wanna know and show everything I can......
সেই ২০০৪ সালের শেষের দিকে ঢাকায় আসা। সেইবার প্রথম রাঙ্গামাটি ছেড়ে এত দূরে আসা। সবকিছু অচেনা। বাসা থেকে বের হলে ভয় কাজ করতো। যদি খুজে না পায় বাসাটি!!!! যদি রাস্তা হারিয়ে পেলি।
তখন আমি ঢাকায় মামাদের বাসায় মিরপুরে থাকতাম। পাহাড়ের সবুজ আর দেখা হয়না। ইচ্ছামতো লেকের পানিতে গোসল করা হয়না। মায়ের হাতে রান্না করা লোকজ খাবার খাওয়া হয়না। গল্প করার মতো লোক খুজে পাওয়া যায়না।
সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। শুধু বাড়িতে যেতে মন চাইতো। কিন্তু যে কাজের জন্য এসেছি সেই কাজটা না করে কেমন করে যায়। তাই থেকে গেলাম। প্রথম থেকে জেনারেল সাবজেক্টে পড়ার আগ্রহ ছিলো না।
তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোন চেষ্টা করিনি। স্বপ্ন ছিলো বুয়েটে পড়ার । কিন্তু চান্স হয়নাই। আর মেডিকেল? আমার পক্ষে সম্ভব না। মেডিকেলে যে কষ্ট করতে হয় তা আমাকে দিয়ে করানো হলে আমার পাগল হ্ওয়া ছাড়া উপায় নেই।
তাই পরবর্তী চয়েস কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যেই ভাবা সেই কাজ। ফরম কিনে নিয়ে আসলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৭ ই ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা। সেদিন বিকালে রেজাল্ট পাবলিশড হয়।
কিন্তু এতো ভালো পরীক্ষা দিয়েও মেরিট ওয়েটিং কোন জায়গায় আমার রোল নেই। তাই হতাশ হয়ে ফিরে গেলাম। কিছুই ভালো লাগছিলো না। কারন অনেক আশা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ঢাকায় থাকারো খুব ইচ্ছা ছিলো।
তাছাড়া সাবজেক্টাও খুব পছন্দের ছিলো। কারন এই বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার খুব ইচ্ছা। তারপর অপেক্ষা করতে থাকলাম আদিবাসী কোটার জন্য। কিন্তু রেজাল্ট হয় না। যোগাযোগ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন সঠিক তথ্য দিতে পারেনা।
কালকে কালকে করে অনেক কালক্ষেপন করা হয়। এদিকে এর মাঝে সকল ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ওরিয়েন্টেশনের তারিখও দেওয়া হয়। ৪ ঠা জানুয়ারি ২০০৫। তাই সকল আশা ছেড়ে দিয়ে জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হলো।
১লা জানুয়ারি, ২০০৫ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খনি সম্পদ বিদ্যা, কম্পি্উটার সাইন্স ও মাইক্রোবায়োলজি(সম্ভবত) এই তিন বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রওনা দিই। খুব সকালবেলায় রওয়ানা দিই। তার আগেরদিন যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু যাওয়া হয়নি। কারন তখন রা.বি. একটু উত্তপ্ত ছিল।
তাই সকালে গিয়ে বিকালে পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো। তারপরদিন রাত্রে এলো বাড়ি থেকে খুশির সংবাদ। আমার কোটার রেজাল্ট ডাকযোগে বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়ছে। খবরটা দুপুরে পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তখন কারো তেমন মোবাইল ছিলো না।
এজন্য রাত্রে ঢাকায় না এসে তারপরদিন ঢাকায় আসি। ঢাকায় আসার পর জানতে পারি এইচ এস সি এর সনদপত্র চিঠিতে চাওয়া হয়েছে। আমি তখন জানতাম না এই সনদপত্রটি পরে দিলেও হবে। তাই ঢাকায় ৩ তারিখ এসে আবার রাতে রাঙ্গামাটিতে গেলাম। সকাল ৭ টার দিকে বাসায় পৌঁছলাম।
তারপর মূখে অল্প খাবার মুখে দিয়ে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গেলাম স্বাক্ষরসহ ফরম নিয়ে আসতে যেটা দেখিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থকে সনদ নিতে হবে। কিন্তু তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। তাই উনার বাসায় গেলাম। কিন্তু বাসায়ও উনাকে পাওয়া গেলো না। উনি তখন পেগোডায় ধর্ম কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
সেখানে গিয়ে উনাকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। তখন ঘড়িতে বাজে সকাল ১০ টার মতো। এরপর সোজা বাসায় না গিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে বাসে উটলাম। তখন বাজে প্রায় সকাল সাড়ে দশটা। চট্টগ্রামে পৌঁছলাম দুপুর ২ টার দিকে।
সোজা চলে গেলাম ব্যাংকে ব্যাংক ড্রাফট করতে। কিন্তু সেখানে কোন ব্যাংকের কর্মকর্তা কাজে ছিলেন না। সবাই ব্রেক আওয়ারে ছিলো। তাই কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো। প্রায় আড়াইটার দিকে ব্যাংড্রাফট করে শিক্ষা বোর্ডে গেলাম।
এবার শুরু হলো বাংলাদেশর দূর্নীতি সম্পর্কে ধারানা লাভ। ফরম ফিল্ড আপ ও জমা দেওয়ার পর বলা হয় সেদিন সনদ দেওয়া উনাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন আমার মাথায় পড়লো বাজ। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার এক চাচাতো বড় ভাই। তখন দুইজনে খুব চিন্তাই পড়ে গেলাম।
কারন তারপরের দিন আমার ভর্তি। এভাবে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করলাম এই কর্মকর্তার কাছে। শেষে মিললো বাংলাদেশের এক খুব ভদ্র মাথা মোটা লোকের। এমনভাবে কথা বললেন দেখে মনে হলো খুব ভদ্র। আর খুব আপন।
কিন্তু এরপর তিনি যেভাবে অতিরিক্ত টাকা চাইলেন তাতে আমি হতবাক না হয়ে পারলাম না। কমাতে চাইলাম পরিমানটা কিন্তু কাজ হলো। কিন্তু আমাদের দরকারী হওয়ার কারনে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিতে হলো। তখন ঘড়িতে ৪ টা বেজে গেছে। যাক যেভাবেই হোক কাজটা হয়ে গেলো।
এখন ঢাকায় ফিরার পালা। কিন্তু ঐ সময়ে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিলে খুব রাত্রিবেলায় ঢকায় পৌঁছবো। তাই তখন রওয়ানা না দিয়ে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। বড় ভাই আমাকে বাস কাউন্টারে রেখে রাঙ্গামাটিতে ফিরে গেলেন। কারনে ৬ টা সাড়ে ৬ টার পরে রাঙ্গামাটি যাওয়ার বাস পাওয়া যায়না।
আর আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় রাত পৌনে ১২ টার দিকে বাসে উঠলাম। খুব ভোর বেলায় ঢাকায় পৌঁছলাম। বাসায় গিয়ে হাতমূখ ধূঁয়ে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপরে এলজিইডিতে গেলাম আমার এক চাচার কাছ থেকে ভর্তির টাকা আনতে।
কারন বাড়িতে তখন বাবার কোন টাকা ছিলো না। তখন ঘড়িতে বাজে ১১ টা। এলজিইডি অফিস আর শেকৃবি কাছাকাছি হওয়ার কারনে সেখান থেকে শেকৃবি এর শেরেবাংলা হলে গেলাম কয়েকজন আদিবাসী ছত্রের কাছে। একজন বড়ভাই আমার সঙ্গে গেলেন। গিয়ে ডাক্টারকে পাওয়া গেলো না।
মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তিনি চ্যাম্বারে আসলেন। মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ভর্তি হওয়ার জন্য কৃষি অনুষদের ডীন অফিসে গেলাম। সেখানে ভর্তি কমিটির কয়েকজন ছিলেন। ডীনের কাছে কাগজপত্র জমা দিলাম।
তিনি ভর্তির অনুমতি দিলেন। তারপর সেখান থেকে গেলাম প্রক্টর অফিসে। প্রক্টর স্যার ামাকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে আমার সীট বরাদ্দ দিলেন। এরপর একাউন্ট অফিসে গেলাম ভর্তির টাকা জমা দিতে। ভর্তির টাকা জমা দেওয়ার পর প্রোভোস্ট স্যারের জন্য অপেক্ষা।
প্রায় অনেক্ষন অপেক্ষার পর উনাকে পাওয়া গেলো। হলের ফরমে প্রোভোস্টের স্বাক্ষর পাওয়ার পর হল অফিসে গেলাম ফরম জমা দিতে। সেখানে এক বছরের হলের টাকা আর জামানত জমা দিয়ে হলে থাকার বৈধতা পেলাম। এই হলো আমার শেকৃবিতে ভর্তি হওয়ার সংগ্রাম।
আমি তারপর দিন শেরেবাংলা হলে মিহির দাদার সাথে ২১৫ নাম্বার রুমে উঠলাম।
আমি ভর্তি হয়েছি ৫ ই জানুয়ারি। কিন্তু ওরিয়েন্টেশন হয়ে গেছে ৪ ঠা জানুয়ারি,২০০৫। শুনে মনটা খুব খারাপ লাগলো। মনে মনে ভাবলাম এই হলো ডিসক্রিমিনেশন। সেই রেজাল্ট প্রকাশ থেকে শুরু।
আজও শেষ হলোনা। হল নেওয়ার সময়ও অনেক রিকুয়েস্ট করেছি শেরেবাংলা হলে সীট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। কারন এতে আমি শেরেবাংলা হলে বড়ভাইদের সাথে ডাবলিং করতে পারতাম। থাকতে পারতাম শেরেবাংলা হলে বৈধ হিসেবে। কিন্তু দেওয়া হয়নি।
তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো। নেতাদের কাছে অনেক ঘুরাঘুরি করার পরেও সীট পাওয়া গেলোনা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের গনরুমেও কোন সীট পাওয়া গেলো না। তাই আমি শেরেবাংলা হলে অবৈধভাবে বড়ভাইদের সাথে থাকতে শুরু করলাম। পরে স্যারদের সমস্যার কথা বলে আমার সীট শেরেবাংলা হলে বদলি করে নিয়ে আসলাম।
এই হলো আমার শেকৃবিতে ভর্তির সময় ঘটে যাওয়া কাহিনী....(ডায়েরির পাতা থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে নেওয়া)
পরবর্তীতে লিখবো শেকৃবিতে ৫ বছর(৯ মাস লস্ট সহ) এবং শেকৃবিতে শেষ ক্লাস.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।