আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুস্পের হাসি
আজ ২৩ আগস্ট। সেই ২৩ আগস্ট। ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট। আজ এই সময়ে ইন্টারনেট-এ বসে আছি। ২০০৭ এর এই দিনে তা পারিনি।
তখন চারিদিকে আতঙ্ক। ২০০৭ এর এই দিন সকালে বুকে পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে বেরিয়েছিলাম রাস্তায়। নিজের চোখে দেখেছি অনেক ছাত্র-সাধারণ পথচারীদের পুলিশের লাঠিপেটা খেতে। কালো পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে বিনোদপুরে সব ফেলে পালাচ্ছে সবজি বিক্রেতা। কারফিউ চলছে তা জানা ছিলো না বেচারার।
সেই কালো পোশাকের বাহিনীর হাতে আমরাও আটকালাম। ৬ জন। ৬ গণমাধ্যমের ৬ প্রতিনিধি। ওরা লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলেও ওদের বড় অফিসারের বরাত দিতেই থেমে গেলো। হুকুম দিলো ৬ জন একসাথে নয়; ২ জন করে হাটতে হবে।
তাও আবার মাঝে বিস্তর ফাঁক রেখে। সেমিন এমন হুকুমে মনে পড়েছিলো, ছোট বেলায় মা-বাবা কিংবা দাদা-নানার কাছ থেকে শোনা মুক্তিযুদ্ধেকালীন ঘটনার কথা। তখন নাকি রাস্তায় প্রায়ই এভাবে চলতে হতো মানুষকে।
সে যাই হোক, ওদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ৩ সঙ্গীকে রাস্তায় হারিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে আটকালো পুলিশ। আবার ছেড়েও দিল বটে, তবে সুযোগ পেয়ে এইট পাশ কন্সটেবল ...বাচ্চা বলে গালিও দিলো।
এসব পেছনে ফেলে রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহলে ভীত চাহনি দেখিয়ে, শিবলী ভাইয়ের বাসা থেকে শুকনো খাবার নিয়ে সেদিন আশ্রয় নিয়েছিলাম যায়যায়দিনের রাজশাহী অফিসে। নির্ঘুম আতঙ্কময় একটি রাতও সেখানে কাটিয়েছি সেদিন। এরপর কত কিছু। কত গ্রেফতার, সমর্পন, রিমান্ড, দন্ড, জামিন, খালাস আর আন্দোলন।
এসব কিছু নিয়ে আজ আর বলতে চাইছে না মন।
খুব বিষন্ন লাগছে নিজেকে। তাদের কথা খুব মনে পড়ছে। যারা ২২ আগস্ট ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের পর ওইদিন রাত আর পরদিন ভোরে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মোড়ে মোড়ে সয়েছে নির্যাতন। অর্ধশিক্ষিত সামরিক সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থীদের নানান নিকৃষ্ট প্রাণীর বাচ্চা বলে মজা পেয়েছে, পশ্চাদদেশে লাথি মেরে, লাঠি ছুড়ে মজা পেয়েছে সেদিন। আরো মনে পড়ছে সেই গরীব রিকশাচালকের কথা।
২২ আগস্ট সংঘর্ষ চলার সময় আহত এক ছাত্রকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে। ক্লান্ত শরীরের রিকশায় বসে সেখানে আরেক রিকশাচালককে বলছিলেন, ভার্সিটি বন্ধ হলে তো বিপদে পড়তে হবে। সংসার চালাবার টেনশন তখন তার চোখে-মুখে। না, খুব বেশিক্ষণ করতে হয় নি সে টেনশন। সারাজীবনের জন্য তার টেনশন নিভিয়ে দিলো পুলিশের একটি বুলেট।
মারা গেলো একটি মানবসন্তান।
আগস্ট বিক্ষোভে রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র-শিক্ষক কারাগারে ছিলেন তাদের অনেকে আজ নানানভাবে পুরস্কৃত, সম্মানিত। অনেকে নানান পদও পেয়েছেন। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা। কিন্তু অর্ধশিক্ষিত সামরিক সদস্যদের মজার বলি হওয়া ছাত্ররা আর সেই গরীব রিকশাচালকের প্রতিদান কই।
সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে তার পরিবার আজ কেমন আছে সেই খবর কি কেউ নিয়েছেন? যার মৃত্যুর খবর সেদিন আন্দোলনকে বেগবান করেছিলো তার প্রতি কি আমাদের কোন দায় নেই?
হায় হতভাগ্য আগস্ট নির্যাতিত ছাত্ররা, হায় হতভাগা রিকশাচালক ক্ষমা করো আমাদের। আজ ওই বিক্ষোভ ইস্যুতে কতজন কত সুবিধা নেয়। আর তোমরা পড়ে থাক অন্তরালে। শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিইবা দিতে পারি তোমাদের। তাই নিয়েই না হয় সন্তুষ্ট থাকো।
(ব্যক্তিগত মতামত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।