ইসলামী কৃতিত্বসমূহের মধ্যে (নব্য রীতি ও প্রথা সৃষ্টির ক্ষেত্রে) একটি কৃতিত্ব হচ্ছে যাদের মধ্যে রক্ত, আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের কোন সম্পর্ক নাই তাদের মধ্যে দৃঢ়তম বন্ধন সৃষ্টি করা। ভ্রাতৃত্ব হচ্ছে দু’জন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিকট সম্পর্ক। প্রত্যেক জাতির মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হল সবচেয়ে দৃঢ় ও শক্তিশালী বন্ধন; কিন্তু আরবদের মধ্যে বিশেষ করে প্রাথমিক যুগের আরবদের মধ্যে এ বিষয়টিকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হত। এমনকি তারা এই বিষয়টিকে সত্য-মিথ্যার ও ভুল-নির্ভুল নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করত।
এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম ছিল যে, ভাইয়ের অধিকার রয়েছে এবং অবশ্যই তাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে যদিও সে প্রকৃতার্থে জালিম বা অত্যাচারী ও সীমা লঙ্ঘনকারী হোক না কেন।
তার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করার জন্য অবশ্যই স্বীয় ভাইকে সাহায্য করতে হবে; যদিও প্রতিপক্ষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকুক না কেন। এ রকম পরিবেশে ইসলাম তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ভ্রাতৃত্বের এক নতুন সংজ্ঞা ও নতুন ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে। যেমন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
অর্থাৎ শুধুমাত্র মু’মিনগণই পরস্পর পরস্পরের ভাই।
সুতরাং মু’মিন ব্যতীত সকলেই এই (মু’মিন) পরিবারের অপরিচিত; যদিও সে ঐ একই পরিবারে জন্মলাভ ও লালিত-পালিত হয়ে থাকুক না কেন।
এটাই হচ্ছে ভাইয়ের প্রকৃত সংজ্ঞা যার ভিত্তি স্থাপনকারী কোরআন।
উক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতেই মু’মিনগণ পরস্পর পরস্পরে ভাই ভাই।
রাসূল (সা.)-এর জীবনের দু’টি বিশেষ মুহুর্তে (হিজরতের আগে ও পরে) মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে ও বিশেষ বিশেষ সমস্যাদির মোকাবিলা করার জন্য -যা নব গঠিত শাসন ব্যবস্থা ও ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ দেখা দিচ্ছিলো- ধর্মীয় এই সাধারণ মৌলিক নীতিটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বিশেষ বন্ধন ও ভালবাসার সৃষ্টি করেছিল ও সকল মুসলমান দু’জন দু’জনের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছে।
ইতিহাস ও হাদীসবেত্তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা লিখেছেনঃ
প্রত্যেকটি মুসলমানের ভাই নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) যে বিষয়টিকে মাপকাঠি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তা হচ্ছে- বৈশিষ্ট্যসমূহের মিল ও ঈমানের স্তর।
তিনি যাদের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করতেন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিতেন; যেমন- হযরত উমরকে হযরত আবু বকরের সাথে, হযরত তালহার সাথে হযরত জোবায়ের, হযরত ওসমানের সাথে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফের, হযরত আবু জা’রকে হযরত মিকদাদের সাথে ও তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরাকে (সা.) স্বীয় স্ত্রী হযরত উম্মে সালমার সাথে বন্ধন স্থাপন করে দেন।
উক্ত দলিলের উপর ভিত্তি করেই আমিরুল মু’মিনীন আলীকে (আ.) কারও সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ না করে তাকে নিজের জন্য রেখে দিয়েছিলেন।
তিনি নিজের জন্যে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ভাই নির্ধারণ করেননি যতক্ষণ না আলী (আ.) প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন যেঃ “আমি দেখলাম আপনি আপনার সকল সাহাবীরই ভাই নির্ধারণ করে দিলেন কিন্তু আমার জন্য তো কোন ভাই নির্ধারণ করে দিলেন না। আমার প্রাণ দেহ ত্যাগের উপক্রম হয়েছে, কোমর ভেঙ্গে গেছে। যদি আমার উপর রাগ করে থাকেন তাহলে আমাকে ভর্তসনা করার অধিকার আপনার আছে। ” তিনি প্রত্যুত্তোরে বললেনঃ “ঐ আল্লাহর শপথ যিনি আমাকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আমি এ ব্যাপারে দেরি করেছি যাতে তোমাকে আমার ভাই হিসেবে নির্বাচন করতে পারি। ” এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনএখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।