টেকটিউন্স এডমিনগণ,
অনেক কষ্ট করে টিউনটি লিখেছি। এটি পেন্ডিং বা ডিলিট করে দেয়ার আগে আমাকে অন্তত সতর্ক করবেন।
আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমেচার/হ্যাম রেডিও? এটা খায় না মাথায় মাখে? এটা আসলে একটি শখ। আপনি নিশ্চয়ই মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন শুনে থাকেন। কিন্তু এগুলোর জন্য একগাদা যন্ত্রপাতি, পারমিশন লাগে এবং অঢেল টাকা রাখে।
সেদিক দিয়ে এমেচার রেডিও হচ্ছে এমন একটি টু ওয়ে রেডিও সিস্টেম যা সাধারণ মানুষ ব্যাবহার করে। কেন? কারণ এর মাধ্যমে আপনি বিনামূল্যে কথা বলতে পারেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে হতে পারে আমি তো সেটা ফোন দিয়েও করতে পারি।
ধুর মিয়া! :evil: এত ফোন নাম্বার পাবেন কই? ফোন বিল নামক একটি বস্তুও তো আছে! নেটওয়ার্কের ব্যাপারও আছে। আর এমেচার রেডিওতে শুধু লাগে ব্যাটারি,রেডিও সেট ও লাইসেন্স।
সেসব ব্যাপারে পরে আসছি। তার আগে হ্যাম রেডিওর ইতিহাস জেনে নেই।
এখানে আমি কপি পেস্ট মারছি। লেখক চেতবেন না! পরে Credit এ আপনার নাম বাজারের সবচাইতে বাজে কালি দিয়ে আপনার নাম লেখা হবে ।
বিশ্বের প্রথম অ্যামেচার রেডিও স্টেশন পরিচালনা করেছিলেন যে তিনজন তারা ছিলেন Albert S Hyman , Bob Almy এবং Poogie Murray ।
তারা তাদের স্টেশনের নামকরন করেছিলেন “Hyman-Almy-Murray” বা Hyalmu । কিন্তু ১৯০১ সালে Hyalmu রেডিও স্টেশন এবং মেক্সিকান জাহাজ Hyalmo এর প্রেরিত বেতার সংকেত সনাক্তকরনে গোলযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তারা তাদের তিনজনের নামের প্রথম অক্ষরগুলো ব্যাবহার করে তাদের ষ্টেশনের নামকরন করেন “HAM” বা হ্যাম । তাদের সেদিনের উদ্যোগের ফলে বিশ্বব্যাপী এই সার্ভিসের নামকরন করা হয় “HAM” এবং আশা করা যায় শেষ পর্যন্ত এটি “HAM” নামেই বিদ্যমান থাকবে ।
আমেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও হচ্ছে একটি বিশ্বব্যাপি কমিউনিটি যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের প্রায় ৩ মিলিয়ন ব্যাক্তি নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন । ২০০৪ সালের জরিপ অনুযায়ী এমেরিকায় ৭ লক্ষ , জাপানে ৬ লক্ষ , দক্ষিন কোরিয়ায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার , থাইল্যান্ডে ১ লক্ষ ৪০ হাজার , কানাডায় ৫৭ হাজার , জার্মানিতে ৭০ হাজার , ইংল্যান্ডে ৬০ হাজার , সুইডেনে ১১ হাজার , নরওয়েতে ৫ হাজার এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১৬ হাজারের বেশি হ্যাম এই বিষয়ে যথেষ্ট এগিয়ে আছে ।
তারা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে অ্যামেচার রেডিও নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য মহাকাশের বুকে নিজেদের অ্যামস্যাট (অ্যামেচার স্যাটেলাইট) পাঠিয়েছে, যা বিশ্বের যে কোন হ্যাম বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে পারে ! এসব কাজে বিশ্বের সব দেশের সরকার ও যথাযথ কতৃপক্ষ সর্বাত্নক সহায়তা করেন, যার ছিটেফোঁটাও বাংলাদেশে নেই ।
অ্যামেচার রেডিও কিন্তু শুধু কথা বলার জন্য নয় , এই রেডিও ব্যবহার করে আপনি অ্যামেচার স্যাটালাইট , অ্যামেচার টেলিভিশন, স্লো-স্ক্যান টিভি , ফাস্ট-স্ক্যান টিভি , ডাটা ট্রান্সমিশনের বিভিন্ন মোডের ব্যবহার , মোর্স কোড ও রেডিওকে মডেম হিসেবে ব্যবহার করার মতো আরো অনেক মজার মজার কাজ করতে পারবেন । দুর্যোগের সময়েও অ্যামেচার রেডিও খুব কাজে লাগে। কারণ তখন ফোন নেটওয়ার্ক কাজ করে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে , এসব কাজে আমাদের সাহায্য করার জন্য সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ HAM বসে আছে , যাদের পেশা অথবা শখই হলো বিনামূল্যে অন্যান্য HAM দেরকে সাহায্য করা এবং অ্যামেচার রেডিও নিয়ে গবেষণা করা ।
আমরা যদি এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের দেশের সাথে তুলনা করি , তাহলে বলা যায় যে, আমরা অন্যান্য দেশের থেকে প্রযুক্তি ও দক্ষ লোকবলের দিক থেকে যথেষ্ট এগিয়ে আছি । কারণ আমাদের দেশে ইকোলিংকে সংযুক্ত যে রিপিটারটি আছে , সেটি ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেটে সংযুক্ত আছে একটি আইএসপি-র অফিসে এবং সেই আই্এসপি এর মালিক নিজে একজন হ্যাম এবং তিনি বা্ংলাদেশের হ্যামদের থেকে কোন অর্থ নেন না এই সেবা দেয়ার বিনিময়ে । আর বাংলাদেশের হ্যামরা সবসময়ই কেউ না কেউ ব্যান্ডে থাকে । তারা সবসময়ই নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে কথাবর্তা বলে , এমন কোনো দিন নেই যেদিন ব্যান্ডে ১০-১২ টা বিদেশী স্টেশন আসে না । বিদেশের প্রত্যেকটি দেশের হ্যামদের কাছে সিয়েরা ২১ ল্যান্ড (বাংলাদেশের কলসাইন S21 দিয়ে শুরু , তাই বাংলাদেশকে সিয়েরা ২১ ল্যান্ড বলা হয়) খুবই জনপ্রীয় ।
কারণ হচ্ছে , যখনই কোন বিদেশী স্টেশন আমাদের দেশের ইকোলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টেশনের সাথে কথা বলতে চায় , তখন অবশ্যই কেউ না কেই তাদের উত্তর দেয় । বিদেশী স্টেশনগুলো অনেক সময়ই বাংলাদেশের স্টেশনগুলোর সাথে কথা বলে হ্যাম রেডিও সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশী হ্যামদের সাহায্য নেয় । এসবই হয় ইংরেজী ভাষায় , এতে করে আমাদের ইংরেজী ভাষার চর্চাটাও খুব বেশী হয় , যা আমাদের জন্য একান্ত দরকার । আমাদের দেশে হ্যামরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেডিও সিগন্যাল পাঠাচ্ছেন বহনযোগ্য রিপিটার ব্যবহার করে , যেগুলো বাংলাদেশী প্রযুক্তিতে অতি সামান্য অর্থ ব্যয় করে হাতে তৈরি করা হয়েছে ।
আপনার প্রথমে লাগবে একটি রেডিও সেট ও লাইসেন্স।
রেডিও সেট আপনাকে মনে হয় বিদেশ থেকে আনাতে হবে। বাংলাদেশে এগুলো পাওয়া যায় না। আর লাইসেন্স নিতে হবে BTRC থেকে পরীক্ষা দিয়ে। লাইসেন্স নিতে খুব একটা খরচ পড়বে না।
আমাদের দেশে হ্যাম ভাইদের মধ্যে আমি বেশিরভাগকে Motorola Radius GP 300 সেটটি ব্যবহার করতে দেখেছি।
এটি খুবই শক্তিশালী একটি হ্যান্ডি (আপনাদের ভাষায় যাকে হ্যান্ড সেট বলেন)। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এরা প্রায় প্রত্যেকটি সেট জাঙ্ক ইয়ার্ড থেকে বাতিল অবস্থায় সংগ্রহ করে ঠিকঠাক করে নিয়েছেন, খরচ পড়েছে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা। আপনি ইচ্ছা করলে নতুনও কিনতে পারেন সিঙ্গাপুর বা চায়না থেকে। তবে নতুন কিনলে সেট-এর সার্কিটবোর্ড নিয়ে কাজ করার বা ইলেকট্রনিক্স নিয়ে ঘাঁটাঘাটিঁ করার প্রয়োজন পড়বেনা। শুধু বাজার থেকে কিনে এনে ফ্রিকোয়েন্সি বসিয়ে নিলেই চলবে।
কিন্তু আমার মনে হয়না, এতে আপনারা কেউ কিছু শিখতে পারবেন না। কারণ প্রয়োজনের সময় আপনার রেডিও-র যদি কোন প্রকার কাজ করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অন্য হ্যাম ভাইয়ের দ্বারস্থ হতে হবে। কিন্তু আপনাদের কিছুই শেখা হবে না, এই আফসোস করবেন শুধু। অনেকে বিদেশ থেকে তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য বেইজ রেডিও (HF) এবং হ্যান্ডি (UHF) নিয়ে এসছেন। এটা আসলে যার যার সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে।
বিভিন্ন রেডিও প্রস্তুতকারী কোম্পানীর ঠিকানা পাবেন এই লিংক থেকে
http://www.barl.org/index.php?id=72
নিচেরটি হলো একটি Motorola Radius GP 300 সবার জন্য এমেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও (রি-পোস্ট)
আর নিচের ছবিটি হলো একজন আমেরিকান হ্যাম-এর ব্যক্তিগত হ্যাম রেডিও স্টেশন, যেখানে অনেকগুলো HF বেইজ সেট দেখা যাচ্ছে
তবে সবচেয়ে মজার এবং গর্বের বিষয় হলো এই যে, বা্ংলাদেশের যারা হ্যাম হয়েছেন, তারা আজকে সবাই ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে ভালো আইডিয়া রাখেন। বাংলাদেশের যে রিপিটার (Repeater) এবং ইকোলিংক (Echolink) ট ি আছে, তা বেলায়েত রবিন (S21RB) এর নিজের হাতে ডিজাইন এবং তৈরি করা। এগুলো আমাদের পাশের দেশ্ ইন্ডিয়ার হ্যামদের কাছে ডাল-ভাত। আমরা তো চিটাগাং বা অন্যান্য জাঙ্ক ইয়ার্ড থেকে ২-৩ টা ভাঙা, নষ্ট রেডিও যোগাড় করে সেখান থেকে ১টা ভালো রেডিও যোগাড় করি, ইন্ডিয়ান হ্যাম ভায়েরা সেই বেইজ রেডিও নিজেরা তৈরি করে !!! আশ্চর্য হলেও সত্যি।
আমরা করতে পারিনা, কারণ আমাদের দেশে হ্যাম-এর সংখ্যা কম, এবং চাহিদা কম, তাই আসলে একাজ করার মতো পরিস্থিতি সেই।
কিন্তু তাই বলে রাতুল ভাই (S21RE) নিজে খুবই কম খরচে বাংলাদেশের এবং যতদূর জানি, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম SDR (Software Defined Radio) তৈরি করেছেন, যা আপনারা BARL-এর সাইটে দেখতে পাবেন। এটি আসলে একটি ডিভাইস, যা দিয়ে আপনি রেডিও সিগন্যাল রিসিভ করতে পারবেন, যা আপনার কম্পিউটারের সাইন্ড কার্ডের লাইন ইন (Line In) দিয়ে সিগন্যাল ঢুকবে আপনার পিসিতে, সেখানে আপনি সফ্টওয়্যার দিয়ে ব্যান্ড এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য ব্যবহার করে সেই চ্যানেল ধরতে পারবেন, যা আপনার সাউন্ড কার্ডের লাইন আউট (Line Out) পোর্ট ব্যবহার করে স্পিকারে শুনতে পারবেন। রাতুল ভাইয়ের এটা তৈরিতে আমি যতদূর জানি, ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হয়েছে।
আমি যতদূর জানি বিটিআরসির লাইসেন্স ফি ১১০০, এক্সাম ফি ৩০০। আর প্রতি বছর ১০০ টাকা দিয়ে লাইসেন্স রিনিউ করতে হবে।
সুতরাং আর দেরী না করে এখনই বিটিআরসি-র ওয়েবে http://www.btrc.gov.bd তে দেয়া নির্দেশাবলী অনুযায়ী আবেদন করে লাইসেন্স নিয়ে হয়ে যান বাংলাদেশের একজন গর্বিত অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী !!!
যেহেতু বাংলাদেশ বি,টি,আর,সি নতুন করে লাইসেন্স দিচ্ছেনা আগ্রহীরা আওয়াজ দিতে পারেন s21hq@barl.org এই ঠিকানায় ।
আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন বাংলাদেশ আমেচার রেডিও লীগ এর ওয়েবসাইট http://www.barl.org অথবা ফেসবুক গ্রুপ জয়েন করতে পারেন Bangladesh Amateur Radio League (BARL) ।
*আপডেটঃ BTRC দীর্ঘ ৫ বছর পর পরীক্ষা নিবে। এই বছরের ৯ নভেম্বরে হবে পরীক্ষা।
এখনি হয়ত ভাবছেন, কি মজা! আমি এখনি লাইসেন্স নিয়ে নেই! কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সহিত আপনার উৎসাহে আইসক্রিম ঢেলে দিতে হচ্ছে।
আপনাকে এ বিষয়ে উত্তমরুপে পড়াশোনা করতে হবে। BARL আগে কোচিং করাতো। এখন ওদের কোনও Activities চোখে পরে না। তাহলে? আরে নো চিন্তা ডু ফুর্তি! গুগল মামু আছে না? ওখানে শত শত টপিক, অনলাইন কোচিং আছে। ইচ্ছা করলে সিলেবাস এর ওপর একটা মডেল টেস্টও দিতে পারেন।
বেশি সমস্যা হলে এই লিঙ্কে যান। তারপর ধুমায়া জিজ্ঞেস করেন।
সুতরাং, শুধু একবার ভাবুন, বসে আছেন একাকী, হাতে কোন কাজ নেই। তখন যদি আপনি বিনা খরচে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির ও ভাষার মানুষের সাথে কথা বলতে পারছেন, তখন ব্যাপারটা কেমন হবে ??? অথবা যখন কোন স্পেস স্টেশন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় স্পেস স্টেশনে অবস্থানকারী নভোচারী হ্যাম বাংলাদেশী হ্যামদের ডাকে, তখন যদি আপনি তার ডাকে সাড়া দেন, কেমন মজা হবে ??? সুতরাং আর দেরী না করে এখনই বিটিআরসি-র ওয়েবে দেয়া নির্দেশাবলী অনুযায়ী আবেদন করে লাইসেন্স নিয়ে হয়ে যান বাংলাদেশের একজন গর্বিত অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারকারী !!!!
আমি বেশিরভাগ তথ্য নিয়েছি Techtunes এর লেখক ZicoBaby(S21rn@yahoo.com and zicobaby@zicobaby.tk),টিউনারপেজের টিউনার টিজে - Shiny Ruddur এর লেখা থেকে। আপনাদের পারমিশন নিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
, তবে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ এই টিউনের তথ্য নেয়ার জন্য।
পাক্কা দেড় ঘন্টা পরিশ্রম করে এই লেখা লিখেছি। আমার হাত ব্যাথা করছে। তাই লেখা থামানোর আগেই বলি, আপনার কোনও সমস্যা হলে কমেন্টে বলবেন। যদিও আমি এই বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞ নই।
আর হ্যাম ভাইরা, BTRC এর নেক্সট পরীক্ষা কবে হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।