আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
: আর কইয়ো না, আমার একখান চাচতো ছেলো যার নাম তসলিম। এমুন কুনো সার্কাস ছেলো না যে দেখাইতে পারতো না!
: (সমস্বরে আমরা কয়েক জন) যেমুন যেমুন?
: যেমন ধরো গিয়া দুইধারে দুই ব্লেড শূন্যে উঠায় দিয়া মাঝখানে শুইয়া পড়া, জানো তো সেলিম, এই খেলাটা সবচেয়ে রিস্কি হইলেও আমার চাচতোর কাছে ব্যাপার না। বিভিন্ন মেলায় সার্কাস কমিটি আইলে ওরে ডাক দিতো। ওর সবচেয়ে ভালো খেলা আছিলো কোনডা শুনবা নাকি?
: (সমস্বরে আমরা কয়েক জন) কোনটা কোনটা?
: সাইকেলের খেলা।
একবার হইলো কি, মাগুড়ার বড় ব্রীজটার রেলিং ধইরা সাইকেল চালানোর ঘোষনা দিলো। সেই দিন দুপুর বেলা সারি সারি লোকজন আইসলো। সে সাইকেল নিয়া ঐ রেলিং এর উপর, মামু বিশ্বাস না কইলে করবা না, পুরা ১৫ মিনিট চালাইয়া, কি হইলো হঠাৎ কইরা, সাইকেল সহ নদীত পইড়া গেলো।
: (সমস্বরে আমরা কয়েক জন) তারপর তারপর?
: তখন পুলাপান কইলো," তসলিম ভাই পইড়া গেছে-এইটাও একখান খেলা!"
তাহাকে আমরা "মোল্লা" বলিয়াই ডাকিতাম, আমাদের সকলের নয়নের মনি, জানের খনি, মাঝে মাঝে শয়তান গুনী! হলে যখন রুমের সীট নিয়া আমি নানারকম টালবাহানা শুরু করিয়াছিলাম তখন আমি ভাবছিলাম আমাদের হিজু ওরফে স্বপনের মাথায় কাঠাল ভাঙ্গিবো। উহাকে দেখিলেই মনে হইতো লুঙ্গী উচায় টাইনা ধরি, ব্যাটা লুঙ্গী পইড়া আমাগো ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় যাইতো সেইটা আমার স হ্য হইতো না, বিশেষ করিয়া তাহার চুলের স্টাইল! কিন্তু যখনি ২০০০ সালের জানুয়ারীর কুনো এক রাইতে হিজুর রুমে ঢুকিলাম," রইন্যা হোন, আমাগো ক্লাশে দারুন একখান মাল আইছে?"
: তাই নাকি? মাইয়াটার নাম কি? ঢাকার নাকি চুইঙ্গা?
: ধুরু হালা, মোল্লা ওর নাম।
ময়মনসিংহ কৃষি ছাইড়া এইখানে আইছে, যেমন কথা তার, তেমন তার ভাবসাব-একখান চীজ!
: তাই নিকি, দে নম্বর খানা দে, তোর মাথার কাঠাল ওর মাথায় ভাঙ্গুম!
: ওর রুম নম্বর হইলো ৩৬২। কিন্তু তুই সত্যি কইরা কতো তুই কি আমার মতো কাঠাল ভাংতে আইছিলি?
আমি ওর উত্তর না দিয়া মোল্লা নামক চীজের সাথে দেখা করিতে গেলাম। দেখা করিয়া তাহার সাথে কথা বলিয়া আমিও উহার ভক্ত হইয়া গেলাম, কারন জ্ঞানের এমন রসময় তুবড়ি আমি খুব কমই দেখিয়াছি।
এইবার আমার ন্যচারাল ভাষায় আসি!
ও যখন ১ম বর্ষে এক্সটেনশনে শিফট হয়, তখন ওর রুম মেট হয় শংকর আর শুভংকর! এই দুইখান চোইঙ্গা বাসীকে দেখলে সবার আগেই কইতাম,"শালার পিকে দুইটা আমাগো ক্লাসেই আইসা ঢুকলো!" (পিকে মানে কি সেইটা নিয়া আবার কেউ অপারেশন করতে বইসেন না!)
একদিন মোল্লারে কাছে পাইয়া জিগাইলাম," তুমার সুখের সংসার কেমুন চলে?"
: আর কইয়ো না, দুই চীজের লগে আছি, সারাদিন একখাটে লদকা লদকি। কিছুক্ষন পর আমারে নিয়াও খোচাখুচি শুরু করে।
গতকাইল আমি বইসা অনিলের ক্লাস টেস্টের লিগা পড়তাছিলাম, ঐ দুইটা দেখি পড়া শেষ কইরা সেইযে বিটলামী শুরু করলো। কিছুক্ষন পর পর আমারে খালি জিগায়," ও দুস্ত, কি করো?" আমি মেজাজ খিচা কইলাম," োল চুলকাই!"
এই ডায়লগ শুইনা তখন এমুন হাসি আইলো, তার পরের এক বছর ওর এই কথা বলার স্টাইলটা টপ চার্টের শীর্ষে চইলা যায়।
একবার মোল্লারে আমি মামু বানাইছিলাম ভার্সিটির বিশাল মাঠে। আমাদের একখানা কালচার ছিলো প্রতি বিকালে ডিপার্টমেন্টের কিছু পোলাপান মিলে উন্মুক্ত মাঠের ঘাটে বসে আড্ডা দেয়া। তখন একবার নানা বাদানুবাদে মোল্লা বলে," শালা তুই এই বডি নিয়া করছিস, তুই কি কখনো দেখছিস কোনো বডি বিল্ডার অথবা মাসল ম্যান সমাজে কিছু করতে পারছে?
: তুইও বক্সার যুদ্ধের নাম শুনছিস?
: (একটা ঢোক গিল্লা) শুনছি তবে ডিটেলস জানি না!
: চীনে কিন্তু জুজুৎস বিদরাই বেশীরভাগ যুদ্ধ করছে।
তখন ভারতের একজায়গায় একবার কিছু কিছু বক্সার যারা মুস্টিযুদ্ধ করতো তার ভাবলো বির্টিশদের বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে। যতদূর মনে পড়ে সেই যুদ্ধটাকে ট্যাকেল দিতে ব্রিটিশদের ঘাম ঝইরা গেছিলো।
মোল্লা টাস্কি খাইয়া চুপ হইয়া যায় তখন আশেপাশের পোলাপান আমারে কয়," আরে বস, আমাগো ক্লাসের দুই পীর আছে, কেউ কারে চেয়ে কম না!"
তার কিছু দিন পর রোজার বন্ধে চইলা যাই। ঈদের দীর্ঘ ১ মস বন্ধ খাইয়া ক্যাম্পাসে আিসা প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকতেই মোল্লার ঝাড়ি," ঐ চাপাবাজ, এদিকে আয়!"
: ক্যা বেটা, কি হইছে?
: আমার বাবা মাগুড়া কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক, তারে জিগাইছিলাম বক্সারের যুদ্ধ সম্পর্কে, সে কইলো ইন্ডিয়ার জায়গার নামানুসারে বক্সারের যুদ্ধ বলা হয়! এখন তুই আবার কইস না সে কিছু জানে না! ২৬-২৭ বছর ধইরা শিক্ষকতা করে!
পুলাপান এইডা শুইনা হাসতে হাসতে কাইত, কারন ১ মাস পর মোল্লা এই শোধ নিল যেইটার আঘাত সে ১ মাস ধইরা সইতে আছিলো!
পুরা ৬ বছরের জীবনে মোল্লা অনেক কিছু করছে, কারন এই পোলার মধ্যে আসলে যে বারুদ আছিলো সেইটা তারই প্রমান।
১) শিবির জুতানির সূত্রপাত:
একবার ক্লাস শেষ কইরা আইসা আমি, হিমিটি, মোল্লা আর মাহবুব একসাথে পেপার রুমে আসলাম।
আমাদের হলে মোট চারটা পেপার রাখতো তখন ইত্তেফাক, প্রথম আলো, জনকন্ঠ, যূগান্তর। সেদিন দেখলাম জনকন্ঠ বাদ দিয়ে ইনকিলাব রাখা হইছে। প্রথমে আমি সেটার উপরই ঝুইকা মেজাজ গরম কইরা কইলাম," প্রভোস্ট শালার কি মাথা খারাপ হইছে? চামচামী কার করে?"
: কেন কি হইছে?
: শালারা ইনকিলাব রাখন শুরু করছে, কবে যে সংগ্রাম রাখে আল্লা মালুম!
এইটা বইলা আমি প্রথম আলোর সাইডে চইলা গেলে মোল্লা দ্রুত যাইয়া ঐ ইনকিলাব টাইনা ছিড়া ফেলে আর কয়েকটা গাল দেয়। এমন সময় ম্যাকার আরেক পোলা ঐটা দেইখা চইলা যায়। সে যায় প্রথমে হলের সংস্কৃতিক সম্পাদক নুরুর কাছে, বাদানুবাদ শেষে আরো কয়েকটা শিবিরের পোলার রুমে যায়।
তখন নুরু ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি না নিলেও ৪ টার দিকে যখন দেখে শিবিরের পোলাপান সমবেত হচ্ছে তখন ও চলে যায় সাউথ হল। সন্ধ্যার দিকে শিবির মিছিল করে আর হল গেটে জাহাঙ্গীর ভাইকে পেয়ে মাইর দেয়। হলের সাইফুল, মোতা সবার মাথা গরম। ছাদে গিয়ে কয়েকটা ফোন, রাতের মধ্যে গিকা ভাইয়ের সৌজন্যে আর সাইফুল নিজের লিংক কাজে লাগিয়ে অস্ত্র চলে আসে, সেগুলো নিয়ে কোনোমতে হলের সব ছাত্রদল পোলাপান নর্থ আর সাউথ হলে চলে আসে আর শিবিরের পোলাপান কিউ কে তে অবস্হান নেয়! সকাল বেলা ছাত্রদলের সবাই ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সমবেত হয় এবং ব্যাপক পুলিশ প্রহরায় এগুতে থাকে গুলি চার্জ করতে। এটা নিয়ে ব্যাপক পিটানি হয় স্যার আর পুলিশের সামনে শিবিরের পোলপানদের উপর আর বাকি সব ইতিহাস!
২) ভার্সিটি আন্দোলন:
আসলে ব্যাপারটা প্রথম বলেন সিএসই র সাকী স্যার।
আমি আর ব্লগের ভ্যান ড্যাম একবার ওনার কাছে গেলে উনি আমাদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেন, কিন্তু মাথার উপর দিয়া যায়। পরে আস্তে আস্তে ২ য় বর্ষে মোল্লা এটা নিয়ে খুব কথা বলতে থাকে এবং এবারও ওর সাথে দেয় হিমিটি। তো এদের দীর্ঘ প্রচারনা আর যুক্তি আর চট্টগ্রাম আইইবিতে বিভিন্ন সিনিয়র ভাইদের সাথে কথা বলে একটা জনমত গড়ে ওঠে। ২য় বর্ষের প্রথম দিকে সিএসই ৯৮' এর পোলাপান এটা লুফে নেয়, এটা অবশ্য আমরাও লুফে নিতে পারতাম কারন জিএস এজিএস সব আমাদের ক্লাসের পুলাপান ছিলো তখন, কিন্তু আমরা খুব বেশী দ্বীধাবিভক্ত ছিলাম বিভিন্ন ইস্যুত, ফলে ইউনিটি বলতে আমাদের মাঝে কিছু ছিলো না। সিএসইর মাঝে সেটা থাকায় তারা এটাকে আরো বেগবান করে এবং ক্লাসে ক্লাসে জনমত গঠন করে।
তখন এই মোল্লার এ্যাডভাইসে কমিটি গঠন করা হয়, ১ম কমিটিতে তাকে আহ্বায়ক করা হয়! আন্দোলনটা স্ফুলিঙ্গের মধ্যে প্রতিটা অন্যান্য বিআইটিতে ছড়িয়ে দেয়া হয় মোল্লার বুদ্ধিতেই। মোল্লার তখনকার ভূমিকা ছিলো রীতিমত ফলাফল কেন্দ্রিক, তাই পরে নিজে কোনো কমিটিতে নাম লেখায় নাই, কিন্তু সিনিয়র ভাইদের পিছনে যতরকম তথ্য উপাত্ত গবেষনার কাজে কাজ করে গেছে সক্রিয়!
তাই এখন যখন চুয়েট বা বিআইটি গুলার ভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উৎসব উদযাপন করা হয়, তখন আলআমিন ভাই, রাকিব ভাই এর নাম উচ্চারন করলেও আমাদের ক্লাসের যাদের মাস্টার মাইন্ড থেকে এটা বেরোলো তাদের নাম কেউ বলে না বলেই হয়তো আমার এসবে যেতে গা করিনা!
৩) সংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং অন্যান্য:
কারিগরী দিক নিয়া সরকারি সাইডে যারা লেখাপড়া করে তাদের মধ্যে এক বুয়েট ছাড়া অন্যকারো মধ্যে এসবের তখন চল ছিলো না। যেটার ভালো একটা প্রভাব দেখতাম আই ইবির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। দেখা গেলো বৈশাখী মিলনমেলায় আই ইবির কোনো এক অনুষ্ঠানে কোনো সিনিয়র ভাই বক্তৃতা দিতে উঠলে দেখা গেলো সেও পাওয়ার লস, অথবা সার্কিট অথবা গ্রীডে কেনো সমস্যা দেখা দেয় সেটা বলা শুরু করলো যদি না সে বক্তৃতাটা লিখে না আনে! যাই হোক, আমাদের মোল্লা দারুন রবি ভক্ত, যদিও আমার কাছে মনে হতো এইটা একটু বেশী বাড়াবাড়ি। জয়ধ্বনী, গ্রীন ফর পিসে সব খানেই ওর দৃপ্ত পদচারনা আর ডিবেটিং সোসাইটি থেকে ফর্ম করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন ওকে দেখতাম পুরস্কার নিতে তখন মনে হতো ওর জন্য এটাই বেস্ট!
আমাদের কিছু পর মোল্লা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়, কারন ওর অসুস্হতা ওকে বেশ সমস্যায় ফেলে দিয়েছিলো!
তবে মানুষটাকে আমার মনে হয় একটু বেশীরকম আন্ডারগ্রাউন্ড, কারন পলিটিক্যাল নলেজ, সাংগঠনিক তৎপরতা অথবা সাধারন জ্ঞানে অসাধারন এই পোলাটার কাছে আমার এক্সপেক্টেশন অলওয়েজ হাই!
যাই হোউক ওর ব্যাপারে আরো কিছু বলার থাকলেও একপোস্টে বলবো না, কারন আমার নেক্সট টাইমে গল্প বলার মসল্লাতো দরকার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।