পরে বলবো
রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে ব্যাপকহারে চলছে মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্ত দাতাদের রক্তের বাণিজ্য। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই বিষাক্ত রক্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এই রক্ত রোগীর জন্য ব্যবহার মৃত্যুর পরোয়ানা। মাদকাসক্ত কিশোর থেকে সকল বয়সের নারী-পুরুষ রক্ত বিক্রি করে নিয়মিত গ্রহণ করছে মাদকদ্রব্য।
নেশার উপকরণ ক্রয় করার জন্য তরুণ-যুবকরা বিক্রি করছে রক্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, মাদকাসক্ত তরুণ-যুবকসহ নারী-পুরুষের রক্তে মরণব্যাধি এইডস ও হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসসহ নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু থাকার আশংকা একশতভাগ। মাদকাসক্তদের মধ্যে অনেকে নেশার ইনজেকশন প্যাথেডিন ব্যবহার করে থাকে। এই ইনজেকশন পুশ করার একই সিরিঞ্জ ও নিডল বহুবার ব্যবহার করা হয়। একসঙ্গে ৫ থেকে ৬ জন একই সিরিঞ্জ ও নিডল ব্যবহার করে থাকে।
এই সিরিঞ্জ ও নিডলের মাধ্যমে মরণব্যাধিসহ সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু সহজে ছড়ায়। মাদকাসক্তরা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করে। তাদের দেহে খোস-পাঁচড়া থাকে।
গতকাল মঙ্গলবার র্যাবের সহযোগিতায় পরিচালিত ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন চানখারপুল এলাকায় ডোনার ব্লাড সেন্টারে অভিযান চালিয়ে সাত ব্যাগ রক্তের প্লাজমাসহ ৭০ ব্যাগ রক্ত উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত রক্তদাতার কোন নাম-ঠিকানা ঐ ব্লাড ব্যাংক রেজিস্টারে নেই।
৫ জনের শুধু নাম পাওয়া গেলেও তারা মাদকাসক্ত যুবক। মোবাইল কোর্ট নিশ্চিত হয় যে, মাদকাসক্তদের দেহ থেকেই সংগ্রহ করা হয় রক্ত। তারা প্রতি ব্যাগ রক্ত মাদকাসক্ত যুবকদের নিকট থেকে ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে। এই টাকা নিয়ে তরুণ-যুবকরা চানখারপুল, টিবি ক্লিনিকের আশপাশে দলে দলে বসে নেশার উপকরণ সেবন এবং ইনজেকশন পুশ করে থাকে বলে মোবাইল কোর্ট জানতে পারে। সংগৃহীত রক্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন এলাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সরবরাহ করা হয়।
প্রতি ব্যাগ রক্ত রোগীর নিকট ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। রক্তের প্লাজমা করার কোন যন্ত্র ঐ ব্লাড ব্যাংকে নেই। এই ব্লাড ব্যাংক স্বাস্থ্য অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। তবে অধিদফতরের কোন শর্তই ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানে না। মোবাইল কোর্ট ওই ব্লাড ব্যাংকের কথিত মালিক এআর মোতালেবকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান এবং ৬০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো তিন মাস জেল প্রদান করে।
কর্মচারি ইউনুসকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে মোবাইল কোর্ট।
দেশে মোট ২৬টি বেসরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি রাজধানীতেও ৩টি ঢাকার বাইরে বলে র্যাব সূত্রে বলা হয়। তবে রাজধানীতে ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা কয়েকশত এবং সারাদেশে এই সংখ্যা ৫ শতাধিক হবে বলে জানা যায়। রাজধানীর গলিপথে ও ঘনবসতি এলাকায় এবং যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এইসব ব্লাড ব্যাংক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ডাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, পেশাদার রক্তদাতা ও মাদকাসক্তদের ব্লাড ব্যবহারে মৃত্যুর ঝুঁকি একশত ভাগ। পেশাদার রক্তদাতা ও মাদকাসক্তদের ব্লাড বেচাকেনার এইসব ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করা জরুরি। রোগী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্ত প্রদানে উৎসাহিত করার কার্যক্রম জোরালো আকারে চালু করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই বলে তিনি অভিমত পোষণ করেন। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি থাকলেও এটা চলছে কোনরকমে। স্বাস্থ্যখাতের লাখ লাখ টাকা এই কর্মসূচির নামে শুধু লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
র্যাব সূত্রে বলা হয়, এই পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১টি ব্লাড ব্যাংকের সন্ধান পায়। এর মধ্যে মাত্র একটির স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স রয়েছে। বাকি ১০টির কোন লাইসেন্স নেই বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সব অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে শুধু মাদকাসক্তদের রক্ত বেচাকেনা চলে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, অবৈধ ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।