বিজেপি-ইউপিএ সম্পর্কটা হঠাৎ যে জায়গায় এসে ঠেকল, তাতে অর্থনৈতিক সংস্কারে প্রয়োজনীয় বিলগুলোতে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থন পাওয়া যাবে কি না, রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
দেশের বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময় গত শুক্রবার ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বিজেপির সদস্যদের উত্তপ্ত কথা-কাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে শেষ পর্যন্ত সভার কার্যবিবরণী থেকে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা অরুণ জেটলির কিছু মন্তব্য বাদ দেওয়া হয়। বরাবর শান্ত ও নিরুত্তেজ মনমোহন সিং কেন অতটা উত্তেজিত হলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেমন চলছে, তেমনি প্রশ্ন উঠছে বিজেপির সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে। মনমোহন সিংয়ের উত্তেজিত হয়ে ওঠার দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।
বিজেপির নেতাদের মতে, প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির আঁচ থেকে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারছেন না। বিশেষ করে, কয়লা কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে। ফলে তাঁর মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক প্রজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা থেকে তিনি দেশকে বের করে আনতে ব্যর্থ। জেটলির মতে, আসন্ন ভোটের আগে সব মিলিয়ে জেরবার প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সামলাতে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রীকে উত্তেজিত করে তোলার যাবতীয় দায় কংগ্রেস চাপিয়েছে বিরোধীদের ওপর। সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথের কথায়, ‘অর্থনীতির ওপর চাপ কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কিন্তু তাঁকে যে ভাষায় বিরোধীরা আক্রমণ করেছেন, তা সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরল। ’
মনমোহন সিংয়ের উত্তেজিত হয়ে ওঠার একটি অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বণিক সংগঠন অ্যাসোচ্যামের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অঞ্জন রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে নীতিতে বিশ্বাসী, ভোটের দরুন সেই নীতিতে তাঁকে আপস করতে হচ্ছে।
তিনি বুঝতে পারছেন, ভর্তুকি না কমালে কোষাগারের ঘাটতি কমানো যাবে না। অথচ খাদ্য সুরক্ষা বিলকে সমর্থন দিতে হচ্ছে, যা ভর্তুকির বহর বাড়িয়ে দেবে। তিনি দেখছেন, উৎপাদনশিল্পে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, অথচ জমি অধিগ্রহণ বিলে সম্মতি দিতে হচ্ছে, যা শিল্পের বিকাশের সহায়ক নয় বলে শিল্পমহল মনে করে। এসব সমঝোতায় হতে পারে তিনি ভারসাম্য হারিয়েছেন। ’
প্রধানমন্ত্রীর মেজাজ হারানোর কারণ খোঁজার পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয়েছে, অর্থনীতিকে চাঙা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী যে বিলগুলো সংসদে পাস করানোর কথা বলেছেন, সেগুলোতে বিজেপির সহযোগিতা কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে।
প্রশ্নটি উঠছে এই কারণে যে, শুক্রবারই বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে গিয়ে এই সরকারকে সেপ্টেম্বরেই ভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিতে অনুরোধ করেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।