আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নটরডেমের দিনগুলো ~ (৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্মৃতিকাতর পোস্ট )

Let the wind blow out the candles
নটরডেমে যেদিন প্রথম ক্লাস করতে ঢুকলাম, মন মেজাজ খুব একটা ভালো ছিল না। তার একটা প্রথম কারণ পুরা স্কুল জীবন বয়েজ স্কুলে পড়ার পর আবার সেই সৌন্দর্য বিবর্জিত বয়েজ কলেজেই পাইনসা লাইফ কাটাইতে ঢুকলাম। আরেকটা কারণ যেটা সেটা অবশ্য বেশি ভয়াবহ, আমার ধারণা ছিল নটরডেমে যাদের সাথে ক্লাস করতে যাচ্ছি তারা সবাই চশমা চোখে ভয়াবহ-দর্শন আতেল টাইপ হবে, বুকপকেট ফুটো করে কম্পাস বেড়িয়ে থাকবে। কারণ আমার সঙ্গীসাথী যে কয়টা চরম বান্দর ছিলো তার একটাও নটরডেমে আসতে পারে নাই। ক্লাসরুমে ঢুকে আক্কেল পুরোপুরি গুডুম, ১৬০ জনের ক্লাসরুম, সবার সিট ফিক্সড আর লোকজনে ভরপুর পুরো ক্লাসরুম গমগম করছে।

কিছুই করার নেই, তাই আমার সিট টা খুজে বের করে ভয়েভয়ে সামনে পাশের ছেলেগুলোর দিকে তাকালাম। দেখলাম তারাও আমার দিকে ভয়েভয়েই তাকাচ্ছে। এর মাঝে স্যার আসলো, ক্লাসও কয়েকটা হল, ছেলেগুলোর সাথে একটু আধটু মিশে আমার ভয়ভীতি কাটতে শুরু করেছে। এরমাঝেই পেছন থেকে খোচাখুচি শুরু হল, আর পাশের ছেলেটা 'আমার' 'নায়িকার' নাম জানতে চাইলো নায়িকা টার্মটার সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না, শিখলাম! সামনের পেছনের চারপাশের ছেলেদের মাঝ থেকে বিশেষ প্রতিভার অধিকারী ছেলেদের সন্ধান পাওয়া যেতে লাগলো এবং কোন একটা বোরিং ক্লাসে চিরায়ত গার্লফ্রেন্ডকেন্দ্রীক আলোচনার মধ্যদিয়ে আমার কলেজের প্রথম দিনটা শেষ হল, আর বুঝতে পারলাম এখানে দু'বছর খুব একটা খারাপ কাটবে না। নটরডেমে আসার পর ছেলেরা দু'টো মোহের প্রতি অসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে।

একটা হল, কলেজের আইডি কার্ড! কি জন্য, সেটা দুই নাম্বার মোহটার কথা শুনলেই ক্লিয়ার হবে - একজন (একের বেশি হলেও সমস্যা নাই) 'ভিকি' গার্লফ্রেন্ড। ঈদের চাদ আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে বেইলী রোডে একবারো ঘোরাফেরা করেনি এমন ছেলে মনে হয় হাজারে একটা হবে। আমরা কলেজে আসার পর আজব নিয়ম করলো, যার কয়েকটা অংশ এরকম: টি-শার্ট, হাফপ্যান্ট, থ্রিকোয়ার্টার কিনবা ডিজাইন করা 'দাড়ি' পরে ক্লাসে আসা যাবে না। সবই বুঝলাম, কিন্তু দাড়ি কিভাবে পরে আসা যায় সেইটা মাথায় ঢুকলো না। সম্ভবত আমাদের ব্যাচের 'ইয়ো' পোলাপানের সংখ্যাধিক্যের কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাথায় দাড়ি 'পরে' আসার চিন্তা ঢুকেছিল।

নটরডেমে ঢোকার পরে প্রথম দিকে মোটামোটি ইন্টারেস্টিং একটা কাহিনী হইছিল, যেটা নিয়ে এই পোস্টে হালকা পাতলা বলেছি। (বেশি না বলাই ভালু) । সায়েন্স ক্লাবের একটা মজার কাহিনী বলি। কলেজে আমার দেখা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ক্লাব, যেটা থেকে আমি শিখেছি 'ত্যাল' এর উপরে বাংলাদেশে কিছুই নাই! এই ক্লাবের এডমিনিস্ট্রেশনে যেতে বড়ভাই দের যে কি হারে পাম্পিং করতে হয়, সেটার খবর পেলে বুশ সাদ্দামরে হুদা না জ্বালায়া তেলের জন্য বাংলাদেশ আক্রমণ করতো। যে কারণে এই তেলাতেলি আর ক্লাবে ভালো পজিশনে যাবার জন্য ফাইট: সেটা হচ্ছে 'ইন্টার কলেজ সায়েন্স ফেয়ার'।

আন্ত: কলেজ শুনেই আপনার বুঝে ফেলার কথা, কোন কোন কলেজের কাদের জন্য ছেলেদের এত এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিস! হ্যা, 'ভিকি' রাই হটলিস্টের সবচেয়ে ওপরে, এরপরে আছে আরো কিছু মার্কা মারা কলেজ। সায়েন্স ফেয়ারে যেটা হয়, ভলানটিয়ারদের এক এক রুম এর দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হয়। সেই রুম মেইনটেইনের পুরা কন্ট্রোল থাকতো ভলানটিয়ার দের হাতে। অন্য কোন সময় ভলানটিয়ার পাওয়া যায়না, সায়েন্স ফেয়ারের সময় সবাই ভলানটিয়ার হইবার চায়। ঠেলা! ভিকি, হলি দের সেই বিশেষ বিশেষ রুমগুলোর ভলানটিয়ার তাহলে কারা হবে? হেহেহে, তেলের ড্রাম হাতে যারা এডমিনদের জবজবে করে ফেলেছে ইতোমধ্যে! ভলানটিয়ারদের বিরক্তিকর সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর টাই পরে আসতে হত, শুধুমাত্র অতিথি ললনাদের মুখের দিকে তাকিয়েই পোলাপান এই অত্যাচার সহ্য করে যেত।

ফেয়ারের আগে জেনারেল মিটিং এ সেই সময়ের এডমিন বড় ভাই বললো, পারলে টাই এর গায়ে নিজের মোবাইল নম্বর লিখ্খা রাইখো। আমি তেলবাজির দৌড়ে অনেক পেছনে, তাও মুখচেনা বইলা মোটামোটি একটা রুমের ভলানটিয়ার হয়ে গেলাম। কোন রুম সেটা আর বলছি না। তো একটু পরে দেখি নাইন-টেনের ছেলেমেয়েরা প্রজেক্ট নিয়া আইসা পড়ছে। স্কুলও ছিল আরকি আমরা যেই বয়েজ স্কুলে পড়তাম, পাশেই ছিলো গার্লস স্কুল একখান, যারা আমাদের স্কুলের সুবোধ ছেলেদের কাছ থেকে ভালোই সমীহা পেয়েছে ।

ভালো ছাত্র () হিসেবে সবাই মোটামোটি চিনতো আমাকে, প্রজেক্টের দিন সকালে আন্টিরা আমার নামে ডাক দিয়া তার মেয়েদের সাথে পরিচয় করিয়ে বললো, বাবা এদের একটু দেখে টেখে রাইখো। আমারে আর পায় কে! পিচ্চিগুলা কিন্তু ট্যাটনা অনেক। তারমধ্যে সবচেয়ে 'আকর্ষণীয়' গ্রুপটা দেখলাম কম্পিউটারে সফ্টওয়ার-টাইপ কি জানি বানাইছে। আমি গিয়া দেখলাম, ভিজুয়াল বেসিকে বানানো। এদের চেহারা দেখে মনে হইলো, এই জিনিস এদের বানানোর কথা না।

গিয়া জিগাইলাম, নিজেরা বানাইছো? মাইয়া আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকাইলো, তাতে তেজ আরেকটু বেশি হলেই আমি ভস্ম হয়ে যেতাম। শুরু হইলো আমার পাকনামি। শেষ পর্যন্ত অত্যাচারের ঠেলায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রজেক্টের এক মেয়ে আমার দিকে চুইংগাম ধরায়া দিয়ে বললো, ভাইয়া চুইংগাম খান । সায়েন্স ফেয়ারের সেই দুই দিন আমি দু'তিন ঘন্টা পর পর ওদের স্টলে ঘুরান দিয়া একটা কইরা চুইংগাম নিয়া আসতাম।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।