আজ ও নিজের মাঝে অসাধারণের ছাপ খুঁজে বেড়াই কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে খুব সাধারনরুপে আবিষ্কার করি । মন্দ কি ভালই তো আছি ।
পাগলীটাকে সবসময় খোঁচাই সেটা কোন কারনেই হোক বা অকারণ কিন্তু এই মেয়ে সেটা বুঝে না। ব্যাপারটা খুব একটা মন্দ লাগে তা না। কারণ বেশ ভালভাবেই ফিল করি, ওর রাগান্বিত চাহনিতে আদো আদো গলায় কথাগুলো না শুনলে একদমই ঘুমাতে পারব না।
তবে এটাও ঠিক রাগ ভাঙ্গাতে গিয়ে মাঝে মাঝে আমাকেও বেশ নাকানি চুবানি খেতে হয়। কথাগুলো লিখতে লিখতেই বেজে উঠল ফোনটা। স্ক্রিনে আম্মার ছবিটা দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম,
- কিরে কই তুই? সকালে খাইছিস??
- না আম্মা একটু আগে ভার্সিটি থেকে আসলাম। এখনি খাব।
- জামায়াত-শিবির যে আগামী ৩ দিন হরতাল ডাকছে দেখছিস? সামনে শুক্র শনিবার ও আছে।
এক্ষনি খেয়ে বেগ গোছা।
- আচ্ছা তাহলে সন্ধ্যার ট্রেনে রওনা হই...
- একটা কথাও বলবি না। সন্ধ্যায় গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। তুই আধাঘণ্টার মধ্যে বাসে উঠে আমাকে জানা। রাখলাম।
সবকিছু এত দ্রুতই ঘটে গেল যে পাগলীটাকে ফোন দিয়ে জানাতে একদমই ভুলে গেলাম। রাজধানীর বিষাক্ত বাতাসকে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে ছুটে চলেছি আঁকাবাঁকা পথে। গতরাতে ভাল একটা ঘুম হয়নি যার দরুন হেড লাইট দুইটা কখন যে নিভে গেল বুঝতেই পারিনি। তবে এবারও বাঁধসাজল সেই ফোন! মোবাইল স্ক্রিনে না তাকিয়েই খানিকটা বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।
- হ্যাঁ কোথায় তুমি? সারাদিন একবারও ফোন দাও নাই কেন??
- (থতমত খেয়ে) না মানেনেন...সরি।
- সরি মানে!! আর এত শব্দ কিসের কই তুমি??
- আসলে হয়েছে কি সামনের তিনদিন হরতাল তো তাই বাসায় যাচ্ছি। ভাবলাম তুমি ঘুমাচ্ছ তাই তখন আর ফোন দেই নাই।
- থাক...হয়েছে। বাসায় যাচ্ছ যাও, কষ্ট করে আর মিথ্যা বলতে হবে না। ভাল থাক।
এই হচ্ছে পাগলীটার এক অভ্যাস। কোন কারণে রেগে গেলে বা কষ্ট পেলে এমনভাবে ভাল থাক বলবে যেন সব সম্পর্কের হিসাব চুকিয়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে! হঠাতই নিজের মধ্যে কেমন একটা অনুশোচনাবোধ কাজ করছে। নাহ...কাজটা আসলেই ঠিক হয়নি। এটলিস্ট একটা ফোন দিয়ে জানিয়ে আসাটা উচিত ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় ফোনটাই যত নষ্টের মূল।
এই ফ্যাসিবাদী ঢংটা না থাকলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত? এসব উদ্ভট চিন্তার মাঝে ডুবে থেকেই সেদিনের মত বাসায় পৌঁছালাম। রাতে বারবার ট্রাই করেও ফোন খোলা পেলাম না। পরে অবশ্য বোনের কাছে জানতে পারলাম আমি বাসায় পৌঁছেছি কিনা সেটা জানার জন্য সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিল। পাগলীটা বরাবরই এমন করে আমার হৃদয়ে নিরবে রক্তক্ষরণ ঘটায়। তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপদার্থটা মনে হয়।
পরদিন রাতে নিজে থেকেই ফোন দিয়ে বলে "কি হৃদু বাবু শাস্তিটা কেমন লাগল!" আরে আজব!! শাস্তিতো আরও কত ভাবেই দেয়া যায় নাকি?? তাই বলে এত নিষ্ঠুর হবে!!! তখন অন্তত একবারের জন্য হলেও হুমায়ুন আহমেদ স্যারের "প্রতিটি মেয়েই নিষ্ঠুর হওয়ার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়" কথাটির সত্যতা অনুভব করি। তাই ওকে নিয়ে আমার নিজের বানানো একটা স্যাটায়ার আছে, "কখনও বা মনে হয় তুমি জামায়াত শিবিরের চেয়েও ভয়ংকর...কারণ ওরা কাটে মানুষের রগ আর তুমি কাট আমার হৃদয়" যাই হোক ফিরে আসি ফোনালাপে। তারপর আমিও কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তরে আস্তে করে ছোট একটা সরি বলি আর ওপাশ থেকে এজ ইউজ্যুয়াল শুনতে পাই "হয়েছে আর ভাব নিতে হবে না" মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে আমিও হেসে ফেললাম। তখন মনে হয় জীবনটা আসলেই সুন্দর। এমন একটা পাগলীকে নিয়ে ভালবাসার ছোট্ট কুটিরে বাকি জীবনটা অনায়াসেই কাটিয়ে দেয়া সম্ভব।
মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, ভালবাসি পাগলী...ভালবাসি অনেক বেশি।
আজ থেকে এক বছর আগে আমার এই ঘরকুনো বোরিং জীবনটাকে রংধনু রঙে রাঙিয়ে দিতে কোত্থেকে কিভাবে যে এই প্রিয়ভাষিণীর উদ্ভব হল সে রহস্য আজও একটা ধুম্রজাল। গল্পটি পাগলীটাকে উৎসর্গ করেই লিখা। আমাদের প্রথম এন্যিভারসেরিতে ওকে দেয়া আমার ছোট্ট একটি উপহার। দোয়া করবেন সবাই।
আর কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।