আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে 'সেক্যুলারিজম' এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

উঁকি দাও ফুল!

রমনা কালীবাড়ি মন্দির ও শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রম । প্রতিষ্ঠানটি মোঘল আমালের, তবে কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার নির্দিষ্ট সন তারিখ পেলাম না। পাশেই শাহবাজ খার মসজিদ। সেটাও মুঘল আমলের। সম্ভবত দুটি প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি সময়ের।

পাশাপাশি দুটো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলে যাচ্ছিল দুই ধর্মের মানুষের দিনকাল। প্রধান পুরোহিত পরমানন্দ গিরির দোস্তি মসজিদের খাদেম আবদুল আলী ফকিরের সাথে। একসাথে বাজারে যান। গালগপ্প করেন।

বিকালে স্বামীজি মসজিদের চত্বরে কিংবা খাদেম চলে আসেন মন্দিরের আঙিনায়। অশিতীপর খাদেম সাহেব এখনও স্মরণ করেন তার চাইতে বয়েসে সামান্য বড় ভোলানন্দ গিরি-র স্নেহমাখা কথা। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মন্দিরে গোলাবর্ষণ করে, সেখানাকার কয়েক শত নারী-পুরুষ ভক্তকে হত্যা করে। সেই নির্মম দৃশ্যের সাক্ষী অসহায় খাদেম সাহেব। স্বাধীনতার পর গণপূর্ত বিভাগ বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে নেয়, মন্দিরের ২০ একক সম্পত্তি গণপূর্ত বিভাগের হাতে তুলে দেয়া হয়।

বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ভক্তরা আবার এখানে জড় হন, অস্থায়ী আশ্রম গেড় তোলেন। এবার আবদুল আলী ফকির উদ্যোগী হন। হয়তো মৃত বন্ধুর প্রতি দায় মেটানোর তাগিদেই তিনি ভক্ত-শিষ্য ও বাসিন্দাদের নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন এবং এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি পুননির্মাণের জন্য একটি স্মারকলিপি দেন। তাদের প্রত্যাখ্যান করা হয়। (উনি স্মারকলিপিটি তোফায়েল আহমদের হাতে দেন, তিনি তা দুমড়ে বাতিল কাগজের ঝুড়িতে ফেলেন... এই হল কয়েকজন বয়বৃদ্ধের ভাষ্য।

) ১৯৭৩ সালে এই সব বাসিন্দা-ভক্ত-শিষ্যকে পোস্তগোলায় ঠেলে দেয়া হয়, সেখানে শ্মশানসংলগ্ন বালুর মাঠে তারা ছাউনি ফেলে বাস করতে থাকেন। ১৯.?( সালটা পাইনি) জিয়াউর রহমান পুলিশ পাঠিয়ে বন্দুকের নলের মুখে তাদের উচ্ছেদ করেন সেখান থেকেও। আজও রমনার কালীবাড়ি ও মা আনন্দময়ীর আশ্রম অস্থায়ী কাপড়ের ছাউনিতে কাজ চালাচ্ছে। ঘুরে আসুন। আর বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িকতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটা আর্ একবার ঝালাই করে নিন।

সাথে পরমানন্দগিরি আর আবদুল আলী ফকির এর প্রীতির কাহিনীটাও ভুলবেন না। বদমাশদের বিভেদনীতির বিপক্ষে এদের সরল প্রীতিই বাংলার অসাম্প্রদায়িকতার সত্যিকারের ইতিহাস। কাগুজে সংবিধানের অসাম্প্রদায়িকতায় বাবরি মসজিদ টেকে নাই, রমনার কালীবাড়ীও রক্ষা পায় নাই। এখনও যা কিছু টিকে আছে, তা টিকে থাকুক মানুষের শক্তিতে। ......... (সাথে একটা গপ্প জুড়ে দেই: ক্ষতি খুব নাই।

প্রতিনিধি দলটার সাথে গেছিল আশ্রমের সন্ন্যাসিনী জটালী মা। মুজিবুর রহমান তাদের প্রত্যাখ্যান করার পর মা অভিশাপ দেন: "তুই মাকে আশ্রয়চ্যুত করলি! নির্বংশ হবি তুই। " আমাকে যিনি গল্পটা বলছিলেন, সেই বৃদ্ধের কুংস্সকারাচ্ছন্ন চোখ চকচক করছিল, মায়ের তেজের সত্যতার প্রমাণে। পুরানতত্ত্ববিদরা বলবেন: এইভাবে পুরানের জন্ম হয়। নিন্মবর্গের ইতিহাসবিদরা বলবেন, এইভাবে দমিত তার প্রতিশোধ খুঁজে পায়।

সুশান্ত কিন্তু বাকশাল সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে এর সম্পর্ক পাবে না। অবসরের গান তার পোস্টে কোন একদিন এক দুষ্ট শাসকের উৎপাতে বঙ্গদেশে সাম্প্রদায়কিতার উদ্ভব বিষয়ে পোস্ট লিখবে। আর মা আনন্দময়ী ঘোরকলিতে নির্বাক দেখে থাকবে, কিংবা কে জানে, গোপনে মায়ের হয়তো আর কোন বাসনা আছে; আমরা, ক্ষণকালের বাসিন্দারা কি মহাকালের গতিধারা বুঝতে সক্ষম!)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.