আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেটির সিনেমাটিক স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছিল আইসক্রীম প্রেমী মেয়েটি

shamseerbd@yahoo.com
নোবেল ভাইর সাথে তার বন্ধুত্ব হতে বয়সটা তেমন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি। সামনা সামনি বাসা, অবসরে হাই হ্যালো থেকে কখন যে তা রাত জেগে ভোর হওয়া আড্ডায় রূপ নিল তা এখন আর তার মনে পড়ছেনা। তিন বছরের বড় হলেও ব্যবধান কমে তা পৌঁছে গিয়েছিল রাত জেগে সিগারেট পোড়ানোয়। নোবেল ভাই মার্কেটিং এ পড়ত চবিতে। ছেলেটির রাজ্যের সব বিষয়েই আগ্রহ।

ইকোনোমিকস থেকে সেলস মার্কেটিং সব বিষয়েই। ইন্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন থাকায় সিএসইতে পরে ভর্তি হলেও তার আগ্রহ জগতের সব বিষয়েই ঘুরে বেড়াই। নোবেল ভাই তাকে শিখান সেই সেরা সেলস ম্যান যে একজন এস্কিমোর কাছেও ফ্রীজ বিক্রী করতে পারবে। শেয়ার বাজার থেকে বাজেট, আরও কত কি। এই আড্ডায় ছেদ পড়ল ছেলেটির অন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে চিটাগং ছাড়াই।

তবুও ভেকেশনে জমত তাদের রাত জেগে আড্ডা। এমনি এক ভেকেশনে নোবেল ভাই তাকে জানাল তিনি প্রেমে পড়েছেন। ওয়াও বলে ব্যাপারটাকে স্বাগত জানাল সাথে সাথে ছেলেটি। আর কত কি, কেমনে হল সব বলতে বলতে রাত কে ভোর করে দিলেন নোবেল ভাই। পরিশেষে দিলেন আরেকটি খবর, মেয়েটির এক বান্ধবী আছে, সমস্যা হল প্রতি ডেট এই সে সাথে চলে আসে।

ধনীর দুলালী, দেখতে শুনতেও ভালই তার পরেই নোবেল ভাই তাকে প্রস্তাব দিয়ে বসলেন তোমার নাম্বার মেয়েটিকে দিয়ে দিব নাকি। ধূর মিয়া আমারে দিয়া ঐ সব হইবনা , বলেই ছেলেটি কিছুটা পাশ কাটাল। মনে মনে কি চেয়েছিল সেটা আজ আর তার মনে নেই। জুবুথুবু এক শীতের বিকেলে ছেলেটি নিজের রূমে বসে বসে গান শুনছিল। সদ্য মুক্তি পাওয়া সাঁথিয়া মুভির গান।

বিবেক আর রানীর সেই প্রেম তার মনে ও কেমন যেন বাসন্তী হাওয়া এনে দিয়েছিল, আহা এমন যদি হত, খুনসটি করতে করতে রানী বিবেকের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াই। ছেলেটির ভাষায় সত্যিই আমি তাই ভাবছিলাম। দুস্টু প্রেমের মিষ্টি এই ছবির গান দেখে সে সারাদিন বসে বসে। অমনি এক শীতের আরেক বিকেলে শুভ সূচনা হল ছেলেটির উড়ু উড়ু মনের মিষ্টি কল্পনার। হঠাৎ করে বেজে উঠেছিল মোবাইল ফোন, অপরিচিত এক নম্বর।

রিসিভ করতেই সুরেলা কন্ঠে ,কেমন আছেন। ভাবনার রং বাস্তবে এত দ্রুত রং ধনু ছড়াবে , এমনটি সে কখনো ভাবেনি , এখনও ভাবেনা। তার মাথায় ঢুকে থাকা সাঁথিয়া মুভির গান গুলোই রংধনুর আবেশ এনে দিল। মাঝে মাঝে কথা হয়, নোবেল ভাইর কাছ থেকে নাম্বার পেয়ে তাকে এই ফোন করা মেয়েটির, কথা হয় সময় গড়াই। ছেলেটির কখনো ফোন করা হয় না।

জোয়ারে তেমন গা ভাসানো তার হয়ে উঠেনা, তবুও মন ভাবে তারে গানটি বেজে চলে সব সময়। সাত টাকা রেটে মোবাইলে কথা , তিনশ টাকার একটি কার্ডে একুশ দিন চলা, বাস্তবতা তার আকাশের রংধনুকে মেঘ দিয়ে ঢেকে দেয়। অবশ্য এতে তাদের কথা বলার তেমন বিরাম পড়েনা। ধনীর দুলালীরতো আর অত হিসেবের বালাই নেই। ঈদের ছুটি, নোবেল ভাই মুচকি হাসে , কি খবর কি।

ছেলেটি অন্য পথে হাঁটে, লুকিয়ে রাখে নিজের মাঝে ঈদের পরদিন তার সাথে দেখা হবে এই খবরটি। ছেলেটি কিছুটা ভীতু ও বটে, ডানা মেলে উড়ার আগেই সে ভাবতে থাকে কতটুকু উড়া যাবে এক জীবনে। পরক্ষনেই নিজেকে বলে , না তোমাকে দিয়ে হবেনা- মেঘলা আকাশে রংধনু ছড়ানো , রং ছড়াতে হলে অত ভেবে ফল নেই। প্রিয় কর্ণফুলীর তীড়ে জমে উঠা প্রতিদিনকার আড্ডার প্রিয় বন্ধুদের অলক্ষ্যে সে উঠে আসে। রিক্সায় চড়ে জীবনের নতুন এক অভিগ্গতার পথে পথ চলে সে।

অজানা কারো সাথে দেখা হবে, কেমন সে- রাজ্যের ভাবনা এক সাথে ভীড় করে। হাজির হয় আগ্রাবাদের সাউথ ল্যান্ড সেন্টারের নীচে। সে জানে এর উপরে আছে ক্যাফে রীজ রেস্টুরেন্ট। জীবনে প্রথম এমনটি হতে চলেছে, দুরু দুরু বুকে কিছুটা শংকিত ও সে, পকেটে আছে দুটা পাঁচশ টাকার নোট, সাথে আরও কিছু। রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষার উত্তেজনা টের পাই সে।

মোবাইলে ফোন আসে। অলুক্ষনে ভাবনা আগেই উঁকি দেয়- সে কি আসবেনা । আপনি কোথায়। এইতো আমি সাউথল্যান্ডের নীচে দাঁড়ানো। আগে থেকেই সামনে দাঁড়ানো পাজেরো ভি সিক্স এর দরজাটা খুলে যায়।

আনমনা ছেলেটি চমকে উঠে , একি পাজেরো থেকে নেমে আসা মেয়েটি তার দিকেই আসছে। পনের ফিট দুরত্বে দাঁড়ানো পাজেরোর কন্যাটি আসার আগেই কত ভাবনা সে ভেবে ফেলে। প্রথমে ভাবে মনে হয়না এই সে মেয়ে, পরের ভাবনা চোখ বুলাই তার নিজের পকেটে, কিছুটা শংকিত হয় সে। আমি..............। কেমন আছেন।

হুমম আমি ভাল, তুমি.......। তখনো শংকা কাটেনি তার। মাথায় ঘুরছে হাজারো চিন্তা, এর মাঝেও সাঁথিয়ার সেই গান গুলি তার মনের মাঝে উঁকি দেয়। ছেলেটি শংকিত হয়। কিছুক্ষন কথা হয়।

হঠাৎ করে পাজেরোর দরজা আবারও খুলে যায়। এবার ছেলেটি একটু ভড়কে যায়। একি আরেকটি মেয়ে নেমে আসছে। ছেলেটি দ্বিধান্বিত। মেয়েটি হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে।

আমার ভাবী । আমরা বন্ধুর মত। হাই হ্যালো হয়। মনে মনে কিছুটা ক্ষেপে যায় ছেলেটি, বন্ধু হউক আর বান্ধবী হউক- আজ কেন আসতে হবে, পরক্ষনে ভাবে, ধূর আসলে আসছে, আমার কি। আইসক্রীম খাওয়া হয়, অনেক গল্প হয়, জানা হয় এমন কোন দিন নেই যেদিন মেয়েটি আইসক্রীম আর চকোলেট খায়না।

ছেলেটি মনে মনে হাসে। হঠাৎ করে সে সাহসী হয়ে উঠে, সব দ্বিধা - ভাবনা হারিয়ে যায়, জমিয়ে গল্প হয়, ভাবী হন মূল সঞ্চারক। সময় গড়িয়ে চলে, বিদায় নিয়ে তারা চেপে বসে পাজেরোতে , ছেলেটি আবারো রিক্সায়। আরেক সিনিয়রের বাসার সামনে গিয়ে রিক্সা থেকে নামে। রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে অক্ষত দুটো পাঁচশ টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে বিষাদ মাখা হাসি হেসে দেয় ছেলেটি।

যাক ভাবীর কল্যানে আগামী মাসে আরও দু ফ্লীম ছবি তোলা যাবে। ভায়ের রূমে ঢুকেই সে পিসি ছাড়ে। সেখানে ও জ্বল জ্বল করছে সাঁথিয়ার গানের ফোল্ডারটি। উড়ি উড়ি ঊড়ি- গানটি ছেড়ে দিয়ে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। স্বগোতক্তি করে উঠে , না এই আইসক্রীম প্রেমীরে এভাবে পিঠে নিয়া ঘুরা সম্ভব নয় ।

সিনিয়র ভাই পাশ থেকে বলে উঠেন কি বললি !! না কিছুনা। আইসক্রীমের প্রতি মেয়েটির প্রেম ধীরে ধীরে ছেলেটির সিনেমাটিক প্রেমের বিষাদময় সমাপ্তি রচনা করল।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।