আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের একতায় উৎসব এবং দুর্যোগ : কোনটা সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ?

http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002

ব্যাপারটা আমার মাথায় এলো হঠাৎ করে। এবার ঈদে কি হয়ে গেলো বিষয়টি সবারই জানা। অস্বাভাবিক মৌসুমী বৃষ্টি আর ৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ৩ থেকে ৪ বার কেঁপে উঠলো সারা দেশ। ৬ এর ওপরে গেলে নাকি ঢাকার ৭৫% স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে! ভুটানে একই ভূমিকম্পে মারা গেলো ১৪ জনের মতো। ভুটানে কোনো উৎসব ছিলো কিনা জানিনা।

উৎসব সবাইকে যেমন এক করতে চায়, বিপর্যয়েও মানুষ এক হয়। কিন্তু উৎসব কি আমাদের এক করতে পারছে? ঈদ, পুজো এই সেই জাতীয় উৎসবের চরিত্রটা কি? সাম্প্রদায়িক ( মুক্তমনের মানুষদের কথা আলাদা)। অবশ্য ১লা বৈশাখ উদযাপনের ব্যাপারটি এই অঞ্চলে আরো প্রসিদ্ধ একটি ব্যাপার। নববর্ষ আমাদের যতোটা এক করতে পারে ঈদ/পুজো সেটা বোধহয় পারেনা। চারিত্রিক দিক থেকে নববর্ষ অনেকটা স্বকীয়, সাম্প্রদায়িক উৎসব গুলো নয়।

উৎসব কি বোধের জন্ম দেয় আমাদের? বরং কিছু কিছু উৎসব বোধের সীমানা টেনে দিয়েছে শুরু থেকে। শুধুমাত্র বোধের সীমানা নয়, সাংস্কৃতিক-সামাজিক চেতনার জায়গাটিকেও করেছে বিদ্ধ। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু উৎসবকে একই সাথে আধ্যাত্মিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ বলা যেতে পারে। উৎসবকে শ্রেণীস্বার্থরক্ষা ও বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে শ্রেণীসমতার একটা প্ল্যাটফর্ম ।

যদিও এটাকেও পুঁজি করতে চায় পুঁজিপতিরা। সোয়াইন ফ্লুর ঔষধ-ব্যবসা নিয়ে দেশে দেশে যা হচ্ছে। পুঁজিপতিদের বাজারে পণ্য সেজে ঢুকে গেছে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, সাংসদ, আমলা, গামলা, মগ, বদনা। শ্রেণী বিভাজনের বড় জায়গা উৎসব করে দেয় সামর্থ্যের বিচারে। গুলশানের ভাসাবি ,শপার্স ওর্য়াল্ড বা জারাতে বঙ্গবাজারের বা ধানমন্ডি হকারস মার্কেটের জিনিস ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হওয়ার কারণ কি? পুঁজি? কিন্তু পুঁজিপুজক রাক্ষসদের কৌশল অবলম্বন করছে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ব্যবসায়ীরাও! এখানে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে সুবিধাজনক, মানে জাতীয় মধ্যস্বত্ত্বভোগীর।

ধর্ম অবশ্য শ্রেণী বিভাজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চায় মানবিক দিক থেকে। কিন্তু ব্যাপারটি প্রকৃত পক্ষে অমানবিক। মানবিকতাকে সাম্প্রদায়িকতার বিচারে পরোক্ষ করা আর কি! মানে সেটা প্রকৃত মানবিকতা নয়। সেটা সাম্প্রদায়িকতাই! আর সেটাই সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়রোধে আমরা এক হয়ে যাই কিন্তু অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসে আমাদের রয়েছে নানান বিভাজন।

কেন? প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট। ধর্ম-বর্ণপ্রিয় মানবসম্প্রদায়। ধর্ম আমাদের শান্তিপ্রিয় উপায়ে শাসন করে, রাষ্ট্র করে শোষন যেকারণে ধর্মীয় উৎসব আসে বিভাজন। মনে উৎসবের মুখ ধর্মের পেনসিলে আঁকা যায়না। তাই মনের বিপর্যয়রোধের কথা আমাদের ভাবতে হবে আগে।

উৎসবের সেমাই বা লাড্ডুটাকে পরখ করতে হবে মনের উদারতা দিয়ে, আরোপিত সংর্কীণতা দিয়ে নয় আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে অঞ্চলগত বিচারে নয় দেখতে হবে সামষ্টিক বিপর্যয় হিসেবে। দ্র: পোস্টে ব্যবহৃত ছবি লেখককর্তৃক অলংকৃত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।