তিনি আমাদের আশার ফুল, তবে বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে তিনি বেশি পারদর্শী বলেই কিনা, বাংলা ফুলের চেয়ে ইংরেজি ফুল হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাবৎ বাংলাদেশীর নয়নের মণি হয়ে ছিলেন অনেকদিনই, কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে গিয়েছিল এক প্রবাদ--"আশরাফুল ভাল খেললে বাংলাদেশ জেতে, নইলে না। " এমন এক নক্ষত্র পেয়ে আমাদের আশার বেলুন ফুলে চাঁদের দিকেই রওনা দিয়েছিল, এবার বোধহয় ব্র্যাডম্যানের ভাত ফুরালো।
তো সেই "ফূল" আমাদের নিয়মিতই "ফূল" করতে থাকেন, আমরা হাভাতে বাঙ্গালী হাঁ করে তাকিয়ে থাকি তার দিকে, তিনি একের পর এক রসগোল্লা খেয়ে আমাদের কৃতার্থ করেন। নেহাৎই দুর্ঘটনাবশতঃ মাঝে মাঝে ভাল খেলে ফেলেন, সেটা ভাঙিয়ে চলে কয়েক মাস, এর মাঝে আমরা বেকুবরা আবারো আশাবাদী হই আর খাঁটি চামচাদের মত সেই আশার বেলুনে হাওয়া দিয়েযায় উট-পাল শুভ্রের মত হাম্বাদিককূল।
আর রাজনৈতিক নেতাদের মতই সেই আশার বেলুন প্রতিনিয়তই ফুটো করে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে মোটা পশ্চাদ্দেশ দুলিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
তবে কিনা, আমরা এমনই আশাবাদী আর ভুলোমনা জাতি, প্রমাণিত হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিবাজদেরও ফুলের মালা দিয়ে জেল থেকে বের করে এনে সংসদে বসিয়ে বাঁশ খাওয়ার জন্য নিজের পশ্চাদ্দেশ পেতে দিই, আর আশরাফুল সেটা এতদিনে বুঝে গেছেন। কাজেই "সবাই তো খারাপ খেলে আর আমরা খেললেই দোষ" এই টাইপ বড় বড় বুলি ঝেড়েও নির্লজ্জের মতই দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করে যান, আর নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এই সিরিজে জঘন্য ব্যর্থতার পরেও তিনি এই ডায়ালগটা ঝেড়ে দেবেন--" আমি খারাপ খেলছি তা বলবো না, শুধু ভাগ্যটা পক্ষে যাচ্ছে না বলে ব্যাটে বল লাগছে না ঠিকমত। "
তো, ব্যাটে তার বল আসলে ঠিকমত লেগেছিল কবে? কবে কোন কালে ১টা ১০০ রান বা ১টা ৯৪ বা ১টা ১৫৮ করেছিল, সেটা ভাঙ্গিয়ে আসলে কতদিন খাওয়া যায়? অভিজ্ঞতার কথা বলবো? ৫০টা টেস্ট এবং ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরে এই কথা বললে জুতাপেটা করা উচিত যে কাউকে, পৃথিবীর বেশির ভাগ ভালো ব্যাটসম্যানই ৫০ টা টেস্ট খেলার সুযোগ পায় না। আশারাফুলের টেস্ট অ্যাভারেজ ২৩, ওয়ানডে অ্যাভারেজও তাই।
পৃথিবীর একটা দেশের মাঝারি মানের একটা ব্যাটসম্যানের অ্যাভারেজও এর চেয়ে ভাল থাকে। অতদূর যাই কেন, বুলবুল বা আকরামের অ্যাভারেজও আশরাফুলের চেয়ে ভাল ছিল, আতাহারের টাও। যে সুমনকে হাবা হাবা বলে প্রতিদিন গালি দিই, তার অ্যাভারেজও কিন্তু ৩৩। আশরাফুল তাহলে ঠিক কোন হিসাবে দারুণ ব্যাটসম্যান?
কেউ বলতে পারেন, ম্যাচ জেতানোতে। বেশ তো, কষ্ট করে ক্রিকইনফোতে রেকর্ড ঘেঁটে দেখুন, যে ২-৩ টা ম্যাচ আশরাফুল ভাল করায় বাংলাদেশ জিতেছে, তারচেয়ে অনেক বেশি ম্যাচে দরকারের সময় গাধাটা ২০-২৫ রান করলেও বাংলাদেশ জিততো।
না, একদম রসিকতা নয়, রেকর্ডবই মিথ্যা বলে না, আর খেলা তো নিজের চোখেই দেখেছি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চূড়ান্ত ফর্মে থাকা পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিল, সেটায় কিন্তু আশরাফুল ছিল না, সেক্ষেত্রে আমাদের সুজন চাচ্চুও আজীবন তাকে দলে রাখার দাবী তুলতেই পারেন। দাবী তুলতে পারেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট অথবা মোহাম্মদ রফিকও, আমার দেখা মতে আশরাফুলের চেয়ে বেশি ম্যাচ এরাই জিতিয়েছে।
ক্রিকেট নিষ্ঠুর খেলা। এখানে দলের দিকে নিবেদিত থাকা আর দলের জন্য কতটা অবদান রাখা গেল সেটাই আসল।
রিচি রিচার্ডসন, মার্ক ওয়াহ, মার্ক টেইলর, স্টিভ ওয়াহ, ম্যাথু হেইডেন, রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভা, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসের মত গ্রেটরাও ফর্মে না থাকলে বাদ পড়েছেন, পারফর্ম্যান্স দিয়ে ফিরেও এসেছেন। পারফর্ম্যান্স না দেখে সেই কবেকার কোন রান বা একটা শটকে আঁকড়ে ধরে রাখলে, বা অহেতুক আবেগ দিয়ে বিবেচনা করলে ইহজীবনেও বাংলাদেশের ক্রিকেট উঠবে না। খেলায় কমিটমেন্ট বলতে একটা শব্দ আছে, আশরাফুলের খেলায় সেটা কোনদিনই চোখে পড়েনা। ১৫ কোটি মানুষ তার দিকে চেয়ে থাকে, সেটা কোনদিনই তার মাথায় ঢুকেছে বলেও মনে হয়নি। সমর্থকদের কলার ধরে চড় দেয়া যত সোজা, বাউন্সার সামলানো অতটা সোজা না।
এই পুরো সিরিজে তার রান ৩, ৬, ১২, ৩। তার চেয়েও বড় কথা, আউট হবার যে ধরণ, সেই প্রথম দিনের মতই বাইরের বলে খোঁচা নইলে হাস্যকর কোন শট, যেকোন দেশে হলে শুধু এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলার জন্যই গাধাটা বাদ পড়তো। সমস্যা হলো, দেশে বিকল্প নেই, আইসিএলে যাবার জন্য অন্যদের উস্কানি দিয়ে বেশ ভালই রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলেছে ব্যাটা। তবে সবকিছুরই সীমা আছে, এবার অন্তত একটা লাথি দিয়ে গর্দভটাকে বাইরে ফেলে পরামর্শ দেয়া উচিত পশ্চাদ্দেশের চর্বি কমিয়ে আসতে, এত চর্বিওয়ালা খেলোয়ার যে কিনা ২০ ইনিংস পরে একটা ৫০ করবে তার চেয়ে প্রতি ইনিংসে ২৫-৩০ রান করবে এমন খেলোয়ার আমাদের দরকার অনেক বেশি।
সেটা করার আগে, আজকে চরম দরকারের মুহূর্তেও এমন গলির ব্যাটসম্যানের মত আউট হবার জন্য আশরাফুল গাধাটাকে একটা কিছু শাস্তি দেয়া দরকার।
আপাতত ক্যারিবিয়ান সাগরে জেলে নৌকাতে করে হাঙ্গর শিকারে পাঠানো ছাড়া তেমন কোন আইডিয়া মাথায় আসছে না। খাবিই যখন, খাইট্টা খা।
আপনারা কি বলেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।