এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বহুদিন পরে সেল ফোনে একটি পুরোনো নম্বর থেকে কল দেখে প্রথমে উৎসাহী আর তারপরে কোন এক অজানা কারনে আতংকিত হয়ে উঠলাম। উৎসাহের কারন হলো বিয়ের পর থেকে এই নম্বরের মালিক আমাকে কল করা একপ্রকার কমিয়েই দিয়েছে আর আতংক এই কারনে যে, কোন না কোন ঝামেলা ছাড়া সে আমাকে কল দেয় না। সুতরাং কি হবে, কি হইসে, এসব ভাবতে ভাবতেই রিসিভ করলাম আমার বন্ধুর কলটা ....
>> হ্যালো ...
---> অন্তু কেমন আছিস
>> আমি ভাল , তোর খবর কি ?
---> এইত্তো, চলে ...
>> মানে ?
---> আর কইস না, জীবনটা একেবারে তেজপাতা হয়ে গেল ...
>> সে আবার কি অবস্হা ?
---> না রে, তেজপাতা না বলে পাতলা ডাইল বলা ভাল ...
>> শোন, উপমা ছাড় আগে ঠিক করে হইসে কি ?
---> আমি দোস্ত কোয়েশ্চেন সাইনে আটকে গেছিরে
>> আবার ? ... কি হইসে খুলে বলবি ?
---> তোর ভাবীরে চেহারা দেখলে এখন খালি মনে প্রশ্ন জাগে ...
>> আগে তুই তারে দেখলে কনফিউজড হইতি আর এখন প্রশ্ন জাগে ?
---> আসলে ওর চেহারাই এখন আমার কাছে এক প্রশ্নবোধন চিহ্ন হয়ে গেছে রে
>> খুলে বল আবার কি হইসে ...
---> এই মনে কর সেদিন উইকেন্ডে দুজনে উঠেছি সকালে, ভাবলাম অনেক দিন পরে দুজনেই বাসায় আছি একসাথে ব্রেকফাস্ট বানায়া খাই, অফারটা দেয়ার সাথে সাথে লুফে নিয়ে সে বললো, রুটি তুমি বানাও আমি সব্জি ভাজি আর কফি বানাই আচ্ছা ? ... সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম কিচেনে ... সে অন্যদিকে সব্জি বানাচ্ছে আমি আরেকদিকে রুটি বেলছি, হঠাৎ সে এসে বলে এইটা কি বানাচ্ছ ... এইটা কি রুটি হইসে নাকি বাংলাদেশের মানচিত্র ? ... আমি কইলাম তাইলে কি করুম ... এবার সে নিজের চেহারার চারপাশে আঙ্গুল ঘুরায়ে বললো চাঁদের মত গোল রুটি বানাও ... সাথে সাথে তার বাংলা পাঁচের মত চেহারার সামনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখতে পেলাম, বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেমন সাইজের রুটি বানাবো...
>> এর পরে ?
---> এর পরে আর কি, পরের রুটিটা পাকা আমের আটির মতো হয়ে যাওয়াতে তার চোখ থেকে যে আগুন বের হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো যেন তাওয়াতে না দিয়েই আমার সবরুটি সেদ্ধ হয়ে যাবে ...সে সময় ওপাশে নচ্ছাড় ল্যান্ড লাইনের ফোন বেজেই চলছিল ... কেউই ধরছিলাম না, এবার সে বলে উঠলো -- কেউ ফোন করছে টা কি কারো কানে ঢুকছে না ? ধরো গিয়ে যাও ... ফোন এ্যটেন্ড করে আসার পথে হঠাৎ দেখি বৌ এর সেল ফোন বাজছে ... এবার আবার না ধরলে ঝাড়ি মারে কিনা ভাবতে ভাবতেই কলটা ধরতেই দেখি ওর প্রিয় বান্ধবী কল করেছে ... সেল টা ওকে দিতেই প্রথমে দেখে নিলো কে ফোন করেছে, এরপর খুবই অল্প কথায় লাইন কেটে দিয়ে বললো -- বয়স বাড়ছে আর অভ্যাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে তোমার, মেয়ে মানুষের কল দেখলে কথা না বলে থাকা যায় না তাই না ? এবার থেকে আমার সেল ধরা তোমার জন্য নিষিদ্ধ !!!
>> হুমম .... তোর তো উভয় সংকট অবস্হা দেখা যায় ...
---> আরে রাখ তো উভয় সংকট অবস্হা , আমার মত অবস্হায় পড়লে বুঝতি সংকট কত প্রকার আর কি কি ...
>> কথা না প্যাচায়ে বলে ফেল ঘটনা কি হইসে ....
---> সেদিন আমারে নিয়ে গেছিলো ঈদের শপিং এ, যাওয়ার আগে কইলো - এবারের ঈদ টা সাদামাটা ভাবেই করবো রোজার মাসে যদি সংযম কি জিনিস না শিখলাম তাইলে আর কবে শিখবো বলো ... আমি কইলাম ঠিকাছে । দুজনে গেলাম বসুন্ধরায় প্রথমে সে তো কিছু কিনতেই চায় না, যেটা দেখে সেটাই ভাল্লাগে কিন্তু কইলো নাহ, এইবার শপিং এর বাজেট কম রাখসি , সংযম করবো ... তোমারে এবার বেশী জ্বালাবো না ঠিক করেছি ... দেখি সস্তা কিছু পাওয়া যায় কি না... আমি কইলাম -- সস্তার দরকার নেই তোমার যা মন চায় কিনো ঈদের আনন্দের কাছে টাকা কোনো ব্যাপার না ... কথাটা বলে শেষ করতে পারলাম না অমনি দেখি পিছন থেকে বৌ এর নাম ধরে চিৎকার করতেসে ... দেখি তার পুরানা দোস্ত জামাইরে নিয়া আইসে শপিং এ ... দাড়ায়া দাড়ায়া খানিক্ষন গল্প করার পরে দুই বান্ধবী কইলো তুমরা গল্পাইতে থাকো আমরা শপিং টা শেষ করে আসি ... কৈ দেও তো তোমার ওয়ালেট টা এই বলে বৌএর বান্ধবী তার স্বামীর সিন্দুক লুটে নেয়ার পরে আমারটাও আমার কাছে রাখার কোন সুযোগ পেলাম না... ঘন্টা তিনেক পরে ওরা যখন ফিরলো তখন দেখি দু হাতের ব্যাগের ওজনে দুজনেরই ত্রাহি ত্রাহি অবস্হা। অতঃপর তাদের রেজিষ্টার্ড কামলা দুইজন ওদের কষ্ট নিবারন করার পরেই তাদের আবদার, অনেক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি এবার বাড়ী চলো ... বান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পরে বৌ কইলো তোমার কাছে রিক্সা ভাড়া আছে তো ?
>> আয় হায় , বলিস কি রে .... দুঃখ করিস না দোস্ত বৎসরে ঈদ মোটে দুইবার আসে, চিন্তা কর এটা যদি প্রতিমাসে আসত তবে তোর কি হাল হত ? আচ্ছা সেদিন ভাবী রিক্সায় ফেরার কথা বললো, গাড়ি নিয়ে যাসনি ক্যান ?
---> আর কইস না, ওরে নিয়ে তার কয়দিন আগে গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম শশুর বাড়ী, পথে কি মনে করে সিডি চালিয়েছিলাম , ওতে বাজছিলো -- চাঁদের আলোয় বাঁধ ভেঙেছে ... কোন কুক্ষনে যে মুখ থেকে যে বের হইসিল -- এই গানটা কলেজের একটা ফাংশনে সিমি গাইসিল মনে আছে ? ... (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ) এর পরের কাহিনী তোরে কওন যাইবো না ... পারলে বুইঝা নে ...
>> কি বুঝাইলি ঠিক বুঝিনাই, তবে কিছু একটা হইসিল সেটা বুঝতেসি ... এখন কি করিস ?
---> একটু পরে পরীক্ষা দেয়ার জন্য রেডি হই ...
>> এই রাত দুপুরে কিসের পরীক্ষা ?
---> একটু পরে তোর ভাবীর পছন্দের সবকটা হিন্দি সিরিয়াল শুরু হবে, তখন আমাকেও একসাথে দেখতে হবে, সে নাকি একলা একলা দেখে মজা পায় না আর আমি ওসবে কোন ইন্টারেস্ট পাই না ... তবুও ওর মন রক্ষার জন্য বসতে হয় ... আর বসে বসে পরীক্ষা দেই ...
>> মন রক্ষা করে বসে দেখিস ভাল কথা কিন্তু পরীক্ষা কিসের ?
---> ব্যাটা বিয়া তো করিস নি বুজবি না, নাইলে বৌ এর কোনো পছন্দের সিরিয়ালে হাসির যায়গায় মন খারাপ করে আর মন খারাপের যায়গায় মুচকি হাসি দিলেই বুঝতে পারতি রৌদ্র উজ্জ্বল দিনে ক্যামনে আকাশে গ্রহ উপগ্রহ তারা সব দেখা যায় ...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।