরও সাহস করে হাত এগিয়ে দিলেন লিটু।
চট করে হ্যান্ডকাফ কেটে ফেলল ছেলেটা। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার শুকরিয়া জানাল সবাই।
‘মেঠো পথের ধুলো’ টেলিফিল্মটিতে যেমন রয়েছে গ্রামীণ বাংলার পটভূমি তেমনি রয়েছে সাসপেন্স। উঠে এসছে গ্রামের বাস্তবচিত্র। আহমেদ ফারুকের রচনা ও এফ কিউ পিটারের পরিচালনায় এ টেলিফিল্মে যারা অভিনয় করেছেন তারা হলেনÑ রাইসুল ইসলাম আসাদ, লিটু আনাম, ফারহানা মিলি, সাকা, সিরাজ হায়দার, খালেদা আক্তার কল্পনা, রাজ, শামীম, শাহীন সুলতান, রাকিব প্রমূখ।
জামালপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ও রিজিক প্রোডাকশন প্রযোজিত টেলিফিল্ম ‘ মেঠো পথের ধূলো’ আসন্ন ঈদে প্রচারিত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।