হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
প্রত্যেক সেনাবাহিনীতে বিশেষায়িত এক ধরনের যোদ্ধা থাকে যাদের কমান্ডো নামে অভিহিত করা হয়। এরা যে কোন পরিস্থিতে যে কোন স্থানে যুদ্ধ করতে সক্ষম। চলুন দেখি পৃথিবীর ভয়ঙ্কর কিছু কমান্ডো বাহিনী
স্পেৎনাজ
দুনিয়ার যত কমান্ডো বাহিনী আছে তার মধ্যে স্পেৎনাজ এর বিষেশত্ব হল এদের ট্রেনিং এর ধরন।
দুনিয়ের স্বাভাবিক যত প্রশিক্ষন আছে তা এরা তো নেয়ই, আর নেয় ব্যাথা সহ্য করার স্পেশাল ট্রেনিং। ট্রেনিং এর সময় অবশ্যই এদের শরীরের কোন একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয় যেটা এদের ট্রেনিং এর অংশ। এদের দাবী হল ব্যাথাকে ভয় পেয় না, ব্যাথাকে আনন্দ পাওয়ার উপকরন হিসাবে দেখ। দুনি্যার আর কোন কমান্ডো গ্রুপের মধ্যে এই বিভৎস ট্রেনিং নাই।
এই পৈশাচিক অংশের মধ্যে আছে পাজরের হাড়, আঙ্গুল, মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেলা, এটা কমান্ডো ট্রেনিং এর শেষ পর্যায়ে ঘটে পরে চিকিৎসা করে ভাল হলে সে এক জন স্পেৎনাজ হয়।
এরা রুম টু রুম বা মুখোমুখি যুদ্ধে দুনিয়েরা শেষ্ঠ। এরা কমান্ডো অভিযানের পাশাপাশি খুব উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতাদের বডিগার্ড হিসাবে ও নিয়োজিত। নিশ্চয় ই বলতে হবেনা স্পেৎনাজ রশিয়ার এলিট বাহিনী।
ফ্রেঞ্চ ন্যাভাল কমান্ডো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের অফিসার জ্যকুইস দ্য কস্তার হাত ধরে ফ্রেঞ্চ ন্যাভাল কমান্ডো গ্রুপ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরা নিজেদের কে ‘বেরেতস ভার্ত’ নামে পরিচয় দেয়।
ফ্রেঞ্চ ন্যাভাল কমান্ডো ছটি ফরর্মেশনে বিভক্ত, Hubert, Trepel, de Montfort, de Penfentenyo, Jaubert, and Kieffe। প্রত্যেক ফরর্মেশন আলাদা আলাদা যুদ্ধে বিশেষজ্ঞ, কেউ আন্ডার ওয়াটার যুদ্ধে, কেউ ক্লোজ কমব্যাটে, কেউ স্নাইপিংয়ে, স্নাইপিংয়ে বিশেষজ্ঞরা আবার মিসাইল ছোড়ায় ও ওস্তাদ।
মারসক (MARSOC)
এক মাত্র ইউ এস মেরিনের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের সদস্যরা এই বাহিনীতে আসার যোগ্যতা রাখে। এদের প্রাথমিক মিশন হল ঝুকিপূর্ন ক্ষেত্র পরিদর্শন সরাসরি এ্যাকশন, বিদেশে গোপনে ঢুকে যুদ্ধ পরিচালনা করা।
এদের ট্রেনিং চারটি ফেজএ বিভক্ত, ফেজ ওয়ান training, survival, evasion, resistance, escape (SERE), এরা বরফ থেকেও আগুন উৎপন্ন করতে পারে, বরফকে হাতের তালুতে নিয়ে গরম করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লেন্সের আকৃতি দিয়ে সেই লেন্সকে ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস হিসাবে ব্যাবহার করে সৌর শক্তির সাহায্যে আগুন ধরায় পুরো প্রক্রিয়াই কোন রকম কোন মানুষ্য তৈরী যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করা হয় না।
এরপর তাদের শুরু হয় ফিজিক্যাল ট্রেনিং নেয়া আর খালি হাতে যুদ্ধ প্রশিক্ষন। খালি হাতে যুদ্ধের মধ্যে Jeet Kune Do, Wing Chun, Karate, Jiu-Jitsu, even Pankration. Then, Sayoc Kali। সায়ক কালি হল ফিলিপিনোদের বিশেষ চাকু ফাইট।
ফেজ টুতে হল, লক্ষ্যভেদে পারদর্শীতা, পানির নীচে বিস্ফোরক বসানো, ঝুকিপূর্ন এলাকা ঝুকিহীন ভাবে ঘুরে আসা। ফেজ থ্রি হল ফেজ টুর কন্টিনিউশন কিন্তু সাথে রেডিও বাবহার ও সাটেলাইট ব্যাবহার এর এ্যাডভান্স ট্রেনিং।
ফেজ ফোর হল ‘anything goes’। যে কোন পরিস্থতিতে যে কোন ধরনের বিপদের মুখোমুখি হওয়া। এর পরেই একজন মারসক কমান্ডো আত্মপ্রকাশ করে।
এম আই-৬
জেমস বন্ডের সংস্থা। এ সংস্থা এম আই-৫ এর সাথে খুব গোপনে কাজ করে, এদের কাজের অন্যতম কাজ হল কাউন্টার ইন্টেলেজিন্স, কাউন্টার এসপিওনাজ।
এম আই-৬ এর এজেন্টার সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এদের কাজ হল ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যে এই কাজ করবে তাদের সে খানে খুন করা।
এদের হেডকোয়ার্টার হল লন্ডনের ভক্সহল ক্রস। এখানে যেয়ে আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন বন্ডের ব্যাপারে, তাদের এক মাত্র মুখস্ত উত্ত্র শুনবেন ‘নো বন্ড, ওহ শিট ভেরী বোরিং জব’। এর যখন অপারেশনে যায় সম্পূর্ন গেজেট ( মারানাস্ত্র) সজ্জিত হয়ে যায় আসলে জেমস বন্ড কিন্তু বাস্তবতার নিরিখেই লিখিত।
সায়াতেত ১৩
এর মানে হল ‘ফ্লোটিলা-১৩’।
এদের স্লোগান ও ইসরাইলী সেনাবাহিনীর অনূরূপ। ‘হলোকাষ্ট নেভার এগেইন’। এরা মঝা করে বলে ‘When the going gets tough, the Jews get pissed.’
সায়াতেত ১৩ ইসরাইলের অন্যতম এলিট ইউনিট, এরা জিম্মি উদ্ধারে বিশেষ পারদর্শী, পৃথিবীর যেকোন দেশে যে কোন সময় এর খুন করতে প্রস্তুত। এদের মিশন লোক সমক্ষ্যে প্রকাশ করা হয় কিন্তু এদের কোন সদস্য কখনো লোক সমক্ষে আসেনা। এদের সবচেয়ে প্রচলিত জনপ্রিয় অপারেশন ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলম্পিকে যখন ফিলিস্তিনি গেরিলারা এদের অলম্পিয়ানদের মেরে ফেলে তখন এরা সারা পৃথিবী ঘুরে সেই সব ফিলিস্তিনিদের খুন করে।
বন্ধুক যুদ্ধের পাশাপাশি এরা ইসরাইলি খালি হাতের মারামারি “রাভ মাগা” এ দক্ষ। এই কমান্ডো গ্রুপ যখন বের হয় তখন শূধু খুন করার জন্যই বের হয়।
গ্রীন বেরেটা
ইউ এস আর্মির স্পেশাল ফোর্স। এরা সাধারনত সবুজ বেরেট পরে। এদের কাজ ও অনেকটা ব্রিটেনের এম আই-৬ এর মত।
দেশ বিদেশ যারাই আমেরাইকার জন্য থ্রেট তাদের খতম করা।
এরা কখনো কখনো সরাসরি যুদ্ধ না করে স্থানীয়দের ট্রেনিং দিয়ে দুই বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে যুদ্ধ বাধাতে শুরু করে যা তারা আফগানিস্থান, ভিয়েতনাম, কোরিয়ায় করেছে। এদের কাজ ও অনেক টা গুপ্তচরের মত। যারাই এই এলিট ফোর্সে আসতে চায় তাদের যোগ্যতা ১২ টি বিষয়ের ওপর থাকতে হয় ‘intelligence, physical fitness, motivation, trustworthiness, accountability, maturity, stability, judgment, decisiveness, teamwork, influence, and communications’ আবেদন করার মাত্র ৪০% এর এই যোগত্য থাকে।
এদের ট্রেনিং ভীষন কষ্ট সাধ্য।
একটা উদাহরন দেই তাদের হাতে একটা জীবিত মোরগ সহ ৪০ মাইলের পথ পাড়ি দিতে হয় যেখানে পদে পদে ট্রেইন্ড গ্রীন বেরেটা তাদের বাধা সৃষ্টি করে। এই ৪০ মাইল তাদের শুধু একটা কম্পাস দেয়া হয় আর ওই জীবিত মোরগ। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় ট্রেইনি ওই মোরগ আগুনের অভাবে কাচা খেয়ে ফেলে।
নেভী সীল
ইউ এস আর্মির সব চেয়ে এলিট গ্রুপ। পুরা ইউ এস আর্মিতে মাত্র ২০০০ নেভী সীল আছে।
আমার জানা মতে বাংলাদেশে মাত্র ২৯ জন সীল ট্রেনিং করেছে। অন্যান্য কমান্ডো গ্রুপ যে সব ট্রেনিং করে এদের তা সবই নিতে হয় কিন্তু অনেক বেশী মাত্রায় কারন এরাই যে শ্রেষ্ঠ। এদের শারীরিক যোগ্যতা এদের সুপার হিউম্যানে পরিনত করে। সদস্যরা ১৭ থেকে ২৮ বছর বয়সী। কমপক্ষে এক বছর সীল ট্রেনিং নিতে হয়।
দেখুন এদের যোগ্যতা
500 yd (460 m) swim using breast or combat sidestroke in under 12:30 with a competitive time of under 10:30.
At least 42 push-ups in 2 minutes with a competitive count of 79 or more.
At least 50 sit-ups in 2 minutes with a competitive count of 79 or more.
At least 6 pull-ups from a dead hang (no time limit) with a competitive count of 11 or more.
Run 1.5 mi (2.4 km) in boots and trousers in under 11:30 with a competitive time of 10:20 or less.
২৪ সপ্তাহ ফিজিক্যাল ট্রেনিং, মাইন যুদ্ধ, ডাইভিং এর ট্রেনিং এর পর ২৬ সপ্তাহ সীল কোয়ালিফিকেশন ট্রেনিং যার মধ্যে প্যারাসুট ট্রেনিং থেকে, SERE, হাতাহাতি যুদ্ধ কি নেই। এরা পৃথিবীর অন্যতম সেরা যোদ্ধা।
এর বাইরে আছে, ইউ এস আর্মি রেঞ্জার, ডেল্টা ফোর্স, ব্রিটিশ SAS বাহিনী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।