_________________সেলাই গাছের কারখানা _______________________________________
সৈয়দ আফসার
নিজস্ব স্বীকারোক্তি
আমি পুঁতে রাখি কথকতা— কিছু শূন্যতা, যা অনিবার্য বলার ছিল হয়ত বলে
নেয়া যাবে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এমনিতে; এমনি।নির্জনতার বেড়ে ওঠো তুমি
বেড়ে ওঠে অপারগতা; আড়ষ্টতা। যেটুকু ছুঁয়েছো ততটুকু বিশ্বাস বাদ-বাকি
বৃথা— ব্যর্থতা।তুমি যদি পুড়ো অঝোর ধারায় আমি তুলে রাখবো জল বৃষ্টির
নাম ধরে; অতিযত্ন করে লাল-নীল বেগুনি খামে।তুমি বারবার ছুঁয়েছো এক-
টুকরো স্বপ্ন, বাকিটুকু মেঘের অধীনতা— আমি আমার জন্য পুঁতে রাখি জল
আরো— আরো কিছু শূন্যতা
পাখি ভাবনা
কী রকম ছুঁয়ে দেখা যায় ভয়
তা জেনে অঙ্গগুলো মৃদু দুলে ওঠে
কে কাকে ছুঁল জানি না— বুঝলাম
হাতের সৌকর্যে
আমাকে ছুঁবে না কেউ; শরীর কেঁপে ওঠে
কীভাবে উড়তে শিখে পাখি— ছুটে যায় নীড়ে
আশাহত পাখিনী একা বসে কাঁদে দূরে
দেনা-পাওনা
কী করে ছুঁয়ে দেখব শরীরের ঘ্রাণ
কোথায় দাড়ালে ছুঁয়ে যাবে শবদেহ
গার্হস্থ্যজীবন
ফলে ছুঁতে ছুঁতে হারায় গতিপ্রবাহ আর—
ত্রিবর্ণে ফুটে ওঠা হাতের রীতি
কীভাবে ছুঁয়ে দেবো তোমার— অভিশপ্ত ঘ্রাণে
আজো নিঃশ্বাসে পুড়ে অর্ধেক দেহ; বাকিটুকু প্রাণে
দূরে দাঁড়ালে বহু দেনা পড়ে থাকে অনুভব করি
গোপনে চলে গেলে তাই পাওনাটুকু আজো বাকি
ভবঘুর
কিছু কথা শোনো ওহো রাত্রিরে বলি
সব বাজি রেখেছো ঝিনুকের খোলে তবু—
তবুও চুনকালি
ফরিয়াদ করি তব তুলে ধরো অঞ্জলি
ধনেপাতায় চোখপাতা; ডাটাশাকে টানা-টানি
সংশয় ঠোঁটে রাখোনি তবু বলো অশ্রু তো সহজ পানি
কিছু কথা বাকি থাকে; কিছু স্মৃতি পুড়ে মরে
দু-চোখে জল রেখে দূরে যাও-বহুদূরে
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লেবুঘ্রাণ; তুমি ছাড়া সবই দ্বারে
রাত্রি দেখো ভবঘুরে
এসো
স্পর্শে কোনো তৃপ্তি নেই জেনেছো আগে; তবে এসো কিছুদিন রোদে
শরীর পোড়া্ই, সুযোগ বোঝে অনুবাদ করি স্পর্শরীতি
এসো স্পর্শ ছাড়া অন্যভাবে নির্মাণ করি নিজেকে, আর কিছু রাত্রিকে
গিলে ফেলি চুম্বনে… তারায়-তারায় রঙধনু মেখে
এসো চন্দ্রিমারাত্রিকে তাড়া করে শিহরিত হই; স্পর্শ ছাড়া পুনরায় জাগিয়ে
তুলি গোপন ঢেউ— এসো নিঃশ্বাসের ভেতর ডুবে মরি; চুষে নেই মৌ…
মাছরাঙাঠোঁটে
তুমি নীতিপ্রবণ ছিলে, ফলে শ্রাবণ জলে
হয়েছো বিলীন… সবাই ভুল বুঝে
আমি ফিরে যেতে চাই, যেভাবে সূর্য্য ডুবে গেলে
চারিদিকে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে দৃশ্যপটে
তুমি নীতিপ্রবণ তাই জলে ঘুরে দাঁড়াও চক্রাকারে
মাছরাঙাঠোঁটে
পরবাসে এসে
এতো ধোঁয়া, এতো ধোঁয়াশা বিস্ময় আঁকা চারদিকে
তাই মুঠো ভরে রেখেছো জল ছিটিয়েছো চারপাশে
মানুষ মানুষের পাশে মিলেমিশে থাকে
নির্দ্বিধায় মিশে পড়ো তুমি তারারাত্রির ফাঁকে
রাত্রি ফুটে গেলে সময় গুনে রাখো তুমি
পাশাপাশি বসে, আমি গুনে রাখি স্মৃতিসহ
সাল-দিনক্ষণ পুরো বারোমাস
কখনো ভাবিনি, ভুলে যাবো আমি স্মৃতি-স্বপ্ন-কথা রাত্রি শেষে
এই ঘোরে আক্রান্ত সখি স্বপ্ন ঝুলে গেছে পরবাসে
তুলোমেঘ
ঘন কুয়াশায় ভোরের শরীর আর গ্লোবালস্মৃতি
তুমি কি দেখেছো কুয়াশা ছোঁয়া মাত্র জল; না ছুঁলে হিম!
চোখ মেলে দেখি জলের পাশে শুয়ে আছো
তুমি; মনে হয় চির চেনা সবুজ ঘাসে ঢাকা
মনোলোভা স্মৃতি আর শাদা আবরণ
বৃষ্টির গায়ে রিনঝিন শব্দ বাজে তাই দেখি শিশিরের জল নয়
সখি বরফের কণা। তুমি কি জানো? এই শীতের
দেশে বরফ গলে না তাই আর্দ্র আবহাওয়ায়; আমি যে বার বার
শুষ্ক হতে শিখেছি তুলোমেঘ দেখে
হাইহিল জুতোর তালে
মিশে আছো তুমি নির্জনে, একা নীরবে
কেউতো জড়াতে চায় না অপ্রয়োজনে
তাই বাতাসে ওড়ে শ্বাসকষ্ট, দুঃখ যত নীরবে পুড়ে
অপেক্ষা কেবলি দীর্ঘতর হয় নিস্তব্ধ রাতে
আজো মিশে আছো একা— শব্দে নিঃশব্দে
বাতাসে ওড়ে ঘন-কালোচুল, হাইহিল জুতোর তালে
স্বপ্ন দেখে ঝুলে গেছে চোখ— তবু যাইনি তোদের ভুলে
কত স্বপ্নে জাগে গোধূলি প্রভাত
গোপনে নাড়া দাও তুমি— গেঁথে নাও চুলে
গ্রীষ্মঋতু তাই বরফ গলে না, গাছে-গাছে সবুজ পাতা দোলে
পাখির কলতান নেই; নেই গন্ধ শাদা হলুদ ফুলে
ফেরা হয়নি বাড়ি মেঠুপথ ধরে, মাথা রাখিনি কতদিন হলো
মায়ের কোলে
গোপনে নাড়া দাও তুমি, তবু ছুঁতে পারিনি বৃষ্টির হাত
আমি গেঁথে নেবো জলে লাজুক চোখসহ আধশোয়া রাত
কত ব্যথা মিশে আছে দেহের ভাঁজে কত স্বপ্নে জাগে গোধূলি প্রভাত
ভালোলাগা নন্দিনী
যারা এসেছে তারা সদায় করেছে
কেউ কেউ টাটকা শাক-সবজি বয়স্ক হলে সুপারী-পান
এক বিকেলে এসেছো তুমি কখনো তো দেখিনি আগে
কিভাবে বিনে পয়সায় কিনে নিলে অবুঝ মন
প্রতিদিন কত মুখ দেখি, কত কথা বলি
কেউ তো ওভাবে মনে দাগ কাটেনি—
আমি তো বৃষ্টির দিকে মরিয়া ছুটছি
দু'হাতে রেখেছি এঁকে জলে ভেজা শ্রাবণ
আর তো দেখা হলো না আমাদের চুপি চুপি, কোনো দেখা হয়নি?
ডাইরি লিখি প্রতিদিন যত ভালোবাসা; ভালো থেকো তুমিও এক নন্দিনী
সবুজ ক্লোরোফিল
ঘুরতে-ঘুরতে যারা ঘর বাঁধেনি, স্বপ্ন তাদের রনাঞ্চল
তাদের দু’চোখে মিশেছে একপশলা রোদ এঁকে-বেঁকে
অশ্রুতে কারো মুখ ঢাকতে দেখিনি—
ফলে তুমি জলে খুলে ধরো ভেজাচুল
পাখির কলতান শুনে গাছে-গাছে জমছে কোলাহল
অবশেষে যারা ছুঁয়েছে অঞ্জলি; তাদের দু’হাতে ফুটেছে বৃষ্টিফুল
চূড়ার গভীরে ভাসছে জল-পাতা চন্দ্রমেঘ
এভাবে তুমিও হয়েছো সবুজ ক্লোরোফিল
প্রবাসিনী
নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করে না সখি
পরবাসে এসে— যত সব এড়িয়ে চলি
ভয়ার্ত বাসনা উড়ে বেড়ায় দু’চোখের ফাঁকে
লোভ হয়নি কিছুতেই শুধু অস্থিরতা বাড়ে
তুমি বৃষ্টি রূপে হয়েছো পরস্পরা রেখেছো গ্লানি
অন্যের ঘাড় চেপে তুমি; তুমিও হয়েছো প্রবাসিনী
হিমে পুড়ে চুল
তুমি উড়াও আউলা চুল, খুলে ধরো খোঁপা
চেয়ে দেখো স্পর্শ ছাড়া কিভাবে তেজে ওঠে নোনা লোনাজল
কিভাবে জলে-অনলে ফোটে তোমার ছায়ার নীরবতা
তুমি কি জানো তোমার আউলা চুলের ভেতর
কতটা হতভম্ব ছিলো দখিনা হাওয়া আর
রোদঘন মেঘের দল
ছুঁলে তুমিও হিম বরফ থেকো; তাই হিমে পুড়ে আমি কংকাল
ব্যবধান
ভাঙন দেখিনি শুধু বন্টন দেখেছি বারবার
ভাঙতে-ভাঙতে হ্রস্ব হলো সময়; এভাবেই
সীমিত অনুভূতিগুলো তাড়া করে হাবাবোবা হৃদয়
তাই বলে কী রোদপোড়া ছায়া স্থানচ্যুত হওয়া ভালো
তুমিই বলো—
গোধুলির পরে স্বপ্নকাঙ্ক্ষা পুড়ে খরস্রোত জলের তলে
মনে পড়ে কোন একদিন তুমিও হাত না বাড়িয়ে লুফে
নিলে আরো কিছু সময়; ব্যবধান রেখে দূরে দাঁড়ালে
নদীজল ফুটে অবিরাম
ঢেউয়ের থরে-থরে আঁকা নদীবাসস্মৃতি
তুমি জলে ভিজলে ব্যথা লাগে; দুঃখ হয় না প্রীতি
ঢেউয়ের টানে উঠে দাঁড়ায় মাতাল স্রোত নদীপাড়ে
শৈশব কেটেছে মাগুরা নদীর পাড়ে যৌবন এসে ঠেকেছে টেমসের পাড়ে
সময়ের ব্যবধান দু’রকম তাই নদীজলে দেইনি সাঁতার
তোমার মোহদৃষ্টিতে ফুটে ওঠে জল; ফুলে ওঠে বেদনা; হাড়
তুমি পাশে নেই বলে উষ্ণতা নেই, ঝরেনি শরীরের ঘাম
চারিদিকে স্তব্ধ ছায়া— পোড়ামনে নদীজল ফুটে অবিরাম
শীতনিদ্রা
কতটা ওজন জেনেছো তুমি বন্দরে এসে
কতটা শিখেছো ভালোবাসাবাসি অগুচরে
এলোমেলো ঘুরে
আমি তবে কেনো যবো দূরে; শীতনিদ্রা ফেলে
তুমি বরং ফিরে এসো এই পথ ধরে
দেখবো কার উষ্ণতা নিয়ে জেগেছে শীতনিদ্রা
নগর-বন্দরে
ভিনদেশে এসে
যেভাবে বেঁচে আছি ভিনদেশে
চারদেয়াল ঘিরে
ঠিক যেন জীবন চুরি করে বাঁচা
আর আসট্রেতে লুকিয়ে রাখা তৃপ্তির শেষ
অংশটুকু মুল্যহীন— বোবাতামাকপাতা
আমার অস্থি-মজ্জায় নির্মোহ টান ধরেছে; স্বপ্ন বাঁকা
তুমিও এই ভিনদেশে এসে হয়েছো কারো আদরের
ধ্রুববৃষ্টিসখা
বরফের তলে
ভাবনা মেলাবার আগে চলে গেলে তুমি
রাত পেরোলেই কালো হলো জানালার কাঁচ
তবু তুমি উড়িয়েছো স্বপ্ন জানালার ফাঁকে
দু’হাত তুলেছি মাঝরাতে, কিছুই জমা রাখিনি
নিদ্রাতাড়িত শিশিরের জলে
ভাবনা ভেঙে হারালো কই? তুমি কত দূরে হাত বাড়ালে
তুমি ফিরে এসো ঝড় তুলে গায়ে; দাঁড়াও স্পর্শের বদলে
জল আগলে রেখো বৃষ্টি; বরষারাত হলে বরফের তলে
সানগ্লাস
চোখ তুলে দেখো খোলা আকাশের নিচে
কেবলি রাত্রিভারাতুর তাই তো তোমার চোখে-মুখে স্বপ্ন জেগেছে
সকলেই প্রাপ্তির দানা খুঁজে আগে পিছে
আমি এতটুকু বুঝি না; যতটুকু বুঝে বোবা গাছে
শুধু চেয়ে দেখি তুমুল বৃষ্টিতে শ্রাবণের পোড়া দীর্ঘশ্বাস
হাইহিল জুতোর তালে দুলে ওঠে স্তন… দৃষ্টি কেবলি পরশ
বুকের ফাঁকে আটকানো থাকে রঙিন সানগ্লাস
ছায়া
সব পাখি ভর করে উড়ে যায় ডানায়
আমি তার ছায়া অনুসরণ করে হাঁটি
মু্ক্তি পাবার আশায়— যদি ছায়াও মুক্তি পায়
তুমি যদি মুক্ত হতে চাও ডানা চড়ে ওড়ো
চোখ ভরে দেখো; কতদূর উড়ে গেছে ছায়া,
বাঁধা পড়েছে কোন গাছের পাতায়
আমিতো জ্বলছি একা— সান্ত্বনা পেয়েছি
নিজের অর্জিত ছায়ায়
খয়েরি ডায়েরি থেকে নেয়া
চু’য়ে চু’য়ে নামছে দুঃখ, ঝরে পড়ছে গ্লানি বহু আগের
তাই ঝরে-পড়ার কাব্য কখন থেকে লিখতে শুরু করেছি আজ
আর ঠিক মনেও পড়ে না— তাই এখনও ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে
ঠোঁটের সমূহ লাজুক জল
এবার তবে খসে-পড়ার দৃশ্য দেখে ডাইরি লিখবো, হয়ত
অজান্তে শুরু হয়েছে তাই আমার পছন্দ এখন বৃষ্টিকে
ছুঁয়ে দেখা নয়, ভালো লাগে মেঘের রূপকথা। প্রতি রাতেই
একপৃষ্টা করে ডায়েরি লিখি… গেঁথে রাখি মনপোড়া কথা—
তাই তো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে তোমার খয়েরি
ডায়েরির পাতা
ঘুম
এই বুঝি স্তব্ধতা নিয়ে জেগেছে পৃথিবী
জেগেছো তুমি, জেগেছে ঘুমের শরীর
স্থির চোখের আড়াল যেন নিভে গেছে কেউ
নিবিড় কারা? জানা নেই তবে—
নিভে যেতে দেখেছি কতশত শব্দহীন আকাশ
নিদ্রাপীঠে ঘুমের পৃথিবী তবে আমার, একার
কেননা আমি হাঁটতে হাঁটতে ঘুমোতে জানি
যেমন করে জেগে থাকো তুমি, ঘুমের মাঝে
হয়ে যাও একা, একাকার
তারপর থেকে ______________ কুড়নো জঞ্জাল, পুরনো ঘরের
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।