এর আগের পর্বে প্লে গ্রুপ ক্লাসের বাচ্চাদের কথা লিখেছিলাম। আজ স্কুলের সিনিয়র সিটিজেন অর্থাৎ কেজি থেকে স্ট্যান্ডার্ড সিক্স এর বাচ্চাদের কথা বলছি। প্লে গ্রুপ এর ছুটির পর আমাকে এদের ক্লাস নিতে হয়।
স্কুলে নতুন কোন মিস এলেই এই বাচ্চাগুলোর মধ্যে কেমন যেন সাড়া পরে যায়। আমার বেলাতেও এর ব্যাতিক্রম হলনা।
ক্লাসে গেলেই প্রথম যে প্রশ্নটি তারা করবে তা হল-" মিস আর ইউ ম্যারিড?" প্রথম প্রথম একটু বিব্রত হলেও পরে সামলে নিলাম। বুঝলাম ২১ সেন্ঞ্চুরির এই ডিজিটাল বাচ্চারা আমার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট।
যাই হোক যেহেতু নতুন জব তাই আমিও ওদের মন জয় করতে উঠে পড়ে লাগলাম। হাতিয়ার হিসেবে এবার চকোলেটের সাথে যুক্ত হল মজার মজার গল্প। ফলাফল হাতেনাতে।
প্রতিদিন আমার ব্যাগ ভরে উঠতে লাগল ওদের বানানো কার্ড আর স্টিকারে। আর কার্ডের ভিতরের সেই আবেগীয় ভাষার কথা আর নাইবা বল্লাম। একদিন স্ট্যান্ডার্ড টু ক্লাসে কমপোজিসন লিখতে দিয়েছি , বিষয় 'মাই স্কুল'। দেখি প্রত্যেকেই স্কুল সম্পর্কে লিখতে যেয়ে স্কুল কম ফেভারিট টিচার সম্পর্কেই বেশি লিখে ফেলেছে। বলাই বাহুল্য সেই ফেভারিট টিচারের জায়গায় নিজের নাম দেখতে পেয়ে আমি যারপরনাই আনন্দিত।
যদিও কমপোজিসনে অপ্রাসঙ্গিক লেখার কারণে মৃদু বকা দিলাম তাদের। পরের সপ্তাহে আবার কমপোজিসন। এবার সাবজেক্ট ' জু'। যথারীতি ওরা কপি জমা দিল। ওমা একি।
চার পাঁচজন স্টুডেন্ট দেখি জু এর ভিতরেও আমাকে ঢুকিয়েছে। তবে কপাল ভাল যে খাঁচার ভেতরে না ঢুকিয়ে বাইরেই রেখেছে। বিষয়বস্ত এরকম যে জু তে গিয়ে তাদের আমার সাথে দেখা হয়েছে। বাঁকি অংশে আমার সংগে তারা আর কোথায় কোথায় বেড়ালো তার বর্ণনা। এবার বকাটা একটু জোড়েসোড়েই দিলাম।
এর কিছুদিন পর একই ক্লাসের বাচ্চাদের গেমস ক্লাসে মাঠে নিয়ে এসেছি। সবাই ছুটোছুটি করছে। হঠাৎ দেখি এক পিচ্চি ছেলে এসে তার ফোকলা দাঁত বের করে ( আমি গুনে দেখেছি তিনটা দাঁত মিসিং) একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে বলছে "মিস উইল ইউ কিস মি?" আমি হেসে ওর চুলটা একটু নেড়ে দিতেই আর একটি ছেলে লাফাতে লাফাতে এসে ওকে দেখিয়ে আমাকে বল্ল," মিস ডু ইউ নো হি টোলড মি দ্যাট হি ওয়ান্টস টু ম্যারি ইউ"। আমি হতভম্ব হয়ে আমার ফোকলা পাণিপ্রার্থীটির দিকে (ও ততক্ষণে তাঁর বন্ধুর এহেন বিশ্বাসঘাতকতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওর পিঠে দুমদুম লাগানো শুরু করেছে) তাকিয়ে কি বলব না বুঝতে পেরে বলে উঠলাম " ও কে, ইওর টাইম ইজ ওভার। লেটস গো টু দা ক্লাসরুম।
"
এবার কেজি ক্লাসের একটি বিছ্ছু। বয়স ৫ কি ৬। একদিন গুটি গুটি পায়ে আমার কাছে এসে বলে
মিস আমি না রাতে একতুও ঘুমাতে পালিনি।
কেন বাবা?
কারণ রাতে আমাল আব্বু আল আম্মু না.................. । থাক ৫+ এর মুখ দিয়ে ১৮+কথা বলিয়ে ব্যান হতে চাচ্ছিনা।
শুধু এটুকুই বলতে পারি ওর কথা শুনে আমার কর্ণযুগল যে রক্তিম বর্ণ ধারন করেছিল তা পূর্বাবস্হায় ফিরে যেতে পুরো এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।