আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেডিও তেহরান থেকে ঃহারভেস্ট প্লাসসহ পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে'

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কয়েকটি দেশের সহযোগীতায় জিংকসমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান অবমুক্ত করেছে। তো নতুন জাতের এ ধানের উতপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীতা, এটি কতটুকু স্বাস্থ্যকর, owner হিসেবে বাংলাদেশ সামগ্রিক ব্যবাসায়িক সুবিধা পাবে কি না, তাছাড়া এ গবেষণায় বাংলাদেশকে গিনিপিগ বানানো হলো কিনা এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি নয়া কৃষি আন্দোলনের নেতা বিশিষ্ট পরিবেশবাদী এবং সমাজকর্মী ফরহাদ মজহারের সঙ্গে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকারটি উপস্থাপন করা হলো রেডিও তেহরান: বিশ্বে এবারই প্রথম জিংকসমৃদ্ধ বিরি ৬২ নামের নতুন একটি ধানের জাত অবমুক্ত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ ধান উদ্ভাবন করেছেন এবং এতে অন্যান্যের মধ্যে সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হারভেস্ট প্লাস।

অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণা সংস্থাটি আমেরিকায় কেনো এই ধানের ওপর গবেষণা চালায়নি? ফরহাদ মজহার : আমি মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা বিষয় একটু শুদ্ধ করে দিতে চাই সেটি হচেছ বিরি ৬২ নামের এই নতুন জাতের ধানই প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধান নয়। এর বহু আগেই বাংলাদেশের কৃষকরা জিংকসমৃদ্ধ ধান আবিষ্কার করেছে। এসব জিংকসমৃদ্ধ ধানের মধ্যে রয়েছে- কালো শাইল,জিরা কাটারি, লক্ষ্ণি দিঘা। এগুলো আমাদের স্থানীয় জাতের জিংকসমৃদ্ধ ধান। নতুন অবমুক্ত হওয়া বিরি ৬২ নামের নতুন জাতের এই ধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের জিংকসমৃদ্ধ যেসব ধান আছে তার চেয়ে এতে জিংকের পরিমাণ বেশি।

তবে যেহেতু তাদের গবেষণাপত্র আমার কাছে নেই ফলে তারা কিসের ভিত্তিতে এটা দাবি করছেন সেটা এই মুহুর্তে বলা আমার পক্ষে মুশকিল। তবে প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের কথা বলাটা ভুল ধারনা। কারণ যে দেশের কৃষকরা এবং তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় ১৫ হাজার জাতের ধান আবিষ্কার করেছিল সেগুলো বিদেশী কোম্পানীগুলো নিয়ে যাবার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং তারা করছে। সিনজেনটা বা সানজানটা কোম্পানী এর আগে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধান বের করেছে।

সম্প্রতি তারা বিটি বেগুন বা জেনেটিকালি মডিফাইড বেগুন বের হয়েছে। ফলে এটা মার্কিনীদের একটা স্পষ্ট নীতি যে তৃতীয় বিশ্বের যেসব ' germplasm' (A germplasm is a collection of genetic resources for an organism. For plants, the germplasm may be stored as a seed collection or, for trees, in a nursery.) যেগুলো অত্যন্ত মূল্যবান এবং এগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতের ধান আবিষ্কার করা যায়। আর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা এসব 'germplasm' আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এটাকে আমরা বলি' biopiracy' বা ডাকাতি। আসলে একে বলা যাবে সরাসরি বীজ ডাকাতি।

কলোনিয়াল আমল থেকেই তারা এটি করছে। লর্ড ক্লাইভ যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন তাদের ক্যাপ্টেনদেরকে বলা হতো তারা যখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যায় তখন যেসব দেশে 'biodiversity' প্রাণবৈচিত্র বা প্রাণসম্পদে ভরপুর সেখান থেকে বিভিন্ন গাছপালা ধান এসব যেন নিয়ে আসে। আপনারা তাদের দেশগুলোতে গেলে দেখতে পাবেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে তারা এসব নিয়ে যাওয়া গাছপালা, ধান এসব সংরক্ষণ করেছে। আমাদের উতপাদিত ধানগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোর মধ্যে নিয়ে রেখেছে সংরক্ষণের জন্য। সম্প্রতি উত্তর মেরুতে নতুন একটা ভল্ট তারা তৈরী করেছে।

কোনো কারণে যদি বিশ্বে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ হয় সেক্ষেত্রে এখানে সংরক্ষিত বীজগুলো যাতে নষ্ট না হতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য সত নয়। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বীজের মাধ্যমে ব্যবসা করা। ধরুন আপনার কাছে জমি আছে অথচ বীজ নেই সেক্ষেত্রে এই জমির কোনো মূল্য নেই। আর তাদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোনো দেশের খাদ্য ব্যবস্থার ওপর যদি তারা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে সেক্ষেত্রে একটা জাতিকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এটি তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ফলে হারভেস্ট প্লাস নতুন করে এই কাজটি করছে না। আরো একটি বিষয় হারভেস্ট প্লাসকে এই কাজ করার জন্য যারা অর্থ সরবরাহ করছে তারা হচ্ছে মেলিসা এবং বিল গেটস। তাদের কাছ থেকে হারভেস্ট অর্থ সহেযাগিতা পেয়েছে তাছাড়া এর সংগে যুক্ত আছে সিজিআইএআর। সিজিআইএআর হচ্ছে মূলত একটি 'consultative group on biological diversity'।

বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে এরা সাপোর্ট করে। বিরিসহ সারাবিশ্বে যেসব আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা সংস্থা আছে তাদেরকে এরা অর্থ সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ফলে বিষয়টি একটা লম্বা রাজনীতির বিরাট গল্প। এত অল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টা তুলে ধরা সম্ভব না। আর তাদের বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বে আমরা যারা কৃষি, জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করছি, আমরা যারা আমাদের সম্পদ রক্ষার জন্য লড়াই করছি; আমরা বলছি যে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো মূলত আমাদের সম্পদ লুট করার জন্য, ডাকাতি করার জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা তৈরি করেছে এবং তারা কাজ করছে।

এ ব্যাপারে একটা ছোট উদাহারণ দিলে হয়তো বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশে যদি জিংকের অভাব হয়ে থাকে তাহলে এ সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সবজি খাওয়া এবং নিউট্রেশন বাড়ানো। টেকনিক্যালি তো এ সমস্যার সমাধান হবে না। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে- ধরা যাক আপনি জিংকসমৃদ্ধ ধান উতপাদন করলেন কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গরীব মানুষ এ ধান পাবে কিভাবে! এখানে তারা যেটা নৈতিকভাবে আমাদের সামনে হাজির করতে চায় সেটি হচ্ছে- গরীবদের যেহেতু জিংকের অভাব আছে, শিশুদের জিংকের অভাব আছে তাই এই ধানের মাধ্যমে তাদের জিংকের অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে। আপনারা যদি সত্যি সত্যি আমাদের উপকার করতেই চান তাহরে আমাদের খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাকে রক্ষা করার ব্যাপারে সহযোগিতা করুন।

কিন্তু তা তারা করছে না। তারা এটাকে বলে মাইক্রো নিউট্রেনড বা biofortification। তারা এভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে ধানের মধ্যে বা খাদ্যের মধ্যেই নিউট্রেশন ঢুকিয়ে দেবে। তারা বলতে চায় মাইক্রো নিউট্রেনড দিয়ে গরীব শিশুদেরকে আমরা খাওয়াচ্ছি;এই ধরনের নৈতিক একটা ছলনা করে মূলত তৃতীয় বিশ্বকে প্রতারণা করছে। ফলে এটাও এই ধরনের একটা প্রতারণা।

তবে তার মানে এই না যে আমাদের যেসব বিজ্ঞানী এসব ব্যাপারে গবেষণা করছেন তাদেরকে আমি ছোট করছি। নিশ্চয়ই আমাদের বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবদান রেখেছেন। তবে তাদের কাছে আমি এ ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। যখন আপনারা ধানের নতুন একটা জাত তৈরী করবেন তখন তার expression টা নির্ভর করবে পরিবেশের ওপর। দেখা গেল আপনারা ধানের জিনের মধ্যে ট্রেড বাড়ালেন কিন্তু ধানটি যদি তার নিজের ট্রেডটি প্রকাশ করার পরিবেশ না পায় তাহলে তার বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব হবে? আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে- যদি এই ধানের উতপাদন কম হয় তাহলে কৃষক কেন এই ধানের চাষ করবে।

কারণ আগে বলা হতো স্থানীয় জাতের ধানের উতপাদন কম ফলে কালোশাল বা জিরাকাটারির চাষ করবেন না। এ কাহিনী আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। এখন হঠাত করে তারা এগুলো নিয়ে কেন ব্যস্ত হয়ে গেছেন। ফলে আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে এ ব্যাপারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদি সংস্থা কিভাবে আমাদের শোষণ ও নিপীড়ন করে সে ব্যাপারে আমরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষরা সচেতন নই এমনকি আমাদের বিজ্ঞানীরাও সচেতন নয়।

আমরা সচেতন নই বলেই এ ধরনের প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। আমি এটাকে inflated claim বলি। এগুলো আসলে তাদের বড় বড় দাবি তবে আসলে এর কোনো ভিত্তি নেই। তবে আমাদের বিজ্ঞানীদের এ ধরনের গবেষণা করা দরকার বলে আমি মনে করি। তবে বিদেশী সংস্থাগুলোর সঙ্গে নয়।

আমাদের দেশের জনগণ যেসব ধান করেছে তার বহু জাত আমাদের নিজেদের কাছেই আছে। তবে আমাদের কৃষকরা তো বিদেশীদের মতো করে জিংক বা ভিটামিন এ বলবে না; তারা একেক ধানকে একেক ভাবে বলে থাকে। কোনোটাকে বলে এই ধান বাচ্চাদের খাওয়ার জন্য। তো আসলে এভাবে বাঙালীকে তো আর মুর্খ ভাবলে চলবে না, আর কত হাইকোর্ট তারা আমাদেরকে দেখাবে! রেডিও তেহরান: সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো কাজে কাউকে সহযোগিতা করে তখন নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। সেক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক সুবিধা কি বাংলাদেশ পুরোপুরি পাবে? ফরহাদ মজহার : না তা পাবে না।

কারণ আপনি যে নতুন ধানের জাতের কথাটা বললেন- এই ধানের বীজ কম্বোডিয়াতে দেয়া হবে। তারপর ইন্দোনেশিয়া ,ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামে দেবেন। কিন্তু এই নতুন জাতের ধান তো আমাদের উদ্ভাবিত। তো সেক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের ধানের জাত যে অন্যান্য দেশে দেয়া হচ্ছে অথচ এর মালিকানাস্বত্ব তো আমাদের। তাহলে এই যে বিদেশে দেয়া হবে তার লাভ কে নেবে? সেটা কি হারভেস্ট প্লাসের হবে, এটা কি সিজিআইএআরের হবে- কিসের ভিত্তিতে হবে? এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমাদের এখানে biodiversity act এর একটা খসড়া বহুদিন আগে সরকারকে দিয়েছি অথচ এখনও সেটা পাস হয়নি। ফলে আমাদের এ এলাকা প্রাণসম্পদ ডাকাতি করার একটা অবারিত ক্ষেত্র। তাছাড়া খনিজ সম্পদ বলুন, জ্বালানী সম্পদ বলুন সব কিছু এখান থেকে অবাধে লুটপাট হচ্ছে। একই সাথে প্রাণ সম্পদও লুট হচ্ছে। আমি সরলীকরণ করব না যে সাম্রাজ্যবাদীরা সবক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র করে।

তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো করে। হারভেস্ট প্লাস নিঃসন্দেহে একটি সাম্রাজ্যবাদি প্রতিষ্ঠান। তাদের স্বার্থ হচ্ছে মাইক্রোনিউট্রিয়ানড। আর আমাদের স্বার্থ হচ্ছে কৃষি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা। একদিকে তারা আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের কৃষিকে কোম্পানীর অধিনস্ত করে ফেলছে।

একই সংগে নতুন কোনো জাত উদ্ভাবন করে কোম্পানীর মাধ্যমে সেগুলো আমাদেরকে কাছে বিক্রি করবে। ফলে আমি এ বিষয়েই আপত্তি জানাচ্ছি। তবে আমাদের বিজ্ঞানীদেরকে আমি কোনোভাবে খাটো করতে চাই না। আমি রিপোর্টে যা দেখেছি তাতে হারভেস্ট প্লাসের কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে আমি খুব ভালো করে চিনি।

এ প্রতিষ্ঠানটি সাম্রাজ্যবাদী একটি প্রতিষ্ঠান। এরা আমাদের ক্ষতি করার ছাড়া কি মঙ্গল করতে পারবে? রেডিও তেহরান: উচ্চফলনশীল বা উফশী জাতের যে কোনো ফসল অন্যভাবে বলা যায় হাইব্রিড জাতীয় ফসল আসলে কতোটা স্বাস্থ্যকর বলে আপনি মনে করেন? ফরহাদ মজহার : উফশি জাত বা উচ্চফলনশীল হচ্ছে স্থানীয় জাতের সঙ্গে ব্রিডিং করে যে জাত তৈরী করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রজননের মাধ্যমে এই উফশি জাত তৈরী করেন। আর কৃষকরা উচ্চ ফলনশীত জাত তৈরী করেন সিলেকশনের মাধ্যমে। তারা মাঠে ফসলের মধ্য থেকে পছন্দ করে উচ্চ ফলনশীল করেন।

উচ্চ ফলনশীল যদি কোনো কৃষক করতে চায় তাহলে প্রচুর সার ব্যবহার করতে হবে। দেখা যায় যে ফসলে পোকা লাগে তার জন্যে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। সেজন্যে এগুলোকে HYV না বলে; বলা উচিত High input varities. আর এটি তৈরী করতে প্রচুর কেমিক্যাল লাগে, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেখা যায় প্রথম কয়েক বছর প্রচুর ফলন হলেও পরবর্তীতে ফলন কমতে থাকে। ফলে নিঃসন্দেহে তারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যে কারণে গ্রীন রেভ্যুলেশনের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে আরথ সামিটে।

ওই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে এসে সবাই বলেছে আমরা টেকসই কৃষি ব্যবস্থা চাই। গ্রীন রেভ্যুলেশনের মূল কথাটা ছিল লাল বিপ্লব ঠেকানো। চীনে যে লাল বিপ্লব ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তাকে ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছিল সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে। ফলে সবুজ বিপ্লব বা উচ্চ ফলনশীল এর কোনো মানে নেই। ধরুন কোনো মাটিতে যদি তার সার পদার্থ না থাকে সেখানে উচ্চ ফলনশীল বলুন আর যাই বলুন সেখান থেকে কিছুই আসবে না।

তাহলে মূল কথাটা হচ্ছে পরিবেশকে রক্ষা করা। আর পরিবেশ রক্ষা করার মধ্য দিয়েই কৃষির প্রবৃদ্ধি বা ফলন বাড়ানো। আর এ বিষয়টি ইতোমধ্যে জাতিসংঘ এবং ফাওতে গৃহিত হয়েছে। এটাকে আমরা বলছি ecological approach. সেখানে বলা হচ্ছে কৃষির প্রতি যদি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নেয়া হয় তাহলে একদিকে যেমন ভালো বীজের দরকার একই সাথে ভালো পরিবেশেরও দরকার। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানীগুলো বলছে যে, না; কোনো পরিবেশ দরকার হবে না।

আমরা বীজের মধ্যে জীনে বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন একটা জাত দেব যাতে ফসল বৃদ্ধি পাবে। এগুলো একদমই মিথ্যা কথা এবং প্রোপাগান্ডা। আসলে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। রেডিও তেহরান: নতুন যে কোনো উদ্ভাবনের ক্ষতিকর একটা বিষয় থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ নতুন জাতের এ ধানের ক্ষেত্রে গিনিপিগে পরিণত হবে কি না? ফরহাদ মজহার : যে নতুন জাতের ধানের কথা বলা হচ্ছে- তাতে জিংকের পরিমাণ যদি বাড়ানো হয় তাতে অবশ্যই ক্ষতিকর দিক আছে।

যদি এমনিতেই জিংক খাওয়া হয় তারও ক্ষতিকর দিক আছে। এই ধান দেশীয় জাত থেকে ব্রিড করে তৈরি করা হয়ছে বলে তারা দাবি করছে। যদি দেশীয় জাত থেকে ব্রিড করে তৈরী করা হয়ে থাকে তাহলে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। কিন্তু আমরা জানি না তারা কিভাবে এটা করেছে! রেডিও তেহরান: এর সঙ্গে অন্য একটি বিষয় আমরা জানতে চাইব। সেটি হচ্ছে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সারের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

তো কৃষকের ভরা মৌসুমে কৃষক উচ্চমূল্যে সার কিনল- অথচ নির্বাচন যখন খুব কাছাকাছি তখন তিনি কৃষকের সারের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেন। কৃষক এতে কতখানি উপকৃত হবে? ফরহাদ মজহার : দেখুন প্রথমে আমি একটু সার সম্পর্কে বলব। আসলে আমরাই কৃষককে সার নির্ভর করে তুলেছি। আর এই নীতিটাই একটা ভুল নীতি। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী শুধু সার না একবার উনি আফ্রিকা থেকে ওনার আচলে বেঁধে 'নেনিকা' নামের এক প্রকার ধান আনেন বাংলাদেশে।

আর এই ধান নিয়ে তিনি কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নেনিকা জাতের এই ধান চাষ করে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছে। যদিও অনেক সময় বলা কৃষিমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় একটি ভালো মন্ত্রণালয়- আসলে কিন্তু তা নয়। আসলে গণমাধ্যম এসব বিষয়গুলো খুব ভালো করে কাভার করে না বলে এসব বিষয় জানা যায় না। সারের দাম কমানোর এই কথাটা তারা বলছেন মূলত এটা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা।

কৃষকের সার প্রয়োজন হতে পারে। তবে কম মূল্যের সেই সারের সুবিধাটা আসলে কারা পাবে এ প্রশ্ন উঠতে পারে। আসলে এ সুবিধাটা পাবে ডিলাররা এবং ব্যবসায়ীরা। কৃষকরা এই সুবিধাটা কখনও পাবে না। ফলে এ বিষয়টি নিতান্তই নির্বাচনী প্রচারণা।

আমরা মনে করি বাংলাদেশের কৃষির যে নীতির কথা ধরিত্রী সম্মেলনে বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন সেটি হচ্ছে আমাদের মতো দেশে টকশই কৃষিব্যবস্থা দরকার। সেখানে সার এবং কীটনাশক কমাতেই হবে। সম্প্রতি আইরিশ বিজ্ঞানীরা বিরাট একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে তাদের গবেষণায়। আইরিশ বিজ্ঞানীরা- শুধুমাত্র ভালো পানির দ্বারা ৩০ ভাগ কৃষি উতপাদন বাড়িয়েছে। অর্থাত পানিতে যদি যথেস্ট পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকে এবং পানি যদি বিষাক্ত না হয় তাহলে উতপাদন এমনিতেই বাড়বে।

আমার নয়া কৃষিতে দেখেছি ফলন অনেক বাড়ে যদি বৃষ্টির পানি ধরে রেখে অর্থাত সারযুক্ত পানি ধরে রেখে তা ফসলে ব্যবহার করতে পারি। এক্ষেত্রে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফসল এমনিতেই বেড়ে যাবে। #

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.