চিরায়তকাল ধরেই গালি আমাদের ভাষার একটি বড় অংশকে দখল করে আছে। শুধুমাত্র গালি খাওয়ার ভয়ে বাংলা ভাষাকে গালিমুক্ত করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। যেহেতু গালি নিয়ে কথা বলছি, তাই একজনকে নিয়ে দু-একটি কথা না বললে গালি কাব্য অসম্পূর্ন থেকে যাবে। আমাদের খুব কাছের একটি গ্রামে একজন লোক আছেন, যিনি অত্যন্ত বদরাগী এবং সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তিনি সাধারণত গালিমুক্ত কোন বাক্য বলতে পারেন না। তাদের বাড়ীতে একবার ডাকাতদল আক্রমণ করে তাকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে ফেলে।
সারারাত এই অবস্থায় থাকার পর সকাল বেলা দারোগা এসে তাকে রাতের ঘটনা সম্পর্কে বর্ননা করতে বললে তিনি নাকি প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ঘটনা বর্ননা করেছিলেন যার একটি শব্দও লিপিবদ্ধ করা যায়নি। নিরুপায় হয়ে দারোগা তার বড় ছেলের জবানবন্ধী নিতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু দিনের পরিবর্তনে গালি এখন আগরতলা ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে স্বর্গীয় পথ প্রদর্শনের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে এর বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে অনলাইনে। কারো উদ্ধৃতির সঙ্গে সামান্য মতপার্থক্য দেখা দিলেই “দে গালি” বলেই ঝাপিয়ে পড়ছেন একদল লোক।
আবার অনেক শিক্ষার্থীরা গালিকে তার স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ও মহিমা প্রচারের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছেন। এমন অবস্থা যে যত বড় মাপের প্রতিষ্ঠান ঠিক সেই মাপের গালি হওয়া চাই।
আবার কিছু লোককে দেখা যায় তার নিম্নপদস্থদের বা কাজের লোকদের ক এর বাচ্চা, গ এর বাচ্চা এবং তৎ জাতীয় বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে বলে, [বোনের ভাই] ছোটলোক, আরো আরো অনেক কিছু। বাহ মনে হচ্ছে, পুরনো লেভেল নামিয়ে “গালিতেই বংশের পরিচয়” এমন লেভেল টাঙাতে হবে।
আরো আশ্বর্য বিষয়, অনলাইনে কিছু লোককে দেখা যায়, যারা নিজেদের ধর্মানুরাগী বলে দাবি করেন।
এক্ষেত্রে বলে রাখি ‘শুধুমাত্র’ তারাই তাদেরকে ধর্মানুরাগী বলে দাবি করেন। কারণ, তারা কোথার থেকে যেন কিসব লিঙ্ক, ছবি এনে বিশ্রী গালিগালাজ সম্বলিত সংলাপে সেগুলো পোস্ট করেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি
কোন মুনি, কোন যোগী, কোন পীর, কোন রাসুল?
মানুষকে ঘৃণা করে, গালি দিয়ে করেছিল ধর্মের মহিমা প্রচার?
কোন কোন ধর্মগ্রন্থে গালি লিপিবদ্ধ আছে?
নাকি ধার্মিকের সংযত আচরণ, সত্যনিষ্ঠতাই বিপদগামীদের করেছে মুগ্ধ, করেছে শুদ্ধ,
এনেছে ধর্মের ছায়াতলে?
কিছু কিছু নব্য বকধার্মিকের অসংযত কর্যকলাপের কারণেই, অনেক মানুষের মনে ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ ধারনার জন্ম নিচ্ছে।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বা বন্ধুত্বে গালি দেওয়া যেতেই পারে। তাই বলে গালির ব্যবহার তো সর্বময় হতে পারে না।
তাছাড়া “যত বড় মুখ নয় তত বড় গালি” তো মেনে নেওয়া যায় না। গালি দেওয়ায় সময় একটু মাথায় রাখবেন কোন উদ্দেশ্যে কাকে গালি দিচ্ছেন, আর ঐ গালিটিই যদি আপনাকে দেওয়া হয় তাহলে আপনার মস্তিস্কের তাপমাত্রা ডিম সিদ্ধ নাকি ডিম মামলেট করার উপযুক্ত হবে। তাই
মিথ্যা কথায় তালি নয়, গালিতে গালি নয়
সংঘাতে নয়, বন্ধনে বাঁধা থাক পরিচয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।