যেকোন বছরের খবরের কাগজ খুললেই দেখা যাবে প্রতি রমজানেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা। এটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে এই বছর যে গতিতে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে সেটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। অন্য কারণের মধ্যে আন্তর্জাতিক এবং দেশের অভ্যন্তরে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বর্তমান অবস্থা বেশকিছুটা তারই প্রতিফলন। অদূর ভবিষ্যতে এর কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে এই আশা বোধহয় করা যায় না।
প্রতি রমজানে এবং ঈদে ধনী-নিধন সকলেই একটু ভাল খেতে চায়, ছেলে-মেয়েকে নতুন কাপড় পরাতে চায় এবং সেজন্য সারা বছর ধরে প্রস্তুতি নেয়। এছাড়া বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বোনাস হিসাবে বিশেষ সম্মানী দিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে পণ্যের চাহিদা বাড়ে কিন্তু যদি সরবরাহ তার সাথে মিলিয়ে বাড়ানো এবং তার বিতরণ প্রক্রিয়ার দক্ষতা বাড়াতে না পাড়ে তাহলে দ্রব্যমূল্যের উপর চাপ পড়তে বাধ্য। তার উপর দাম বাড়ছে আরও বাড়বে পত্রিকা পড়ে, লোকমুখে শুনে যাদের সামর্থ্য আছে তারা আপাত প্রয়োজনের চাইতেও বেশি সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। একই মনোবৃত্তিতে ব্যবসায়ীরাও তাদের মজুত মাল সরবরাহে আগ্রহ কমে যায়।
তারাও ভবিষ্যতে আরও লাভের আশায় থাকে। বস্তুত এই পরিস্থিতি বর্তমান এই বছরে আরও তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। এর সমাধানের জন্য সাময়িক ব্যবস্থা নেয়ার অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। তারমধ্যে অন্যতম হবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং বাইরে থেকেও আমদানিকৃত পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়ায় যতটা সম্ভব ব্যয় এবং অন্যান্য বাধা-বিপত্তি দূর করা। থানা পুলিশ দিয়ে বা প্রশাসনের লোকজন এখানে-ওখানে মাঝে মাঝে তদারকি করায় সাময়িকভাবে ও স্থানীয়ভাবে দ্রব্যমূল্যের উপর কিছু শুভ প্রভাব পড়তে পারে কিন্তু তার ফল স্বভাবতই সীমাবদ্ধ।
তবুও তা করতে হবে। বাজারকে বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ভোগ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রির জন্য যতটা সম্ভব বাণিজ্যিক বাজারের বাইরে সুবিধা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিডিয়ারের ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলো একটি ভাল প্রভাব রাখছে। তাতে সেখানে ক্রেতারাই শুধু সুফল পাচ্ছে না, সামগ্রিকভাবে সারা বাজারেই এর প্রভাব পড়ছে। কিন্তু তাদের চেষ্টাও স্বাভাবিকভাবেই সীমিত ও স্বল্পস্থায়ী হতে বাধ্য।
এর স্থায়ী বিকল্পের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। কারণ অন্যতম পন্থা হবে স্বল্প আয় ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করা। এক সময় এটি চালু ছিল এবং মোটামুটি ভালই চলছিল। আমদানিকৃত একই ধরনের সামগ্রির ক্ষেত্রে টিসিবির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিও জরুরী। যারা সরকারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মধ্যস্বত্বভোগিদের সাহায্য ব্যতিরেকেই সোজাসুজি আমদানি করতে পারবে এবং সরকারী রেশনের মাধ্যমে তা বিতরণের ব্যবস্থা করতে পারবে এই ধরনের ব্যবস্থার উপস্থিতি পরোক্ষভাবে অন্তত কিছুটা হলেও সামলাতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে এখনই যে ব্যবস্থাটি করা যেতে পারে তা হলো পরিবহন ব্যয় কমানোর জন্য অবিলম্বে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম একমাস আগের চাইতেও অনেক কমে আসছে, এর সুফলটা ব্যবসায়ীদের এবং তাদের মাধ্যমে জনসাধারণের পাওয়ার ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন। একই সঙ্গে যাতে কোন সরকারী বা বেসরকারী লোকজনের অবাঞ্চিত বাধা সৃষ্টির ফলে পরিবহন ব্যয়ের উপর এবং সরবরাহ অব্যাহত রাখার উপর অযাচিত বাধার সৃষ্টি না হয় সেই সম্পর্কে সরকারকে শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে এতেই যে সব সমাধান হয়ে যাবে একথা অতি আশাবাদিও বলতে পারবে না। আশংকার কথা কোন ক্ষেত্রে যে আরও বাড়বে যার উপর কারও কোন হাত নেই।
এর মধ্যে অন্যতম হলো বন্যা, যার প্রভাব ইতিমধ্যেই দেশের একটি বড় অংশে পড়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে অতি-সত্বরই এটি আরও বিপজ্জনক রূপ নেবে। তার জন্য সরকারের ও জনসাধারণের প্রস্তুতি কতটুকু আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এর জন্য সকলকে আশু প্রস্ততি নিতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।