চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!
১৪তম শীতার্ত সহযোগিতা ও প্রচার কার্যক্রম ২০০৯
(প্রগতির পরিব্রাজক দল, প্রপদ '৯৬ সাল থেকেই দেশের শীতার্ত মানুষের সহযোগিতার লক্ষ্যে শীত বস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও হাতে নিয়েছে ১৪ তম শীতার্ত সহযোগিতা ও প্রচার কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য প্রপদের এই কার্যক্রমে বিগত সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন লিফলেট তুলে ধরা হবে ধারাবাহিকভাবে। আজ প্রকাশিত হলো ২০০৮ সালের পরিচালিত শীতার্ত কার্যক্রমের লিফলেট। )
শীত সংকটের সমাধানে, শীতার্ত মানুষ, জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে আসুন, জনগণের উপর চেপে থাকা শোষণমূলক ব্যবস্থাকে আঘাত করি!
বছর বছর কয়েক শ'লোক মৃতু্বরণ করছে শীতে।
শীত জনগণের জন্য আজও এক জীবন সংহারী সংকট। শীতে বাস্তুহীন-বস্ত্রহীন শীর্ণকায় কোন শিশু কিংবা বৃদ্ধের অসহায় কাঁপন যখন সাধারণের মানবিক অনুভূতিকে নিয়ত নাড়া দিচ্ছে, তখন এদেশের তাঁবেদার শাসক শ্রেণী এই সংকটের প্রতি নির্বিকার। তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের "স্বাধীনতা' ও 'গণতন্ত্র'র এই দেশে তাদেরই হাতে শোষিত-লুণ্ঠিত-নিপীগড়ত জনগণের সংকট ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে।
শীতের এই সংকট শৈত্যের সংকট নয়
বস্ত্র, বাস্তানের আবিষ্কার ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সভ্য মানুষ শৈত্যের সমস্যা দূর করেছে বহুকাল আগে। বরফ জমা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও মানুষ জীবন-যাপন করছে।
তবে এই একবিংশ শতকে সামান্য শীতে কোটি কোটি মানুষ কেন সংকটাপন্ন? কেন তাদের মৃত্যুর সাথে লড়তে হচেছ? সরল যুক্তিতে এর উত্তরঃ এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভাত, কাপড়, বাসস্থান, চিকিৎসার মত মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
শীত হতে আত্মরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকু ভোগ করতে পারছে না জনসাধারণ
সত্য আড়াল করায় যাদের স্বার্থ, তারা বলে "জনসংখ্যা বাড়ছে, দেশ গরিব, সম্পদ নাই। তাই মানুষের অভাব যায় না"। কিন্তু তথ্য কি বলে? তথ্য বলছে, ৩০ বছরে জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুন অথচ মোট উৎপাদন বেড়েছে ৬০ গুণ। কিন্তু আমাদের প্রতিজনের আয় এই সময়ে ৩০ গুণ বেড়েছে কি? না বাড়েনি।
বরং এক হিসাবে জানা যায়, '৮৩-'৯৬ সালের মধ্যে মাত্র আট বছরে সর্বনিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় ২৫% কমে গেছে। অন্যদিকে, '৭২ সালে যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন কোটিপতি ছিল, এখন কয়েক হাজার কোটিপতি সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং, শৈত্য-জনসংখ্যা-গরিবী-সম্পদহীনতা কোনটাই শীত সংকটের উৎস নয়। 'স্বাধীন' ও 'গণতান্ত্রিক' বাংলাদেশের শোষণ, লুণ্ঠন ও বৈষম্য বৃদ্ধির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম ফলাফল এই সংকট।
কৃষির ক্ষুদ্রাকার ও পশ্চাদপদ অবস্থা আজও অটুট রয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় সার, বীজ, কীটনাশক উচ্চমূল্যে কেনা, সরকারী ক্রয়কেন্দ্র ও ফড়িয়াদের কাছে সস্তায় ফসল বিক্রি, বর্গার ভাগ, এনজিও আর মহাজনী সুদ ইত্যাদি কেবলই নিংড়ে নিচ্ছে কৃষককে। গ্রামীণ অর্থনীতির সবটুকু শুষে নেয়া হচ্ছে, তাতে ফিরে যাচ্ছে না এতটুকুও। তাই গ্রামে সর্বগ্রাসী বেকারত্ব আর অভাব। মানুষ আসছে শহরে।
শহরেও শিল্প নেই, কাজ নেই।
বৃটিশ আমল হতে এদেশের শিল্প কারখানা সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই দেশের প্রয়োজনে ব্যাপক শিল্পায়ন আজও করা হচ্ছে না। ভারতীয় পণ্যের বাজার ও সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে শিল্পায়নের চৌহদ্দি নির্ধারিত হচ্ছে। পুরনো ও দেশীয় শিল্প ধ্বংস হচ্ছে।
গড়ে উঠছে ইপিজেড, গার্মেন্টস ধরনের শিল্প। শিল্পে কাজ জুটছে কম। এদেশের শ্রমিকদের বিশ্বের সস্তাতম মজুরীতে দেশী-বিদেশী শোষকেরা নিংড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই দেশী-বিদেশী শাসক-শোষক শ্রেণী দেশের গ্যাস, বন, ব্যাংক, বন্দর, বিদ্যুৎ, শিল্প-কারখানা, বৈদেশিক ঋণ, রাজস্ব সর্বত্র হরিলুট অব্যাহত রেখেছে।
'স্বাধীন' ও 'গণতান্ত্রিক' বাংলাদেশের শোষণ, লুন্ঠন ও বৈষম্য বৃদ্ধির অর্থনীতি কি উপহার দিচ্ছে?
এদেশের ৫০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে।
ইউএনডিপি'র এক হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নীচের ৪০% মানুষের কোন শীতবস্ত্র নেই, ৩০% মানুষের নেই দুটো জামা। অথচ শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে করা হাজার কোটি টাকার বস্ত্র ও শীত বস্ত্র দেশের প্রধান রফতানী পন্য। এটা হল সাম্রাজ্যবাদের সেবার অর্থনীতি। দেশের সম্পত্তিবান ও অর্থনীতির মালিক-চালকেরা উৎপাদন করে দেশের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে নয়। বরং সস্তাশ্রমের যোগানদার হয়ে দালালীর টাকায় ধনবান হতে।
এটাই এই দালাল শাসক শ্রেণীর ঠিকাদারীর অর্থনীতির চরিত্র।
তথ্য আরও দেখিয়ে দিচ্ছে, দারিদ্র্যসীমার নীচের ৯৬% মানুষের থাকার নিজস্ব ঘর নেই। বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি যে কৃষক, মজুরকে উদ্ধাস্তু করছে তারা ভিড় করছে শহরে, ফুটপাতে আর ঘিঞ্জি-নোংরা বস্তিতে। বিপরীতে মডেল টাউন, গার্ডেন সিটি, ন্যাম ফ্ল্যাট, টাওয়ার আর টাওয়ার কি সাক্ষ্য দিচ্ছে? দুর্নীতি-লুট-শোষণ আর দেশবিক্রির কালো টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে জমিতে, দালান নির্মাণে আর ফ্ল্যাট কেনায়। চলছে রমরমা রিয়েল এস্টেট বিজনেস, দালানের জায়গা ছেড়ে দিতে পুড়ছে বস্তি, কেবল তাই নয়, অপুষ্টি ও অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েই শীতার্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।
দেশে কেবল শিশুদের ৯২% এবং মোট জনসংখ্যার ৫০% আজ অপুষ্টিতে ভুগছে।
মঙ্গা, খাদ্যাভাব আর জনস্বাস্থ্যের দুরাবস্থার এই দেশে চলছে ব্যয়বহুর প্রাইভেট হাসপাতাল আর ক্লিনিকের প্রসার, টিভি-পত্রিকায় রেসিপির মৌতাত। শীতার্ত শিশুটির গোঙানির শব্দ ছাপিয়ে তালে তালে শীত পোষাকের ফ্যাশন প্যারেড, পত্রিকা জুড়ে রঙ্গিন খবর, রিহ্যাব মেলা, সিনেমা টিভিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের চাকচিক্য আর শপিংমলের জৌলুস-আজ এসবই হয়ে উঠছে অর্থনীতির প্রকাশ, শাসকশ্রেনীর সংস্কৃতির অঙ্গ।
অন্যদিকে, শীত সংকটের মূলে কি- সেদিকটি উহ্য রেখে, জনগণের দুর্দশা নিয়ে সৌখিন মানবিক বোধের বুদবুদ ছড়ায় শাসক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, পত্রিকা-মিডিয়া আর এনজিওরা। চেষ্টা চালায় জনগণকে বিভ্রান্ত ও বোকা বানাতে।
কিন্তু প্রকৃত বিশ্লেষণ যে সত্য তুলে ধরছে
সবার জন্য নয়, প্রধানত এ দেশের শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী মানুষের উপরই চেপে আছে এ শীত সংকট। দেশী-বিদেশী শাসকশ্রেণীর তীব্র শোষণ-লুণ্ঠনই এ শীত সংকটের মূল কারণ। তাই এ শাসক শ্রেণী জনগণকে এ সংকট হতে মুক্ত করতে পারে না। তাই শীত সংকটের সমাধান চূড়ান্ত অর্থে রাজনৈতিক। কেবল শীত সংকটই নয়, সমগ্র দেশ-জাতি-জনগণের মুক্তির জন্য প্রয়োজন শোষণ-বৈষম্য-লুণ্ঠনের এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা।
জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা। নিজস্ব অর্থনীতি ও সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
তাই আসুন, কেবল মানবিক বিচারেই সীমাবদ্ধ না হয়ে, শীত- সংকটের সমাধানসহ সমগ্র জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে বর্তমান শাসক ও তাদের শোষণমূলক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে, জাতি ও জনগণের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি গড়ে তোলার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
* শীতার্ত জনতার জন্য জরুরী সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসুন!
* নিরুদ্বেগ সরকারকে জরুরী ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে সোচ্চার হোন!
* শাসক শ্রেণীর বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সঠিক মত তুলে ধরুন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।