আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুনো পশ্চিমের কাহিনী- পর্ব ১

বুকের ভেতর বহুদূরের পথ.........
ক্লাস সেভেনে প্রথম পড়েছিলাম সেবার ওয়েষ্টার্ণ- রওশন জামিলের লেখা 'প্রত্যয়'। তার পরপরই পড়ি ওসমান পরিবারের কাহিনী- 'রত্নগিরি'। তারপর থেকে no looking back. পড়ছি তো পড়ছিই। এখন নতুন স্টাইল যোগ হয়েছে, পুরনো বইগুলোর মূল ইংরেজী কালেকশন করি। 'লুই লামুর', 'জেন গ্রে'- এরা এখন খুব পরিচিত নাম আমার কাছে।

খুব ভাল একটা বই হাতে পেলাম, যেখানে সেই বুনো পশ্চিমের বেশ কিছু সত্যি ঘটনা লেখা হয়েছে। সেই সাথে কোন জায়গায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছিলো তার বিস্তারিত বর্ণনা। ঘটনার পাত্র-পাত্রীদের সম্পর্কেও আলোচনা আছে। সব মিলিয়ে আমার মত লাইফ টাইম ওয়েস্টার্ণ ভক্তের জন্য সোনার খনি বলা যায়। ঠিক করেছি পড়বো আর ব্লগের জন্য অনুবাদও করে দেবো।

জায়গার নাম: হোল ইন দ্যা ওয়াল স্টেট: অ্যারিজোনা ডিস্ট্রিক্ট: পিমা ‘হোল ইন দ্যা ওয়াল’ মূলত: একটা গুহা যা ‘কলোসাল কেভ’ নামেও পরিচিত। রিনকন পর্বতে অবস্থিত এই গুহাটি ছিলো খুবই সুরক্ষিত জায়গায় অবস্থিত। পানি আছে, সেই সাথে প্রচুর খাবার দাবার মজুত করার জায়গাও আছে। ঠিক ঠাক মত পাহারা দিলে কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরোধ করলেও কোন লাভ হবেনা। এক চালাক আউটল দল ঠিক করলো এই গুহার যথাযথ ব্যবহার করবে।

১৮৮৪ সাল। সাউদার্ন প্যাসিফিক রেলওয়ের একটি ট্রেনে ডাকাতি হলো। ডাকাতের দল ট্রেনে থাকা ৬২ হাজার ডলার লুট করে নিয়ে গেল। তারপর আশ্রয় নিলো ‘হোল ইন দ্যা ওয়াল’ গুহায়। কাছের শহরের শেরিফের নেতৃত্বে গঠিত পসি ৩ সপ্তাহ ধরে অবরোধ করে বসে রইলো গুহার মুখে কিন্তু ডাকাতের দল ধরা দিলোনা।

যে কোন বিচারেই তিন সপ্তাহ অনেক সময়। আউটলয়ের দল দেখলো যে এই পসি তো নাছোড়বান্দা। তাই তারা বিকল্প পথে গেলো। তাদের জায়গা বাছাইটা সত্যিই পারফেক্ট ছিলো কারণ ‘হোল ইন দ্যা ওয়াল’ এর একটা গোপন বের হবার পথ ছিলো। পথটা হচ্ছে ঢোকার মুখ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে, গুহা থেকে আরো ৪০ গজ উপরে ক্যাকটাসে ছাওয়া সরু একটা চিমনীর মত মুখ।

সেখান দিয়ে লুটের মাল নিয়ে ৪ ডাকাত বের হয়ে গেল অবরোধকারী পসির সম্পূর্ণ অজান্তে। একে তো এতগুলো টাকা সফল ভাবে লুট করার আনন্দ, তার সাথে ধাওয়াকারী পসির কাছ থেকে বেঁচে যাওয়া। আউটলরা নিজেদের আর ধরে রাখতে পারলো না। কাছের ছোট শহর উইলিকক্সে গিয়ে মদ খাওয়ার উতসবে মেতে উঠলো। ...............এবং সেটাই কাল হলো তাদের।

কেউ একজন গিয়ে খবর দিলো গুহার মুখে তখনো অপেক্ষারত পসি বাহিনীকে। আর যায় কোথায়? রুদ্ধশ্বাসে তারা ছুটলো উইলিকক্সের দিকে। ৪ ডাকাতের ৩ জন ঘটনাস্থলেই গুলি খেয়ে মারা গেল। বেঁচে যাওয়া একমাত্র আউটল ফিল কার্ভারকে বিচারের মুখোমুখি করা হলো। ২২ বছরের যুবক কার্ভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক কথাই বলে গেল- সে গুহার মুখ পাহাড়া দিয়েছে।

তার অপর ৩ সহযোগী (ইতিমধ্যেই নিহত) লুট করা সোনা কোথায় লুকিয়েছে তা সে জানেনা। শেষ পর্যন্ত বিচারক তাকে ২৮ বছরের সাজা দিলেন। ইউমার জেল থেকে ফিল কার্ভার ছাড়া পেল ১৮ বছর পর, ভগ্ন সাস্থ্যের কারণে। আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজন তক্কে তক্কে ছিলো। ছাড়া পাওয়া মাত্র তার পেছনে লোক লাগানো হলো।

কিন্তু কার্ভার ঘাগু লোক, ১ সপ্তাহ পরেই তার আর কোন হদিস পাওয়া গেলনা। বেশ কিছু গুজব এদিক ওদিক থেকে শোনা যেতে লাগল- কেউ বলে তাকে মেক্সিকোতে দেখা গেছে, আবার কেউ বলে ইংল্যান্ডে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই খবর আসলো তাকে টাকসনের উত্তরে রিংকন পাহাড়ের কাছে শেষ দেখা গেছে, অর্থাত সেই পুরনো ডাকাতির জায়গার কাছাকাছি। পুলিশ হন্ত দন্ত হয়ে ছুটলো। ‘হোল ইন দ্যা ওয়াল’ এর ১২০ ফুট লেভেলে গিয়ে পাওয়া গেল কেবল ৩ টা খালি ক্যানভাসের ব্যাগ।

ভেতরের সোনা হাওয়া! কার্ভারের টিকিরও কোন খবর নেই। ঐতিহাসিক (!!) এই গুহা এখনো প্রায় আগের মতই আছে। তবে ১৯২০ সালে এক মৃদু ভূমিকম্পে গুহার বের হবার পথটা আংশিক ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। নোট: লুই লামুরের লেখা 'ফ্লিন্ট' নামের উপন্যাসে ‘হোল ইন দ্যা ওয়াল’ এর উল্লেখ আছে।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।