কি যে বুঝি তাও বুঝি না।
বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্যে বাধা
ভূমিকা ঃ
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো গত ৩৮ বছর যাবৎ সমাধান হয়নি। উভয় দেশের সর্বোচ্চ আলোচনা হলেও উত্তরণে কোন দেশই পোঁছতে পারেনি।
ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের েেত্র যে বাঁধাগুলো রয়েছে ভারত ইচ্ছে করলেই তা সমাধান করতে পারে। এর ফলে একদিকে ভারতে যেমন বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে, তেমনি ভারত থেকে পণ্য আমদানিও অনেক সহজ হয়ে যাবে।
বাণিজ্যের বাধা ঃ
পণ্যের স্পর্শকাতর তালিকা ঃ
ভারত বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার ৮৬ ধরণের পণ্য রফতানি করতে পারলেও বাংলাদেশে কেবল ১৬৮ ধরণের পণ্য রফতানি করতে পারে ভারতে। সাফটার অধীনে ভারত শিল্প সংরণের অজুহাত তোলে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে সাতশত পণ্য তার দেশে আমদানি নিষিদ্ধ করে।
পরে বাংলাদেশ ও ভারত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর ভারত স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা ছোট করে চারশতে নামিয়ে আনলেও দেশের প্রধান রফতানী পণ্য স্পর্শকাতর তালিকায় থাকায় বাংলাদেশের কোন লাভ হয়নি। ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়াতে স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকাটি অন্যতম বাঁধা বলে মনে করা হচ্ছে।
অশুল্ক বাধা ঃ
ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা। এসব অশুল্ক বাধার মধ্যে সীমাšেতর অবকাঠামো সমস্যা , পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সমস্যা, শুল্ক অফিস সমস্যা ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশের প থেকে এসব সমস্যার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ভারত এদিকে খুব একটা উদারতা দেখায়নি।
আর এসব সমস্যার কারণে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানী বাধাগ্র¯ত হচ্ছে।
মান নিয়ন্ত্রণ সমস্যা ঃ
ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিকালে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সমস্যাটি রফতানি কারকদের জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। ভারতে বাংলাদেশের যে কোন খাদ্য পণ্য রফতানির সময় ভারতের কাস্টমস ছাড় দেওয়ার আগে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু ভারতের কাস্টমস স্টেশনগুলোতে কোন মান নিয়ন্ত্রণ অফিস নেই। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য দূরবর্তী কোন স্থানে যেতে হয়।
এর ফলে পণ্য রফতানি ব্যয় ও সময় বেশি লাগে। এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে এই মর্মে প্র¯তাব দিয়েছে যে, যদি রফতানিকৃত পণ্য বাংলাদেশের মান নিয়ন্ত্রণ ল্যবরেটরির ছাড়পত্র পায় তবে তারা এ ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি আছে। এই প্র¯তাব অনুসারে বাংলাদেশ ভারতের কাছে ১২টি মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরির তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকা অনুসারে মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরিগুলোর ব্যাপারে ভারতের অনাপত্তি আদায়ের জন্য আলোচনা হয়েছে।
পাটের চটের বিশেষ আবরণ ঃ
ভারতে বাংলাদেশের পাটের ব্যাগ এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে এটি ভারতে বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি হয়ে আসছে। কিন্তু সেই সময় থেকে ভারত পাটের চট রফতানির েেত্র একটি বিশেষ শর্ত আরোপ করেছে , তা হলো পাটের চটের বিশেষ আবরণে রফতানিকৃত পণ্যের ‘‘কান্ট্রি অব অরিজিন ’’ নিশ্চিত করতে হবে। আর এটি করতে গিয়ে পাটের চট রফতানির বাধাগ্র¯ত হচ্ছে। এ বিষয়ে দু দেশের মধ্যে আলোচনা হলেও কোন গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছতে পারেনি কোন দেশ।
ওয়্যারহাউজ সমস্যা ঃ
সীমাšেতর শুল্ক স্টেশনগুলোতে কোন ওয়্যারহাউজ না থাকায় বাংলাদেশী পণ্য রফতানির সময় শুল্ক ছাড় না পাওয়া পর্যšত সেগুলো বাইরে রাখতে হয়। ফলে ঝড় বৃষ্টি রোধে ঐসব পণ্য নষ্ট হয়। বিষয়টি নিয়ে দু দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কোন সমাধানে আসতে পারেনি। আলোচনার এক পর্যায়ে ভারত পেট্রাপোল সীমাšেত একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপন করে। ২০০৪ সাল থেকে শুধু বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ও পাটের ট্রাক ওয়্যারহাউজে প্রবেশের অনুমতি পায়।
তাছাড়া বাংলাদেশ চাচ্ছে সব ধরণের পণ্যের ট্রাক ওয়্যারহাউজের প্রবেশের অনুমতি।
ব্যাংকিং সমস্যা ঃ
ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোতে ব্যাংকিং সমস্যা বাংলাদেশের পণ্য রফতানির েেত্র একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের এ অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়ছে। দাম কম হওয়া এবং আমদানি খরচ কম হওয়ার কারণে সেভেন সিস্টারস রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশী বাজার বড় হচ্ছে। তবে এই অঞ্চলে ব্যাংকিং স্বল্পতা এবং ব্যাংকগুলোতে প্রয়োজনীয় ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা না থাকায় আমদানি রফতানির সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের।
উপযুক্ত শুল্ক কর্মকর্তার অভাব ঃ
ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কিংবা ভারত থেকে আমদানি উভয় েেত্র শুল্ক ছাড়ের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তার অভাব বাংলাদেশের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশের প্রতিটি সীমাšত বন্দরে পণ্য ছাড়ের জন্য উপযুক্ত শুল্ক কর্মকর্তা থাকে। কিন্তু ভারতে শুধু পেট্রাপোল ছাড়া অন্য কোন সীমান্ত বন্দরে উপযুক্ত শুল্ক কর্মকর্তা নেই। ফলে অন্যান্য বন্দরে দিনের পর দিন পন্য বন্দরে আটকে থাকে। ফলে উভয় দেশেরই আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বাধাগ্র¯ত হয়।
ভারতের সাথে বাণিজ্যের েেত্র বাংলাদেশের দ্বিপীয় সম্পর্ক ছাড়াও আঞ্চলিক ও বহুপীয় সম্পর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপীয় বাণিজ্য চুক্তি সাপটা, সাফটা, বিমসটেক, এফটিএ, ব্যাংকক এগ্রিমেন্ট এ্যান্ড গ্লোবাল সিস্টেম অফ ট্রেড প্রিফারেন্স (জিএসটিপি) উল্লেখযোগ্য। এসব চুক্তির আওতায় দুদেেেশর দ্বিপীয় এবং বহুপীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।