কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পায়
প্রথম পর্ব Click This Link
দুশ্চিন্তায় বাণিজ্যমন্ত্রী রাতের খাবার খেতে পারলেন না। আধাপেটে উঠে যেতে দেখে কুলকুলী বেগম স্বামীর পিছু নিলেন। মন্ত্রী বেসিনে এসে হাত ধুচ্ছেন।
পাশে দাঁড়িয়ে কুলকুলী বেগম জিজ্ঞেস করলেন, আধা খেয়ে উঠে এলে যে? রান্না কি খারাপ হয়েছে?
তোয়ালে হাত মুছতে মুছতে নিষ্প্রাণ কন্ঠে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, খেতে ভাল লাগছে না।
কেন? অফিসিয়ালী কোন ঝামেলা?
বাণিজ্যমন্ত্রী কোন জবাব না দিয়ে বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।
কুলকুলী বেগম বুঝলেন সমস্যা হয়েছে। তিনি হাত ধুয়ে দ্রুত হেটে মন্ত্রীর পিছনে দরজা ভেজিয়ে বেডরুমে ঢুকলেন। মন্ত্রী বিছানায় সটান হয়ে পড়ে আছেন। শিয়রে বসে মন্ত্রীর টেকো মাথায় হাত বুলিয়ে স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, সমস্যাটা না বললে সমাধান দেবো কিভাবে?
প্রাইম মিনিষ্টার আগামীকাল বাজার ভিজিটে যাবেন।
যাবেন! তাতে তোমার টেনশনের কি আছে?
কি বলছো তুমি! তুমি কি ভুলে গেছো আমি কমার্স মিনিষ্টার?
ভুলবো কেন! সমস্যাটা কোথায় বলো?
আমি বলেছি সাংবাদিকরা টিভি চ্যানেলে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়।
ওরা বিরোধী দলের হয়ে কাজ করছে। বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল এবং গরীবের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে। গত কয়েকদিন যাবত আমি ব্যবসায়ীদের অনেক হুশিয়ারী সংকেত দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
কিন্তু বাজারে এর উল্টো অবস্থা এই তো?
তাই।
সমাধান অতি সহজ।
সহজ! কিভাবে?
কারওয়ান বাজারের সব দোকানদারদের ভয় দেখিয়ে বা লোভ দেখিয়ে বলতে হবে আগামীকাল প্রাইম মিনিষ্টারের বাজার পরিদর্শনের সময় সব জিনিসের দাম কমিয়ে বলতে হবে। এবং তোমার ভাড়া করা কিছু লোক রেডি রাখবে যারা প্রাইম মিনিষ্টারের সামনে জিনিসপত্র কিনবে। প্রাইম মিনিষ্টার চলে গেলে দোকানীকে আসল দাম তুমি পরিশোধ করে দিবে।
চমৎকার! কিন্তু পরে যদি অন্য মার্কেটে ভিজিটে যায় তখন?
ঢাকা সিটির সব মার্কেটে এই ব্যবস্থা নেবে।
ব্যস!
পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী কারওয়ান বাজার পরিদর্শনে এলেন। সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা তো আছেই। প্রধানমন্ত্রী হেটে হেটে বিভিন্ন দোকানে যাচ্ছেন, তরিতরকারী হাতিয়ে দেখছেন। দাম জিজ্ঞাসা করছেন, দোকানদাররা হেসে মূল্য বলে দিচ্ছেন।
বেগুন কত কেজি?
১০ টাকা স্যার।
কি বলছেন আপনি! গতকাল টিভির রিপোর্টে আপনারাই বলেছেন বেগুনের কেজি ৭০ টাকা।
সাংবাদিকদের কাছে আমরা বাড়াইয়া বলি স্যার!
ইন্টারেস্টিং! আর পেয়াজ কতো কেজি?
২০ টাকা কেজি স্যার!
কি বলছেন? এও কি সম্ভব?
বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা করলে সবই সম্ভব স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী পাশ থেকে বললেন, আমি গত সন্ধ্যায় আপনাকে বলেছি স্যার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়মতার মধ্যেই আছে! বিরোধী দল দলীয় সাংবাদিকদের দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে!
প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে বললেন, আমারও তাই মনে হচ্ছে মিঃ মন্ত্রী। আশে পাশে নিশ্চয়ই ক্রেতা আছে? কিছু ক্রেতা ডেকে এনে কেনার ব্যবস্থা করুন। আমি দেখবো।
বাণিজ্যমন্ত্রী ইশারা করতেই করতেই একজন দর্শকদের কাছে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বিশজন ক্রেতা কেনা কাটা করতে চলে এলো। প্রধানমন্ত্রী ওদের কেনাকাটা দেখছেন। বিশজন চলে যাবার পর আরও দশ জন এলো।
প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, আপনি প্রতিদিন একটা করে বাজার ভিজিট করবেন এবং আজকের মতো ক্রেতা দিয়ে পণ্যাদি ক্রয় দেখাবেন।
আমি বিরোধীদের অভিযোগের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবো।
ইয়েস স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী ভেতরে ভেতরে ঘামতে শুরু করেছিলেন। একে তো রমজান মাস তার উপর ভাদ্র মাসের গরম। কোট টাই টিলা করতে হবে। পড়তে হবে ফিনফিনে পাঞ্জাবী।
হাজার হলেও রোজার মাস। প্রধানমন্ত্রীকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোবাইলে ফোন করে বললো, আচ্ছালামু আলাইকুম স্যার! আমি কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলছি স্যার!
বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, ধন্যবাদ আপনাকে সভাপতি সাহেব। একসেলেন্ট কাজ দেখিয়েছেন আপনারা! প্রধানমন্ত্রী বা আমি অন্য কোন মন্ত্রী বাজার ভিজিটে আসলে এই রকম কাজ করবেন। আজকের মতো নিজেদের লোককে ক্রেতা সাজিয়ে পণ্য ক্রয় দেখাবেন। ব্যস!
এ ব্যাপারে আমার একটা কথা আছে স্যার।
কি কথা সভাপতি সাহেব?
কথা ছিল বিশজন তরিতরকারী কিনবে। কিন্তু পরের দশজন আমাদের লোক ছিল না স্যার!
তাই নাকি?
জি স্যার।
এজন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে তো?
জি স্যার।
নো প্রবলেম।
থ্যাংক ইউ স্যার!
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।