পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।
প্রথিতযশা সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক , কথা-সাহিত্যিক , নাট্যকার আবদুল হক ‘ষ্মৃতি সঞ্চয়’ নামে একটি ডায়েরী লিখেছিলেন তাতে তার মনোভঙ্গির একটি নিবিড় পরিচয় আমরা পাই । ধর্মনিরপেক্ষতা , ইহজাগতিক চেতনা, জাতীয়তাবোধ, শোষণ ও পীড়নমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতি অঙ্গীকার, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উদার মনোভঙ্গি এবং সর্বোপরি মানবিকতার আদর্শই ছিল আবদুল হকের পাথেয় । তাই তার ‘ষ্মৃতি সঞ্চয় ’ আমাদের ইতিহাসের এক গভীর সত্যনিষ্ঠ ও অসামান্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে । উল্লেখ্য, ‘ষ্মৃতি সঞ্চয়’ ’৭২-’৭৫ সময়পর্বের নির্বাচিত অংশ সাপ্তাহিক ২০০০ এর ইদুল ফিতর সংখ্যায় ছাপা হয় ।
এ গ্রন্থের ’৭৫ সালের ১৫-২৩ আগষ্ট তারিখের ডায়েরীর পাতায় উঠে এসেছে ১৫ আগষ্ট নির্মম হত্যাজজ্ঞ প্রসঙ্গ । আবদুল হক লিখেছেনঃ
উঠতে কিছু দেরী হয়েছিল । তখন সাতটার কাছাকাছি । শওকত এসে জানালো শেখ সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে । ‘বল কি !!!’ তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠলাম ।
কয়েক মুহুর্ত পরে শওকত আবার এসে জানালো , না শেখ সাহেবকে হত্যা করা হয়নি , ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে । খন্দকার মোস্তাক নতুন প্রেসিডেন্ট । রেডিওটা অন করেছিলাম । ৭টার খবরের সময় পার হয়ে গেল , কিন্তু শুধু কোরআন তেলাওয়াত । তারপর শেখ সাহেবকে হত্যা এবং অভ্যুথানের সংবাদ ।
রাত্রিশেষে মেশিন গান চালনার শব্দ শুনেছিলাম কিছুক্ষন ঘুমের ঘোরে । প্রথম মনে হয়েছিল অন্যদিক থেকে । কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল সামান্য একটু । ভেবেছিলাম হয়তো মনের ভুল ।
শেখ সাহেবের একটা ব্যক্তিত্ত্ব ছিল ও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ছিল ।
এই দিয়ে তিনি মোটামুটি জাতীয় ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন । সে ব্যক্তিত্ত্ব এবং ভাবমূর্তি অপসারিত হলো । বহু শিক্ষিত এবং গ্রামবাসী শুধু শেখ সাহেবকে বুঝতো আর কাউকে বুঝতো না । তারা ব্যাপারটিকে ভালভাবে গ্রহণ করবে না । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে ।
শেখ সাহেব সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা ছিলেন । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ রাষ্ট্রের জন্য একটা স্থান সৃষ্টি করেছিলেন । তিনি ছিলেন এ রাষ্ট্রের প্রতীক । সেই প্রতীক অপসারিত হলো । সেই সঙ্গে আহত হলো এ জাতির আত্মবিশ্বাস ।
স্বতন্ত্র সার্বভৌম সত্তায় আত্মবিশ্বাস ।
বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তার নাম কিছুতেই বাদ দেওয়া যাবে না । নাম ষ্মৃতি নিয়ে তিনি বারংবার এদেশের ইতিহাসে আবির্ভুত হবেন ।
মনে হয় বেশিরভাগ লোকই শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত , তাকে সপরিবারে হত্যা করায় খুশি । তার অর্থ , যে ব্যক্তিটি দায়ী শুধু তাকে নয় , তার পরিবারের শিশুবৃদ্ধ নারীসহ সবাইকে হত্যা করা দোষের কিছু নয় ।
রাজনৈতিক মূল্যবোধ এখন এই পর্যায়ে । তাহলে ভবিষ্যতে দরকার হলে যেকোনো শাসককে একইভাবে অপসারিত করাটাও লোকে বাঞ্চনীয় মনে করতে পারে । ফলে এ ধরণের হত্যা ঐতিহ্যে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ।
মধ্যযুগে সার্বভৌম বঙ্গদেশেই এরকম ব্যাপার বারংবার ঘটেছে । রক্ষীবাহিনী পাকিস্তানপন্থী বা উগ্র চীনপন্থীদের হত্যা করেছিল এটা যদি খারাপ হয় , তাহলে বাংলদেশের স্রষ্টাকে সপরিবারে হত্যা করাকে ভালো প্রমান করা যায় কিরূপে ? রাজনৈতিক মুল্যবোধ, অতিতের ইতিহাস, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা , সার্বভৌম বাংলাদেশের উদ্ভব আর তার নিয়তি , অতীত আর ভবিষ্যত, দূর্যোগময় উত্তুঙ্গ -তরঙ্গ সংকুল পৃথিবী এ সম্বন্ধে অধিকাংশ মানুষ কিছুই ভাবছে না ।
বর্তমানের কাটা তো অপসারিত হলো , এই শুধু মনে করছে ।
বাংলদেশের ইতিহাস, বাংলদেশের বিকাশ শুধু যে অকস্মাৎ মোড় ফিরলো তাই নয় তার অগ্রগতিতে একটা বিকৃতি এলো, অস্বাভাবিকতা প্রবেশ করলো । হয়তো দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস কেউ লিখবে না , লিখতে সাহসী হবে না । বাংলদেশের ইতিহাসে অর্থাৎ ইতিহাস লেখায় বিকৃতির সম্ভাবনাই এখন বেশী ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।