নতুন বছরের প্রথম সূর্য উঠবে কাল পুব আকাশে। কাল নতুন দিন। মহাকালের চিরন্তন গতি প্রবাহে বিগত হয়ে গেলো আরো একটি বছর। শুরু হলো ইংরেজি নতুন বছর ২০১৩। এই কামনায় স্বাগত ২০১৩।
বান্দরবানের অপরুপ নীলগিরি
সবুজ সৌন্দর্য্যের পরিবেশ বান্দরবান
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম দর্শনীয় একটি জেলা বান্দরবান। সাঙ্গু নদীর তীরে পাহাড়ের ঢালে এ শহরের সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সাঙ্গু নদীতে নৌ-ভ্রমণ ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ রয়েছে।
নীলাচল: নীলাচল বান্দরবান শহর থেকে ১০ কি: মি: দক্ষিণে ১ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ। যেখান থেকে নীল আকাশ যেন তার নীল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে মাটির সবুজ জমিনে।
চিম্বুক: বান্দরবান শহর থেকে ২১ কি: মি: দক্ষিণ পূর্ব মিলনছড়ি ও শৈলপ্রপাত ফেলে চিম্বুক যেতে হয়, এখানে পাহাড়ের চূড়ায় রেস্টুরেন্ট এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে।
মেঘলা: নাম মেঘলা হলেও মেঘের সঙ্গে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোনো সম্পর্ক নেই। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৭ কিঃ মিঃ আগে মেঘলা অবস্থিত। এটি সুন্দর কিছু উঁচু নিচু পাহাড় বেষ্টিত একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে। মেঘলার পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বান্দরবান পর্যটন হোটেলটি।
নীলগিরি: নীলগিরি বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। বান্দরবান জেলার ৪৭ কি মি: দ: পূর্ব দিকে লামা উপজেলার অংশ সমুদ্র পৃষ্ঠে থেকে ২ হাজার ২০০ ফুট ওপরে নীলগিরি অবস্থিত। নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে জিপ ভাড়া করতে হবে। ভাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত ছোট জিপ (৫ সিট) ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং বড় জিপ (৮ সিট) ২ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু লোকাল ড্রাইভার আপনার কাছে ভাড়া আরো বেশি চাইতে পারে।
সময় লাগবে আসা যাওয়া সাড়ে ৪ ঘন্টা। এছাড়াও বান্দরবানে রয়েছে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি, স্বর্ণমন্দির, কেওক্রাড়ং।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে চাইলে বহদ্দারহাট বাসটার্মিনাল থেকে নন এসি বাস আছে, যা ৩০ মিঃ পরপর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত: চট্টগ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এক ঘন্টায় যাওয়া যায়।
যাবার সময় গাড়িতে বসে সি-পোর্ট দেখতে পাবেন। পতেঙ্গার পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও নৌ-বাহিনী কার্যালয়। এযারপোর্ট রাস্তা ধরে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে তৈরি হয়েছে তারুণ্যের আড্ডাস্থল নেভাল। সেখানে রয়েছে সমুদ্র পাড়ের সাথে লাগানো বিশাল ঝিনুক মার্কেট এবং বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। পতেঙ্গার উত্তর পাশে কিছু হেটে অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া যায়।
কাপ্তাই: চট্টগ্রাম থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই। দু’কূলে পাহাড়-অরণ্য দেখে রাঙামাটি থেকে লঞ্চে কাপ্তাই আসা যায়। কাপ্তাইয়ের অন্যতম আকষর্ণ কাপ্তাই লেক। দুই মাইল দূরে কর্ণফুলি নদীর ওপারে রয়েছে চিৎমুরুং বৌদ্ধ মন্দির। ঝুম রেস্তোরা এবং লেকের ওপারে রয়েছে ছোট চা-বাগান।
কাপ্তাইয়ের কাছে শীলছড়ি। যেখানে রয়েছে ঝরনা আর বনাঞ্চল। পাহাড়ের গায়ে চোখ রাখলে দেখা যাবে বানর কিংবা অন্যান্য কোন প্রাণী।
রূপালী সৈকত কক্সবাজার: ১৫৫ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বিশাল সাগরের বুকে দৃষ্টি দিলে চোখে পড়বে শুধু পানি আর পানি।
পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতে সারি সারি ঝাউ বাগান, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সামুদ্রিক শামুক, ঝিনুক কিংবা মাছের বিপুল সংগ্রহ ও স্বাদ ভোগ করতে চাইলে কক্সবাজার আসতে হবে। বিনোদনের জন্য রয়েছে, বিচ-বাইক, স্পীড বোট, সমুদ্র স্নান, নানা দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা। বৌদ্ধমন্দির, বার্মিজ মার্কেট, পেগোডা, মহেশ খালীতে আদিনাথ মন্দির, কুতুবদিয়া বাতিঘর এবং বাংলাদেশি পণ্য, আচার আর হরেক রকম বিদেশি পণ্যের জন্য বিখ্যাত এই কক্সবাজার। এখানে থাকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
সৌন্দর্য্যের রাণী সেন্টমার্টিন: সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান বাংলাদেশের সব চেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ড বদর মোকাম থেকে মাত্র ১২ কিঃ মিঃ দক্ষিণে অবস্থিত। বৃটিশ শাসনামলে মিঃ মার্টিন নামের এক ধর্ম যাজকের নামানুসারে এই দ্বীপের নাম রাখা হয় সেন্টমার্টিন। এর আয়তন ৩.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপের অপর নাম নারকেল জিঞ্জিরা।
এ দ্বীপের নারিকেল গুলো খুবই সুস্বাদু। এছাড়া সেন্টমার্টিন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ দ্বীপজুড়ে অসংখ্য প্রবাল পাথরের মেলা। সমুদ্র তীরের সারি সারি নারিকেল গাছ, নীল জলরাশি আর সামুদ্রিক মাছের নানা ধরণের উপাদেয় খাবার খাওয়া যাবে এই দ্বীপে। সেন্টমার্টিনের শীতকালীন ভ্রমণ তুলনামূলক নিরাপদ।
এ দ্বীপে যাতায়াতের জন্য রয়েছে শীত মৌসুমে “কেয়ারী সিন্দাবাদ” ও “নাফসী” নামের দুটি জাহাজ। মাত্র দুই ঘন্টার এই ভ্রমণ পর্যটককে দারুণ ভাবে মুগ্ধ করে। ভাড়া পড়বে ৫০০/= থেকে ৬৫০/= টাকা। থাকার জন্য রয়েছে আবাসিক হোটেল।
প্রকৃতির রাজ্য রাঙামাটি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি রাঙামাটি পার্বত্য শহর।
রাঙামাটির উত্তর ও পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য। দক্ষিণে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ি। রাঙামাটিতে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়, অরণ্য ও হ্রদ। জল বিদ্যুতের জন্য কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই নামক স্থানে ১৯৬০ সালে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। এছাড়াও শুভলং এর পাথুরে পাহাড় ও ঝর্ণা, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও যাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার, পেদা-টিংটিং, পর্যটন কমপ্লেক্স ইত্যাদি রয়েছে দর্শনের তালিকায়।
ঢাকার ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় চ্যালেঞ্জার, এস.আলম, ডলফিনসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিস। প্রতি বিশ মিনিট পর পর বাস চলাচল করে। থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন মোটেল সহ প্রাইভেট মালিকানাধীন হোটেল।
খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেক জেলাশহর খাগড়াছড়ি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে খাগড়াছড়ি শহর।
বেশী দূরে নয় দীঘিনালা ও পানছড়ি। খাগড়াছড়ির সর্বত্রই পাহাড়ের পর পাহাড়। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পাশে রয়েছে দর্শনীয় স্থান শুভলং ও বরকল।
সবুজ এই দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার এক চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। তবুও বছরের পর বছর গড়ে উঠা সেই সভ্যতা আর ঐতিহ্যেরে চিহ্ন ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের পরতে পরতে।
চট্টগ্রামে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, এশিয়ার দীর্ঘতম প্রবাল সৈকত আর একই সৈকতে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার দুর্লভ সুযোগ এবং নানা উপজাতির বর্ণময় আদি জীবন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।