‘আমরা মুসলিম ভাই-ভাই’- কিছুদিন আগেও এ ছিল আমাদের চেতনা। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কথা উচ্চারিত হত আমাদের গানে-গযলে। এখন এসব কথা খুব একটা শোনা যায় না। কারণ এখন আমাদের চেষ্টা ‘অসাম্প্রদায়িক’ মুসলিম হওয়ার, এমনকি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মুসলিম হওয়ার। কিন্তু আমরা চিন্তা করি না যে, এরপর ‘ইসলামী’ নাম ধারণ করার এবং ঈদে-জুমায়, হজ্বে-ওমরায় নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়াটা হাস্যকর ও স্ববিরোধী হয়ে যায় কি না।
এখন মুসলিম-সমাজে ‘সাম্প্রদায়িকতা’র প্রায়োগিক অর্থ হচ্ছে অমুসলিমদের বিষয়ে অতিসংবেদনশীলতা বরং চাটুকারিতা ও হীনম্মন্যতা। আর নিজের মুসলিম ভাইদের বিষয়ে জড়বস্ত্তর ন্যায় অনুভূতিহীনতা; বরং পাষাণসম হিংস্রতা ও বর্বরতা। অসাম্প্রদায়িকতার এ সংজ্ঞা পাওয়া যাবে আমাদের আচরণে ও উচ্চারণে, যার অজস্র দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে আছে আমাদের সমাজ-জীবনের পাতায় পাতায়।
তেমনি মুসলিম-সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতার বাস্তব অর্থ, পৌত্তলিক সমাজের দেব-দেবীকে আমাদের দেবী বলে বরণ করা, ‘হিন্দুও নই, মুসলিম নই’ জাতীয় বাক্য উচ্চারণ করা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের স্কার্ফ পরিধানে বাধা দেয়া, ইসলামী বেশ-ভূষা গ্রহণকারীকে জঙ্গি ও মৌলবাদী নামে আখ্যায়িত করা এবং মসজিদের একাংশ পৌত্তলিকদের পূজা-অর্চনার জন্য ছেড়ে দেওয়ার কল্পিত ইতিহাস চর্চা করা।
এহেন অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চাও যখন মুসলিম সমাজে হয় তখন তো ‘ইসলামী ভ্রাতৃত্ব’ আমাদের চেতনা ও অনুশীলন থেকে বিলুপ্ত হওয়াই স্বাভাবিক।
আমাদের খুব চিন্তা করা উচিৎ, অল্পে অল্পে আজ আমরা কোথায় নেমে এসেছি।
কুরআন মজীদের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা-
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
‘আল্লাহর কাছে দ্বীন একমাত্র ইসলাম’- সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯
আমাদের কি চিন্তা করা উচিৎ নয় যে, যে কালিমা পাঠ করে আমি ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করেছি অর্থাৎ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ (উপাস্য) নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)- এরপর ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব কিনা, কিংবা বাস্তবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হলে আমার কালেমা থাকে কিনা?
তেমন আমাদের কি চিন্তা করা উচিত নয় যে, মুসলিম পরিচয় ধারণ করার পরও যদি ইসলামের প্রতি, বিশ্ব মুসলিমের প্রতি অনুরাগ-ভালোবাসা বোধ না করি; বরং বিরক্তি ও বিদ্বেষ লালন করি তাহলে আমার মুসলিম নাম ধারণ মিথ্যা ও কপটতাপূর্ণ হয়ে যায় কিনা কিংবা মুসলিম নাম ধারণ সত্য হলে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আমার এ মানসিকতা আমার চরম ভীরুতা ও দুর্বলতা এবং নীচতা ও হীনতাই প্রমাণ করে কিনা?
এগুলো এমন কিছু তিক্ত প্রশ্ন, সেগুলো নিয়ে একান্ত নিভৃতে চিন্তা-ভাবনা করা এবং নিজের বিবেক ও বিশ্বাস, মানবতা ও মর্যাদাবোধের কাছে জবাব তলব করা আমাদের কর্তব্য।
কুরআন বলেছে-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
মুমিনগণ তো একে অপরের ভাই ...। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০
আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন এ কুরআনী চেতনাকে উপমা দ্বারা বুঝিয়েছেন-
ترى المؤمنين في تراحمهم وتوادهم وتعاطفهم كمثل الجسد، إذا اشتكتى عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى
তুমি মুমিনদের দেখবে, নিজেদের মাঝে প্রীতি ও করুণায় তারা যেন এক দেহ। (যে) দেহের এক অঙ্গে ব্যথা হলে সকল অঙ্গ (যেন) একে অপরকে ডেকে জ্বর ও রাত্রি জাগরণে লিপ্ত
হয়ে পড়ে।
(নুমান ইবনে বাশীর রা.-এর সূত্রে সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬০১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৮৬)
অন্য বর্ণনায় আছে-
المسلمون كرجل واحد، إن اشتكتى عينه اشتكى كله وإن اشتكى رأسه اشتكى كله
অর্থাৎ মুসলিমগণ সকলে মিলে যেন একটি মানুষ- যার চোখে ব্যাথা হলে গোটা দেহ অস্থির হয়, মাথায় ব্যাথা হলেও গোটা দেহ অস্থির হয়। (নুমান ইবনে বাশীর রা.-এর সূত্রে সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৮৬)
ঈমানী ভ্রাতৃত্বের কিছু দাবির বিবরণ আছে সূরা হুজুরাতের উল্লেখিত আয়াত ও তার পরবর্তী কিছু আয়াতে। এছাড়া কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক হাদীসে তা বিস্তারিতভাবে আছে। এ সকল আয়াত-হাদীসের আলোচনা ও অনুশীলন এখন বেশি বেশি হওয়া উচিত। এতে বর্তমান যুগের প্রচার-প্রচারণার দ্বারা যে নাপাকি আমাদের চেতনা ও কর্মে প্রবেশ করেছে তা থেকে আমরা মুক্তি পাব ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম সমাজকে বিভক্ত করার জন্য এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনা বিলুপ্ত করার জন্য কত তত্ত্ব ও দর্শন যে প্রস্ত্তত ও প্রচারিত হচ্ছে তার হিসেব নেই। যেমন একটি তত্ত্ব : শান্তির ইসলাম-জঙ্গি ইসলাম; শান্তিপ্রিয় মুসলিম-জঙ্গি মুসলিম।
এই তত্ত্বের উদ্দেশ্য, ইসলামের জিহাদ ও নাহি আনিল মুনকারের বিধান অস্বীকার করা এবং এ বিধান সম্পর্কে মুসলিম-সমাজে নিস্পৃহতা ও নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি করা। তেমনি বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভূ-খন্ডগুলোতে কাফির-মুশরিকদের সশস্ত্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদরত মুজাহিদদের এবং সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নাহি আনিল মুনকারে লিপ্ত প্রতিরোধ-সংগ্রামীদের ‘দস্যু’ হিসেবে তুলে ধরা। আর সরলপ্রাণ মুসলিমদের এ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা যে, ‘এ আসলে ইসলাম নয়, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ।
ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। ইসলাম কি এমন হানাহানি ও বিশৃঙ্খলার অনুমতি দিতে পারে?’ অথচ চিন্তাশীল মানুষমাত্রই বোঝেন, শান্তির জন্যই শাসনেরও প্রয়োজন। যে সকল দুর্বৃত্ত সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে তাদের দমন করার বিধান যদি কোনো ব্যবস্থায় না থাকে তাহলে ঐ ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা বলা যায় না। ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দ্বীন তাই এতে যেমন আছে শিষ্টের লালনের বিধান, তেমনি আছে দুষ্টের দমনের ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার নামই ‘নাহি আনিল মুনকার’, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জিহাদ।
সুতরাং অবশ্যই ইসলাম শান্তির ধর্ম। তবে ইসলামের সাফল্য ও সৌন্দর্য এই যে, খন্ডিত বা নীতিবাক্যসর্বস্ব শান্তি নয়, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ও প্রায়োগিক অর্থেই শান্তির ধর্ম।
তো ইসলাম ও মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ ও ‘শান্তিপ্রিয়’ এই দুইভাগে ভাগ করার উদ্দেশ্য, মুসলিম সমাজের ঐক্য বিনষ্ট করা, পরস্পরের ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ন্যায় ও কল্যাণের বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার চেতনা বিলুপ্ত করা। আর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের একটি শ্রেণিকে জালিমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহ দেয়া এবং মাজলুম মুসলমানদের বিষয়ে অন্যান্য মুসলিমদের এই ‘যুক্তি’তে নিস্পৃহ ও নির্লিপ্ত রাখা যে, ‘ওরা তো জঙ্গি, ওদের তো মেরে ফেলাই ভালো। ’ (নাউযুবিল্লাহ)
এ ধরনের আরেক বিভক্তি : ধার্মিক মুসলিম-ধর্মান্ধ মুসলমান, উদার মুসলিম-গোঁড়া মুসলমান!
এখানে ‘ধার্মিক’ অর্থ, যারা ইসলামের ইবাদত-সংক্রান্ত কিছু বিধান মানেন, জুমা-ঈদে হাজির হন, শবে বরাত-শবে কদরে নফল নামায পড়েন, বিভিন্ন প্রসঙ্গে দোয়া-মীলাদের আয়োজন করেন।
মোটামুটি এ-ই তার ধার্মিকতার সীমানা। এর বাইরে চেতনা-বিশ্বাসে, শিক্ষা-দীক্ষায়, ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের কোথাও ইসলাম দেখা যায় না। আর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম থাকতে পারে বলেও তিনি মনে করেন না। বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজ-সভ্যতায় অনৈসলামিক ও ইসলাম-বিরোধী অনুষঙ্গগুলোর জন্য এঁরা মোটেও হুমকি নন। এঁরা এ সভ্যতারই সন্তান তবে ‘ধর্মান্ধ’ মুসলিমদের দাওয়াতী কাজকর্মের বরকতে এঁদের অন্তরে ঈমানের কিছু আলো মিটমিটিয়ে জ্বলে।
তো এঁরা হলেন ‘ধার্মিক’ মুসলমান। পক্ষান্তরে যারা মনে করেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন, জীবনের সকল অঙ্গনে তার যথার্থ শিক্ষা ও বিধান আছে। সেই বিধানকে জীবনের সকল অঙ্গনেই মানতে হবে। স্বার্থ ও প্রবৃত্তি, সামাজিকতা ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে বিরোধ দেখা দিলে ইসলামের বিধানকেই অগ্রগণ্য করতে হবে। এদের বিশেষণ ‘ধর্মান্ধ’ মুসলিম।
এদের অপরাধ এরা সব কিছুর উপর ঈমান ও ইসলামকে প্রাধান্য দেন কিংবা প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন।
অথচ এ তো কুরআনেরই বিধান। কুরআন বলে-
ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
তোমরা ইসলামে প্রবেশ কর পুরোপুরি। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮
কুরআন প্রশ্ন করে-
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু (বিধান) মান আর কিছু মান না?!-সূরা বাকারা (২) : ৮৫
আমাদের কি চিন্তা করা উচিত নয় যে, স্বয়ং কুরআন আমাদের কোন্ ধরনের মুসলিম হতে বলে? কুরআন আমাদের যে প্রকারের মুসলিম হতে বলে তাকে ‘ধর্মান্ধতা’ নামে আখ্যায়িত করাকে কী বলা উচিত-‘ধার্মিকতা’ না ‘কপটতা’?
একইভাবে ‘নাহি আনিল মুনকারে’র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যেমন কুফর-শিরকের বিস্তাররোধ, ইসলামের কোনো বিশ্বাস ও বিধানের অপব্যাখ্যার স্বরূপ উন্মোচন, ইসলামের নামে গোমরাহী বিস্তারের প্রতিরোধ এবং ইসলাম-বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ ইত্যাদি বিষয়কে যারা গোঁড়ামি, বাড়াবাড়ি ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা মনে করেন তারা হলেন ‘উদার’ মুসলিম। পক্ষান্তরে যারা মনে করেন ইসলামকে ও ইসলামের সকল বিশ্বাস ও বিধানকে তার প্রকৃতরূপেই সংরক্ষিত রাখতে হবে, ইসলাম ও কুফর, হেদায়েত ও গোমরাহী একাকার হতে দেওয়া যাবে না, যাতে এ সমাজের যারা ইসলামের উপর হেদায়েতের উপর থাকতে চায় থাকতে পারে-এদের পরিচয় ‘গোঁড়া/অনুদার মুসলমান’।
অথচ ইসলামের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে হক-বাতিলের পার্থক্য নিরুপণ করা, সত্য-মিথ্যা, আলো-অন্ধকারের পরিচয় স্পষ্ট করে দেওয়া, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা আর মিথ্যা অপসারিত করা। এ উদ্দেশ্যেই ইসলাম দিয়েছে ‘আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারে’র বিধান। এ কারণেই কুরআনের নাম ‘ফুরকান’ (হক-বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী) আর কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য স্বয়ং কুরআনের ভাষায়, মানবজাতিকে সকল অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা।
তো ইসলাম-বিরোধী ও কুরআন-বিরোধী এ বিভক্তির উদ্দেশ্য, মুসলিম সমাজের তুলনামূলক অধিক সৎ ও ধার্মিক শ্রেণিটি সম্পর্কে অন্যান্য মুসলমানের মনে বিরক্তি ও বিদ্বেষ তৈরি করা। আর ধর্মের বিষয়ে উদাসীন ও পিছিয়ে থাকা মুসলমানদের তাদের নিজ অবস্থায় সন্তুষ্ট রাখা।
এ তত্ত্ব হচ্ছে তথাকথিত ধার্মিক মুসলমানের জন্য আফিম তুল্য।
এ ধরনের আরেক বিভক্তি : মরমী/ সুফিবাদী ইসলাম-জঙ্গি/ রাজনৈতিক ইসলাম।
এখানে মরমী বা সূফীবাদী বলতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শাখা-‘ইসলাহে নফস’ তথা হিংসা-বিদ্বেষ-অহংকার প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ দোষ থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে বিনয়, উদারতা, কল্যাণকামিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত হওয়ার এবং ঈমান, তাকওয়া ও আখেরাত-চেতনাকে শক্তিশালী করার দ্বারা কর্ম ও জীবনের সংশোধন প্রচেষ্টাকে বোঝানো হয়নি। এখানে বোঝানো হয়েছে, সুফীবাদ নামক মাজার-ওরস সর্বস্ব শিরক ও ইলহাদ সম্বলিত একটি ভ্রষ্ট ধারাকে। ঐ ধারার বড় সুবিধা হল, ইসলামের বিধিবিধান খুব একটা পালন করা লাগে না, বিশেষ কিছু আচার পালনের মাধ্যমেই পার্থিব সাফল্য ও পরকালীন মুক্তির সনদ পাওয়া যায়।
এছাড়া রিপুর চাহিদা পূরণের বিভিন্ন ব্যবস্থা তো আছেই।
পক্ষান্তরে জঙ্গি/রাজনৈতিক ইসলাম বলে কটাক্ষ করা হয় ইসলামী বিধানের সমাজ ও রাজ্য-চালনার অংশটিকে। ইসলাম কখনো ‘রাজনৈতিক’ হতে পারে না। হ্যাঁ, ইসলামে রাজ্য-চালনার নীতি ও বিধান আছে। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীন রাজ্য-চালনা করেছেন।
তাঁরা কি -নাউযুবিল্লাহ-‘রাজনৈতিক’ ইসলামের চর্চা করেছেন?!
ইসলামের দৃষ্টিতে রাজ্য-বিস্তার বা রাজ্য-চালনার জন্য ধর্ম নয়; বরং ধর্ম তথা তাওহীদ ও সুন্নাহভিত্তিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজ্য-চালনা। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে আছে।
এটা ঠিক যে, বর্তমান মুসলিম সমাজে ইমান-আমানত এবং ইলম ও তাকওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অধপতন ঘটেছে। এ কারণে অন্য সকল অঙ্গনের মতো এ অঙ্গনেরও অনেক অবক্ষয় হয়েছে। যারা এ অঙ্গনে কাজ করছেন তারা সবাই যে সঠিকভাবে করছেন বা তাদের সকলের আকীদা-বিশ্বাস যে শতভাগ সঠিক তা-ও নয়।
এটা এক ভিন্ন প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে হক্কানী আলিমগণ যথেষ্ট আলোকপাত করেছেন, এখনো করছেন। কিন্তু ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ বলে কটাক্ষ করে তারা ঐ সকল ভুল বা ভ্রষ্টতার কারণে করে না তারা গোড়া থেকে সমাজ বা রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকেই অস্বীকার করে- সে যত সঠিক পন্থায় হোক এবং সঠিক লোকদের মাধ্যমেই হোক।
তো এ ধরনের ছোট বড় অনেক বিভ্রান্তিমূলক তত্ত্ব এখন প্রচলিত ও প্রচারিত হয়েছে শুধু মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য, মুসলমানদের মন-মানস থেকে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেতনা বিলুপ্ত করার জন্য এবং ইসলামের দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠায় পারস্পরিক সহযোগিতা বাধাগ্রস্থ করার জন্য। এ সকল তত্ত্ব ও দর্শনের মাধ্যমে ইসলামের শত্রুরা এতই সফল যে, এখন প্রতিটি মুসলিম ভূখন্ডে মুসলিম সমাজ দুই দলে বিভক্ত : একদলের বিশেষণ জঙ্গি/গোঁড়া/রাজনৈতিক ইসলামের অনুসারী মুসলিম।
আরেক দল উদার/ সুশীল মুসলমান। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দেশে দেশে এই জঙ্গি/গোঁড়া/অনুদার মুসলিমদেরই রক্ত ঝরছে। আর তা ঝরছে কাফির-মুশরিকদের দ্বারা এবং উদার/শান্তিপ্রিয়/সুশীল মুসলমানদের দ্বারা।
যেহেতু জঙ্গিদের রক্ত ঝরছে তাই মুসলমানদের অনেক বড় একটি শ্রেণি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ও নিস্পৃহ। মুসলিম সমাজের এই অবস্থান কতটা ইসলামসম্মত তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
আবার স্মরণ করুন আল্লাহর রাসূলের হাদীস-তুমি মুমিনদের দেখবে, নিজেদের মাঝে প্রীতি ও করুণায় তারা যেন এক দেহ, (যে) দেহের এক অঙ্গে ব্যথা হলে অন্য সকল অঙ্গ (যেন) একে অপরকে ডেকে জ্বর ও রাত্রি জাগরণে লিপ্ত হয়।
সত্যিই কি আমরা মুসলিম এক দেহের ন্যায় কিংবা সত্যিই কি আমরা মুমিন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।