জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
একটি সুখবর পড়লাম আজ একটি স্থানীয় পত্রিকায়। ফেনসিডিলের প্রতি বোতল মাত্র ১ হাজার টাকা। এই গরীব দেশে এটি নিঃসন্দেহে সুখবর।
সাধারণত যে জিনিসের চাহিদা বাড়ে, সে জিনিসের দামও বাড়ে। ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ফেনসিডিলের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য এই ফেনসিডিলের দাম বৃদ্ধি।
ফেনসিডিল বৃত্তান্ত :
১৯৮২ সালে ফেনসিডিল বাংলাদেশে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকে ফেনসিডিল ব্যবহার বেড়ে যেতে থাকে। ভারত থেকে সীমান্ত-পথে ব্যাপকহারে আসতে শুরু করে ফেনসিডিল। ফেনসিডিল কেবল বাংলাদেশে নয়, ভারত নেপাল ও মিয়ানমারেও ব্যবহৃত হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৩,২৫,৫০০ বোতল ফেনসিডিল আটক করে।
ভারতে আগে মে এন্ড বেকার (ইন্ডিয়া ) লিমিটেড নামে একটি কোম্পানী ফেনসিডিল তৈরি করত। ১৯৯০ সালে এই কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রোন পোলেংক (ইন্ডিয়া ) লিঃ। ২০০০ সালে রোন পেলেংক নিকোলাস পিরামল (ইন্ডিয়া) লিমিটেড নামে একটি কোম্পানীর সাথে সংযুক্ত হয় এবং বর্তমানে নিকোলাস পিরামল (ইন্ডিয়া )লিমিটেড ফেনসিডিল উৎপাদন করে থাকে। ফেনসিডিল এই কোম্পানীর সর্বাধিক বিক্রিত ঔষধ।
সাধারণ কফ সিরাপ হিসেবে ব্যবহৃত ফেনসিডিলে ৫% কোডেইন ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ভারতে যেই ফেনসিডিল তৈরি হয় তাতে কোডেইন থাকে ২০%।
২০০৫ সালের ২ জুলাই ভারতে আহমেদাবাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনসিডিলে কোডেইন ফসফেট অতিরিক্ত মেশানোর দায়ে নিকোলাস পিরামল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অংশ একটিস কোম্পানীর সেলস ম্যানেজার যোগেশ বকশিকে দায়ী করে মামলা করে। ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযোগ করে, যোগেশ বকশি ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশ, পশ্চিম বঙ্গ ও অন্যান্য এলাকায় অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে উৎপাদন করে এই ফেনসিডিল। ভারতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সেই সময়ে ৪ লাখ বোতল ফেনসিডিল আটকের কথা জানায়। তারা আরও জানায়, বাকশি বছরে ৪ থেকে ৪.৫ কোটি বোতল ফেনসিডিল পাচার করেছে।
এ পাচার করে তারা বছরে ২০০ কোটি রূপি লাভ করে ।
নিকোলাস পিরামল ইন্ডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান অজয় জি পিরামল। তিনি ভারতের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার মূল কোম্পানী পিরামল এন্টারপ্রাইজ প্রায় ২৫০০ কোটি রূপি মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। এই কোম্পানীটি টেক্সটাইল, গাড়ির পার্টস, ফার্মাসিউক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবসা করে থাকে।
অজয় জি পিরামল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন পরিচালক। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে জড়িত।
ক্ষতিকর প্রভাব :
ফেনসিডিলের ভেতরে থাকা কোডেইন ফসফেট মূলত ব্যবহারকারীকে ফেনসিডিলের প্রতি আসক্ত করে তোলে। কোডেইন তৈরি হয় পপি ফুল, বীজ ও পাতা থেকে। এই পপি থেকেই হেরোইন, মরফিন ও প্যাথেডিন তৈরি হয়।
কোডেইন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে নিস্তেজ করে ফেলে। ফলে মস্তিষ্কের চরম ক্ষতি হয়। অনুভূতিহীনতা তৈরি হয়। পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয় ও যৌন অনুভূতি কমে যায়। শরীরের স্বাভাবিক রূপ-রস-গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে সর্দি কাশি হলে আর সারে না। শরীরের কোথাও কোথাও বিশেষত ফুসফুসে পানি জমতে পারে। ফেনসিডিল আসক্ত ব্যক্তির কোন কাজে মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তার চিন্তা-ভাবনা অস্বাভাবিক ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আসক্তদের মধ্যে যৌন বিকৃতি ও যৌনরোগে আক্তান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
এমনকি আসক্তরা যৌন বিকৃতির কারণে এইডসসহ নানা ভয়াবহ রোগের ঝুঁকির মধ্যে বাস করে। পুরুষত্বহীনতার কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। সাজানো সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
এসব মাদকাসক্তদের কারণে তাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। ঘর বাড়ি জমি জমা বিক্রি করে অনেকে মাদকের টাকা যোগায়।
চূড়ান্তভাবে আসক্ত ব্যক্তিরা ফেনসিডিলের টাকার জন্য খুন করতে দ্বিধা করে না। ঢাকা শহরে যারা ছিনতাইকারী তাদের বেশির ভাগই ফেনসিডিল ও হেরোইন আসক্ত। মূলত মাদকের টাকা যোগাতেই তারা ছিনতাইকারীর জীবন বেছে নিয়েছে। মাদক গ্রহণ করতে করতে একদিন হঠাৎ করে এরা মারা যায়।
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাদক নিঃসন্দেহে ফেনসিডিল।
এমনকি সারা পৃথিবীর কোথাও কফ সিরাপ এমনভাবে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
শেষ কথা :
আমাদের দেশটি একটি মুসলিম দেশ। ইসলাম ধর্ম মাদকাসক্তিকে হারাম বলে ঘোষণা করেছে। অথচ মুসলিম প্রধান এই দেশে মাদকাসক্তির পরিমাণ ভয়াবহ। কোন মুসলিম কি মাদকাসক্ত হতে পারে ?
অন্য দিকে নানা কারণে আমরা ভারত বিরোধিতা করি।
কথায় কথায় ভারতকে তুলোধুনো করতে আমাদের কোন বেগ পেতে হয় না। সমপ্রতি এই বিষয়টি আরও বেড়েছে। কিন্তু ভারতীয় পণ্য ফেনসিডিলের প্রতি আমাদের অগাধ প্রেম। ফেনসিডিল না হলে আমাদের চলে না। অনেকে ফেনসিডিল তৈরি করার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে, কিন্তু আমরা নিজেরা এটিকে মাদক হিসেবে গ্রহণ করে ভারতকে সুযোগ করে দিচ্ছি সেটা বলে না।
দেশের কোটি কোটি টাকা পাচার করে আনা এই ফেনসিডিল সেবন করে আমরা যেমন দেশের বারোটা বাজাচ্ছি, তেমনি নিজের ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করছি। নিজ ধর্ম, দেশপ্রেম, নিজের পরিবার ও নিজের ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দিয়ে নেশার জগতে পড়ে থাকা কোন কাজের কথা নয়। কোন সভ্য মানুষ এই কাজ করতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।