আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর মুখেও ভ্রাতৃত্ব... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

ইয়ারমুক যুদ্ধের ময়দান। বিশাল এ ময়দানের এক প্রান্তে ক্ষুদ্র মুসলিম সেনাদল আর অপর প্রান্তে রোমকদের বিশাল সৈন্যবাহিনী। উভয় দলই ভয়াবহ এক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। রোমক বাহিনী হঠাৎ মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে বসল।

মুসলিম সেনাপতি হযরত সালামা। তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে রোমানদের তীব্র হামলা মোকাবিলা করলেন। কিন্তু শত্রুর তীরের অবিরাম আঘাতে তার গোটা দেহ হল জর্জরিত। তিনি ঘোড়ার পিঠ হতে মাটিতে গড়িয়ে পড়লেন। সালামার ঘোড়া যুদ্ধের ময়দানে ছুটাছুটি করছে দেখে দূর হতে ছুটে এলেন হুজাইফা।

সালামাকে না দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। সালামার সন্ধানে এদিক-সেদিক ছুটছেন হুজাইফা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সালামার সন্ধান পাওয়া গেল। অবিরাম রক্তক্ষরণে সালামার দেহ প্রায় শীতল হয়ে পড়েছে। মৃতপ্রায় সালামার কণ্ঠও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।

তার শক্তিহীন দেহ হতে প্রাণ যেন বেরিয়ে যাবার উপক্রম হল। তারপরও খুব কষ্টে দু’ঠোট ফাঁক করে মুসলিম সৈন্যদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। হুজাইফা জবাব দিলেন, আপনি শান্ত হউন। আমাদের সেনারা রোমান আক্রমণ প্রতিহত করেছে। এবার প্রতিশোধ নেবার পালা।

একথা শুনে সালামার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এক অলৌকিক শক্তির জোরে হঠাৎ করে তিনি মাথা তুলে বসলেন। গায়ের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন, বন্ধুরা! অগ্রসর হও, সামনে এগিয়ে যাও। সালামা আরো কিছু যেন বলতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না।

কণ্ঠ তার থেমে গেল। মুহূর্তেই তার শক্তিহীন দেহ গড়িয়ে পড়ল রক্তভেজা ইয়ারমুক ময়দানে। সালামার অস্পষ্ট কণ্ঠে তার মুখ থেকে শুধু একটি শব্দ বেরুলো, ‘পানি। ’ হুজাইফা তড়িঘড়ি খানিকটা পানি সংগ্রহ করে আনলেন। সালামা পানি পান করতে যাচ্ছিলেন।

এমন সময় দূর হতে ‘পানি’ ‘পানি’ শব্দ তার কানে ভেসে এল। আহত সৈনিক হিশামের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসছিল সেই শব্দ। এই শব্দ শুনে সালামা আর পানি পান করতে পারলেন না। তিনি হুজাইফাকে ইশারা করে কাছে ডাকলেন এবং হাতের পানি হিশামকে দিয়ে দিতে বললেন। হুজাইফা পানি নিয়ে অমনি দৌড়ে গেলেন হিশামের কাছে।

তার মুখে পানি দিতে প্রস্তুতি নিলেন। এমন সময় অন্য আর একজনের কণ্ঠ ভেসে এল। তিনিও বলছেন, পানি-পানি। হিশামের কানে এই শব্দ আসতেই তিনি হুজাইফাকে সেই পানি ফিরিয়ে দিলেন। হুজাইফা বললেন, ওখানে দেখ।

পানিটুকুন ঐ ভাইকে দিয়ে দাও। হুজাইফা পানি নিয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট যেতে না যেতেই সৈনিকটি শাহাদাত বরণ করল। তার মন ভরাক্রান্ত হল। তাই হুজাইফা পানি নিয়ে হিশামের নিকট ফিরে এলেন। কিন্তু হায়! ততক্ষণে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন তিনিও।

তারপর তিনি ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে গেলেন সেনাপতি সালামার নিকট। কিন্তু তিনিও ততক্ষণে এ দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। সামান্য পানির পাত্রটি এখন হুজাইফার হাতে। এতটুকুন পানি। অথচ তা পান করার মত এখন আর কেউ বেঁচে নেই।

যাদের পানির প্রয়োজন ছিল তারা আরেক জনের পানির পিপাসা মেটাবার জন্য এতই পাগলপারা ছিল যে, অবশেষে কেউ আর সে পানি পান করতে পারল না। সবারই প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। অসামান্য ভ্রাতৃত্ব ও প্রচণ্ড মমত্ববোধের কারণে সবাই একে অপরের জন্য পানি ফিরিয়ে দিয়েছে। কি অপূর্ব এ ভ্রাতৃত্ব!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.