সাজুর পিতা কে সে জানে না। মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করেও সদুত্তর পাইনি। মায়ের কর্মক্ষেত্র চাতালেই কেটেছে তার শৈশব। একটু জ্ঞান হলে মাঝে মাঝে মাকে রাতে পাশে পেতনা সে। একটু বড় হলে মোটামুছি আন্দাজ করতে পারত সাজু 'মা কোথায় যায়'।
মায়ের কষ্ট আর বেঁচে থাকার আকুতি সাজুকে বড় করে তোলে। ১৪/১৫ বছরে সাজু মায়ের চাতালের কাজ বাদ দিয়ে ভ্যান চালাতে শুরু করে। বছর যেতে না যেতেই মাকে নিয়ে চাতাল থেকে বের হয়ে আসে সাজু।
গ্রামের এক কোনায় পতিত জমিতে এক টুকরা জমি কিনেছে সাজু। গোলপাতার ছাউনিতে তাদের দুজনের সংসার।
সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা পায়, দু'জনের ভাল ভাবেই চলে যায়। সুখে আছে সাজু্।
আজকাল গ্রামের বাইরেও ভাড়া নিয়ে যায় সাজু। তেমনি একদিন ২ গ্রাম পরে মাতব্বরের মেয়ের বাড়ীতে মালামাল নিয়ে যায় সাজু। গ্রামের ছেলে যত্ন-আত্নি কম হয় না।
কাজের মেয়েটিকে দেখে সাজুর মনটা কেমন করে উঠে। মায়াভরা মুখ ভুলতে পারে না সাজু। বাড়িতে ফিরেও ভুলতে পারে না ঐ মুখ। রাতে ঘুম হয়না ঠিকমত। সাজুর অস্বস্তি মায়ের চোখ এড়াই না।
মা বোঝে কিছু একটা হয়েছে। সাজুকে জিজ্ঞাসা করে। মায়ের কাছে স্বীকার করে সাজু।
পরের দিন মাতব্বরের বাড়ীতে যায় সাজুর মা। মাতব্বরের কাছে প্রস্তাব দেয় তার মেয়ের বাড়ীর কাজের মেয়েটির জন্য।
মাতব্বর কথা দেয় জামাইয়ের সাথে কথা বলবে।
অবশেষে নতুন বউ এসে ঘরে উঠে। সুখের পরশে সাজুর মন ভরে থাকে। ভ্যান চালিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসে আজকাল। বউ এর আদর আর পরশে মন ভরে যায়।
সাজুর শরীরটা ভাল নেই আজ। ভ্যান চালাতে যায়নি। ঘরের মধ্যে ক্যাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। মাও বাড়ীতে নেই। বউ রান্নাঘরে রান্না করছে।
হঠাৎ বউ এর চিৎকার ধড়পড় করে উঠে। ছুটে বাইরে যায়। উঠানে মাতব্বরের ছেলে মিন্টুকে দেখে আশ্চর্য হয় সাজু। এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞাসা করে তার আসার কারণ। আমতা আমতা করে পানি খেতে এসেছে বলে জানায় মিন্টু।
মিন্টু চলে যাওয়ার পর বৌ মর্জিনার কাছে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করে। "তোমরা বাড়িতে না থাকলে সে এসে প্রায় আমার জালায়!" অষ্ফুটে বলে মর্জিনা। চেপে যায় মিন্টুর বোনের বাড়িতে থাকার সময় অত্যাচারের কথা এমনকি একদিন আগে মিন্টুর কাছে বলাৎকার হওয়ার কথা। চিন্তায় পড়ে যায় সাজু। মাথায় খুন চেপে যায়।
ক্যাথাটা গায়ে ভাল করে জড়িয়ে রওনা হয়, মাতব্বরের বাড়ির দিকে। মাতব্বরকে সব বলে মাতব্বরের আশ্বাস পেয়ে ফিরে আসে সাজু।
জ্বর কমে না সাজুর। তারপরেও বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে বের হয় পরেরদিন। মাকে বলে যায়, বাড়িতেই থাকতে।
দুরের গ্রামের ভাড়া নিয়ে যায় সাজু। অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। উঠানে ঢুকতেই আবছা মতো কাকে যেন চলে যেতে দেখে। মর্জিনা দরজা খুললে জিজ্ঞাসা করে কে এসেছিল। স্বামীর জীবনের ভয় দেখিয়ে মিন্টু তাকে আজও ভোগ করেছে, এই কথা না বলে ভাত বাড়তে যায়।
বলে দেখিনি তো!
পরেরদিন সন্ধ্যায় মিন্টুর সাথে আবার দেখা হয় সাজুর। সাথে আরো দু'জন। এগিয়ে আসে তারা সাজুর দিকে। ডেকে এক পাশে নিয়ে যায়। বাপের কাছে নালিশ করার কারণে দু'এক চড়-থাপ্পড় চালায় মিন্টু।
চিৎকার করে সাজু। সাথের দু'জন চেপে ধরে, মিন্টু দড়ি মতো কি বের করে সাজুর গলায় পেচিয়ে ধরে।
সকালে সাজুর লাশ পাওয়া যায় গ্রামের বাইরে ঝোপের ভিতর। পুলিশ আসে। ভ্যান না পাওয়ায় সবাই ভাবে কেউ ভ্যান কেড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় খুন করে গেছে।
*************************************
মর্জিনার ছেলের বয়ষ ৫ হবো হবো। অন্যের বাবাকে দেখে মায়ের কাছে এসে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে। চাতালের ধানের চুলায় কাঠ কাঠ দিতে যেয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় সন্তানের দিকে। আসলে কে তার সন্তানের বাপ, চিন্তায় পড়ে যায় মর্জিনা, সাজু না মিন্টু নিজেও জানে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর শাশুড়ীর হাত ধরে চাতালে এসে আশ্রয় নেওয়া এই জীবনে তাকেও শাশুড়ীর মতো মাঝরাতে সন্তানকে রেখে বাইরে যেতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।