আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিঞ্চিত ভয়ের গল্প...



আচ্ছা আপনারা ভূত দেখেছেন কেউ? প্রশ্ন শুনে কি অবাক হলেন? এই ধরনের প্রশ্ন হয়ত মানায় ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে এমন কোন রাতে। কিন্তু ঢাকা শহরে ইট কাঠের খাচার ভিতর, ইলেকট্রিসিটি, যানবাহনের বিকট শব্দ সম্বলিত, ধোঁয়া, দূষনের নগরীতে ভূতের থাকার কি জো আছে? ভূতকে মানায় সম্ভবত নির্জন কোন গ্রামাঞ্চলে, গাছপালা, বাঁশবাগান, পুকুর বা ঘের আছে এমন কোন জায়গায়... ক্লাস 10 এ থাকতে একবার ভয় পেয়েছিলাম বেশ। তখন পড়তাম সেন্ট পলস স্কুল, মোংলাতে। থাকতাম হোস্টেলে। একদম সুন্দরবন ঘেষা না হলেও আমাদের হোস্টেল আর স্কুলের ছাদে উঠলে সুন্দরবনের মোহনা দেখা যেত বেশ ভালই।

প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্য কি জিনিস তা বুঝতে হলে এ এলাকায় আসা উচিত... অন্যান্য মিশনারি স্কুলের মত আমাদের Campus টাও ছিল অনেক বড়। আমাদের হোস্টেলের ছেলেদের স্কুল এবং হোস্টেল দুই জায়গাতেই কাজ করতে হত। পরিষ্কার-পরিছন্নতা বলুন আর সৌন্দর্য বর্ধন সবই আমাদের দেখতে হত। যখনকার কথা বলছি তখন আমার দায়িত্ব ছিল ‘ডাইনিং’ রুম এ। আমরা ৪ জন ছিলাম ঐ দায়িত্বে।

কাজটা ছিল ভাত, তরকারী ছেলেদের মধ্যে সার্ভ করা। সবার খাওয়া শেষ হলে আমরা ৪ জন খেতাম। বলে রাখি আমাদের ডাইনিং রুমটা ছিল বিশাল, ১৫০ জন ছেলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে পারত সেখানে। আর এটি ছিল আমাদের বিশাল কম্পাউন্ডের একদম শেষ প্রান্তে, পিছনে ছিল জংগলে ঘেরা বিশাল এক ঘের, মাছ চাষ করা হত ওখানে। পারত পক্ষে খুব দরকার না হলে ও পথ আমরা মাড়াতাম না... সাপের উপদ্রবের কারনে।

নভেম্বরের শেষের দিকের কথা বলছি। রাতে সব ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে ডাইনিং রুমের অন্যান্য প্রান্তের বাল্ব গুলো নিভিয়ে শুধু আমাদের মাথার উপরের বাল্বটি জ্বালিয়ে আমরা ৪ জন খেতে বসলাম। জানালার দিকে মুখ করে খাচ্ছিলাম আমি আর রিপন, আর আমাদের দিকে মুখ করে খাচ্ছিল আন্তন আর ওয়াসিংটন। খাবার মাঝামঝি পর্যায়ে এসে হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম, যে জানালার দিকে মুখ করে খাচ্ছিলাম তার একটা মাত্র কবাট বেশ জোড়ে ঝাকুনি খেল... ২-৩ বার... আর কোথাও কোন নড়াচড়া নেই। শীতের সময় বাতাসও নেই বললেই চলে... আমার তো অবস্থা খারাপ এইটা দেখেই... কিছুই দেখা যায়না বাইরে, ঘুটঘুটে অন্ধকার।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিপনের দিকে তাকালাম আমি... সেও ব্যপারটা খেয়াল করেছে। আর তখনি রিপন বলল, “মনে হইল একটা হাত জানালাটা ঠেলা দিল... কিন্তু মাঝখানের আংগুলটা সম্পূর্ণ নাই”। একথা শোনার পর আমারতো কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল। আমাদের ভিতর সবচেয়ে সাহসী আন্তন লাফিয়ে উঠে বলল, “দাড়া কেডা আছিস পিছনে... পাইলে কি করি দেখিস...” বলেই সে ডাইনিং রুমের পিছনের দিকে চলে গেল, পিছনে পিছনে গেল ওয়াসিংটন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম একি জায়গায় ... ২মিনিট পর দুজনেই ফিরে এল।

আন্তন, রিপনকে জিজ্ঞাসা করল, “কি দেখছিস ঠিক করে বলত... রিপন বলল, একটা হাত দেখলাম জানলাটাকে ঠেলা দিচ্ছে...” আন্তন বলল, “ওরে বাবা তুই দেখছিস শুধু হাত, আবার নাকি আংগুল নাই এরপর দেখবি পুরো হাত তারপর কাঁচের চুরি, শেষে দেখবি শাড়ী পরা কোন এক মহিলারে... আমি বাবা এইখানে আর নাই”। বলেই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী আন্তন অনেকটা ভো দৌড় দিল বাস্কেট বল কোর্টের দিকে, যেখানে অন্যান্য ছেলেরা রাতের খাওয়া পরবর্তী ‘break’ এ ছিল। আমরা তিনজন কোনমতে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে আন্তন যেদিকে গেছে সেদিকে পা বাড়ালাম। সারাক্ষন মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ ‘ঘারটা’ ধরে ঝাকুনি না দেয়... বাস্কেট বল কোর্টে অনেক ছেলেদের দেখে সাহস কিছুটা বাড়ল, স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিও অনেকখানি ফিরে পেলাম। রিপনকে বললাম, “আমাদের জ্যেতির্ময়ের কিন্তু বেশ সাহস আর ওর কিন্তু মাঝের একটা আংগুল নেই”... রিপন দেখলাম লাফিয়ে উঠল... বলল, “তাইতো শয়তানটাকে ধরি”।

বেশ রাগ আর উৎসাহ নিয়ে ক্লাস সেভেন এ পড়া জ্যেতির্ময়কে পাকড়াও করলাম। বললাম, “তোরে যদি পাইতাম আজকে ডাইনিং রুমের পিছনে, গাইড়াই ফালাইতাম ফাজিল”। মুখ কাচুমাচু করে ও বলল, “দাদা ভুল হইছে এইরকম আর করব না”... বলুন এরকম সরল স্বীকারোক্তির পর আর কিছু কি বলা যায়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।