এডিট করুন
আবার নরকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তিন তারিখ মস্কো আর পাচ তারিখ পিটার্সবার্গে আমার হোষ্টেলে এসে পৌছলাম। জাহিদ ভাই আর ইমরুল ষ্টেশনে আসছিল আমারে নিতে। জাহিদ ভাইয়ের গাড়ীতে কইরা হোষ্টেলে আইলাম। হোষ্টেলে আসার আগ পর্যন্ত ভালই ছিলাম।
হোষ্টেলে ঢুকার পরই মনে হইল আবার আইলাম সেই জায়গায়। আমার রুমে ঢুইকা দেখি আমার আগের রুমমেট নাই। নতুন কেউ আসছে। পুরা ঘর অগোছালো। বুঝতে চেষ্টা করলাম পুলাডা কোন দেশের হইতে পারে।
সন্দেহ করলাম আফ্রিকান। কারন আমার জিনিস সে নিজের জিনিস মনে কইরা ব্যবহার করা শুরু করছে। টেবিলের উপর একটা বই পাইলাম। মনে হইল ফ্রেঞ্চে লেখা। তাইলে এইডা শিওর আফ্রিকান।
জাহিদ ভাইরে দেহাইলাম বইডা। উনি আবার ফ্রেঞ্চ জানেন। উনি কইল না এইডা ফ্রেঞ্চ না। তাইলে এইডা কি ভাষা হইতে পারে চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু কোন সমাধান হইল না।
কিছুক্ষন পর জাহিদ ভাই চইলা গেল। ইমরুলরে রাইখা দিলাম গল্প করার লাইগা। ইমরুল কয় দেশের গল্প ক। আমি কই কোন গল্প নাই। তয় কাহিনী হইল গিয়া প্রথমবার যখন দেশ ছাইড়া আসলাম তখন ঢাকা থিকা কাতার পর্যন্ত বেশ ফূর্তি করতে করতে আইছি।
কাতার থিকা যহন মস্কো আইলাম তহন প্লেনে বাঙ্গালী থিকা রাশিয়ান বেশী। একটু মন খারাপ হইল। তখন প্রথম বুঝতে পারলাম এক বিজাতীয় জায়গায় যাইতাছি। তারপরেও সবাই মিলা ফূর্তি করছি। মস্কো নাইমা যখন এয়ারপোর্ট থিকা বাইর হইলাম তখন কইলাম, আল্লা এই কোন যায়গায় আইলাম।
তারপর ট্রেন ষ্টেশনে আমি আর আমার দোস্ত ঋতু অনেকক্ষণ বইয়া থাকলাম। আমি যামু পিটার্সবার্গ আর ঋতু যাইব ভলগোগ্রাদ। কথা আছিল আমরা দুইজনেই ভলগোগ্রাদ যামু। এয়ারপোর্টে যাই পোলা আমাগোরে রিসিভ করতে আইছিল ও কয় আমারে পিটার্সবার্গ যাইতে হইব। মনডা খারাপ হইয়া গেছিল।
ঠিক করছিলাম দুই জনে একসাথে থাকুম। কিন্তু হইল না। তারপরে পিটার্সবার্গ আইসা ট্রেন থিকা নামার পর এক মাইয়া আমারে রিসিভ করল। আমারে নিতে একটা ট্যাক্সি আইছিল ভার্সিটি থিকা। ট্যাক্সিতে বইয়া পিটার্সবার্গের পুরান আমলের বাড়ীঘর দেইহা ভাবলাম এই কোন যায়গায় আইলাম।
আমারে হোষ্টেলের রুমে পৌছাইয়া দিয়া মাইয়াডা ভাগা দিল। তখন বাজে ভোর চারটা কি পাচটা। বাইরে অন্ধকার। রুম খুলল আমার মত কালা চুল ওয়ালা এক পুলা। ভোরবেলার ঘুম ভাইঙ্গা বেচারার হতভম্ব ভাব।
আমি ইংরেজীতে জিগাইলাম তুমি কই থিকা আইছো। কয় বাংলাদেশ। আমি কইলাম শালা তুইও তাইলে আছোস এইহানে। আর কোন বাঙ্গালী আছে কিনা জিগাইতে কইল পাশের রুমে আরেকজন থাকে। এই আরেকজনই হইল ইমরুল।
আমি কিছুটা হাফ ছাইড়া বাচলাম। যাক তাইলে বাঙ্গালী আছে আমার লগে। ওরাও আমার মত। আমার একমাস আগে আইছে। আসল প্রসঙ্গ থিকা অনেক দূরে সইরা আইলাম।
যা কইতে ছিলাম। এইবার দেশ থিকা আসার সময় হাড়ে হাড়ে বুঝছি। প্রথমবার ফূর্তির চোটে টের পাই নাই। এইবার সব ফূর্তি বাইর হইয়া গেছে। প্লেনে আমি জানালার কাছে সিট পাইছিলাম।
দিনের বেলা। নিচে স্পষ্ট বাংলাদেশের জমি বাড়ীঘর দেখা যায়। আমি তাকাইয়া তাকাইয়া দেখতাছি। আব্বা আম্মার সাথে ফোনে বাতচিত করতাছি। ফোন রাখলাম।
প্লেন ছাইড়া দিছে। আমি নিচে আমার দেশ দেখতাছি। হঠাৎ দেখি আমার চোখ দিয়া পানি পড়তাছে। আমি জানিনা কি জন্য পড়তাছে। দুই বছর আগে আমার চোখ দিয়া পানি পড়ে নাই, গত দুই বছরেও পড়ে নাই।
কিন্তু শালার এইবার কি হইল বুঝলাম না। আর বালের এমন সময় মনে পইড়া গেল এক দেশাত্মবোধক গান ( সুন্দর সুবর্ণ.........) । আমি পুরা মুখ জানালার দিকে ঘুরাইয়া দিলাম যাতে কেউ না দেখে আমি কানতাছি। আমার মনে হইল কি আছে জীবনে যদি নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে না পারলাম। আমার এক বন্ধু কিশালয় কইছিল দোস্ত আমি দেশে যামু না।
আমি জিগাইলাম কেন যাবি না। কয় দেশে গেলে আমি আর ফেরত আইতে পারুম না। কথাডা ও মিথ্যা কয় নাই। আমি ফেরত আইছি ঠিকই কিন্তু নিজের মনের উপর অনেক অত্যাচার কইরা। প্রায়ই ভাবি কি হইব এইসব কইরা।
এর থিকা দেশে গিয়ে কামলা খাইটা দেশে থাকা অনেক ভালা। আমরা দিন যাইতাছে আর মানসিক ভাবে একটু একটু কইরা এবনরম্যাল হইতাছি। এইখান থিকা যহন যামু তহন আমরা মানসিক ভাবে ৫০% আসুস্থ হইয়া যামু। গতকাল দিনে হোষ্টেলে আইলাম আর রাইতেই আইল কাপানি দিয়া জ্বর। মনে হইল আমি মাইনাস ৯০০ ডিগ্রীতে দাড়াইয়া রইছি।
সারা শরীর কাপানি দিয়া উঠল। চরম কষ্টে উঠলাম। একটা সোয়েটার গায়ে দিলাম, ফুল প্যান্ট পরলাম, তারপর কম্বলের নীচে ঢুকলাম। মনে হইল আমি এইবার শেষ। ভাবলাম একটা নাপা খাই।
কিন্তু উইঠা যে ওষুধটা খামু এই শক্তিও শরীরে নাই। চরম কষ্টে উঠলাম। বুঝলাম নরক যন্ত্রণা কারে কয়। বালের এক জীবন কাটাইতেছি। আমি আর নাই।
এইখানের পাট চুকাইয়া সোজা বাড়ী যামুগা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।