আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
রাজীবের মেজ মামা খুররম হায়দার ঢাকা মেডিক্যালে সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের পর থেকে পলাশনগরের টিনশেড বাসায় ফিরত না সে। শাহবাগেই থাকত। শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ভাগ্নের সঙ্গে শেষ কথা হয়। কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তেমন কথা হয়নি।
তবে তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রায়ই কথা হত তার সঙ্গে। রাজীব বলত, মামা আমরা একটি আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি, এখন তরুণরা এ আন্দোলনকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবে। রাজীব প্রায়ই বলতো, মামা আমি ইসলামবিরোধী নই, তবে জামায়াত ইসলামের বিরোধী। " সুত্র
জামায়াত ইসলামের বিরোধীতার কারনেই হত্যা?
রাজীব হত্যার জন্য পলাশনগরবাসী এক বাক্যে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে। এলাকাবাসী এ হত্যাকা-কে পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেছে।
এমনকি শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকসন্তপ্ত পরিবারকে দেখতে গেলে তাঁকেও একই ধারণা দেয়া হয়েছে। এলাকার আবালবৃদ্ধবণিতা এক বাক্যে শোভনকে মেধাবী স্থপতি হিসেবে উল্লেখ বলেছেন, তার কোন শত্রু ছিল না। তিনি অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও সাইবারের কাজ করায় সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকসহ তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ প্রিয়পাত্র ছিলেন।
তাঁর পারিবারিক সূত্র জানায়, শাহবাগের যে ১২ জন সংগঠক ছিলেন তার অন্যতম ছিলেন শোভন। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শোভন দিবারাত্রির বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন প্রজন্ম চত্বরে।
শুক্রবার দুপুরে মামার বাসায় ভাত খেয়ে বের হয়ে যান। সন্ধ্যায় তিনি শাহবাগ থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু সেটাই হয়ে পড়ে চিরবিদায়। বাসায় ফেরার সৌভাগ্য আর হয়নি। বাসার গেটে পৌঁছার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তাঁকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়।
শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়- সেখানে এখনও তাজা রক্তের দাগ। বিপুলসংখ্যক কৌতূহলী মানুষের ভিড় ঠেলে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে সেখানে তদন্ত কাজ করতে দেখা যায়। সেখানেই দশ বছরের এক বালক জনকণ্ঠকে জানায়, পাশেই তার বাসা। শুক্রবার রাতে যখন তাঁকে কোপানো হয়, তখনও শোভন জোরে চিৎকার করতে পারছিলেন না। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার অনেক পরও সেখানে কেউ যেতে সাহস পাননি।
পাশের একটি বহুতল ভবনের বাসিন্দা যিনি নিজেকে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে বলেন, শোভনকে হত্যা করা হয়েছে তাঁর বাসার মূল গেটের খুব কাছেই। তাঁকে হামলা করার আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে দু’যুবককে। শোভন সেখানে পৌঁছার পর পরই যুবকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার ভান করে। এরপরই যুবকরা প্যান্টের পকেট থেকে ছোট কুড়াল বের করে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালায়। দুজন দু’পাশ থেকে শোভনের গলায় কোপাতে থাকে।
মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ে উপর্যুপরি তিনটে কোপ দিয়ে তারা মুহূর্তেই দৌড়ে সামনের দিকে চলে যায়। তারপর বেশ সময় শোভন রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি দিয়েছে। পরে মানুষ একে একে আশপাশের বাসা থেকে বের হয়ে এসে শোভনের নিথর দেহ দেখতে থাকে। তখনও কেউ চিনতে পারেনি। কারণ ঘটনাস্থল অন্ধকার থাকায় কেউ ভাল করে দেখার সুযোগ পায়নি।
কৌতূহলী মানুষের মতোই শোভনের বাসার এক কাজের মেয়ে এসে তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এ ব্যাপারে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শোভনকে বেশ দূর থেকেই অনুসরণ করতে করতে ঘাতকরা বাসা পর্যন্ত পৌঁছে। শাহবাগ থেকে ফেরার পথে সাধারণত মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে রিক্সায় বা হেঁটে পলাশনগরের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। শুক্রবার রাতেও শোভন বাসার পেছনের রাস্তা দিয়ে ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছেন। ঘাতকরা তাঁকে গোলচক্কর থেকেই অনুসরণ করে তাঁর বাসা পর্যন্ত আসে।
শোভনের বাসার পারিপার্শি¦ক অবস্থাও নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার উপযোগী বলে প্রতিবেশীরা জানায়। পলাশনগরের এ মহল্লাটি এমনিতেই সন্ধ্যার পর বেশ নিরবিলি থাকে। তাদের বাসা ঘেঁষেই পেছনে রয়েছে বাইশটেকীর বিল। চার দেয়াল ঘেরা বিশাল জায়গার এক কোণে একটি ছোট্ট টিন শেড ঘর। তাতেই থাকতেন শোভন।
বাসার তিন পাশে রয়েছে সারি সারি বিশালাকৃতির সেগুনগাছ। দিনের বেলাতেও যে কারোর গা শিউরে ওঠার মতো পরিবেশ। ঘাতকরা এসব বিষয় আগে থেকেই রেকি করে ছিল বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
কেন এ হত্যাকা- জানতে চাইলে এলাকার সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, পলাশনগর হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি। বিএনপির যে কোন কর্মসূচীতে এখানকার শিবিরের ক্যাডাররা মুহূর্তেই বিশালাকার সশস্ত্র মিছিল বের করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শোভনের হত্যাকা- এদেরই কাজ। সুত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।