[আমার কথা ঃ আগমী ১৫ আগস্ট ২০০৯ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রাক্কালে মুক্তি প্রাপ্ত উত্তরের পশ্চাৎপদ প্রদেশ 'মনিপুর'এ নির্মিত এবং সারা ভারতে বিপুলভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী 'ক্রস ফায়ার' চলচ্চিত্র টির কিছু হিট অংশ বাংলাদেশের দর্শদের জন্য যুক্ত করলাম। কথা না বাড়িয়ে আসুন সিনেমার কিছু হিট অংশ দেখা যাক। ]১
এক
কাহিনী কালঃ সকাল ১০:৩০টা ,২৩ জুলাই ২০০৯।
স্থানঃ ইমফাল (Imphal ),রাজধানী মনিপুর , ভারত।
ক্রস ফায়ার চলচ্চিত্রের ভিলেন ২৭ বছর বয়সী 'চংখাম সঞ্জিত' প্রদেশ মনিপুর পর্ষদ ভবনের ৫০০ মিটার সীমার মধ্যে একটি ঔষধের দোকানের কাছে মনিপুর পুলিশ কমান্ডো বাহিনী পরিবেষ্টিত ভাবে দাড়িয়ে আছে।
(ছবির বাম পাশে লাল বৃত্ত বন্দী্। তীরের মাথা ঔষধের দোকান। )
কমান্ডো পরিবেষ্টিত অবিচলিত 'সঞ্জিত' এর শান্ত স্নিগ্ধ মুখ দেখে কে বলবে সে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি। ?!
'সঞ্জিত' কে দেখা যাচ্ছে শান্ত সুবোধ বালকের মত ভারী আগ্নেয় অস্ত্রধারী একজন কমান্ডো সাথে ১ম চিত্রের নির্দেশিত তীর চিহ্ন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে।
পাঁকা অভিনেতা 'সঞ্জিত' এর সুবোধ বালক সুলভ আচরণের প্রকৃত সত্য বুঝতে বিলম্ব হয় নি ঝানু পুলিশ কমান্ডো ( এই চলচ্চিত্রের নায়কের বন্ধু) ; তাই কোমড়ে গোজা অস্ত্রটি বেড় করতে তিনি প্রস্তুত।
এত শান্ত 'সঞ্জিত' কে দিয়ে তো ছবি জমবে না!। তাই চলচ্চিত্রের পরিচালক অপরাপর কুষলীবদের মাঝে চোখে ছড়িয়ে দিলেন উত্তেজনা ।
হঠাৎ ক্লাইমেক্স । নির্লিপ্ত 'সঞ্জীব' কে টেনে হেচড়ে নিয়ে চলেছেন কয়েক জন কমান্ডো।
টানতে টানতে 'সঞ্জিত' কে নিয়ে যাওয়া হল ১ ম ছবির তীরের মাথার সেই ঔষধের দোকানের ভিতরে।
দশৃকের মধ্যে টান টান উত্তেজনা। চলচ্চিত্র পরিচালকে এক সাসপেশনের মাঝে নিক্সেপ করেন দর্শকে। কি হতে যাচ্ছে , ঔষধের দোকানের ভিতর?!
আপেক্ষার প্রহর বুঝি আর শেষ হয় না।
কয়েক মিনিট পর ঔষধের দোকানের ভিতর থেকে নির্লিপ্ত 'সঞ্জিত' এর চির শান্ত দেহ কমান্ডোরা টেনে বেড় করে নিয়ে আনলো ।
অসংখ্য ফ্লাশ লাইট যখন 'সঞ্জিত' চারপাশে বার বার জ্বলে উঠলো, পিপলস লিবারেশন আর্মির এক অসুস্থ প্রাক্তন সদস্য শয়িত পুলিশ ট্রাকের পিছনে।
'ক্রস ফায়ার' সিনেমার বিচক্ষন পরিচালক চিরদিনের জন্য নথর হয়ে যাওয়া ' সঞ্জিত' এর জন্য দু্'জন সঙ্গি জুটিয়ে দেয় পুলিশ ট্রাকের পিছনে। এক জন হচ্ছে 'সঞ্জিত' এর সাথে কমান্ডোদের এনকাউন্টার কাল কিছু দূরে দাড়িয়ে থাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ' রবিনা দেবী' এবং অপর জন ' রবিনা দেবী' গর্ভের সন্তান , যার তখনও কোন নাম রাখা হয় নি।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যাশী' সঞ্জিত'এর অর্ধ মিলিত চোখ দর্শকের বিবেকে কাছে কি কোন প্রশ্ন রেখে যেতে চায় ? সিনেমার শেষ উত্তেজক মুহুর্তের শেষে , তখন দর্শকের ঘরে ফেরার তাড়া। তাই সেই অর্ধ মেলিত চোখ কোন অন্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
দুই
সেন্সর বোর্ড কতৃক বাতিল কৃত ' ক্রস ফায়র' চলচ্চিত্র টির অপ্রয়োজনীয় কাট পিস।
'সঞ্জিব' মৃত্যুর পর সঞ্জিবের কিছু সহয়োগীর পুলিশের সাথে এনকাউন্টার দৃশ্য।
পুলিশের দিকে গুলতি দিয়ে ছোড়া হচ্ছে মার্বেল । আর তা থেকে আত্মরক্ষাকারী পুলিশ।
তিন
ভারতে যে কোন চলচ্চিত্র হিট করতেই ' ঢালিউডে' তার ' এ- টু- জেড' কপি হয়ে যায় বৎসর না ঘুড়তেই। খবর পেলাম আলোড়িত 'ক্রস ফায়ার' সিনেমার বাংলাদেমী সংস্করন তৈরির কাজ ইতোমধ্যে বিপুল উদ্দোমে শরু হয়ে গেছে বাংলাদেশেও।
Click This Link
আমি কিংবা আপনি সেই সিনেমায় 'সঞ্জিত' ভুমিকায় অভিনয় করবার সুযোগ পাব না বড় গলায় বললেও ; ' রবিনা দেবী' চরিত্রের জন্য নির্বাচিত যে হব না সে ভরসা কোথায়।
চার
[ আমার কথাঃ প্রতি দিন আমার কাছে অসংখ্য উড়ো চিঠি আসে ই-মেল মাধ্যমে। আজকাল আর সে গুলির বেশির ভাগ খুলে দেখার সময় হয না। হঠা্ৎ এ রকম এক উড়ো চিঠিতে উড়ো করিতা পেয়ে গেলাম। জনাব মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান রচিত ''নিঃশব্দের অশ্বারোহী ''।
ভারতীয় বানিজ্যিক এই'ক্রস ফায়ার' সিনেমা কাহিনি চিত্র পড়ে, যদি কোন পাঠকের একটি ' বিকল্প ধারা চলচ্চিত্র বানাবার চিন্তা মাথায় আশে তবে মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের ''নিঃশব্দের অশ্বারোহী '' দীর্ঘ কবিতা টি পালট হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন । তবে কবির অনুমতি সাপেক্ষ। তবে বলে রাখি কবি মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের সাথে আমার কোন পরিচয় নাই। ]
নিঃশব্দের অশ্বারোহী
আপনি যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক,
ঐ জায়গা থেকে পূর্বদিকে সোজা কালো
পিচঢালা যে রাস্তাটি ডানের গলির ভেতর ঢুকে
গেছে; যেমনটি যায় আমাদের স্বপ্ন
অজানা কোন শোলে ইদুরের গর্তে;
আপনাকে যেতে হবে ঐ রাস্তায় ।
ঐ রাস্তা ধরে ডানে একটা পার্লার রেখে বামের রাস্তায় যখন এসে পড়বেন
নিশ্চয় মুখে অতিরিক্ত পাউডার দেওয়া স্থুলাকার
এক রমণীর সাথে দেখা হবে-
উনি মুক্তা বানু ।
অন্তত গত চার বছর ধরে
শুধু এ এলাকার মানুষই নয়, গলির
মোড়ে যে পাগলটা রোজ পল্টনের ময়দানে
ঈশ্বরের বিচার করে গণআদালতে সেও
ওকে মুক্তা বানু বলে জানে
মুক্তা বানুকে পেছনে রেখে মিসমিলাহ্ হোটেল
ডানে রেখে রূপনগরের রূপহীন
এক কঠিন মাটিতে আপনাকে দাঁড়াতে হবে । ওখানটায় ষাটোর্ধ্ব
মাথায় কাঁচা-পাকা চুল নিয়ে কিছুদিন আগেও
ছিলেন কম· চৌধুরী ।
কম· চৌধুরী যিনি কমসে কম ষাট
বা তার অধিক শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা-শরৎ
হেমন্ত এবং অবশ্যই বসন্তে
বেঁচে ছিলেন এবং রাষ্ট্রের এতো ভালোবাসা, গণতন্ত্র
পায়ে দলে কিংবা বলতে পারেন
উপেক্ষা করে বেঁচে ছিলেন এবং একই সাথে আমাদের অনেক
শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন ।
সেই কম· চৌধুরীর বাসাতে ঢুকলে প্রথমে যা দেখা
যাবে, তাকবিহীন ঘরভরা বই ।
মার্কস-লেনিন সাহেবের সব সংকলন।
মাও সেতুংয়ের যুদ্ধ বাঁধানো লাল বই
ইতিহাস আর দর্শন কেমন ফুরফুরে ভাবে
চেয়ে আছে ঘরের একমাত্র জলরঙ্গের চিত্রের দিকে ।
ছড়ানো ছিটানো মার্কস-লেলিন-মাও সেতুংয়ের মধ্যে সঞ্চয়িতার
ক’টা পাতা এখনো খোলা ।
আপনি যদি খুব ভালো করে লক্ষ্য করেন
তাহলে দেখতে পাবেন ঘরের মধ্যে খেজুরপাতার
একটা পাটি ব্যতীত বসবার কিংবা
ঘুমাবার কোন ব্যবস্থা নেই ।
সাদা-পাকা চুল নিয়ে ষাট বা ততোধিক
অবগাহনের কাল পেরিয়ে কম· চৌধুরীর কি তবে
সবুজ ফসলের মাঠে একটি ফিঙ্গের কালো পাখা হয়ে
ধান পোকাদের গোপন ব্যথা বনে সটান
কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন?
ঠিক এই ঘরটায় তিনি
পাতার পর পাতা কলমবন্দি করেছেন,
তাঁর সেইসব অগণিত লেখনির মাঝে কোন প্রেমপত্র ছিলো কিনা
এ বিষয় স্পষ্ট করে বলা কঠিন;
কারণ রাষ্ট্র নামক সুন্দর পরিশীলিত এবং
অবশ্যই গণতন্ত্রী এই প্রতিষ্ঠান তাঁর নিরীহ মানবিক দূত দিয়ে
সেসব আলামত সুষ্ট ও
সুবিচারের জন্য বহুযন্ত করে
সংরক্ষণ করেছেন ।
কম· চৌধুরী কখনো ঝুম বর্ষায় ভিজতে
চেয়েছিলেন বা কখনো ভিজেছেন কিনা আমাদের
জানা নেই; তবে তাঁর ঘরের জল রঙ্গের
চিত্রকর্মে যে কিশোরীর অবয়ব, তার চোখে
বৃষ্টির পানি ছিল আর পেছনের আকাশটা নীল
আপনাকে এ পর্যন্ত এসে থেমে যেতে হবে
কেননা আপনি আর কিছুই দেখতে
পাবেন না ।
এবার আপনার সামনে
গণতান্ত্রীক মানবিক রাষ্ট্র প্রেসনোট ধরিয়ে দেবেঃ
‘গতকাল রাতে চরমপন্থি নেতা মোফাখখারুল ইসলাম চৌধুরী
তার গোপন অস্ত্র ভান্ডার পুলিশকে
দেখিয়ে দিতে নিয়ে গেলে, ওত পেতে থাকা
সন্ত্রাসীরা পুলিসের উপর গুলি বর্ষণ করে
পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়
এসময় চৌধুরী পলায়নকালে ক্রসফায়ারে পড়ে নিহত হয়’
তবে গভীর রাতে উঁইডিবির পরে
যেখানটায় দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রীক মানবিক রাষ্ট্রের
দূতেরা তাঁকে বলেছিলোঃ দৌড় দাও ।
আর কম· চৌধুরী তাঁর দরাজ কন্ঠে
শেষ রাঁতের নিরাবতার বুকে হাতুড়ি মেরে বলেছিলোঃ
‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’
তাঁর সেই চিৎকারে খোয়াবে সঙ্গমে প্রার্থনারত
মানুষ ও অমানুষের কলিজায় আগুন ধরে গিয়েছিলো
আর শান্তির মানবিক দূতেরা রবীন্দ্র সংগীতের
মত কোমল অস্ত্রের ট্রিগার টিপতে কমপক্ষে
দশ সেকেন্ড ভুলে গিয়েছিলো ।
যার চোখে খেলা করে ফসলের শীষ
নারীর হৃদয় ভোগ্য নয় আর
ফ্লাট বাড়ির শেকল পরানো আকাশ থেকে মুক্ত হবে
উত্তর-কৈশোর
যুবক-যুবতী স্বপ্ন দেখবে একটি
বর্ষণমুখর দুপুরের
সে চোখ একজন চরমপন্থির,
একজন মোফাখখার চৌধুরীরর
কিংবা বলতে পারেন একজন খুনি
মাতালের চোখ ।
ঋত্বিক নামের যে মানুষটিকে তিনি
শেষ ফোনে বলেছিলেনঃ তোমরা ভালো থেকো ।
কম· চৌধুরী কি জানতেন না, গণতন্ত্রের সোনার দেশে
আমরা সবাই রাঙ্গা রাজপুত্র ।
আমাদের ভাতের কষ্ট নেই,
ভোটদানের কষ্ট নেই
এমনকি ভালোবাসার কষ্টও নেই;
তিনি কী জানতেন না, আমরা সবাই
ভয়াবহ ভালো আছি ।
আপনাকে এই ফ্লাট বাড়ি থেকে নেমে
সব ভুলে যেতে হবে
কেননা খোয়াবে অথবা সঙ্গমে যদি
কখনো কম· চৌধুরী আপনাকে ভর করে
তবে কোন এক শীত কিংবা বসন্তের রাতে
মানবিক শান্তির দূতেরা
তাদের কোমল অস্ত্র আপনার বুকে
ঠেসে ধরবে আর পরের দিন
ছাপানো কাগজে বড় বড় অরে লেখা থাকবেঃ
ক্রসফায়ারে চরমপন্থি নেতা নিহত ।
কে না জানে এই শান্তিপ্রিয় মানবিক
গণতন্ত্রী রাষ্ট্রের বিরোধিতা মানেই
সন্ত্রাসবাদ আর ক্রসফায়ার!
--------------------------------------------------------
১। Tehelka ম্যাগাজিনের ০৮ আগস্ট ২০০৯ সংখ্যায় তেরেসা রেবমানের Murder In Plain Sight পাঠের পর।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।