আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিরোস্লাভ হোলুব



ভেনিশিং লাং সিনড্রম বিশ্বে যেকোন দেশে লিখছে এমন আধ-ডজন সেরা কবির একজন হলেন মিরোস্লাব হোলুব। টেড হিউজেস এমনই অভিমত ব্যাক্ত করেছেন বইটির ব্যাককভারে। টম পলিন তাঁকে চমকপ্রদ, রক্তক্ষরণ-রোধক এক প্রতিভা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হুলুব, যিনি এমনতর, আর লিখছেন না; অনন্ত ঘুমের দেশে শায়িত এখন। এখনÑ এই শব্দটিও তার ঘুমের সাথে সমাপ্তিহারা ভবিষ্যৎমুখি বিস্তার পেয়েছে।

এখন শব্দটি এই মাত্রার বোঝা বইতে শুরু করেছে ১৯৯৮ সাল থেকে। আর তিনি জন্মেছিলেন সালে। এখন লেখাগুলোই তার অভিজ্ঞান। তার, তার সময়ের, এবং যে পাঠক তাকে তার মাঝে তুলে নেই নিজের করে, তা যে কালেই হোক না কেন, তারও। হোলুব নিজে একজন বিজ্ঞানী আর বিজ্ঞানকে প্রাত্যহিকতার ছাঁচে ফেলে সাহিত্যে ব্যবহার উপযোগী করে নিয়েছেন।

এবং বলাই বাহুল্য, কবিতার দেহ ও রণ-পোশাকটিও তিনি এ দিয়ে সাজিয়েছেন বেশ। যেখানে বলা যায়, প্রাচ্যে কি প্রতীচ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া যেনো সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেছে কবিতা, সেখানে পূর্বাপর জনাকয়েক বিরল কবির মতো হোলুবও এই ছুঁতকাতরতার বিরুদ্ধে এক দারুণ লড়িয়ে। কবিতাকে তিনি শুদ্ধতার হাত থেকে ছিনিয়ে দৈনন্দিনতার পরিবর্তনপটু পটভূমিতে এনে দাঁড় করান এবং একে আবার সতেজ ক্ষণ-অভিজ্ঞতার সঙ্গী করে তোলেন। এভাবে তিনি অমরত্বের খাপ থেকে টেনে এনে একে মরণশীলতা উপহার দিয়ে মানবিক করে তোলেন, বাঁচান কবিতাকে। পয়েট্রি অব ইভরিডে-এর সাথে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন যেমন, তেমনি নিজের কবিতাকে পুরো খোলামেলা বলে স্বীকারও করেছেন।

তার কবিতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উপাদানে উপচানো। তদুপরি, পাঠমাত্রই কবিতার অঙ্গীভূত সংক্ষুব্ধ শ্লেষের, পরিহাসের চাবকানি ‘শুদ্ধ-কবিতার’ পাঠককে বেতো-ঘোড়ার মতো উর্ধ্বশ্বাস ছোটায়। এবং অবশ্যই তা, বলে রাখা ভালো, আকাশমুখো নয়, বন্ধুর পৃথিবী-অভিমুখে। এখানে উপস্থাপিত কবিতাগুলো তাঁর একটি বই থেকেই নেয়া হয়েছে, নাম: ভ্যানিশিং লাঙ সিনড্রম। বইটির অনুবাদক হলেন দুজন: ডেভিড ইয়াং এবং ডানা হাবোভা।

একদিন শিবলী ভাইয়ের কাছে এ বইটির নাগাল পাই, এবং বলাই বাহুল্য, পেয়েই পড়তে শুরু করি। আমি পড়তে থাকি এবং কখন যে কয়েকটা অনুবাদও করে ফেলি খেয়ালও করতে পারি নি। একসময় দেখলাম বইটির উনচল্লিশটি কবিতার একত্রিশটি অনুবাদ করে ফেলেছি। অনুবাদ করতে গিয়ে একটা সমস্যায় পড়েছি, তা হলো বিজ্ঞানের পরিভাষা নিয়ে। আর এক্ষেত্রে যে ইংরেজি পরিভাষাগুলো মনে হয়েছে অধিক জনবোধগম্য সেগুলি ইংরেজিতেই রইলো আর বাকিগুলো বাংলায়, না হয় আধো-বাংলা আধো-ইংরেজিতে মেশামেশি হয়ে।

আর সব পাঠকই বিজ্ঞানজ্ঞ নন, বা বিশ্বইতিহাসজ্ঞও নন, আর প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস জানা লোকও হয়তো বেশি নয়। আর আমাদের দেশে তো আরো বাজে পরিস্থিতি। তো কি আর করা, নিতান্ত নতুন পাঠক কেউ যাতে কবিতা পড়তে এসে আহত না হন সে চেষ্টা করতে গিয়ে কিছু বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যাদিও দ্রষ্টব্য আকারে সংযোজিত হলো, যেখানেই প্রয়োজন বোধ করেছি। আশা করি আমার কল্পিত পাঠকের কাজে লাগবে। বিজ্ঞ পাঠকের এসবের প্রয়োজন হবে না, তারা এসব না পড়েই এগোবেন বলে আশা করি।

ফলে, বিরক্ত হওয়ার ব্যাপারটি তারা এড়িয়ে যেতে পারবেন। আর যত ভুলের দায়, সে কেবল আমারই। ভবিষ্যতে সংশোধনের সুযোগ পেলে শোধরে নেয়ার ইচ্ছা রইলো, যে পর্যন্ত না বইটি হারায় আর আলসেমি আমাকে ভুলিয়ে রাখে এই প্রতিশ্র“তি। এখানে আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখা আমার জন্য আনন্দদায়ক যে, এই অনুবাদগুলো সানুরাগ দেখে দিয়েছেন, আমার শুভাকাক্সক্ষী সফিউল আজম। কবিতাসূচি ক্স ১৭৫১ ক্স কী আর করা ক্স যোগশাস্ত্র ক্স মহাপিতৃকুল ক্স বিক্রির জন্য নয় ক্স রাত্রিকালীন দুর্যোগ ক্স আশ্বাসের সূর্য ক্স ঈশ্বরভক্তি ক্স নিনেভ ক্স লা ব্রিয়া ক্স অন্ত্যেষ্টি উৎসব ক্স সনোরা মরুর ছোট শহর ক্স আবিদগার ক্যারোর ভ্রমণ থেকে ক্স কঙ্কাল ক্স সমান্তরালের সিনড্রম ক্স কাচ ক্স বাগানচাষী ক্স তারা জিগ্যেস করতো দেবতাদের ক্স পরজীবী ক্স স্পেসটাইম ক্স ফরমুলা ওয়ান ক্স পথচারী একজন:নিউইয়র্কের পশ্চিম এলাকার ভাঁটিতে ক্স হিমোফেলিয়া/ লসএঞ্জেলস ক্স কুরূ কিংবা লাস্যময় মৃত্যু-সিনড্রম ক্স ভয়ে কাঠ মৃত্যু সিনড্রম ক্স ধূপধূনো সিনড্রম ক্স ওয়েনসেসলাস স্কয়ার সিনড্রম ক্স উৎসব ক্স বাষ্পীয় যান ক্স যোব সিনড্রম ক্স পশু অধিকার ক্স হানস আর্পের মেঘরাখাল ১৭৫১ সে বছর দিদেরো মুদ্রণ শুরু করে বিশ্বকোষ তার, এবং লন্ডনে প্রথম জন্মালো উন্মাদ আশ্রম।

আরম্ভ হলো তখন ঝাড়নবাছন, আপন শরীর থেকে একটানে খুলে ফেলে যারা সমস্ত পালক, তেমন পাগলের দল থেকে ঝেড়ে নিতে সুমানুষ যারা শব্দ-নেকাবের আড়ালে লুকায়। শিখতে হলো দড়াবাজি খেইল যত কবিদের। এবং নিশ্চিত করতে এ-সব, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লেরা বহুত তরিকা মূদ্রালো শৃঙ্খলাপরায়নতার। কী আর করা কী আছে আর করার তোমার ভেতরের কুকুরটারে লাঠি হাতে তাড়ানো ছাড়া? আতঙ্কে ঘাড়ের লোম সব খাড়া নিজেকে সে ঠেসে ধরে দেয়ালের গায়, গৃহপ্রিয় রাশিচক্রে হামাগুঁড়ি খায়, খোঁড়ায়, আর ঝরে রক্ত নাক-মুখ বেয়ে। অনুশোচনায় তোমার হাত চাটবে সে, কিন্তু কোনো কাজেই আসবে না তা।

কী আর হতে পারে কবিতা তোমার নিজের মাঝে ঐ বাচ্চা-কুকুরটাকে খুন করা ছাড়া? আর চারপাশে ঘেউ ঘেউ, ঘেউ ঘেউ বিকারের মতো ঘেউ ঘেউ একটানা, যত বেড়ালের। যোগশাস্ত্র সব কবিতাই পাঁচশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড প্রায়। কবিরা, যদিও, দাহ্যতায় হরেকরকম। জ্বলে ওঠে প্রথমেই স্পিরিটে চুবানো যারা। কী আর সম্বল তাদের এ-রোগ ছাড়া।

অসুখই তো স্বাস্থ্য তাদের। খড়ের ডামি, তারা পোড়ায়, নীৎসে পড়ে না, খুন করে না এসব আপনাকে কিন্তু বিগড়ে দেয় মেজাজ। জ্বলে ধিকি ধিকি তারা। তারা ফুঁসে হিশ হিশ । আর তখনো, অযোগ্য যোগী পোড়ায় পা জ্বলন্ত কয়লায়।

মহাপিতৃকূল রাতে ফাঁকা আসমানের বিপরীতে খচিত তাদের ছায়ামূর্তি এক স্কোয়াড্রন ট্রোজান অশ্বারোহীর মতো। জলের কূহক ভরা কূয়া হতে জাগে তাদের ফিস ফাস। কিন্তু সকাল যখন আসে যেরকম ভাবে ডিম ফাটে আর বেটন হাতে জন্মায় পূর্ণ জোয়ান যত সেনা, আর অসম্ভব রক্তক্ষরণে ডুবে মায়েরা, বাঁধাকপি পাতায় বানিয়ে ডানা প্রজাপতি রূপ নেয় তারা, জেলিতে ঘনীভূত কুয়াশা বিলীয়মান, শিশুতোষ আঁকিবুকিতে, প্রায় অগোচর দূর হাত তারা নাড়ে, তারা শ্বাস নিতে ভুলে যায়, আর বোধগম্য শব্দ বলা দূরের ভাবলেই ভয়ে-নীল । যাইহোক, আমরা জিন তাদের চেয়ে ভাইরাস থেকেই বেশি কুড়িয়েছি। সামর্থ্য নাই তাদের।

এবং সামর্থ্য নেই যাদের তাদের সামর্থ্য হবোই আমরা। দ্রষ্টব্য: জিন হলো বংশগতির নিয়ন্ত্রণকারী একক। এটি আসলে ডিএনএ গঠিত উপাদান এবং ভাইরাসের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটে। এর ক্ষেত্রে জিন হলো আরএনএ গঠিত উপাদান। বিক্রির জন্য নয় এবং একটা পুচকে ইঁদুরের মস্তিষ্কের কত দাম, এবং দাম কত একটা কুঁজোপিঠ তিমির কুঁজের? মূল্যহ্রাস বাজে মালের এক-দর দোকানে, বেচা চলছে ওশকোশ ব্লু জিন্স এবং পাতা কুচকানো রচনা সংগ্রহের।

আর কত দাম একটা আত্মার? এবং কত কড়ি মূল্য এক গামলা রক্তের রক্তপায়ী শাইলকদের বিরুদ্ধে যা দেয় একটুক হলুদ সিরাম, নগণ্য এন্টিবডি? কতই বা দাম আমাদের একেবারে আমরা মূল্যহীন হওয়ার আগে? দ্রষ্টব্য: রক্তের মাঝে যেসব রক্তকণিকা আছে সেসব বাদ দিয়ে যে হলুদাভ স্বচ্ছ জলীয় অংশ পাওয়া যায়, সিরাম হলো তাই। আর এন্টিবডি তো সবারই চেনা, রক্তে উৎপন্ন রোগ প্রতিরোধক উপাদান অর্থাৎ রক্তে প্রবেশমাত্র রোগ জীবাণুকে যা আক্রমণ করে ধ্বংস বা প্রতিরোধ করে থাকে। রাত্রিকালীন দুর্যোগ ক্ষেপে গেলো ঝড় আঁধার আচ্ছন্নতায়। কারাকক্ষগুলো গেলো খুলে। দণ্ডিত নিরপরাধী যত সজোরে এগুচ্ছে জাম্পিং টাওয়ারের দিকে।

তারপর কেবল তিনপাঁক খেয়ে জলে ঝাঁপানো, যখন ছেলেমিভরা ছোট্ট ডেকালগ তলায় তীরের কাছেÑ যেখানে সুড়ঙ্গের জল বজ্রনির্ঘোষে ভাসিয়ে নেয় পুষ্পার্ঘ এক সমাধি হতে। আমাদের গোড়ালি আটকে যাচ্ছিলো চুন-কাদায়, বিস্ফারিত দুচোখে তাকানো আমরা ধাবমান অন্ধকারে, কেবল আবহমান-অদৃশ্য-কেউ দেখতে পায় আমাদের। নবী ক্যালসাস, অপ্রস্তুত একদম, পূর্বাপর এক দাবী তারÑ ইতোমধ্যে দহিতদের দাহ করা হোক দাহ-খুঁটিতে বেঁধে আবার, সানন্দে সে-সময় মাঝারি রাজকবিরা হৈ হুল্লুর করে এসক্যালেটরে চরে বেড়ায়, যেহেতু নগর পোড়ে আর আদিগন্ত ছেয়ে যায় আর বিমানবন্দর যত ঐতিহাসিক ভুল নথি করে চলে। এবং খুব ঊষায়, বিস্ফোরণের আগে আগে জ্বলন্ত বিমানে, সারি সারি আসনের ফাঁকে ছোট্ট ছেলেটি হেঁটে যায় আর বলেÑ আমরা কি এখনো ওখানে, মা? দ্রষ্টব্য: ডেকালগ হলো স্বর্গীয় দশ আদেশ, সিনাই পর্বতে মুসার উপর অবতীর্ণ হয়েছিলো। এটি দুই টুকরো পাথরে খোদিত।

ত্রয়োদশ শতাব্দির আগে খ্রিষ্টজগতে এর আলাদা কোন গুরুত্ব ছিলো না, উল্লেখিত শতাব্দিতেই সেই প্রথম একে যারা পাপ স্বীকার করতে আসে তাদের পালনীয় নিদের্শনামায় যুক্ত করা হয়। প্রটেষ্ট্যান্ট চার্চের উত্থানের পর পর ক্রমাগত প্রশ্নকরার মাধ্যমে নবীনদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে এই নিদের্শনামা মৌলিক অংশ হিসেবে পাঠ্যসূচিতে যুক্ত হয়। প্রাচীন বিশ্বের কাছে জানা ছিলো না, এমন বিষয় এই আদেশ নামায় নেই বললেই চলে। আর এগুলো আসলে প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যবাসীদের মেনে চলা সাধারণ নৈতিকতারই প্রতিফলন। কেলসাস গ্রীক পুরাণের চরিত্র।

এপোলোর এক বাঁধা পুরোহিত থেস্টোরের পুত্র তিনি। ট্রোজান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের এক শ্রেষ্ঠ গণকও। তিনি ট্রয় অবরোধের সময়সীমা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং মাইসিনের রাজা আগামেমননের কন্যা, ইফিজিনিয়ার জান্ কোরবানীর দাবী করেছিলেন এবং তিনি আগামেমননকে কাঠের ঘোড়া নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর সাহায্যেই গ্রীকরা ট্রয় জয় করে। তিনি তার গণক-গুরুর সাথে দেখা করার সময়ে মারা যান বলে রটনা আছে।

যখন সে ইটালির ক্ল্যারোস বা সাইরাসে মপসুসের সাথে দেখা করেন, তার ভবিষ্যদ্বানীও পুরা হয়। একথাও প্রচলিত, ভবিষ্যদ্বাণী করার এক বিচারে হেরে গিয়ে আশাহত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ বা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। আশ্বাসের সূর্য অবশ্যই স্মরণ করবে তারা, ত্রয়োবিংশ শতকে অবশ্যই সকৃতজ্ঞ স্মরণ করবে তারা, সুরক্ষিত তারা তরল নাইট্রোজেনে, রোপিত হলো মাতৃঅন্ধকারে, শতকরা চল্লিশ তাদের পুনরোজ্জীবনযোগ্য, অবশ্যই তারা করবে স্মরণ ভবিষ্যবাদী ধূমায়িত পৃথিবীর উর্ধ্বে এবং সেন্ট জনে’র গাঁজন, জেনন সূর্যের অভিকেন্দ্রে, তারা স্মরবে নিজেদের, প্রকৃত সন্তান। ঈশ্বরভক্তি তারা সর্বদাই ফুল ঠিকঠাক রাখতো দানিতে হলের মাঝে ফুলদানিকে, আঁধার ঠাণ্ডায় রাখতে জীবিত তোড়াকে। মরলো তারা।

ভস্মভরা তাদের ছোট্ট কলস গুটিকয় রাখা হলে-ই, আঁধার ঠাণ্ডায়, আর এক অন্ধ মাকড়শা তাদের খেয়াল করে, আর তাই . . . আর না হলে এ সব-ই হতো খুব দুঃখের ব্যাপার । নিনেভ কাদার গোলকগুলো বিলাপ করছে: এসব দুঃসময়, দেবতারা উন্মাদ, শিশুরা বেয়াদব এবং গ্রন্থ রচিতে চায় প্রত্যেকেই। কেন চরে না চারণ গায়ক ঘরে ঘরে চেঁচিয়ে তাদের ষণ্ডামার্কা গানগুলা যে-ঢং তারা করে বেড়াতো? প্রলোভনে তোষামোদে খেয়েছে কি ধরা বোকারা নাকি চেঁচানো ভেঁকের মতো গলার ব্যথায়? কাদার গোলকে হাঁপানো চারণ গায়কেরা করে চলে খোদাই, গ্রন্থাগারগুলোর প্রত্যেকেই চির-অক্ষম থেকে যাবে মর্ম উদ্ধারে বাড়ে ক্ষেপামো, আর নিভছে নিনেভ তাদের কর্মযজ্ঞ মাঝে। দ্রষ্টব্য: প্রাচীন আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হলো নিনেভ। বর্তমান ইরাকের অধুনার মসুল শহরের বিপরীতে টাইগ্রিস নদীর পূর্ব তীরে এর অবস্থান।

এ শহর এলাকাটি ছিলো উর্বর, কৃষিসমৃদ্ধ, এবং সবুজ চারণভূমিতে ঢাকা। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে নিনেভ অভূতপূর্ব উন্নত শহর ছিলো। আশিরীয় রাজা সেন্নাচেরিভ শহরটিকে তার রাজধানিতে রূপান্তর করেন, রাজপ্রাসাদ, নগরের প্রসারণ, সৌন্দর্য্যবর্ধণ ও নগরপ্রাচীর নির্মাণ করেন। আঠারো একর জায়গা জুড়ে এ নগরের প্রাচীর গাত্রে পনেরটি প্রবেশদ্বার ছিলো। পরে আশুরবানি পাল এই নগরের উত্তর-পশ্চিম কোনায় আরো একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং এক বিরাট লাইব্রেরিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এবং সমগ্র দেশে তার স্ক্রাইবদের প্রাচীন গ্রন্থাবলি সংগ্রহ এবং অনুলিপি তৈরির আদেশ জারি করেন । এখানে ২০-২৫ হাজার কাদার ট্যাবলেট বা গোলকে এই সব লিখিত হয়েছিলো। এর মধ্যে সাহিত্য, ধর্ম, প্রশাসনিকবিষয়, চিঠিপত্র বা দলিলাদিও এর অন্তর্ভুক্ত ছিলো। গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা, রসায়ন এবং অভিধানবিদ্যাও ছিলো। প্রাচীন বিশ্বের বিশাল তথ্যভাণ্ডার এই ট্যাবলেটগুলো।

বলা যায়, হিলগামেশ মহাকাব্যটি বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, আশুরবানিপালের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কারণেই। আশুরবানিপালের মৃত্যুর ১৪ বছর পরই নিনেভ শহরটি বেদখল হয়ে যায় এবং স্বল্পসময়েই এটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ওঠে দাঁড়াতে পারে নি আর এ নগরটি। লা ব্রিয়া আলকাতরা-গুহায় বহু যুগ বহুৎ যন্ত্রণা আর চাপে মুচড়ে যাওয়া হাড় ষোলশ’ চিতার ম্যমথ বিশটার আর ভারতীয় এক বালিকার খুন করেছিল কেউ আর করেছিল নিক্ষেপ গুটগুটে সময়ের কালো বুদ্বুদে। ইতিহাসের স্রোতোশীল চুম্বকে উপস্থিতি সেই থেকে মৃত্যু’র খুলি-ফাঁটা যন্ত্রণার, মাড়ি-ছুট এলোমেলো দাঁতের, আতঙ্ক-স্তম্ভিত যত ম্যমথ-শুঁড়ের, আর পাখিগান সেদিন হতে যেদিন ঘাস-ঢাকা পথ কষ্টে খুঁড়িয়ে সে পেরোলো, কী আছে সম্মুখে না জেনেই।

দ্রষ্টব্য: স্প্যানিস ব্রিয়া শব্দের অর্থই হলো টার বা পিট বা আলকাতরা বা পিচ। লা ব্রিয়া রেঞ্চটি ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে। এটি একটি পেট্রোলিয়াম রিজার্ভার। এ এলাকায় খনকরা একটি আংশিক মনুষ্য কঙ্কাল ছাড়াও প্লাইস্টোসিন যুগের অনেক প্রাণীর ফসিল আবিষ্কার করেছেন। অন্ত্যেষ্টি উৎসব চেখভের শবদেহ বাডোইলার থেকে মস্কো বয়ে নেয়া হয়েছিল রেল রোড কারে লেখা ছিল গায়ে যার বিরাট অক্ষরে শামুক-ঝিনুক বাহন লুকালেন না গোর্কি ঘৃণা ক্রোধ তাঁর।

অন্ত্যেষ্টি উৎসবে গেলেন চ্যালিয়াপিনের সাথে- যোগ দিলেন তারা বাদক বাহিনী সজ্জিত এক শোকমিছিলে। এটা ছিল জেনারেল কেলারের অন্ত্যষ্টি উৎসব নিহত হয়েছিলেন তিনি মাঞ্চুরিয়ায়। এই ভুলে চেঁচালেন গোর্কি বিরক্তি ও হতাশায়। কিন্তু শামুক-ঝিনুকে খারাপের এমন আছেটা কি? কবিদের রাখা হলো বরফে (তাদের মদে আর কর্তিত লেবুর ঘেরাটোপে সন্তরণময়), শেলের পাত্র থেকে বের করা নির্যাসে (পার্সলে, রসুন, তেল, সুগন্ধী ঘাস; তেলে ভাজা), হ্যাঁ, কেন এমন অযথা হৈ চৈ, জেনারেলবৃন্দের যত চেরি উদ্যানে, অধীনস্থ যত শঙ্খচিল, কাঁধে এপ্যালেটের বিষাদমাখা কমেডি, পদাতিকদের যত ফিসফিসানি- পরবর্তী বহু বছরেও, দেখা গেলো, হৃদয় অনুভব গোপন করা, গোর্কি শিখলেন অল্পই। সনোরা মরুর ছোট শহর ওয়াকম্যান চাপানো কানে তাদের সগোরা নামের বিশাল ক্যাকটাসগুলো নেমে আসে পর্বতসারি বেয়ে, অসংখ্য ওয়াকম্যানে।

সভ্যতার মিউকাস আবরণী মারাত্মক বেগে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি কোনায়: মাসিক রক্তপাত এত এত বার আর গর্ভসঞ্চার মাত্র একবার। তদোপরি, ছিলো অপূর্ণাঙ্গ ভ্রƒণের মস্তিষ্কের চতুর্থ ভেন্ট্রিকলে, একটা ইঁদুর। রাতেই ঘটতো এসব, সগোরাগুলো তখন তাদের কানে চাপা ওয়াকম্যানে ভর করে নামতো পর্বতসারি বেয়ে। সগোরারা সংখ্যায় এত বেশি: ভোরে যা-ই ঘটুক সব মেনে নিতাম আমরা কেবল নিজেদের ছাড়া। দ্রষ্টব্য: সনোরা মরুর অন্য নাম ডিজার্টো ডি আলতার বা আলতার মুরুভূমি।

১২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই মরুভূমি। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম এ্যরিজোনা, দক্ষিণ-পূর্ব ক্যালিফোনিয়া, মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোনিয়ার অধিকাংশ এলাকা এবং আরেকটি রাষ্ট্র সনোরার পশ্চিম অর্ধাংশ জুড়ে এটি বিস্তৃত। সনোরা হচ্ছে সনোরাস-এর আঞ্চলিক শব্দ, এর অর্থ সুরস্পন্দনময়। মার্বেল পাথরের বিশাল ভাণ্ডার এলাকাটি। এ পাথরকে আঘাত করলে ঘুঙুরের মতো মধুর শব্দ হয়।

আবিগদার ক্যারো’র ভ্রমণ থেকে ঐ অঞ্চল চিহ্নিত অগণন ক্রুশে, বড় আর ছোট, চৌমাথায়, হাইওয়ের দু’পাশে একটানা, কোন পাথরে বা কোন গাছে, অলিগলি জুড়ে দূর বনের, যতো মনের, আর নগরের। যিশুখ্রিষ্ট অনেক ক্রুশের গায়ে। অনেকগুলো শুন্য আজো। দ্রষ্টব্য: ক্যারো ষোল-শতকের এক ইহুদি কবি, প্রাগ ইহুদি কবরখানায় সমাধিস্থ প্রথম ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব। কঙ্কাল সবুজ হচ্ছিল যারা, তারা তুষারে পরিণত হবে ।

যারা উড়তে যাচ্ছিল ঘুমিয়ে পড়বে কয়লা-পিচের ফাঁদে পড়ে লা ব্রিয়া’র নেকড়েদের মতো । হাঁকডাককারী যারা পরিণত হবে তারা এক ঘোষণা-বাক্যের শেষে বিস্ময়চিহ্নে কখনোই উচ্চারিত হবে না যা। আদর পেলো যারা তারা কাঁটায় বিদ্ধ হবে। হয়তো তাই তুষার কয়েক হাজার বাইট তথ্য খুঁজে পাবে । হয়তো তাই প্রত্যেক ফলের ঝুড়িতে মেষশিশু নিয়ে এসফল্ট শ্যাওলায় ছেয়ে থাকবে ।

হয়তো তাই নৈঃশব্দ একটু ক্যাঁচক্যাচাবে, হয়তো তাই কাঁটাগুলো দুঃখিত হবে। ফ্রান্সিসকো পিজারো, যে পরাজিতদের মাথাগুলো প্লাজা ডি আরমাজ-এর উপর লাঠির মাথায় সাজিয়ে প্রদর্শন করতো, ছাব্বিশে জুন, ১৫৪১, তলোয়ার আর কুড়ালে আহত হয়ে, পুঙ্গ আর রক্তপাতে মৃত্যু, সেন্ট জেমসে’র লালক্রুশ বুকে সাদা এক আলখাল্লায় ঢেকে দ্রুত কবরস্থ করায় শিরোচ্ছেদ থেকে বাঁচলেন; এক ঘটনায়, একশ’ এবং আরো বিশ বছর পরে, দুইভাগ হলেন তিনি: তার করোটি রইলো এক সীসার বাক্সে, আর এক কাঠের কফিনে শিশুর হাড়ের সাথে মিশে গেলো অন্যসব হাড় এবং দেয়ালবন্দী হলো এক সিন্দুকে, সে-সময় বিশপের প্রধান গির্জাতে তিনশ’ বছর ব্যাপী তার নামে প্রদর্শিত হতো অন্যের মমি। জয়ী হয়েছিল যারা বিস্মৃত হবে তারা। যেনো প্রতিটি ঘটনা ঘটতে পারে পুনরায়। সমান্তরালের সিনড্রম দুটা সমান্তরাল রেখা সর্বদা মিলে যায় আমরা নিজেরা যখনই আঁকতে যাই।

আছেই প্রশ্নটা, সামনে না হোক পেছনে আমাদের। দূরে থাকা ট্রেন আসছে নয়তো যাচ্ছে। কাচ লি পো ছিলেন কাচ কান্ট ছিলেন কাচ। লতানো স্বচ্ছ সামুদ্রিক উদ্ভিদের মতো আমরা লক্ষ্য করি আমাদের। দেখি টকটকে লাল হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে, দেখি ধূসর ফুসফুস, ডানা মেলছে আর গুটাচ্ছে, দেখি টুপির নিচে ভাবনা চিবিয়ে চলেছে ওলিগোকেটিক পোকারা।

লিনিয়াস ছিলেন কাচ। মোজার্ট ছিলেন কাচ। ফ্রাঞ্জ জোসেফ ছিলেন কাচ। স্বচ্ছ পেটে দেখতে পাই ক্ষয়াটে চাঁদ, অতিস্বচ্ছ মুখের পেছনে গিলে ফেলা শব্দগুলো। একজন কয়েদি হলো কাচ, একজন পুলিশ হলো কাচ, ষাটটি কাচের রোবট বাস করে দুর্গপ্রাসাদে।

গিলে ফেলা শব্দগুলোর পেছনে দেখতে পাই কাচ-তন্তু অনিঃশেষ সুরের। মৃতই কেবল নিজের মাঝে পর্দা টেনে দেয়। দ্রষ্টব্য: ওলিগোকেটিক পোকা বলতে কেঁচো শ্রেণীর যাবতীয় প্রাণিদের বোঝায়। বাগানচাষী বাগানচাষী প্রচুর ফলেছে এ বছর। তৃতীয় পূর্ণিমায় তাদের জমিতে রোপিত হয়েছিলো গ্রীনহাউজে উদগমিত কিছু অঙ্কুর।

এমনকি বিলম্বে জন্মানো চাষীরাও পাঁকাপোক্ত হয়েছে বেশ, এবং শরীর তাদের ভাস্কর্যভঙ্গী ধরেছে যেনো, মিশ্রসারের তত্ত্ব ঝাড়াই-মাড়াই করছে তারা। কেটস-টেইল ঘাসের মাঠ থেকে মাঠে লম্বাদিনের চাষীরা ছুটাছুটি করে। আর তর্ক করে ক্ষেপা ডগস-টেইল ঘাসের মাঠগুলোর সাথে। কালো ডেইজি আর লাল-নীল স্ট্রবেরির স্বপ্ন দেখে তারা। চিরসবুজ বক্স-উড গাছটিকে ছেটে রূপ দেয় এক-শিঙা ঘোড়ার।

ওহ হ্যাঁ, প্রত্যুত্তর দেয় তারা হ্যামলেটকে, যে তার পাশ দিয়ে চলে যায়, এই বাগানের নিচে নিচে আরো এক বাগান আছে, এবং প্রশ্ন হলো সেটাই। অবশ্যই, বিষণœ আন্তেগোনিকে উত্তর দেয় তারা, কবর-ঢিবির ছাই সাইপ্রাসীয় ম্যাগনোলিয়ার জন্য কাজ করে চমৎকার। আর যেতে পারেন না আপনি আমাদের খেলা ফেলে, যদিও বাগান-বেড়া ঘুরে-বেড়ানো নেড়ি কুকুরদের ঢুকতে বাধা দেয়। প্রকাণ্ড গর্বস্ফীত সূর্য-বেলুন দোলে উদ্যানের উর্ধ্বে, এবং এর রক্ত-আভা এমনকি ডিমের কেন্দ্রে একটা ক্ষুদ্র ধমনির বিদারণ এবং রক্তদষ্ট কুসুমকে লক্ষ্য করা অসম্ভব করে তোলে । দ্রষ্টব্য: ইউনিকর্ন বা একশিঙা ঘোড়া।

আসলে এটি একটি পুরাণিক প্রাণী। এটির প্রথম দেখা মেলে মেসোপটেমীয় শিল্পকর্মে। প্রাচীন ভারতীয় এবং চৈনিক পুরাণেও এর দেখা মেলে। গ্রিক সাহিত্যে এর প্রাচীন উল্লেখ মেলে ঐতিহাসিক টেসিয়াসের লেখায়। তার বর্ণনায়, এটি আসলে ভারতীয় বুনো গাধা, ঘোড়ার সম-আকারের, শাদা শরীর, নীলাভ লাল রঙের মাথা, নীল চোখ এবং কপালে একটি চতুস্তলকীয় দীর্ঘ শিঙ যুক্ত।

আর শিঙের তীক্ষ্ম মাথা লাল রঙের, মাঝের অংশ কালো এবং গোড়া শাদা। যে এর শিঙ দিয়ে পানি পান করে সে পেটের পীড়া, বিষের ছোঁয়া, মৃগীরোগ মুক্ত থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়। বাইবেলের পুরাতন টেস্টামেন্টে রে’এম নামের এক দুর্দান্ত একশিঙা প্রাণীর বর্ণনা রয়েছে। বাইবেলের অনেক সংস্করণে এটি ইউনিকর্ণ হিসেবে অনূদিত হয়েছে। অনেক প্রাচীন ক্রিশ্চিয়ান চার্চ এর রূপক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

এটি একটি শক্তিশালী ও হিংস্র প্রাণী। এর সামনে কোন সতি-কুমারীকে রাখলেই কেবল একে ধরা যায়। কুমারীর দিকে সে ছুটে যায় এবং তার আঁচলের নীচে লাফিয়ে গিয়ে লুকিয়ে যায়। এবং কুমারী তাকে স্তন্যপান করায় ও পথ দেখিয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যায়। মধ্যযুগীয় লেখকরা তাই ইউনিকর্নকে যিশু হিসেবে কল্পনা করে থাকে।

যে মা-মেরীর গর্ভে থাকতো এবং মানবজাতির নাজাতের জন্য একটি শিঙের সৃষ্টি করেছে। তারা জিগ্যেস করতো দেবতাদের আজটেক জাতি জিজ্ঞেস করতো দেবতাদের বাহান্ন বৎসর পর পর পারবে কি না তারা এ জীবন চালিয়ে যেতে। আমরা আসিনি পৃথিবীতে থাকতে চিরদিন। ইআও ইআও ইআও ওআইয়া। নেমন্তেমির সময়ে, অবলুপ্তির পাঁচদিন জুড়ে, সজাগ আগুন তারা ফেলতো নিভিয়ে, গেরস্থালি দিতো ধসিয়ে, করতো উপবাস, ডেকে যেতো পেঁচাদের মতো।

এই বিস্তীর্ণ সমভূমির মাঝে, আমি অবসিডিয়ান পাথরের উপর মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। গর্ভবতী মহিলারা শুকরে পরিণত, ইঁদুর আর ছুঁচোয় পরিণত শিশুরা। জাগুয়ারের ডগস-টেইল ঘাসের উর্ধ্বাকাশে চেঁচাচ্ছে ঈগল। লাল হয়ে গেছে ধূঁয়ায় ধূঁয়ায় কুয়াশাবেষ্টিত এলাকাটা। পুরোহিত পর্বতশীর্ষে দেখার প্রতীক্ষায় আলডেবারান উদিত হয় কিনা ঠিক মাঝখানে আসমানের।

উদিত হয়েছিল। নতুন আগুন তারা জ্বেলেছিল সদ্য উৎসর্গীত এক জনের বুকের উপর হৃদপিণ্ড যার বের করা হলো টেনে ছিঁড়ে, মশালচি বয়ে নিল নতুন-জীবন-দীপন মশালে নিয়ে বেদিতে বেদিতে, নগরে নগরে, প্রতিটি পরিবারে। আজটেকজাতির জীবনের আরো এক চক্র পরিক্রমায় সানন্দে উৎসর্গিত হলো হাজারও অপরাধী। পুনরায় নির্মাণ শুরু করলো তারা, গুঁড়িয়ে ফেলা হলো অবসিডিয়ান পাথরটা, জন্মালো জাগুয়ার, আর ঈগলেরাও, কিন্তু আমরা আসিনি পৃথিবীতে থাকতে চিরদিন। পালকশোভিত বিশাল সাপ কোয়াটজাকোল সৈকতে নিজেকে না পুড়ায় যতদিন আর তার স্থলে হারনান্দো কর্তেজ আর তার ধাতবমানুষেরা সাগর হতে যতদিন না উঠে আসে আর সকল দায়িত্ব না হাতে নেয়, ঐ আলডেবেরান সহ আসমানের নাভীর।

এইখানে সমভূমির এই মাঝমাঠে জাগুয়ারের ডগস-টেইল ঘাসবনের উর্ধ্বাকাশে চেঁচিয়ে চলে ঈগল। এবং আজটেকজাতির, বস্তুত, বাকি নেই কিছু নিয়ে আর জিগ্যেস করার। আর কি নিয়ে আছে জিজ্ঞাসা আমাদের? ইয়াও ইয়াও ইয়াও ওউআইআ। দ্রষ্টব্য: আলডেবেরান হলো একটি লোহিতাভ এবং বিশাল তারার নাম। আরবি শব্দ এটি।

এর অর্থ অনুসরণকারী। এমন নামের কারণ সম্ভবত তোরাস নক্ষত্রপুঞ্জের এই তারাটি প্লেয়াদেস নক্ষত্রপুঞ্জের উদয়ের পর আকাশে উদিত হয়। এটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল পনেরটি তারার একটি। আকারে সূর্যের চেয়ে পঞ্চাশগুণ বড়। এটির পাশে একটি লোহিতাভ কিন্তু খুবই নি®প্রভ তারার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

কোয়াটজাকোল্ট হলেন প্ররোহিতদের রক্ষক, বর্ষপুঞ্জি এবং গ্রন্থ স্রষ্টা হিসেবে পুজিত। তিনি সোনারু ও অন্যান্য কারুকারদর রক্ষকও বটে। তাকে শুক্রগ্রহ হিসেবেও ভাবা হয়। শুকতারা ও সন্ধ্যা তারার প্রতীকে কোয়াটজাকোল্ট মৃত্যু ও পুনরোজ্জীবনকারী হিসেবেও গণ্য। পুরোনো প্রাচীন মৃতদের হাড়গুড় জমানোর জন্য বলা হয়ে থাকে সে তার কুকুরমুখো সঙ্গী জোলোট-এর সাথে পাতালের নরকে অধোগমন করেছিলেন এবং তিনি তার রক্তে ঐসব হাড় মিশিয়েছিলেন এবং একারণেই বর্তমান পৃথিবীবাসীদের জন্ম।

রাতের আকাশের দেবতা তেজকাটলিপোকার জাদুটোনায় ধরা খেয়ে টোলা শহরছাড়া হয় এবং স্বর্গীয় জলের (আটলান্টিক সাগরের) সৈকতে নিজেকে চিতায় উৎসর্জন দেন। এবং শুক্রগ্রহ হিসেবে আবির্ভূত হন। অন্য মতে, তিনি সাপের তৈরি এক ভেলায় চরে পূর্ব দিগন্তে হারিয়ে যান। একটি গুরুত্বপূর্ণ মিথের অংশে বলা আছে, কোয়াটজাকোল্ট টেলটক-এর রাজধানী শহর টোলার পুরোহিতরাজ ছিলেন। সে মানুষ কোরবাণী চাইতো না, কেবল সাপ, পাখি, প্রজাপতি তার পুজনীয় প্রসাদ হিসেবে যথেষ্ট ছিলো।

তেজকাটলিপোকার কাছে তার হেরে যাওয়া সম্ভবত কোন ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিফলিত করে থাকবে। টলটেক সভ্যতার প্রথম শতাব্দি টিউটিক্যান সংস্কৃতি দ্বারা শাসিত ছিলো, যেখানে প্ররোহিতদের শাসনকে আদর্শ মান্য করা হতো। উত্তরের নহুয়া ভাষাগোষ্ঠীর এ এলাকায় অভিবাসনের ফলে সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং এ গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায় প্ররোহিতের শাসন ক্ষমতা। কোয়াটজাকোল্টের পরাজয় মুলানুগ ধর্মীয় শাসনের অধঃপতনকেই প্রতিকায়িত করে। পূর্বদিকে মানে আটলান্টিক সাগরে অভিযান সম্ভবত ইটজার ইউকাতানের আগ্রাসনের সাথে জড়িয়ে আছে।

কারণ, ইটজা গোষ্ঠির মাঝে টলটেকদের মিল বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আজটেকদের ক্যালেন্ডারের নাম সি এ্যকাট্ল যার অর্থ এক নল বছর। আজটেকদের নবম সম্রাট মোন্টেজমা-২-এর শাসনভার গ্রহনের এক নল বছরের মধ্যে কোয়াটজাকোল্ট ফিরে আসবে বলে আজটেকদের বিশ্বাস। তারা সাদা দাঁড়ির কেয়াটজাকোল্টের আগমনকে ভয় পেতো। অথচ সে সময়ে এসে উপস্থিত হলেন সাদা দাঁড়ির স্পেনিশ কনকিস্তাডোর হার্নান্দো কর্তেজ ও তার সেন্যবাহিনী।

এমন মনে হওয়ার কারণ, ১৫১৫ কর্তেজ মেক্সিকো উপকূলে পদার্পন করে। বছরটি ছিলো এক নল বছর। মোন্তেজমার আত্মসমর্পণ জনগণকে তার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং তারা তার দিকে পাথর ও তীর ছুঁড়ে মারে বলে রটনা আছে। তার বিপরীতে, রাতে গোপনে স্পেনিয়ার্ডরা রাজধানী টিনোটিটলান আক্রমণ করে প্রায় ধসিয়ে ফেলে এবং কর্তেজ বাহিনী তাদের সম্রাটকে খুন করেছে বলেই আজটেকরা বিশ্বাস করে। পরজীবী অতিরিক্ত শুকতারাটির পরিণামের মতো বেড়ে ওঠে এটা গভীর অন্ধকারের কোথাও ।

ভ্রƒণসুলভ নৈপুন্যে শুঙ-সজ্জিত সুগোল কীটের ছোট্ট মুখ দিয়ে এটা খায়। একেকটা বৃত্তাকার টুক জন্ম দিতে দিতে বাড়ে এটা, গাভীন হয়ে মিউকাসগ্রন্থির তন্দ্রালু কাহিনীকাব্যে, আঠালো সুরক্ষা-রসের সাথে চুক্তিতে জড়িয়ে, এটা বাড়ে, ফুলে ঢোল হয়, বিশাল হতে থাকে, লর্ড অব দ্য ফ্লাইজের’র জীবন নিয়ে রচিত শেষ মহাকাব্যখানি আক্ষরিক ও আন্তরিকভাবে গিলে, হজম কোরে, আশ্রয়কারীর শরীর ফেটে বেরিয়ে আসে একটি শিশু যেভাবে মায়ের গর্ভ ফাটিয়ে বড়ই হয়, এবং এখন আরো বড় এবং আরো বড়ই হতে থাকে, নিজের সঠিক আকার ছাড়িয়ে, আশ্রয়দাতার শরীর ডুবে গেছে এর শরীরে এবার, পরজীবির দেহে আশ্রয়দাতা এবার পরজীবি, অন্ধকার আর মিউকাস-রস উগড়ায় Ñ যেভাবে পাতা নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে অক্সিজেন উগড়ায়, ঘনিয়ে তুলে ফোঁটা ফোঁটা শিশির, বিস্ময়করভাবে কচ কচ চিবিয়ে খায় কবর ফলকের অলিখিত নিঠোর বাস্তবতা চিবানোর শব্দ অশ্র“তপ্রায়। চুক্তিবদ্ধ থেকে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যোৎপাতের রীতি-নীতির সাথে, চুক্তিবদ্ধ থেকে ক্রেবস-চক্র এবং ডানহাত-বামকান কর্তনের সাথে, চুক্তিবদ্ধ থেকে ক্ষমাহীনতার নীতির সাথে, চুক্তিবদ্ধ থেকে বিবর্তনের নীতির সাথে, পরজীবিবিদ্যার নীতি বিরোধী বলে যেসব আইন এটা অস্বীকার করে তার সপক্ষে চুক্তিবদ্ধ থেকে প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সন্দর্ভ প্রচার করতে করতে ঘর হতে নগর আর নগর হতে সারাঅঞ্চলে উপচে পড়ে এটা, একধরনের দার্শনিকমাত্রায় এটা পৌঁছায় যা-তে এটাই একমাত্র বস্তুগত রূপ, যা-তে অসঙ্গতির একমাত্র সঙ্গতি এটাই। এবং যখন নিজেকে গুটিয়ে আনে সিগময়েড লুপের আকারে, নিষ্ঠুরতা আর সমাধিফলকভরা পরিত্যাক্ত এলাকাজুড়ে বইবে শুষ্ক ও হিম বাতাস, সুড়ঙ্গে যেরকম, অগ্নিলাভা উদ্গীরণহীন কাটবে বহুবছর এবং গণ্ডমূর্খ চুক্তির রেণুগুলো অগ্নিশিলার গভীরে লুকাবে আর অপেক্ষায় থাকবে সিক্ত ডিনামাইটের মতোন। স্পেইসটাইম যখন বড় হই আমি এবং তুমি হও ছোট, তখন- (কালোজা’র তত্ত্বে পঞ্চমমাত্রাটা দেখানো হয় স্পেইসটাইমে প্রতিটা বিন্দুর সাথেই যুক্ত একটা বৃত্ত হিসাবে) -তখন যখন মরে যাব আমি, জীবিত কি আর হবো না কখনো? নখনো।

নখনো নখনো? নখনো নখনো। হ্যাঁ, কিন্তু নখনো নখনো নখনো? না . . . নাহ্ নখনো নখনো নখনো, সত্য বলতে কি, নখনো নখনোই। আমরা তাই একটা ছোট্ট পারিবারিক অবদান রাখলাম এগার-মাত্রার সুপারগ্র্যাভেটির কোয়ান্টাম-সমস্যায়। দ্রষ্টব্য: নখনো অর্থাৎ কখনো না। ব্যাকরণ সম্মত নয়, জেনেও রাখলাম।

ফরম্যুলা ওয়ান শব্দধাঁধার দরকারি সব শব্দ এখনো জানে না তারা, আর ক্রিয়া-বিশেষণ এখনো অচেনা একদম। তাদের ঈস্টারের সব ডিম ফুটে বেরোয় চিঁ চিঁ করা যত ফরম্যূলা ওয়ান রেসিং কার, কুকুরের লোমে যার শুরু হয় আর শেষ হয় কৃপাধন্য শুকনা কেঁচো থেকে পিপঁড়াদের ভোজোল্লাসে পৌছে। বিগ ব্যাং-এ গমনের উপায় সব এখনো তাদের অধিকারে। এমনকি কোনদিন তারা যদি হয়েও ওঠে দান্তে, কিংবা আঁদ্রে জিদ, কিংবা ফেইনম্যান, যোগ্য হবে না আগের মতন কখনো আর। হবে বড়োজোর এক মাছের পাতিল, যাতে মাছ তাদের নৈঃশব্দ উপভোগের বদ্বুদ ছেড়ে চলে।

পথচারী একজন: নিউ ইয়র্কের পশ্চিম এলাকার ভাঁটিতে প্রতিরাত সাড়ে ছয়টায় ব্লকার স্ট্রিট ধরে হেঁটে যায় দোকানের জানালায় এক পেইন্টিংয়ের প্রতিলিপি দেখতে থামে, নাম: শেষবিচার। ছয়টা আটত্রিশে সে পার হয় বেডফোর্ড স্ট্রীট, এগোয় সেন্ট লিউকের দিকে, অফিস শেষে মানুষের হুড়োহুড়ি গভীরভাবে দেখতে মোড়টিতে সে থামে। এরপর, সে ওয়েন্ডি’র ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং কোকের দিকে ইশারা করে, কিন্তু তাকে তা খেতে দেয় না তারা, প্রতিদিন এবং কোনদিনও না। ছয়টা পঞ্চাশে সে হার্ডসন এণ্ড ক্লার্কসানের মোড়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে স্পাইসার’স পেটশপ (কুকুর, বেড়াল, একোরিয়াম আনুষঙ্গিক জিনিস) এই সাইনবোর্ডের সামনের ফুটপাতে। বিশমিনিট ধরে বুকের উপর আড়াআড়ি হাত, প্রার্থনা করে সে, হয় স্পাইসারের নিকট, না হয় কুত্তার কাছে, না হয় বিলাইর কাছে, না হয় মাছের কাছে, না হয় নিউ ইয়র্কের কাছে, না হয় অন্ধকারের জীব বিশাল ইঁদুরটার কাছে যার আটাশটি তলা জুড়ে আছে দশ হাজার চোখ ।

সোয়া সাতটায় পুরো পরিশু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।