আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে লেখাটি লেখা হলো না!

... ... ... ...

আমার জন্ম নিয়ে কোনো গল্প নেই... হয়তো আর দশটা সাধারণ শিশুর মতো জন্মেছিলাম বলেই! তাই জন্মেই অসাধারণ হওয়া হয়ে ওঠেনি। আমি কি অসাধারণ হতে চেয়েছিলাম? হুহ, কে না চায়! আমি হয়তো একটু বেশিই চাই। নার্সিসিজম আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এ পৃথিবীর সব আয়োজন আমাকে ঘিরে, এমনটা ভাবতে ভালোই লাগে। তবু আমার চারপাশে শত আয়োজন, আমাকে পাশ কাটিয়ে যায়।

এক পলকের জন্যও পাত্তা দেয় না। এক একবার ভাবি, এ আমার খুব সাধারণ জন্মের দোষেই হয়তো! পরমুহূর্তেই দ্বিগুণ অবহেলায় আমি সব অবহেলা ভুলে যাই। আর প্রতি সকালে আমার বিছানায় ঘুম ভেঙ্গে আড়মোড়া দেয় আরো নার্সিসিস্ট এক আমি ... চোখ মেলেই সে ভাবে, এ সকালটা নিশ্চয়ই আমার জন্য! তাই তো খুব সাধারণ এ জন্ম নিয়ে আমার যতোটুকু খেদ, এ জনমটাকে ঘিরে ভালোবাসা তার চাইতে বেশি। কি লিখছি এসব আমি! ধুর! এ আমার লেখার পাতা, আমার গড়া পৃথিবী; এখানে আমিই ঈশ্বর। ঈশ্বর কি এতো নীচ হতে পারে? একটানে কাগজটা ছিড়ে দলা পাকালাম, তারপর ছুড়ে ফেললাম ওয়েস্ট বাস্কেটটায়।

নিশানা ঠিক ছিল, তবু কাগজের গোল্লাটা মাটিতে লুটোপুটি খেতে লাগলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওয়েস্ট বাস্কেটটার দিকে। দলা পাকানো কাগজের গোল্লায় উপচে পড়ছে সে ঝুড়ি। সাদা সাদা কাগজ, তাতে অগণিত হিজিবিজি অক্ষর ছুটে বেড়াচ্ছে। স্কুলে আমরা তখন শেষ ক্লাশের ছাত্র।

চারটা সারি; সারিতে সারিতে সেদিন গেরিলা যুদ্ধ চলছিল। সবার বেঞ্চের ডেস্ক ভরা কাগজের গোলা। স্যার আমাদের দিকে পিছু ফেরা মাত্র বৃষ্টির মতো গোলা পড়তে শুরু করে। মাথা নীচু করে, শরীর আঁকিয়ে-বাঁকিয়ে গা-বাঁচানোর চেষ্টাও চলছে সমান তালে। স্যার ঘুরে দাঁড়ালেই রণাঙ্গন শান্ত, পিনপতন নীরবতা।

একঘেয়ে বাংলা ক্লাশ বেশ পার হয়ে যাচ্ছিল। ভজঘট লাগালো এক উজবুকের ছোড়া দিকভ্রষ্ট গোলা, একটুর জন্য স্যারকে মিস করলো। তবে পড়ে রইলো স্যারের ওয়াকওয়েতে। তুলে নেবার সময় পেল না কেউ। তার আগেই ঘুরে দাঁড়ালো স্যার।

তারপর আর কি! চিরুণি অভিযান শুরু হলো , বেরিয়ে আসলো শত শত গোলা। কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় স্যার সংবিত ফিরে পেতে দেরি করলেন না। ইস্পিশাল বেত আনতে রওনা দিলেন নিচতলায়। ফিরে আসতে আসতে যুদ্ধের সহযোদ্ধা কাম ক্লাশ-ক্যাপ্টেন অর্ধেক গোলা হাপিশ করে দিল। তারপরেও শেষ রক্ষা হলো না।

যতো গোলা রয়ে গেল, তা সবার পশ্চাদ্দেশ লাল করবার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। পরদিন ক্লাশ-টিচারকে আমাদের কৃতকর্ম দেখানোর জন্য টেবিলে সাজানো হল গোলার বহর। অর্ধযুগ পরে আমার ওয়েস্টবাস্কেটটা ঠিক সে টেবিলের মতো মনে হতে লাগলো। স্মৃতি নিয়ে খুব লেখতে ইচ্ছে করছে। পারছি না।

মাথার ভেতর গেঁথে আছে এক আপ্ত বাক্য-- স্মৃতির আর্গল সবার সামনে খুলে দিতে নেই। নিয়ম ভাঙতে খুব যে ইচ্ছে করে! স্মৃতি বাদ দেই। গল্প লেখবো? মাঝে মাঝে গল্প লেখতেও ইচ্ছে করে। সেই বোকা ছেলেটার গল্প। যে ছেলেটা মায়ের উপর অভিমান করে ঘর ছেড়েছিল; আর ফেরেনি।

কোথায় যেন হারিয়ে গেল! একদিন নিশ্চয়ই তার খোকনের অভিমান ভাংবে -- মা'টা অপেক্ষায় থাকতো, অনেক আশা নিয়ে। অপেক্ষায় থাকতো গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, কড়কড়ে ঠান্ডা হবার অপেক্ষা। খোকন ফেরেনি। মায়ের চোখের পানিও ফুরিয়ে এল। খোকন ফিরে এল না।

তবু অপেক্ষায় থাকতো মা, কোন অলৌকিকের আশায়। আমাদের খুব চেনা এ পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই। আমি সে নিয়ম পাল্টে দিতে চাইলাম। আমি ঈশ্বর হতে চাইলাম। বোকা ছেলেটার অভিমান ভাংলো, মাকে তার খুব বেশি মনে পড়ছিল।

তাকে তার মা'র কাছে ফিরিয়ে দিতে গেলাম। পারলাম না! ঈশ্বর লেখবো বলে হাত দিয়েছেন, একটা ভাঙ্গা পেন্সিলও দিয়েছেন; শুধু ঈশ্বর হবার ক্ষমতা দেননি। ওয়েস্ট বাস্কেটটা আমার দিকে বিদ্রুপে হাসতে থাকে। ঈশ্বর হবার বড় সাধ ছিল... তারপর সাত-পাঁচ ভেবে এ লেখাটাও একটানে ছিড়ে দলা পাকালাম। ছুড়ে মারলাম ওয়েস্ট বাস্কেটে।

অগ্রজদের মতো এ গোলাটাও মাটিতে লুটোপুটি খেতে লাগলো, যদিও নিশানা ভুল ছিল না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.