আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মতিনকে জিজ্ঞাসাবাদ

আমি কিছুই লিখব না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এমএ মতিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোটিশ পেয়ে হাজির হন তদন্ত কমিটির সামনে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং কোটিপতি পাইলটদের চাকরির বয়সসীমা অবৈধভাবে ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করার পেছনে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে তাকে সোয়া এক ঘণ্টা সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক শেখ মোঃ ফাহাফিল্লাহ, সহকারী পরিচালক মোঃ জাহিদ হোসেন ও দুদক চট্টগ্রাম অফিসের পরিদর্শক মোঃ আবদুল আওয়াল। বন্দর বোর্ড রুমে সকাল ১০টা থেকে জেরা শুরু হয় এবং শেষ হয় বেলা সোয়া ১১টায়।

তিন সদস্যের দুদক টিমের সদস্যরা জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক এমএ মতিনকে তার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিরতিহীন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার কাছে মৌখিকভাবে প্রশ্নের উত্তর নেয়ার পাশাপাশি কিছু প্রশ্নের লিখিত উত্তরও নেয়া হয়। জেনারেল মতিনকে প্রথমে প্রশ্ন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম প্রসঙ্গে। এর আগে একবার অনুষ্ঠিত টেন্ডার কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই ৬ মাস ফেলে রেখে পরে কোন কারণ ছাড়াই তা বাতিল করা হয়। সর্বনিু দরদাতাকে কাজ না দিয়ে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে মাত্র ৫ দিনে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দিনই এছাক ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মধ্যরাতে কার্যাদেশ দেয়া হয়।

এতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করে জবাব চাইলে উত্তরে মতিন বলেন, ঠিকাদার নিয়োগে তিনি কোন দুর্নীতি করেননি। এছাক ব্রাদার্স নামে যে প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বরং তিন বছরে বন্দরের ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমেদের সুপারিশের ভিত্তিতে এছাক ব্রাদার্সকে সিসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদার নিয়োগের জন্য তৈরি করা কাগজপত্র ঠিক ছিল। এতে কোন ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়নি।

বন্দরে কাজের অভিজ্ঞতার ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। বিমানে করে হ্যান্ডলিং সংক্রান্ত ফাইলপত্র আনা-নেয়ার মাধ্যমে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনাÑ এ প্রশ্নে জেনারেল মতিন তদন্ত টিমকে বলেন, বিমানে করে ফাইলপত্র আনা নেয়া করতে কোন সমস্যা নেই। এজন্য কোন বিধিনিষেধও নেই। বন্দর বোর্ড রুমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এমএ মতিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে কোন অনিয়ম করিনি। ব্যক্তিগত কোন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।

সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সবচেয়ে কম দরদাতাকে কাজ দিয়েছি। সিসিটির বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক প্রতি বক্স হ্যান্ডলিং চার্জ নিচ্ছে ১২শ’ টাকা দরে। আর এছাক ব্রাদার্সকে কাজ দেয়া হয়েছে প্রতি বক্স ৩৪০ টাকা দরে। তিন বছরে হ্যান্ডলিং করলে বন্দরের সাশ্রয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে এছাক ব্রাদার্সকে কাজ দিয়ে বন্দরের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

জেনারেল মতিন তার বক্তব্যে যে বিষয়টি সঠিকভাবে বলেননি তা হচ্ছে, সাইফ পাওয়ার টেক ওই টেন্ডারে অংশ নিয়ে ৫০৪ টাকা দর দিয়েছিল। বর্তমানে সে দরেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। সকাল ১০টার কিছু আগে এমএ মতিন স্যুট-টাই পরে বন্দর ভবনে উপস্থিত হন। এসেই সোজা চলে যান বন্দর বোর্ড রুমে। রুদ্ধদ্বার কক্ষে তিন দুদক কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় বন্দরের অন্য কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আচমকা বোর্ড রুমে প্রবেশ করেন বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর আর ইউ আহমদ। বেশকিছু সময় অবস্থান করে তিনি আবার বেরিয়ে নিজ রুমে চলে আসেন। এমএ মতিন চলে যাওয়ার সময় বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমদ গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসেন। বুধবার বন্দরের সাবেক সদস্য (অর্থ) মোঃ হারুণ মিয়া ও পরিচালক (বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক) কমান্ডার এমএসএএএফ শিবলীসহ সিসিটির ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আরও কয়েকজন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।

আজই দুদক টিমের সদস্যদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা। মতিন ছিলেন বিমর্ষ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জেনারেল উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত এমএ মতিন গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে আসেন বিমর্ষ চেহারায়। চলনে-কথায় আগের সেই জৌলুস ছিল না। একেবারে সাধারণভাবে অনেকটা সংগোপনে বন্দর ভবনে পৌঁছেন। দু’একজন কর্মকর্তা কাছে ঘেঁষতে চাইলেও নতুন বিতর্কে জড়াতে পারেন এ ভয়ে ছিলেন অনেক দূরে।

নিঃসঙ্গভাবে বন্দরে আসেন এবং অনেকটা নিঃসঙ্গভাবেই ত্যাগ করেন বন্দর ভবন। বন্দর ভবনে কর্মকর্তারা ছিলেন আতংকে : দুর্নীতির খনি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরে দুর্নীতির তদন্ত বহুবার হয়েছে। দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ার পর অনেকের শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন। দুদক কর্মকর্তারা বন্দর বোর্ড রুমে অবস্থান করে একে একে কর্মকর্তাদের জবানবন্দি নিচ্ছেন।

প্রথমবারের মতো এভাবে দুর্নীতির তদন্তের কারণে আতংকের ছাপ দেখা যায় সবখানে। সর্বত্র ছিল বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন। জেনারেল এমএ মতিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জোট সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সেই মতিনই এখন দুর্নীতি আর অনিয়মের সবচেয়ে বড় অভিযোগে অভিযুক্ত।

এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সরব আলোচনায় মুখর ছিলেন বন্দর ভবনে। অনেকে প্রশ্ন করেনÑ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে মতিন নিজের দুর্নীতিকেই আড়াল করেছিলেন। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসছে মতিনের নানা কেলেংকারির কাহিনী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।