বেশ ক’বছর হয় একটি ছোটখাট ভুরি স্থূলকায় ভবিষ্যতের জানান দিতেছে। আমি ভাই খাঁটি বঙ্গ দেশীয় লোক, তাই অতসব ব্যায়াম-ট্যায়ামের ধার না ধারিয়াই চলিতেছিলাম। কিন্তু ভুরিটি আমার কোনরূপ অনুমতির তোয়াক্কা না করিয়া ধীরে ধীরে তাহার কলেবর বৃদ্ধি করিতেছে।
আধুনিক নানান যন্ত্রপাতি এখন বাসার পড়ার টেবিলে স্থান করিয়া লইয়াছে (বেচারা টেবিলটি তাহার পিতৃদত্ত নামটি পর্যন্ত খোয়াইয়াছে যন্ত্রটির কারণে) এবং সেই সুবাদে তড়িৎ ডাক মারফত নানান তথ্য-উপাত্ত বিবিধ সময়ে পাইয়া থাকি। তাহা ছাড়া গুগুল নামক একজন জ্ঞানীমান তো আছেনই যিনি সম্ভব-অসম্ভন সকল বিষয়ে তাহার জ্ঞান ভাণ্ডার উপচাইয়া দিতে দ্বিধা করেন না।
ইত্যাকার সম্ভব-অসম্ভন সকল পক্ষ হইতে কোন এক মহেন্দ্রক্ষণে বিএমআই নামক একটি স্পর্শবিহীন সেবা যন্ত্র প্রাপ্ত হই। উহা আমাকে জানান আমি নাকি অতিরিক্ত ওজন বহন করিতেছি!
লে বাবা! যেখানে আমি একখানা ব্যাক-প্যাকে সর্বদা কিছু কাগজ-পত্রাদি, খান দুই কলম এবং একখানা সহজে বহনযোগ্য তথ্য সংরক্ষণ যন্ত্র ব্যতীত অন্য কিছু বহন করি না, বিএমআই বলিতেছে সেই আমি সপ্ত-অষ্ট কেজি অতিরিক্ত ওজন বহন করিতেছি!
যাই হোক, এভাবে চলা দায়। তাহা ছাড়া গিন্নীও আমার উপর অখুশি, কারণ আমি নাকি অতি ছন্নছাড়া এবং আমার ক্রিয়া-কর্মে কোনরূপ নিয়মানুবর্তিতার বিন্দুমাত্র আভাস পাওয়া যায় না (তিনি অবশ্য কোনরূপ আভাস-ইঙ্গিত ছাড়াই আমাকে ইহা জানাইয়া দিয়াছেন)। উপরন্তু, গিন্নীকে তাহার খাদ্য-বিশারদ জানাইয়াছেন যে তিনিও অতিরিক্ত ওজন বহন করিতেছেন! যেহেতু গিন্নী একজন নিয়মানুবর্তি ব্যক্তি, তিনি তাহার কর্মক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ব্যায়ামাদি আরম্ভ করিলেন। শুধু তাহাই নহে, গিন্নী যে নিয়ম করিয়া উক্ত বিশেষজ্ঞের সহিত গূঢ় আলাপ-আলোচনা চালাইয়া যাইতেছিলেন, তাহা নিয়মিতই টের পাইতে লাগিলাম।
আমি ইত্যবসরে বৈকালে হালকা দৌড় শুরু করিয়াছিলাম। একদিন গিন্নী আসিয়া কহিলেন আমি যে জুতোজোড়া দৌড়ের জন্য ব্যবহার করিতেছি তাহা ইহার উপযুক্ত নহে; ইহারা দৌড়াইবার সময় পদযুগলের যথেষ্ট যত্ন নিতেছে না। আমি পারিলে আকাশ হইতে পড়িয়া তাহাকে দমাইতে চেষ্টা করিলাম। কিন্তু কে শোনে পতীর বচন? যেখানে বিশেষজ্ঞ মশাই নিজমুখে পতীর বিপরীত বাণী দিয়াছেন! এবং এই সুবাদে তিনিও তাহার জন্য একজোড়া নতুন তথাকথিত দৌড় জুতোর আবদার জানাইয়া দিলেন।
আমিও কম যাই না, কহিলাম যাহা আছে তাহাতেই চলিবে।
পুরাকালের লোকদিগের যদি এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই চলিয়া থাকে, তবে আমাদিগের এই সমস্ত জুতোতেই চলিবে। আমি আরও কহিলাম, সৈন্য-সামন্তেরা যদি চর্ম নির্মিত শক্ত বুট পড়িয়া দৌড়াইতে পারে, তাহা হইলে আমরা অমন কোমল জুতো পড়িয়া দৌড়াইতে পারিব না কেন? তোমার বিশেষজ্ঞকে যাইয়া তাহাদিগকে উপদেশ বিতরণ করিতে বল। এই বলিয়া সেই দিনের মত আলাপের যবনিকা টানিলাম।
কিন্তু আমি যবনিকা টানিলেই তো হইবে না, গিন্নী স্বয়ং যেখানে যমের ভূমিকায় আছেন। অন্যদিন রাতের আহারে বসিয়াছি; গিন্নী তাহার লব্ধ জ্ঞান ভাণ্ডার লইয়া বসিলেন।
আমি প্রমাদ গুনিবার অবকাশ অবধি পাইলাম না। কহিলেন, তোমার আহারাদি সঠিক হইতেছে না! তুমি অধিক শর্করা গ্রহণ করিতেছ, তোমার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করিতে হইবে। মনে মনে কহি, কি এক সমস্যায় পড়িলাম রে বাবা। যাই হোক ইহার তর্জমা করিয়া কহিলাম, তুমি কি আমাকে একটু শান্তিতে আহার সমাপন করিতে দিবে না? পৃথিবীসুদ্ধ লোক শর্করা খাইয়া জীবন বাচাইতেছে; ইহা শক্তির আধার। গিন্নী তাহার রেডিও চালাইয়া যাইতে লাগিলেন; বুঝিলাম আমার বক্তব্য তাহার কর্ণগোচর করিবার বড়ই আলস্য।
আহারান্তে ঘরে আসিয়া বিছানায় শরীর এলাইয়া নিদ্রা যাইব চিন্তা করিলাম। ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখি গিন্নী গুগুল মামার নিকট হইতে স্বাস্থ্য বিষয়ক পাঠ লইতেছেন। গুগুল মামাও গিন্নীকে সেইরূপ জ্ঞান সরবরাহ করিতেছেন, যাহার মর্মার্থ হইল বাজারে যাইয়া মাছ এবং গোশত বিক্রেতাকে প্রশ্ন করিয়া জানিতে হইবে উহারা যে প্রোটিন বিক্রয় করিতেছেন, সেই প্রোটিনের উৎস অর্থাৎ মাছ এবং গরু/ছাগল/মুরগি ইত্যাদি বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আসিবার পূর্বে যথেষ্ট ব্যায়ামবীর ছিল কিনা!!! তাহারা যদি যথেষ্ট স্বাস্থ্য-সচেতন না হইয়া থাকে তবে আমরা আমাদিগকে নিদারুন ঝুকির মুখে ফেলিতেছি। আমি না দেখার ভান করিয়া সুখে নিদ্রা গেলুম।
কি চমকাইয়া গেলেন? যাহারা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারিতেছেন না, তাহারা এইখানে দেখিতে পারেনঃ
এবং স্বাস্থ্য-সচেতন হইলে অবশ্যই স্বাস্থ্য-সচেতন গরু/ছাগল/মুরগি দেখিয়া গোশত-মাছ ক্রয় করিবেন।
অন্যথায় আপনার বিপদের দায় মূর্খ পশু-পাখি-মাছ লইতে পারিবে না।
সিঙ্গাপুর
মার্চ ১৯, ২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।