মুক্ত কর ভয়/ আপনা মাঝে শক্তি ধর/ নিজেরে কর জয়।
আবারো পরীক্ষা কড়চা!!!
বেশ কিছুদিন আগে একটা পোস্ট করেছিলাম, আমাদের পরীক্ষাসংক্রান্ত অবস্থা জানিয়ে!!! মন বসে না পড়ার টেবিলে!!
ইতিমধ্যে "অদ্রোহ" আরেকটা পোস্ট করেছে "অত:পর এক্সাম ফোবিয়া"।
মনে হয়, সবখানেই কিছু নিজস্ব শব্দ আছে। যেগুলো কেবলমাত্র সংশ্লষ্টরাই বুঝে। আমাগোও এরাম কিছু কথা চালু আছে!! লঞ্জাই, আইজকা আপনেগো একটু ঘুরাইয়া আনি, আমগো পরীক্ষা চলাকালীন পুলাপাইনগো কথাবার্তার লগে..
শব্দ পরিচিতি:
১. ঠা-ঠা: ঝাড়া মুখস্থ!!
২. It is clearly seen: যে বুঝাচ্ছে আরেকজনকে সেই শিক্ষক মহাশয় নিজেই শিওর না, কাজেই এই অংশটা মুখস্থ!!
৩. কাপ+ ঝাঁপ: শিক্ষক নিজে বুঝচ্ছেন, কিছু ছাত্রকে বুঝাইতে পারতেছে, কাজেই ছাত্রের সহজ সমাধান, "ঠা-ঠা"!!!
৪. কোপ: পরীক্ষার হল থেইকা বাইরানির সময় সবচাইতে কমন শব্দ!! দুই ধরনের অর্থই হইতারে!! ভালা হইলে, "কোপাইছি!!" স্যারগো লিগ্গা ভালা মানে, আমগো লাইগ্গা খারাপ হইলে, "কোপাই দিলো তো!!"
৫. : কোপ খাইলে পোলাপাইন আরেকখান প্রতিশব্দ কয়, এইটা কওন যাইব না!! ১৮+ [ইংগিত দিতারি!! দুই বর্ণের একটা শব্দ, মাঝে "া" যুক্ত!!! ]
৬. বাঁশ: ইহা নিয়া কিছু না বললেও চলবে!!!
৭. ৩ + ৩ টা মোট ৬টা সেট দুই সেকশনে(ভাগ)।
বেশির ভাগের টার্গেট ৫টা!! কাজেই ভাল মানে ৫টা খারাপ মানে ৪.৫!! আর, কোপ মানে তো .. !!
৮. সেইরাম: এইটা ইদানীং প্রচলিত!! ব্লগের প্রভাব!!! সমার্থক "কোপ"
৯. আর, পরীক্ষা দিয়া আইসা, মুখপস্তিকার সবচাইতে কমন অবস্থা: "রইল বাকি ..!! "/ "বাঁশ খেয়ে গেলাম!!"
১০. গুরু: যে সবকিছু পারে!! (এনাদের সবসময় ডিস্টার্ব করা যায় না। মাঝে একটা নির্দিষ্ট দিন আসেন। তখন যার যার সমস্যা, সব কিছু বুঝে আসতে হয়!!!)
১১. বস: কোন একটা নির্দিষ্ট অংশের উপরে বস!! (মোটামুটি সব সময় ফ্রি, খালি একটা ফুন্দিয়া রুমে যাইয়া বইসা পর্লেই হয়!! বুঝায়া দিব মুহূর্তে)
১২. ৫/ ৭/ ১০ মিনিটের ঘুম: একটা টপিক বুঝাবুঝি শ্যাষ, (আমগো ভাষায়, "কোপাই দিছি!!!") একটু ছোট-খাট বিরতি!! আর, বিরতি মানেই ঘুম, যেইটা আক্ষরিক "৫/ ৭/ ১০ মিনিট" হইলেও ভাবার্থ "২০/ ২৫ মিনিট"!!!
এইগুলান ছাড়াও অতি পরিচিত "পি এল", "ফাইট" এইগুলা সবতে জানেন!! কাজেই এইগুলান নিয়া আর কইলাম না।
তয়, সবচাইতে নতুন যেইটা আমগো রুমে চালু হইছে, সেইটা হইল "ভাবি"!! যেকোন নারী সম্প্রদায়ই আমাদের ভাবি!! ফোন করতে হইলে, "ভাবিরে একটা ফোন দেন। " "ভাবি তো এইখানে ভুল করছে!!" "ভাবি এই খানে অংকটা লেখছেন, কিন্তু করেন নাই!!!" ইত্যকার আর্কি!!!
যাই হোক, শেষের দিকে আইসা পড়ছি!! আমাদের একটা বই পড়াইছে এই টার্মে, কংক্রিটের "নুথ" সাহেবের বই।
বড়ই খতরনাক একটা বই!! বদের বদ নুথ সাহেব শুরুতেই ঘোষণা দিয়া রাখছেন, "যে এই বইয়ের কোন ভুল বের করতে পারবে, প্রতি ভুলে এক ডলার এবং একটা সার্টিফিকেট দেওয়া হবে!!"
আমরা গরীব-গুর্বা মানুষ!! নুথের বই কিনছি, মাগার পড়ি না!!! পয়লা পয়লা ভর্তির পরে চোথা জোগাড় করতাম!! ইদানীং আর করি না!! ভাবি শ্রেণীর একজন শ্রদ্ধেয়া সদস্যা আমাদের সকল চোথার চাহিদা পূরণ করছেন। অসম্ভব ভাল ক্লাস লেকচার, সেইটাই গণহারে ফটোকপি!! এমন অবস্থা, এত পৃষ্ঠায় একটা অংক আছে বললে সবাই লেকচারই উল্টানি শুরু করে, বই না!!
যাউক্গা, ঘটনা হইল, ইদানীং আমরা লাখপতি হইয়া যাইতেছি!!! কারণ, আমাদের ভাবি'র লেকচারে ভুল পাওয়া যাচ্ছে!! একজনের মন্তব্য, "ভাবি কোয়ান্টিন্টি ঠিক রাখতে গিয়া কোয়ালিটির সাথে কম্প্রোমাইজ কইরালাইছে!!"
[এত ফাইজলামি করলাম ভাবিকে নিয়ে, এইবার একটা ক্ল্যারিফিকেশান দেই, এই মেয়ে না থাকলে আমাদের অবস্থা পুরাই কেরোসিন হয়ে যাইত। ওরে বাজারের সকল ধইন্যা দিয়া দিলেও কিছুই হইব না!! তাও কম পইড়া যাইতারে!! থ্যাংকু, থ্যাংকু। এতগুলা পরীক্ষা দিতাছি, সবই ওর লেকচার ফটোকপির উপ্রে!! ]
একটা খুব ছোট গল্প দিয়ে শেষ করি। গত পরশু রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে কাউয়া ভাই ফোন দেয়।
শুভ্র ভাই সহ একটু হালকা-পাতলা আড্ডা হয়। ফেরার পথে ১১টার দিকে কোন রিকশাই আর পলাশী আসতে চায় না। মোটামুটি ১০ মিনিটের প্রচেষ্টার পর এক রিকশাওয়ালাকে রাজি করানো গেল। রিকশা করে আসার সময় তাকে আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে নিয়ে আসি। ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে সে যে কথাটা বলল,
-- ভাই, এইডার চাইতে তো আর কোন ভাল ভার্সিটি দ্যাশে নাই, তাই না?
আমি কি বলব, গাই-গুই করে বলি,
: আরে না না কি বলেন, "এতগুলো ভার্সিটি, সবাই ভাল, সবই তো আমরা আমরাই।
সে তবু বলে,
-- কি সুন্দর করে সাজাই রাখছে সব কিছু। এইটাই ভালা।
একটু হু-হু করে এড়িয়ে যাই।
হঠাৎ কথা প্রসঙ্গে বলে ওঠে,
-- ভাই কিছু মনে নিয়েন না। এই যে আপনেরা এইখানে পড়তেছেন, আপনেদের জন্য কিন্তু আমগোও অবদান আছে।
একটু ভ্রু কুঁচকে তাকাই। বলে কি??
-- এই যে আপনি রিকশা করে আসতেছেন এখন, আমি না থাকলে হইত? আমি তার ভাবনায় অবাক হই।
চলতি পথে, সে আমাকে আরো অবাক করা কাহিনী শোনায়। তার রিকশার মালিকের ছেলের কাহিনী। যে ছেলে আমাদের ভার্সিটি থেকেই পাশ করে গেছে কিংবা হয়ত আমাদের সাথেই পড়ছে, কিন্তু, লজ্জায় তার বাবার পরিচয় দেয় না।
প্রতি সপ্তাহে সেই বাবা এসে ছেলে টাকা দিয়ে যান।
আমি অবাক হয়ে শুনি। চলতে চলতে পথ ফুরায়। গল্প শেষ হয় না। রিকশা থেকে নেমে তাকে ভাড়া দেই।
ঘুরে হলে ঢুকব, সে এমন সময় হঠাৎ ডেকে বলে,
-- অনেক কিছু বলছি, আপনেরা শিক্ষিত মানুষ, অনেক কিছু জানেন। আমি অশিক্ষিত। কিছু ভুল বললে মাফ দিয়েন। একটা অনুরোধ করমু?
আমি আগ্রহ বোধ করি না। হয়ত সাহায্যের প্রস্তাব করবে।
-- ভাই, ঠিকমত পড়াশুনাটা শেষ কইরেন। আর, বিদেশে চইলা যাইয়েন না। দেশেই থাইকেন। দেশের আপনেগো দরকার।
আমার মুখে বোল ফুটে না।
চুপ করে হলে ফিরে আসি। সারারাত আর পড়া হয় না সেদিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।